আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অসমাপিকা, ১৪শ অধ্যায়

সত্য সুন্দরকে ব্রত করি জীবনে ১৩শ পর্ব লিঙ্ক Click This Link লীনার আসন্ন অনুষ্ঠানের চেয়ে পরীক্ষার টেনশন টা বেশী কাজ করছে । তাছাড়া দীপু তার অচেনা নয় যে নানান চিন্তায় পেয়ে বসবে তাকে নিয়ে । তবে বাড়ীর পরিবেশটা হঠাৎ করেই ভারাক্রান্ত হয়ে গেল । সেটা রাকিবের জন্য । সে তার লন্ডন চলে যাওয়া এবং সেখানে ভবিষ্যৎ জীবন কাটাবার কথা জানিয়েছে এবং সে অনঢ় এ বিষয়ে সেটাও জানিয়ে দিয়েছে পরিষ্কার ।

খুব অল্প দিনের মধ্যে সে ঢাকা ছাড়ছে সেটাও নিশ্চিত করেছে । দুই পরিবারের এক পুত্র সন্তান রাকিব , কি করে এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারল কেউ কূল পায় না ভেবে । রেহানা একদিন জানতে চেয়েছিলেন , কোন বিশেষ কারন ছাড়া এতবড় একটা সিদ্ধান্ত নেয়া তার ঠিক হচ্ছে কিনা । রাকিব বলে দিয়েছে যে এ বিষয়ে সে কোন কথা বলবে না । এই বাড়ীর একজনকেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না যে রাকিবের লন্ডনবাসী হওয়াকে সমর্থন করছে ।

কিন্তু কিছুই করার নেই । রেহানা রাকিবের মা , তিনি নানাভাবে সূত্র খুঁজে হয়রান । ল লীনারও ভাল লাগছে না রাকিবের এ বিষয়টা । হুট করে এমন করা ঠিক না । কিন্তু রাকিব ভাইয়াটা এত ভাল , কখনো কারো ক্ষতি হয় এমন কিছু করে না , কে জানে হয়তো কোন বিশেষ কারন আছে ।

লীনা ভাবে যদি জানতে পারতো ও চেষ্টা করতো রাকিব ভাইয়াকে সাহায্য করতে । নিরুপায় হয়ে বসে থাকতে হচ্ছে । এর মাঝে একদিন রাকিব ওর মায়ের হাতে দুটো শাড়ীর প‌্যাকেট দিল । নাম লেখা প‌্যাকেটগুলোর গায়ে । লীনার একটা , রুমানার জন্য আরেকটা।

মিসেস রেহানা দেখলেন খুব সুন্দর দুটো জামদানী শাড়ী ওদের জন্য । রাকিব জানালো পরিচিত একজন অর্ডার দিয়ে বানিয়ে দিয়েছে । মিসেস রেহানা রাকিবকে অনুরোধ করলেন শাড়ী দুটো নিজের হাতে ওদেরকে দিতে । রাকিব 'আচ্ছা তাই হবে' বলে প‌্যাকেট দুটো নিয়ে রাখল । মাকে বলল , ' তোমার যে শাড়ীটা লীনা পরেছিল রুমানার বিয়েতে সেটা কি তুমি আর পরবে? ওকে দিয়ে দিও পরবে ও ।

কিছু মনে করো না আম্মা, আমার মনে হল তাই বললা,' । মিসেস রেহানার মনটা কেমন খচখচ করছে । লীনার এন্গেজমেন্ট এর ব্যাপারে কোন কৌতুহল দেখায় না রাকিব, বরঞ্চ এ প্রসঙ্গে কথা হলে চুপ করে থাকে । আজ আবার এত দামী আনকমন জামদানী শাড়ী লীনার জন্য । সাথে রুমানারটা হয়তো বিষয়টাকে হালকা করবার জন্য ।

দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন মিসেস রেহানা । মা হবার বড় যন্ত্রনা মনে হল ওনার । রাকিবের ফ্লাইট এক সপ্তাহ পরে ; যাবার তোড়জোড় চলছে । মিসেস রেহানা প্রতিদিনই এটা ওটা কিনছেন ছেলের জন্য , গুছিয়ে দিচ্ছেন । আজ আড়ং থেকে দুটো বেল্ট, দুটো ওয়ালেট আরো কিছু দরকারী জিনিস কিনেছেন ।

আলাদা আলাদা করে সব রাখলেন । রাতে খাবারের পর রাকিবকে দেখিয়ে রাখলেন জিনিসগুলো । তারপর ওর পুরোন মলিন হয়ে যাওয়া ওয়ালেটটা চাইলেন । রাকিব দেখিয়ে দিল ড্রয়ার; বললো, 'আছে ওখানে বের করে নাও' । মিসেস রেহানা সেটা থেকে সব বের করে করে রাখছেন , চমকে হঠাৎ দেখলেন রাকিবের ছবির পেছনে রাখা লীনার একটা ছবি , পুরোন ।

কোন গ্রুপ ছবি থেকে কেটে রাখা হয়েছে । কেমন অপ্রস্তুত হয়ে গেলেন তিনি । এক এক করে অনেক কথা তার মনে হচ্ছে । কেন যেন মনে হল তিনি বুঝতে পারছেন রাকিবের এভাবে দেশ ছেড়ে যাবার কারন । লীনার বিয়ের বিষয়টা সে মেনে নিতে পারছে না ।

মিসেস রেহানা আদর্শ নিয়ে নীতি মেনে মাথা উঁচু করে এতটা দিন পার করে এসেছেন । আজ নিজেকে বড় অসহায় মনে হল । একজন 'মা ' রেহানা এতবড় পৃথিবীতে কেমন অক্ষম অসাড় একা হয়ে গেলেন । তার সন্তান, তার সুবোধ সুশীল ভাল মানুষ ছেলেটা এমন একটা বেদনার সাঁকোতে পা রেখেছে যেটার অপর প্রান্ত কোন তীরের ছোঁয়া পায়না, পাবেও না কোনদিন । কেন এমন হোল ? আবার মনে হল লীনার মত মেয়েকে যে চিনতে পারে সেকি তাকে ভাল না বেসে থাকতে পারে ।

উনি চাচী হয়েও মেয়েটাকে কেমন সারাক্ষন মনে রাখেন । ধীরে ধীরে রাকিবের ওয়ালেটটা গুছিয়ে অন্য সব কিছু ঠিক করে রেখে বেরিয়ে এলেন । কোথায় যাবেন কার কাছে যাবেন । তার প্রিয় সন্তানের কষ্ট নিজের বুকে বড় বাঁজল যেন । একটা আনন্দ অনুষ্ঠান এগিয়ে আসছে ।

রাকিবের চলে যাবার বিষাদ সেই আনন্দকে আসতে দিচ্ছে না বাড়ীর চৌহদ্দির মধ্যে । একদিন রাকিব তার চাচীর কাছে গেল । রাকিব: চাচী আমার যাবার দিন চলে আসছে, কোন প্রয়োজন হলে আমাকে জানাবেন ; লন্ডন তো বেশী দূরে নয়, আজকাল যোগাযোগ ব্যবস্থা এত ভাল । মিসেস সালমা: ঠিক আছে বাবা মন যখন ঠিক করেছো যাও। তবে না গেলে ভাল হত ।

তোমার জন্য আমাদের সবার মন খারাপ হবে । ভাল থেকো বাবা । চাচীর সাথে এসব কথা বলা গেলেও মায়ের সামনে কোন এমন কথা বলা সম্ভব নয় । ভাল করে তাকিয়ে দেখতে পর্যন্ত পারে না মায়ের দিকে । সবাইকে অন্ধকারের মধ্যে রেখে তার এই চলে যাওয়া ।

যাবার আগের রাতে রাকিব তার মায়ের হাতে ব্যাংকের চেকবইটা দিল । তিনটা পাতায় সিগনেচার করে রেখেছিল । টাকার অংক বসানো নেই । বলল, ' আম্মা আমার একাউন্টে ভাল ডিপোজিট আছে, লাগে নি কখনো তাই জমেছিল; তোমাদের লাগলে তুলে নেবে । আর আম্মা লীনার বিয়েটা যেন ঠিকঠাক মত হয়, অর্থের জন্য কোন অনর্থ ঘটতে দেবে না।

টাকা যা লাগে তুলে দিও । আমি হয়তো থাকতে পারবো না সে সময়ে । দেখো যেন কোনভাবে কোন ঝামেলা না হয় । মেয়েটা বড় ভাল । ' মিসেস রেহানা দেখলেন রাকিব অন্যদিকে ফিরে গেছে ।

তার অভিব্যক্তি লুকোবার জন্য একটা কিছু খুঁজছে মনে হল । মিসেস রেহানা: বাবা তোমরা সবাই ভাল করে জানো লীনা আমার কতটা স্নেহের , আমি থাকতে কোন সমস্যা হবে না; তুমি ভেবো না । ভাবনাগুলো কি কারও বারন শোনে? শুনলে কত অঘটন বন্ধ হয়ে যেত পৃথিবীতে । চলে গেল রাকিব লন্ডনে । সেখানে তার চাকরি ঠিক করা আছে ।

তার বাবার নামে কেনা একখানা বাড়ীও আছে সাউথে । সেটাতে থাকবে না বলে আগেই বলে বাড়ীও ঠিক করে রেখেছে । লন্ডনের আলো বাতাসে সে বড় হয়েছে তবু তাকে এখানে কেমন পরবাসী মনে করে বয়ে নিয়ে এসেছে শরীরটাকে । মনটা পড়ে আছে ঢাকায় । যেখানে লীনার বিয়ে নিয়ে কত কথা কত আয়োজন ।

চলবে..... পরের অধ্যায় Click This Link  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।