দ্বিতীয়বারের মতো মেরিল-প্রথম আলো অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করলাম। এ কাজ বরাবরই উপভোগ্য
রামপুরার কুঞ্জবনের একটি বাড়ির দোতলা। বাইরে থেকে ঠিক বোঝা যাবে না ফ্ল্যাটের ভেতরে কতজন মানুষের বসবাস। গত ২৪ জুন সোমবার দোরঘণ্টি বাজাতেই ওই বাড়ির কর্তাব্যক্তি যখন দরজা খুললেন, তখন সকাল ১০টা। পরনে তাঁর লুঙ্গি ও গেঞ্জি—সাধারণ পোশাক।
ভেতরে ঢুকতেই দেখা গেল, বসার ঘরে শেলফভর্তি সার সার বই। এ ছাড়া যেটুকু খালি জায়গা, সেখানে অজস্র মানুষ—কেউ একমনে খবরের কাগজ পড়ছেন, কেউ বা বসে আছেন চুপচাপ। কিন্তু এর মধ্যে আমরা বসব কোথায়? আমরা যে আসব—তা তো আগে থেকে ঠিক করা—এসব যখন ভাবছি, বাড়ির কর্তা মোশাররফ করিম তখন বাতলে দিলেন সমাধান, ‘চলুন, বেডরুমে বসি। ’
মোশাররফ করিমের শোবার ঘরের বড়সড় খাটের ওপর বসে জানা গেল, বাড়িভর্তি মানুষের কাহিনি—বাবা বেঁচে নেই, এখন মা, ভাই, ভাইয়ের বউ, বোন, তাঁদের ছেলেমেয়ে এবং নিজের স্ত্রী-সন্তানসহ এ বাড়িতে বিরাট এক একান্নবর্তী পরিবার নিয়ে বাস করেন তিনি।
সেই একান্নবর্তী পরিবারের প্রধান মোশাররফ করিম এখন নিজের খাটের ওপর বসে যৌথ পরিবারের কার্যকারণ ব্যাখ্যা করছেন, ‘একান্নবর্তী পরিবারে বসবাস করলে উদারতা অনেক বাড়ে।
পারিবারিক শিক্ষাও পাওয়া যায়। আসলে একধরনের কাল্পনিক চিন্তা থেকে আমরা নিজেকে ক্রমেই আলাদা করে ফেলছি, পালাচ্ছি জীবনের বৃহৎ স্বাদ থেকে। কেবল নিজের চিন্তা আমাদের মধ্যে একরকম স্বার্থপরতা ঢুকিয়ে দিচ্ছে। আমি যদি মা-বাবা ও ভাইবোনকে নিয়ে একসঙ্গে না-ই থাকতে পারি; তবে উদারতা, প্রেম ও দেশপ্রেম—এগুলো শিখব কোথা থেকে। ’
এসেছি তারকা মোশাররফ করিমের খোঁজখবর জানতে।
কিন্তু আমাদের সামনে এখন কথা বলছেন অন্য এক মানুষ—কে এম মোশাররফ হোসেন। হ্যাঁ, এটিই মোশাররফ করিমের পুরো নাম। তাঁর বাবার নাম আবদুল করিম। নিজের নামের সঙ্গে বাবার নামের অংশ জুড়ে দিয়ে তবেই তিনি প্রবেশ করেছেন তারকাজীবনে। কিন্তু এ মুহূর্তে তাঁর সঙ্গে আড্ডায় তারকাসুলভ ভঙ্গি যে একদমই নেই! ক্রমাগত কথা বলছেন আর খাচ্ছেন কাঁঠালের সঙ্গে মুড়ি মাখিয়ে।
‘আপনারা কাঁঠাল-মুড়ি খান না?’
আমাদের দিকে মোশাররফের এ প্রশ্নের পর কাঁঠাল-মুড়ি এল আমাদের কাছেও।
আড্ডার পারস্পরিক কথা এর মধ্যেই অন্য পথে ঘুরে গেছে। তাকে ফিরিয়ে আনতে হবে তারকাভুবনে। মোশাররফকে তাই বলা হলো, এবারের মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের তিন উপস্থাপকের একজন ছিলেন আপনি। কেমন উপভোগ করেছেন উপস্থাপনা?
‘এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো মেরিল-প্রথম আলো অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করলাম।
এ কাজ বরাবরই উপভোগ্য। তবে উপস্থাপনার ধরন যদি একটু মুক্ত ও ক্যাজুয়াল হয়, তবে তো সোনায় সোহাগা। ’
অনুষ্ঠান উপস্থাপনার পাশাপাশি জর্দা জামাল নাটকে অভিনয় করে মেরিল-প্রথম আলো সমালোচক পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ অভিনয়শিল্পীও হয়েছেন তিনি। কথায় কথায় প্রসঙ্গটি যখন এল, মোশাররফ তখন ‘খুব ভালো লেগেছে’—এই একটি মাত্র বাক্যে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করলেন না। বললেন নাটকের নির্দেশক হাসান মোরশেদের কথা, ‘মোরশেদ আমার শিডিউলের জন্য অনেক দিন অপেক্ষা করেছে, অনেক খেটে কাজটি করেছে।
তার কথাও বলতে হবে। ’
একটু পরেই শুটিংয়ে যেতে হবে, তাই এর মধ্যেই বাক্সপেটরা গোছগাছ করছেন তিনি। কথায় কথায় বাড়ছে সকাল, ‘আমি তো চাকরিজীবী নই—দশটা-পাঁচটা অফিস করি না। দিনরাত শুটিং, হাড়ভাঙা পরিশ্রম। তবে ক্লান্তি লাগে না, যদি কাজ করে তৃপ্তি পাই।
’
পাঠক, এর পরই মোশাররফের কথায় ক্লান্তির আঁচ লাগল। তিনি বললেন, ‘কিন্তু অধিকাংশ সময়ই ওই তৃপ্তিটা আমি পাই না। আসলে একটা দৃশ্য ধারণের জন্য ন্যূনতম যতটুকু সময় প্রয়োজন, ততটুকু আমরা পাই না। মনে হয়, কাজটা যেভাবে করতে চেয়েছিলাম সেভাবে পারিনি। আরেকটু মহড়া দরকার ছিল।
ফলে আমি আসলে কতদূর অভিনয় করতে পারতাম বা পারি, মাঝেমধ্যে সেটাই বুঝতে পারি না! আমাদের মিডিয়ার অবস্থা এখন এমন, যেন ছাদটাকে নামিয়ে এনে মাথার সঙ্গে লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে—ছাদ মাথায় ঠেকেছে এমন নয়। বদ্ধ জায়গায় কোনো শিল্প হয় না। ’
আপন মনে মনের ভেতর জমে থাকা খেদ একনাগাড়ে বলে চলেছেন তিনি। অন্যদিকে, আমরা অপেক্ষা করছি, মোশাররফ করিমের কথা শেষ হবে। জানব তাঁর সাম্প্রতিক কাজকর্ম সম্পর্কে—তিনি বলবেন, সালাউদ্দিন লাভলুর কবুলিয়তনামা, মাসুদ সেজানের রেড সিগন্যাল, শামস করিমের মীরজাফর মীর, মারুফ মিঠুর অসীম চাকরসহ ঈদের নাটক নিয়ে বেশ ব্যস্ত সময় কাটছে।
তারপর একসময় নিজের শয়নকক্ষ থেকে বেরিয়ে বাক্সপেটরাসহ শুটিংয়ের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে পা বাড়াবেন। কিন্তু না, মায়ের কাছ থেকে বিদায় নেওয়া হয়নি, তাই আবার তাঁকে ফিরতে হবে ঘরে—মাকে বলতে হবে, ‘মা, আসি। ’।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।