অভাগা যেদিকে চায়...! উপসচিব পদে পদোন্নতির বিদ্যমান কোটা ব্যবস্থা [২০০২ সালে প্রণীত পদোন্নতির নীতিমালা অনুযায়ী] হচ্ছে প্রশাসন ক্যাডারের জন্য ৭৫%, আর বাকি ২৬ টি ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য ২৫% কোটা। পদোন্নতি প্রদানের এই নীতিমালা সিনিয়র কে ডিঙ্গিয়ে জুনিয়র কর্মকর্তার পদোন্নতির ব্যবস্থা তৈরি করেছে। বিশেষ করে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি আন্তঃক্যাডার বৈষম্য বাড়ানোর পাশাপাশি একই ক্যাডারের দুইটি উপ-ভাগের মধ্যেও বৈষম্য সৃস্টি করেছে।
আন্তঃক্যাডার বৈষম্য বাড়ছে এভাবেঃ
১। কোটা ব্যবস্থার সুযোগে ১৯৮২ ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা এখন বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ের সচিব, আর তার অধিনে অধিদপ্তর পর্যায়ে অন্য ক্যাডারের একই অর্থাৎ ১৯৮২ ব্যাচের কর্মকর্তাগণ পরিচালক বা তার নিচের অতিরিক্ত পরিচালক হিসাবে কাজ করছেন।
এমনকি অধিদপ্তর পর্যায়ে মহাপরিচালক বা অতিরিক্ত মহাপরিচালক পদে ১৯৮৪ ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা পদায়িত হচ্ছে, যাদের অধীনে অন্য ক্যাডারের ১৯৮২ ব্যাচের কর্মকর্তাগণ পরিচালক বা তার নিচের অতিরিক্ত পরিচালক হিসাবে কাজ করছেন।
২। বহুল আলোচিত চলমান পদোন্নতির প্রক্রিয়ায় প্রশাসন ক্যাডারের ১৩তম, ১৪ তম ও ১৫ তম ব্যাচের পদোন্নতির কথা শোনা যাচ্ছে, অথচ অন্য ক্যাডারের ৭ম, ৮ম, ৯ম, ১০ম ব্যাচ এর কর্মকর্তাগণ উপসচিব পদে পদোন্নতির সিকি ভাগ কোটার দিকে এখনো তাকিয়ে আছেন। ইকুইটি ও জ্যেষ্টতা অনুসরন করে ব্যাচ বাই ব্যাচ পদোন্নতি দিলে এই বৈষম্য হতনা।
একই ক্যাডারের দুইটি উপ-ভাগের মধ্যেও বৈষম্য সৃস্টিঃ
বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি আন্তঃক্যাডার বৈষম্য বাড়ানোর পাশাপাশি একই ক্যাডারের দুইটি উপ-ভাগের মধ্যেও বৈষম্য সৃস্টি করেছে।
যেমন ধরুন একটি ক্যাডারের সাধারন ও কারিগরী দুইটি ভাগ রয়েছে। ক্যাডারের এন্ট্রি পদে সাধারন গ্রুপের কর্মকর্তার সংখ্যা কারিগরী পদের চেয়ে বেশি থাকে। বিদ্যমান নীতিমালায় শুধুমাত্র এন্ট্রি পদের সংখ্যার অনুপাত বিবেচনা করায় কারিগরি গ্রুপের সিনিয়র (অনেক পুর্বে চাকুরিতে যোগদানকৃত) কর্মকর্তাকে কে ডিঙ্গিয়ে সাধারন গ্রুপের জুনিয়র কর্মকর্তার পদোন্নতির ব্যবস্থা হয়েছে। এর ফলে একই ক্যাডারের কারিগরি গ্রুপের ৭ম ও ৮ম ব্যাচের আগ্রহী কর্মকর্তারা এখনো উপসচিব পদে পদোন্নতি পাননি, অথচ তাদের ৫-৭ বছরের জুনিয়র সাধারন গ্রুপের ১০ম ব্যাচের কর্মকর্তারা উপসচিব পদে পদোন্নতি পেয়ে যাচ্ছেন। গত বছরের পদোন্নতি প্রক্রিয়ায় এই বৈষম্য হয়েছে।
এবছরের পদোন্নতি প্রক্রিয়ায়ও একই ঘটনা ঘটবে বলে পর্যবেক্ষকগণ মনে করছেন। ব্যাচ বাই ব্যাচ পদোন্নতি দিলে একই ক্যাডারের দুইটি উপ-ভাগের মধ্যেও এই বৈষম্য হতনা।
সার্বিক ফলাফল ভয়াবহঃ
সিভিল সার্ভিসে এইসব বৈষম্যের ফলাফল দেশের সার্বিক অগ্রগতির জন্য বড় বাধা। এই বৈষম্যের ফলে সিনিয়র কর্মকর্তারা জুনিয়র কর্মকর্তার অধিনে চাকুরি করতে বাধ্য হচ্ছেন। মানসিক যন্ত্রনায় তাদের কর্মস্প্রিহা কমে যাচ্ছে।
তাদের পরিবার তথা সমাজেও এর বিরুপ প্রভাব পরছে।
উল্লেখ্য সিভিল সার্ভিসের প্রত্যেকটি ক্যাডার সরকারের ভিন্ন ভিন্ন কাজ বাস্তনায়নের দায়িত্ত পালন করছে। ভুমি সেক্টর ব্যতিত দেশের কৃষি, খাদ্য, জননিরাপত্তা, চিকিতসা, বাসস্থান, যোগাযোগ ব্যবস্থা, তথ্য, রেভিনিউ কলেকশন, শিল্পকারখানা, বিদ্যুত, গ্যাস/জালানি, শিক্ষা প্রভৃতি সকল সেকটরের উন্নয়ন বাস্তবায়নের দায়িত্ত কিন্তু প্রশাসন ক্যাডারের হাতে ন্য়। অথচ পদোন্নতির বিদ্যমান কোটা ব্যবস্থা শুধুমাত্র প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের উতসাহ দিচ্ছে। বাকি ২৬ টি ক্যাডারের কর্মকর্তারা পদে পদে পদোন্নতি বঞ্ছিত হচ্ছেন।
দেশের মানুষর কাছেও এই ব্যবস্থা কাম্য নয়। এতে দেশের সার্বিক উন্নয়ন ব্যহত হচ্ছে বলে পর্যবেক্ষকগণ মনে করছেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।