মেন্টাল উন্ডস নট হিলিং লাইফ'স আ বিটার শেইম আই এম গোইং অফ দ্যা রেইলস অন আ ক্রেজি ট্রেইন !! কেএফসির চিকেন ও পিজা হাটের খাবার হালাল নয়, হারাম। ইসলামী শরিয়ত ও সুন্নাহ মোতাবেক জবাই না করে মেরে খাওয়ানো হচ্ছে চিকেন। আন্তর্জাতিক খাদ্য ব্র্যান্ড এ দুটি ফাস্টফুডের বাংলাদেশে পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান লতিফুর রহমানের ট্রান্সকম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কোম্পানি। আলেমরা বলছেন, কেএফসি ও পিজা হাট আমাদের মরা মুরগি খাওয়াচ্ছে। এ দুটি প্রতিষ্ঠানের খাবার হারাম।
তারা মুসলমানদের ঈমান নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। তাদের শাস্তি পাওয়া উচিত। কেএফসির প্রতিটি খাবার নিষিদ্ধের দাবি জানান তারা।
শুধু হারাম মুরগিই নয়, কেএফসি ও পিজা হাটের শাখাগুলোর অপরিচ্ছন্নতা, ভেজাল খাদ্য সরবরাহ, খাদ্যের মান নিয়ে একাধিক মামলা ও জরিমানা গুনেছে বাংলাদেশে এ দুটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনাকারী ট্রান্সকম ফুড লিমিটেড। ফ্রায়েড চিকেনের ভেতর ফ্রায়েড ককরোচ (তেলাপোকা) পাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে কেএফসিতে।
এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে, বিশ্বব্যাপী এ প্রতিষ্ঠানের মান ধরে রাখার ব্যাপারে বাংলাদেশে ট্রান্সকম ফুড লিমিটেড কতটা যত্নশীল। কেএফসি ও পিজা হাট ব্র্যান্ড দেখে যারা সেখানে খেতে যাচ্ছেন সেই ক্রেতারাও বিশ্বমানের সেবা পাচ্ছেন না, তবে পকেট থেকে ঠিকই বেরিয়ে যাচ্ছে মোটা অঙ্কের অর্থ।
কেএফসির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তারা যে পদ্ধতিতে মুরগি জবাই ও রান্না করে তা নির্মম ও হারাম। হালালমতে ও নির্মমতা পরিহার করে মুরগি জবাই করার জন্য পৃথিবীব্যাপী সোচ্চার হয়েছেন পরিবেশবাদী আন্দোলনকর্মী ও পাখিপ্রেমীরা। এমনকি কেএফসি উপদেষ্টারা সুপারিশ করেছেন এ রকম নির্মমভাবে মুরগি জবাই না করার জন্য।
তবে কেএফসি এসবের কিছুই আমলে নেয়নি।
কেএফসি সূত্রে জানা গেছে, প্রথমেই তারা ধারালো ব্লেড দিয়ে একটি তাজা মুরগির ঠোঁট কেটে ফেলে! এরপর জীবন্ত মুরগিটি একটি গরম পানির ড্রামের মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়! এই স্বয়ংক্রিয় বৈদ্যুতিক গরম পানির ড্রামটি মুরগির পালক, নাড়ি ও অন্যান্য অংশ পরিষ্কার করে। এ সময় মুরগি গরম পানির মধ্যে সাঁতরায় বাঁচার জন্য। মান ধরে রাখতে কেএফসির সব আউটলেটে একই প্রক্রিয়ায় মুরগি হত্যা করা হয়। পরিবেশবাদীদের দাবি, একটি জীবন্ত মুরগিকে যখন গরম পানির মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়, তখন পর্যন্ত মুরগিটির প্রাণ থাকে।
এটা নির্মম। পশু বা পাখিকে এভাবে কষ্ট দিয়ে হত্যা করা অন্যায়। উল্লেখ্য, কেএফসি ছাড়া অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান পশু অথবা মুরগিকে খাদ্য তৈরির জন্য এভাবে প্রস্তুত করে না।
যোগাযোগ করা হলে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব অধ্যাপক মাওলানা মোহাম্মদ সালাহউদ্দীন বলেন, বিসমিল্লাহ এবং আল্লাহু আকবর বলে জবাই না করলে সেই মুরগি খাওয়া হালাল হবে না। গুলশান সেন্ট্রাল জামে মসজিদের খতিব মাওলানা মাহমুদুল হাসান বলেন, পশু-পাখি সুন্নত তরিকায় জবাই করতে হবে।
ধর্মীয় বিধান মেনে জবাই না করলে তা খাওয়া হারাম হবে।
জানা গেছে, বিশ্বব্যাপী কেএফসি ও পিজা হাট কঠিন মান নিয়ন্ত্রণ করে চলে বিধায় ভোক্তাদের মধ্যে এ দুটি খাদ্য ব্র্যান্ড খুবই জনপ্রিয়। কেএফসি ও পিজা হাটের ওয়েবসাইটে পাওয়া তথ্যমতে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে কোনো রকম হাতের ছোঁয়া ছাড়াই এখানে খাদ্য প্রস্তুত করা হয়। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সেসব নিয়ম মানা হচ্ছে না। ফলে এ দুটি ব্র্যান্ডের সুনাম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলেও অনেকে মনে করেন।
কেএফসির মান ধরে রাখতে না পারায় বিশ্বখ্যাত এ প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে জরিমানা ও মামলা হয়েছে বাংলাদেশে। সূত্র জানায়, গুলশানের পিজা হাট থেকে সংগৃহীত সস পরীক্ষায় ভেজাল শনাক্ত হয়। সসে ভেজাল থাকার কারণে পিজা হাট বাংলাদেশের মালিক ও ট্রান্সকম ফুডের স্বত্বাধিকারী মো. লতিফুর রহমানের বিরুদ্ধে বিশুদ্ধ খাদ্য অধ্যাদেশ-১৯৫৯ সংশোধিত ২০০৫-এর ৬(১) ৪৪ এ মামলা হয়। নম্বর ২৯৫/২০০৯। ভেজাল খাদ্যের কারণে শুধু লতিফুর রহমান নন, মামলা হয় ওই শাখার ব্যবস্থাপক নুর আলমের বিরুদ্ধেও।
পিজা হাটের বিরুদ্ধে ভেজালের কারণে মামলা সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী ব্যবস্থাপক আক্কু চৌধুরী বলেন, 'মামলা চলমান রয়েছে। এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করব না। ' নিম্ন আদালতের এ মামলার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর মামলা হয়, যার মিস কেস নম্বর ২৪১৬৫/২০০৯। হাইকোর্ট থেকে চার মাসের অন্তর্বর্তী জামিন নেন আসামি লতিফুর রহমান। তবে আরেক আসামি ম্যানেজার নুর আলম নিম্ন আদালত থেকে জামিন নেন।
হাইকোর্ট মামলাটি খারিজ করে দিলে লতিফুর রহমান হাইকোর্টের আরেকটি বেঞ্চে মামলা করেন, যার নম্বর ১৫৫৩/২০১০। বর্তমানে সেটি বিচারাধীন। একই মালিকানাধীন অপর মার্কিন বিখ্যাত ফাস্টফুড ব্র্যান্ড কেএফসিও বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মান মেনে চলতে পারছে না। ১২ নভেম্বর কেএফসির বাংলাদেশ চেনের (ক্যান্টাকি ফ্রায়েড চিকেন) ঢাকার পল্টন আউটলেটে ফ্রায়েড চিকেনের মধ্যে তেলাপোকা পাওয়া যায়। বিষয়টি পল্টন থানা পর্যন্ত গড়ায়।
পরে কেএফসি ভুল স্বীকার করে।
শুধু তেলাপোকা ভাজাই নয়, অপরিচ্ছন্নতার কারণে ভ্রাম্যমাণ আদালতে মোটা অঙ্কের জরিমানা দিয়েছে কেএফসি কর্তৃপক্ষ। গত বছরের ৭ মার্চ ভ্রাম্যমাণ আদালত অপরিচ্ছন্নতার কারণে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন প্রতিষ্ঠানটিকে। আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট আল আমিন কেএফসিতে গিয়ে দেখতে পান অপরিষ্কার হাতেই একজন কর্মচারী চিকেন স্ট্রিপস (মুরগির মাংসে তৈরি এক ধরনের খাবার) তৈরি করছেন। অথচ তার জীবাণুমুক্ত হাতমোজা (হ্যান্ড গ্লাভস) পরার কথা ছিল।
এ কারণে প্রতিষ্ঠানটিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন ম্যাজিস্ট্রেট। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে কেএফসির এমডি আক্কু চৌধুরী ১২ জানুয়ারি ফোনে বলেন, 'আমরা পরিষ্কারের ব্যাপারে খুবই সতর্ক থাকি এবং আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখি। ' তাহলে আপনাদের প্রতিষ্ঠানকে অপরিচ্ছন্নতার কারণে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করলেন কেন ভ্রাম্যমাণ আদালত, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, 'আপনার ঘরও সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা যায় না। এটা সম্ভবও নয়। সেখানে মাছি ঢুকে পড়বে।
'
বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউটের (বিএসটিআই) একটি সূত্র জানায়, কেএফসি যে ধরনের খাবার তৈরি করে তা বিএসটিআই-নির্ধারিত ১৫৩টি পণ্যের আওতার বাইরে। কেএফসির খাবার কতটা মানসম্পন্ন, তা বিএসটিআইর জানা নেই। জনস্বাস্থ্য বিভাগের এক সিনিয়র গবেষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, 'বাংলাদেশের অধিকাংশ খাবার ও খাবার প্রস্তুতপ্রণালীর মধ্যে ভেজাল আছে। তবে কেএফসি, পিজা হাটের মতো বড় বড় কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা হয় না বললেই চলে। কারণ এসব কোম্পানি বিশুদ্ধ খাদ্য আদালতের পরিদর্শকদের মোটা অঙ্কের টাকা দেয়, যা দু-একটা স্যাম্পল আসে, তার পরীক্ষায়ও ভেজাল ধরা পড়ে না।
কারণ যারা পরীক্ষা করেন তারা মোটা অঙ্কের ঘুষ খেয়ে রিপোর্ট বদলে দেন। ' মুরগি হত্যার বিষয়ে কেএফসির নির্মমতার বিরুদ্ধে পৃথিবীব্যাপী আন্দোলনের ডাক দিয়েছে পরিবেশবাদী কর্মী ও সংগঠনগুলো। গত বছরের ১৬ নভেম্বর 'অকুপাই কেএফসি ১৬ নভেম্বর' নামের ওই ডাকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কেএফসিবিরোধী মিছিল-সমাবেশ হয়। ডগউড অ্যালায়েন্স নামের একটি পরিবেশবাদী সংগঠন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে কেএফসিবিরোধী আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। বাংলাদেশে কেএফসির মুরগি অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে সরবরাহ করা হয় বিধায় এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি যে বাংলাদেশে কী পদ্ধতিতে মুরগি জবাই করা হয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।