oracle.samu@googlemail.com
ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম, বাংলাদেশের রাজনীতিতে সাম্প্রতিক সময়ে তুমূল আলোচিত-সমালোচিত এক যন্ত্র বিশেষ। সপ্ল প্রচার অথবা কোন কোন ক্ষেত্রে অপ-প্রচারের শিকার এই যন্ত্রটি সম্পুর্ন ভাবেই দেশীয় প্রযুক্তির ফসল যা দ্রুত ও নির্ভুল ভাবে ভোট গ্রহন ও ফল প্রকাশে তাৎপর্যপূর্ন এক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে । আমরা ইতিমধ্যেই এর কার্যকরিতার প্রমান পেয়েছি চট্রগ্রাম, নারায়ণগন্জ্ঞ ও সর্বশেষ কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে। নুন্যতম ১০ থেকে সর্বোচ্চ ৪৫ মিনিটে ভোট গননায় সক্ষম এই যন্ত্রগুলোর মাধ্যমে ৪-৬ ঘন্টার মধ্যেই পুরো নির্বাচনের ফল ঘোষনা সম্ভব। ফলে বহুল প্রচলিত গভীর রাতের ভোট কার্চুপির অভিযোগ (পরাজিত দলের কমন অভোযোগ) থেকে অন্তর্ত রেহাই পাবে আমার মত আমজনতা আর দেশের নির্বাচনী ব্যায়ও অনেকাংশে হ্রাস পাবে।
ইভিএম কি ?
দেশে প্রচলিত মান্ধাত্বা আমলের কাগুজে বেলট পেপার, সিল ও লোহার/প্লাস্টিক বেলট বক্সের বিকল্প হিসেবে তৈরী হয়েছে এই ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন। যা মূলত আমাদের প্রচলিত ভোট দান পদ্ধতি থেকে বেলট পেপার, সিল ও বেলট বক্সকে রিপ্লেস করবে। ভোটার সনাক্তকরন, স্বাক্ষর গ্রহন ও অমোচনিয় কালি দিয়ে ভোট দাতা চিন্হিত করন, ভোট গননা ও ফল প্রকাশ ইত্যাদি কাজ আগের নিয়মেই সম্পন্য হবে। আমাদের ইভিএমগুল কোন নেটওয়ার্কের আওতায় কাজ করে না বরং এগুলোর প্রত্যেকটিই স্টেন্ডএলোন সিসটেম হিসেবে স্বয়ংসম্পুর্ন। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত ক্যালকুলেটগুল যেমন সতন্ত্র ভাবে কাজ করে ঠিক সেই ভাবে কাজ করে প্রত্যেকটি ইভিএম ইউনিট।
এমনকি একটি ভোট কেন্দ্রে ব্যবহৃত ৩-৫ টি ইভিএম ইউনিটও কোন লোকাল নেটওয়ার্কের আওয়ায় থাকে না ফলে একটির কারনে অন্যগুল কোন প্রকার প্রতিবন্ধকতার সম্মুখিন হয় না।
ইভিএম কি হ্যাক করা সম্ভব ?
বহিঃবিশ্বে ব্যবহৃত ইভিএমগুল সাধারনত একটি নেটওয়ার্কের আওতায় পরিচালিত হয় ফলে নেটওয়ার্ক ফিশিং বা সেন্ট্রাল/সাব-সেন্ট্রাল ডাটা সেন্টার হ্যাক করে পুরো ভোটের ফলাফল বদলে ফেলা যায়। যার বড় একটি নজির আমরা দেখেছি যুক্তরাষ্ট্রের বুশ-আলগোরের নির্বাচনী দ্বৈরথে।
আবার অনেক দেশে ইভিএমগুল স্টেন্ডএলোন মেশিন হলেও ভোট গ্রহন শেষে সবগুল ইভিএম ইউনিটকে একটি সেন্ট্রাল লোকেশনে নিয়ে আসা হয় এবং ভোট গ্রহনের অনেক পড়ে ভোট গননা করা হয়। ফলে ভোট দান ও গননার মধ্যবর্তি ৫-৭ ঘন্টায় ইউনিট হ্যাক করা বা ভোট গননার সেন্ট্রাল লোকেশনে ভোট কার্চুপি করার সুযোগ সৃষ্টি হয়।
আমাদের ইভিএম ও কী হ্যাক করা সম্ভব ?
যেহেতু আমাদের ইভিএম ইউনিটগুল কোন নেটওয়ার্কের আওতায় থাকে না সেহেতু নেটওয়ার্ক ফিশিং বা সেন্ট্রাল ডাটা সেন্টার হ্যাক করার প্রশ্ন অবান্তর। আবার সেহেতু ইউনিটগুল আলাদা আলাদা ভাবে ভোট গননা করে সেহেতু হ্যাক করতে হলে প্রত্যেকটি ইভিএম ইউনিটকে আলাদা আলাদা ভাবে হ্যাক করতে হবে, যা অনেক ব্যায়বহুল ও নিশ্চিত ভাবে ঝুকিপূর্ন। অর্থাৎ একটি ভোট বক্স ছিনতাই করার মত করেই একটি ইভিএম ইউনিটিকে দখলে নিতে হবে।
যেহেতু আমাদের ইভিএমগুলতে কোন ব্লটুথ, ও্য়াই-ফাই ইত্যাদি ওয়ারলেস ডাটা কানেক্টোভিটি মেকানিজম নেই সেহেতু রিমোটলিও একে হ্যাক করা সম্ভব নয়। হ্যাক করার অবশিষ্ট যে উপায়টি বাকি থাকে তা হল কোন ওয়ার-ডিভাইস কানেক্ট করে ইভিএম এর অপারেটিং প্রগ্রামটি বদলে দয়া।
আমাদের দেশে যেহেতু প্রতিটি ভোট কন্দ্রে স্হানীয় ভাবেই ভোট গননা ও ফল প্রকাশ করা হয় যেহেতু সেন্ট্রাল কোন লোকেশনে নিয়ে ভোটের ফল পালটে ফেলার ও কোন সুযোগ নেই।
আমাদের ইভিএম ইউনিট কনফিগারেশন:
১। আমাদের ইভিএম ইউনিটের ২ টি অংশ -
ভোটিং ইউনিট/বেলট ইউনিট - বেলট পেপারের অল্টারনেটিভ। একটি নিউনিটে সর্বোচ্চ ১২ টি প্রতীক থাকে। বেশি প্রয়োজন হলে একাধিক ভোটিং ইউনিক একটি কন্ট্রল ইউনিটে যোগ করতে হয়।
কন্ট্রল ইউনিট - ই বেলট পেপার ইশু, ভোট কাস্ট, মোট গ্রহনকৃত ভোট ডিসপ্লে ও ভোট গননার কাজ করে এটি।
২। একটি ভোট কাস্ট হবার ১০ সেকেন্ড পরে ২য় ভোট কাস্ট হয়। তাই চাইলেই একাধিক ভোট দ্রুত দেয়া সম্ভব নয়।
৩।
কন্ট্রল ইউনিট থেকে ই-বেলট ইশু না হলে ভোটিং ইউনিট চেপে ভোট কাউন্ট করা সম্ভব নয়। ফলে ইশুকৃত ১ টি ই-বেলটের জন্য মাত্র ১ টি ভোটই কাস্ট হবে।
৪। কন্ট্রল ইউনিটটিতে মোট ৪ টি OTP (One Time Programmable) মাইক্রোকন্ট্রোলার চিপ ব্যবহার করা হয়েছে। চিপগুল শুধুমাত্র একবারই রাইট করা সম্ভব।
কনটেন্ট ইরেজ/ রি-রাইট করার কোন অপশন নাই।
৫। কন্ট্রল ইউনিটে একটি ইমার্গেন্সি ক্লোজ বাটন রয়েছে যা চাপলে কন্ট্রল ইউনিটটি লকড হয়ে যাবে। ফলে ইউনিট দখল অনেকাংশে রোধ করা যাবে।
অর্থাৎ হ্যাক করার একমাত্র ওপায় হলো ঐ ৪ টি চিপ রিপ্লেস করা অথবা প্রগ্রাম রাইট করার সময় ভেজাল কোড রাইট করা।
যা কোড রিভিও করে বের করা সম্ভব। আবার এই ধরনের কার্চুপি করতে হলে নির্বাচনে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অতি-উচ্চ পর্যায়ের জোগসাজড় প্রয়োজন পরবে। আর তথ্যপ্রমান গায়েব করতে হলেও প্রতয়েকটি ইভিএম এর সীল ভেঙ্গে চিপগুল বদলাতে হবে।
ইভিএমকে আরো কার্যকরী করতে যা প্রয়োজন:
১। যেহেতু এটি একটি ইনভিজিবল ভোটিং সিস্টেম (ভোটারে কাছে) সেহেতু এর বেলট ইউনিটের সাথে প্রিন্টিং ফেসিলিটি যোগ কারা যেতে পারে যা ভোট দানের সময়, ভোটার নম্বর ও কাকে ভোট দেয়া হল তা প্রিন্ট করবে।
২। এর কন্ট্রল ইউনিটে একটি ফিংগার প্রিন্ট স্কেনার যুক্ত করা যেতে পারে যা শুধু ফিংগার প্রিন্টটি রেকর্ড করে রাখবে কোন রুপ ভেরিফিকেশন করবে না (এটি করতে হলে ইউনিটটিকে নেটওয়ার্কে সংযুক্ত হতে হবে) । পরে ভেরিফিকেশনের প্রয়োজন হলে সেন্ট্রাল ভোট ডাটা বেজের সাথে ক্রস চেক করা যাবে।
৩। এটি আকটি এডভান্স অপশন যা এই মুহুর্তে কস্ট ইফেক্টিভ নয়।
তবু ভবিস্যতের ইভিএম কন্ট্রল ইউনিকে একটি উচ্চ ক্ষমতার প্রসেসর যুক্ত করে যেন তা ফিংগার প্রিন্ট মেচ করতে পারে সেই অপশনটি যুক্ত করা যেতে পারে। এই ক্ষেত্রে ভোট ডাটা বেজের প্রয়োজনীয় একটি ক্ষুদ্র অংশ (শুধু ঐ কেন্দ্রের ভোটারদের) কন্ট্রল ইউনিট টিতে থাকার ব্যাবস্থা করতে হবে।
ব্যাক্তিগত ভাবে আমি মনে করি শুধুমাত্র প্রযুক্তিভীতি অথবা বিরোধীতার জন্যই বিরোধীতা করার জন্যই অনেকে ইভিএম এর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। অপপ্রচার ও তথ্য প্রাপ্তির সল্পতার জন্য ইভিএমকে ঘিরে যে অবিশ্বাসের জন্ম হয়েছে তা শুধু প্রযুক্তি মনস্ক ব্যাক্তিদের লেখনী ও তথ্যের অবাধ প্রচারেই দূর করা সম্ভব।
[খুব সল্প সময়ের জন্য নির্বাচন কমিশনের ভোটার-ডাটাবেজ প্রজেক্টে কাজ করার দায় বদ্ধতা থেকেই অনুপ্রানীত হয়েছি আপনাদের সাথে তথ্য শেয়ার কারতে] ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।