বিরাট এক আবিষ্কার করেছেন এ দেশের বিজ্ঞানীরা। সংবর্ধনা সভার আয়োজন চলছে এমন সময় ফোন বেজে উঠল।
‘জি স্যার, হ্যাঁ স্যার, এ এক বিশাল অর্জন স্যার! জি স্যার। কী বললেন? স্যার এটা তো খুবই কঠিন স্যার। পারব কিনা জানি না।
তবে আজ থেকেই গবেষণা শুরু করছি স্যার। ’ বলে ফোন রাখলেন বিজ্ঞানীদের প্রধান। এরপর মুখ গোমরা করে সহকর্মীদের বললেন, ‘বয়েজ, আমাদের খুব কঠিন একটা দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমরা তো মঙ্গল গ্রহে বুদ্ধিমান প্রাণীর অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছি। এবার সরকারি দলে বুদ্ধিমান প্রাণী খুঁজে বের করতে হবে।
’
বুদ্ধিমান মানুষ খুঁজে পাওয়া সহজ কথা নয়। কেননা তারা বলে কম। ভুল করে আরও কম। তাদের সবকিছুতেই যত গুপ্ত তত পোক্ত ব্যাপার। অন্যদিকে বোকারা যত ব্যাক্ত তত ত্যাক্তর দলে।
সবকিছুতেই তাদের আগ বাড়িয়ে বাহাদুরি। দৌড়ে গিয়ে মলে পা দেওয়াতে তাদের জুড়ি মেলা ভার! অথচ এ কথা বলতে গেলেই তারা হৈ হৈ করে উঠবে। উল্টো শুনিয়ে দেবে, আরে ভাই যেখানে দেখিবে ছাই ..., ওই ছাই দেখতে গিয়েই তো পায়ে জড়িয়ে গেল! বোকামীর ফাঁদে এভাবেই বোকাদের ফর্দাফাই হামেশাই ঘটে। অথচ ভাবখানা বুদ্ধির ঢেঁকি!
মজার ব্যাপার আজকাল আর চেহারা দেখে বোকা চেনা যায় না। জলজলে হলুদ প্যান্টের সঙ্গে টকটকে লাল মোজা পড়াটা এখন ফ্যাশন! সুপারষ্টাররা সানগ্লাস রাতেও পরে! সেখানে আপনি ছাড় দিবেন কেন? সুপারম্যান যদি প্যান্টের ওপর জাঙ্গিয়া পড়ে মডেল হতে পারে তাহলে আপনিই বা কেন জুতার ওপর মোজা পড়ে সুপার মডেল হতে পারবেন না? সেক্ষেত্রে আপনাকে কেন বোকা বলা হবে? তাছাড়া ডিজিটাল এ জামানায় কেই বা নিজেকে বোকা সাজিয়ে রাখতে চায়।
অথচ ভাগ্যের কী পরিহাস, বোকামীর ফাঁস গলায় পড়ে চতুর লোককেও অনেক সময় বোকা বনে যেতে হয়।
হেলপারের টানাটানিতেও সিটিং সার্ভিস গাড়িতে উঠেও বোকার মতো আমাদের দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। আশি টাকার প্যান্ট বহু দামাদামির পর আট শ টাকায় কিনে বাসায় এসে বোকার মতো দর্জির শরণাপন্ন হতে হয়। থার্ড হ্যান্ড জিনিস নতুন দামে কিনেও অনেক সময় বোকা বনে যেতে হয়। আম, কাঁঠাল, তরমুজ কিনে বেয়াক্কেল হওয়ার কথা না হয় বাদই দিলাম।
রাজনীতিকেরা জনগণকে সব সময় বোকা বানিয়ে ধোঁকা দিতে চান। ফড়িংয়ের মতো দুরন্ত শ্যালিকাদের প্যাঁচে পড়ে জামাইবাবুকেও বোকা সাজতে হয়। স্ত্রীরাও স্বামীদের বোকা বানিয়ে এক ধরনের রমণীয় সুখ অনুভব করেন। আর প্রেমে পড়লে তো কথাই নেই সে ক্ষেত্রে বুদ্ধিমানও বোকা হতে বাধ্য।
শহরের এক স্মার্ট তরুণী গ্রামে বেড়াতে এলে গ্রামের এক তরুণ তার প্রেমে পড়ে গেল।
ফেরার দিন সেই স্মার্ট তরুণী তরুণকে বলল, সুইট হার্ট, আজ আমাকে এমনভাবে প্রোপোজ করো যাতে শহরে গিয়েও তোমার কথা আমার মনে থাকে।
গ্রামের সরল তরুণ এ কথা শুনে কী বলবে, কী বলা যায় চিন্তায় অস্থির হয়ে উঠল। এ দিকে সময়ও চলে যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত অনেক ভেবেচিন্তে অতি আবেগে পিড়িতঝড়া কণ্ঠে সে বলল, হারামজাদি, কুত্তি, কলঙ্কিনী, মুখ পোড়া শয়তান, আই লাভ ইউ চো মাচ। আমাকে বিয়ে করে আমার জীবন ধ্বংস করে দে ডাইনি!
ইটের জবাব পাটকেলে দিলেও চলে, তাই বলে পিড়িতের জবাব তো আর পাটকেল ছুড়ে দেওয়া যায় না সেকারণেই হয়তো সাহসীরা প্রেমে পড়লেই এমন বোকা বনে যায়।
গুরুবাক্য : যার হয় না আটে তার হবে না আশিতে। হাফপ্যান্ট পড়া আট বছরের একটি বালক যে ভঙ্গিতে চুুষে চুষে আইসক্রীম খায় সেই ভঙ্গিতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আঠারো বছরের যুবক আইসক্রীম খেলেই সর্বনাশ। দুদিনের মধ্যেই তার নামের আগে বা পড়ে যোগ হয়ে যাবে ‘বলদ’ শব্দটি। বন্ধু বাবুইয়ের কথাই বলি। খালাম্মা রুটি ছেকছেন।
রুটি পুড়ে যাচ্ছে দেখে সে ড্রয়ার খুলে বার্নল নিয়ে এলো। বার্নল দেখে খালাম্মার চক্ষু চড়কগাছ! বন্ধু কিন্তু তথৈবচ। তার জোড়ালো দাবি, বার্নল সব ধরনের পোড়াতেই সমান কার্যকর। আসলে বোকামী থেকে মুক্তি পেতে বোকাদের যুক্তির শেষ নেই। তারা শ্যাম্পো দিয়ে পাউরুটি খেয়ে হাসিমুখেই যুক্তি দেখাবে, শ্যাম্পোতে ভিটামিন আছে না! একবার এক বন্ধুকে পাইপে কুকুরের লেজ ঢুকাচ্ছে দেখে বললাম, আরে পাগল! তুই জানিস না, কুকুরের লেজ কখনও সোজা হয় না?
শুনে বন্ধু বলল, আরে আমি কী আর তোর মতো বলদ! আমি তো পাইপ বাকা করতেছি।
এমন উদাহরণ ভুরি ভুরি দেওয়া যাবে। সেকারণেই বলছি, মানুষের কথা থাক। প্রাণীদের আলোচনা হোক। পিঁপড়ার ধারণা পৃথিবীতে দুই রকমের প্রাণী আছে। নিরীহ প্রাণী এবং হিং¯্র প্রাণী।
বাঘ, সিংহ, হায়েনা এরা হলো নিরীহ প্রাণী। কবুতর, মুরগি এবং ছোট ছোট পাখি এরা হলো হিং¯্র প্রাণী। পিঁপড়ার এমন ধারণা দেখে কচ্ছপ তো হেসেই খুন। বোকা আর কাকে বলে! সেও কিন্তু ট্রেনের নিচে চাপা পড়ার ভয়ে রেল লাইন পাড় হওয়ার রিস্ক নিতে চায় না। খরগোশ যখন কচ্ছপকে এ কথা মনে করিয়ে দিল তখন গর্জে উঠলো সিংহ।
এ আর এমন কি? মাথার ওপর দিয়ে উড়োজাহাজ চলে যায় কিছু হয় না সেখানে শরীরের ওপর দিয়ে ট্রেন চলে গেলে আর কী হবে! সিংহের কথা শুনে মুচকি হেসে উঠে দাঁড়াল শিয়াল প-িত। সে বলল, পৃথিবীতে একমাত্র বোকা প্রাণী হচ্ছে মানুষ। কেননা সর্বপ্রথম তারাই আমাকে বুদ্ধিমান প্রাণীর সার্টিফিকেট দিয়েছে। শিয়ালের কথা শুনে টুনটুনি লাফিয়ে উঠল, হ্যাঁ, হ্যাঁ আমিও দেখেছি মানুষের বাচ্চারা সকালে ঘুম থেকে উঠেই টুথপেস্ট খায় হি হি হি...।
মানুষ নিজেদের বুদ্ধিমান প্রাণী বলে মনে করলেও প্রাণীকূলের সবাই প্রায় জেনে গেছে, মানুষের চেয়ে বোকা প্রাণী আর নেই।
কেননা একমাত্র মানুষই খাল কেটে কুমির আনে। মানুষই হুঁশ হারিয়ে নিজের পায়ে কুড়াল মারে। মানুষই মশা মারতে কামান দাগায়। মানুষই ঘুষ দিয়ে হলেও কেরানির কাজ বেছে নেয় মাছি মারার জন্য। আবার এই মানুষই নিজেকে বুদ্ধিমান প্রমাণ করার জন্য অন্যকে বোকা বানিয়ে এপ্রিল ফুল পালন করে।
অথচ এপ্রিল ফুল কোনো ফুলই নয়। বিয়ে করা, পরের জায়গা, পরের জমিতে ঘর-বাড়ি বানানোর কথা না হয় বাদই দিলাম। চতুর মানুষের বোকামীর কথা ভাবলেই হাসি পায়!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।