আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইভিএম সাক্ষাৎকার-- লুৎফুল কবীর

কথা কম বলতে ভালবাসি। প্রফেসর ড. এস.এম. লুৎফুল কবীর পরিচালক আইআইসিটি,বুয়েট ইভিএম অপারেশন সমন্বয়ক, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন void(1); কুমিল্লা উপনির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হয়েছে এবার। এবারের ইভিএমকে কেন্দ্র করে সামগ্রিক আয়োজন বিষয়ে কিছু বলুন। কুমিল্লা উপনির্বাচনে এবার ৪২১টী ইভিএম ইউনিটের সাহায্যে ৬৫টি ভোটকেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করা হয়েছে । প্রতিটা কেন্দ্রে দুটো করে ইভিএম অতিরিক্ত দেয়া হয়েছিল।

ঢাকা থেকে ট্রান্সপোর্টেশন আরো উন্নত করা হয়েছে নারায়নগঞ্জ উপনির্বাচনের তুলনায়। এবার পুরো ট্রান্সপোর্টেশনটা করা হয়েছে কাভার্ড ভ্যানের মাধ্যমে। প্রতিটা মেশিন কেন্দ্রে পোছানোর পরে টেস্ট করা হয়েছে যাতে নির্বাচনের দিন কোন সমস্যা না হয়। ফলে নারায়নগঞ্জে দু-একটি স্থানে যে সমস্যাগুলো হয়েছিল তা এখানে হয়নি। ভোটারদের দিক থেকে কি ধরণের রেসপন্স পেয়েছেন? মেয়েদের এবং বৃদ্ধদের একটু সমস্যা হয়েছে।

পুরুষ অল্পবয়স্ক বা মাঝারি বস্ককদের কোন সমস্যা হয়নি। মেয়েদের ও বৃদ্ধদের সামনের পোস্টার থেকে ব্যাখ্যা করে দিতে হয়েছে। ট্রেনিং আরো বেশি মাত্রায় প্রয়োজন। যেহেতু দেখা যাচ্ছে যে মাত্র একবার বুঝিয়ে দিলেই সবাই বিষয়টা ধরতে পারছে সুতরাং এটা ব্যবহার করা সম্ভব। শেষে দেখা গেল বেলা দুইটার পরে আর কোন ভোটার নেই কেন্দ্রে।

ফলে খুব দ্রুতই ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে ইভিএম ব্যবহারের কারণে। প্রক্রিয়াটা স্পিড-আপ হয়েছে। কেউ একটু ফাস্ট হলে দশ সেকেন্ডে ভোট দেয়া সম্ভব। ফলাফল সংগ্রহের অভিজ্ঞতা কেমন? কেন্দ্রে কেন্দ্রে ফলাফল সংগ্রহে ৪৫মিনিট করে লাগার কথা। মেশিন থেকে ফলাফল বের করা থেকে কাগজে লেখা ও সইটই নেয়া সব সহ।

তবে কোন ক্ষেত্রে তা প্রায় দেড় ঘন্টাও লেগেছে প্রিসাইডিং অফিসারের অদক্ষতার কারণে। এইসব ক্ষেত্রে ট্রেনিং খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিছু কিছু কেন্দ্র থেকে প্রায় ৪ঘন্টা লেগেছে ফলাফল টাউন হলে এসে পৌছাতে। যোগ করে শেষ করতে মোট লেগেছে ৫ঘণ্টা। রাত ৯টায় ফলাফল ঘোষণা হয়ে গিয়েছে।

এটা আগের তুলনায় বাস্তবে অনেক কম। আগে দেখা যেত মধ্যরাত বা সকাল হয়ে যাচ্ছে ফলাফল ঘোষণা করতে। কি কি সমস্যা এখনো রয়ে গিয়েছে? মানুষের মাঝে এখনো যে ধরণের ভীতি রয়ে গিয়েছে তা আমার কাছে বড় কিছু বলে মনে হয় না। আপনাদের ইভিএম যন্ত্রে প্রতিবার ভোট নেয়ার আগে যন্ত্রটি এনেবল করতে হয়। যদি প্রিসাইডিং অফিসার তা না করেন কিংবা ভুল করেন তাহলে তো ভোটটি নষ্ট হতে পারে।

বিষয়টি আপনার কিভাবে সমাধান করবেন? একজন ভোটার যখন আসেন তার পরিচয় নিয়ে হাতে কালি লাগানো হয়। ভোটার বুথের সামনে দাঁড়ালে যন্ত্রটি এনেবল করে তার পরেই তাকে ভেতরে ঢুকানো হয়। এটা পোলিং এজেন্টদের সামনেই ঘটে। যদি কেউ ভেতরে ঢূকে একাধিক ভোট দেয়ার চেষ্টা করেন তাহলে কি হবে? একটা ব্যালট ইস্যু করার পরে ভোট কাস্ট হয়ে গেলে আর তার পরের দশ মিনিটে কোন ভোট দেয়া যাবে না। কারণ ইভিএম ইউনিটের মাইক্রোকন্ট্রোলারে একটা দশ সেকেন্ডের ডিলে দেয়া আছে।

আর একটা বড় ডিসপ্লে বাইরে লাগানো থাকে যেটাতে ইনক্রিমেন্ট সবাই দেখতে পায় যে কয়টা ভোট পড়লো। ফলে বাইরে থেকে এটা সহজেই বোঝা সম্ভব ভেতরে কোন কারচুপি হচ্ছে কিনা। মাইক্রোকন্ট্রোলার জ্যাম হলে বা যন্ত্র কোন ভাবে অচল হতেই পারে কারণ এগুলো ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস। সেক্ষেত্রে আপনার কি ব্যাকআপ রেখেছেন? সমস্যাটির বেশ কয়েকট প্রকার রয়েছে। কিন্তু যাই হোক না কেন চারটা মেমোরিতে এই ফলাফল সংরক্ষণ করা হয় ।

ফলে ফলাফল হারাবার কোন সুযোগ নেই। এই মেমোরিগুলো কি ফ্ল্যাশ মেমোরি? যদি বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তাহলে কি এগুলো মুছে যেতে পারে না? না। এগুলো ফ্ল্যাশ মেমোরি না। যদি এগুলো মুছতে হয় তাহলে বাইরে থেকে ইলেকট্রনিক্যালি মুছতে হবে। নিজে থেকে মুছে যাবার কোন সুযোগ নেই।

এই যন্ত্রটিকে কি বাইরে থেকে প্রভাবিত করা সম্ভব? এখানে বলে রাখা দরকার যে এখানে যে মাইক্রোকন্ট্রোলারটি ব্যবহার করা হয়েছে সেটি হচ্ছে ওটিপি বা অয়ান টাইম প্রোগ্রামেবল মাইক্রোকন্ট্রলার। এটাকে কোন ভাবেই দ্বিতীয়বার প্রোগ্রাম করা যাবে না। আর যেহেতু আমাদের ইভিএম নেটওয়ার্ক কানেক্টেড না সুতরাং হ্যাকিং এর কোন সুযোগ এখানে নেই। ক্যাপাসিটিভ টাচ স্ক্রিন আমরা ব্যবহার করতে পারতাম কিন্তু সেটা দূর থেক নিয়ন্ত্রণ করা যায় বলে আমরা তা ব্যবহার করিনি। আপনার কোন কোম্পানীর ও কি ধরণের মাইক্রোকন্ট্রোলার ব্যবহার করছেন? এই যন্ত্রে অ্যাটমেল কোম্পানির ৩২বিট চিপ ব্যবহার করা হয়েছে।

সম্প্রতি জার্মানী সরে এসেছে ইভিএম প্রজেক্ট থেকে। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কি? দেখুন একেক যায়গায় সমস্যা একেক ধরণের। প্রত্যেকটি বিষয় আলাদা আলাদা করে না বুঝলে ঢালাও বলা ঠিক হবে না। জার্মানি ইভিএম প্রত্যাহার করার কারন হচ্ছে তারা পার্লামেন্টে পাশ করানোর আগে যন্ত্রটি ব্যবহার শুরু করে। পরে একজন আদালতে কেস করে দিলে আদালত নির্দেশ দেয় তা প্রত্যাহার করতে।

কিন্তু সেখানে কোন টেকনোলজিক্যাল প্রবলেমের কারণে তারা এই কাজটি করে নাই। ইন্ডিয়া কিন্তু এই ভূল করে নাই। আমরাও কিন্তু আইন মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমে প্রক্রিয়া অনুযায়ী এগিয়েছি। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.