আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অসমাপিকা, ১৮শ অধ্যায়

সত্য সুন্দরকে ব্রত করি জীবনে Click This Link মধুর প্রতিশোধের জন্য প্রচুর মিথ্যার বেসাতি শুরু হয়ে গেল । প্রথম রুমানা জানালো রাকিবকে একদিন যে তাদের মা অসুস্থ । রাকিব বার বার যোগাযোগ করে কিন্তু মিসেস রেহানাকে ফোনে পায় না, মনটা উতলা হয় তার । ইমনকে অনুরোধ করে যেন মিসেস রেহানার অসুস্থ অবস্থায় সব রকম সহযোগীতা নিয়ে পাশে থাকে । এর মধ্যে এক দিন রুমানা জানায় তার মাকে ডাক্তাররা বলেছে উন্নত চিকিৎসার জন্য বাইরে নিয়ে যেতে এবং এটাও জানায় যে উনি ছেলের কাছে লন্ডনে যেতে চান সেই উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজনে ।

রাকিব শুনে স্বস্থি পায় তার কাছে রেখে মাকে চিকিৎসা করানো যাবে এ কথা ভেবে । কিন্তু মিসেস রেহানার শর্ত জেনে বিপন্ন বোধ করে , শর্ত দিয়েছে রাকিব নিজে থেকে যেন এসে নিয়ে যায় তাকে অন্যথা উনি যাবেন না কিছুতেই । রাকিব কোন উপায় খুঁজে পায় না । মায়ের অসুস্থতার কথা জানা অবধি তার মনটা ভাল নেই । দেশে যাবে এবং সেই এক লীনার সাথে দেখা হয়ে যাবে , হয়তো অনেক সুন্দরী সে এখন ।

বিয়ের আয়োজনে মেয়েরা নাকি সুন্দর হয়ে যায় । আপন মনে হেসে ওঠে রাকিব, লীনা কোনদিন কি অসুন্দর ছিল ওর চোখে ? পৃথিবীর সবটুকু সৌন্দর্য সাধ করে যেন লীনাতেই বাসা বেঁধেছে; আর তাই রাকিবের বাধঁভাঙ্গা ভাল লাগা সেইখানে । কিছু ভাল লাগে না তার; মায়ের অসুখ বলে কথা । রুমানাকে জানিয়ে দেয় সে আসবে মাকে নিতে তবে বেশীদিন ছুটি নিয়ে দেশে কাটানো ঠিক হবে না, যত কম সময়ে সম্ভব যেন সে মাকে নিয়ে লন্ডনে ফিরতে পারে সে ব্যবস্থা যেন করে রাখা হয়। সবাই সব কথায় রাজী হয়ে যায় ।

রাকিব জরুরী প্রয়োজনে দেশে যাচ্ছে অসুস্থ মাকে আনতে, তবু মনে হোল লীনার জন্য কিছু নেয়ার কথা যা পেলে সে খুশী হবে, যা দিতে পারলে রাকিব নিজেও খুশী হবে । ছোটবেলা থেকে লীনার পছন্দ পুতির ব্যাগ, কিনল একটা আর তার মধ্যে নিল ছোট একটা বক্স যার মধ্যে মুক্তা এবং হীরা বসানো একটা আংটি , দামটা একটু বেশী পড়লো । ভালবাসার জন্য দাম দিতে হয়, সেখানে কৃপনতা করলে নিজেকে ঠকানো হয় এই কথাটা সত্য চিরকাল । মানুষ ভালবেসে প্রান পর্যন্ত বিসর্জন দিতে পারে আর এটাতো সামান্য অর্থ একটা ছোট আংটির জন্য । আংটি কিনে ফেলেছে ঝোঁকের মাথায় পরে মনে হল বিয়ের কণে লীনা, এ আংটি কি আদৌ ওর আঙুলের স্পর্শ পাবে ? নাই বা পেলো লীনা দেখে খুশী যদি হয় সেই তো অনেক পাওয়া ।

ভালবেসে মানুষ অবুঝ হয়ে যায় বোকা হয়ে যায় বেহিসেবী বনে যায় রাকিব টের পায় । অন্য সবার জন্যেও কিছূ কিছু জিনিস কিনে নিয়ে প্লেনে উঠল রাকিব । রাকিবের সকাল এগারটায় এসে পৌছুবার কথা , এয়ারপোর্টে ছোটবোন রিমি আর রুমানার হাজবেন্ড গেল। রুমানা ভাল করে বুঝিয়ে দিয়েছে ওদের যেন অভিনয় টা ভাল করে চালিয়ে যায়, মায়ের অসুখ বলে কথা। দূর থেকে রাকিবের দেখা পাওয়া মাত্র দুজনের পেট ফেটে হাসি আসছিল , কিন্তু বাড়ীতে এতবড় একটা নাটকের মহড়া চলছে সেখানো কোন বোকামী করা অনুচিৎ ।

দুইজনে বেশ করুন মুখ করে রাকিবকে রিসিভ করলো । বাড়ীতে রওয়ানা দিয়ে রাকিব সবার কুশলাদি জানতে চাইল বিশেষ করে মায়ের কথা । ওরা যেমন করে জবাব দিচ্ছে রাকিবের ভাল লাগল না , এত হালকা ভাবে কি করে নিতে পারে ওর মায়ের অসুস্থতা , ভালই হয়েছে ও স্বয়ং এসে নিয়ে যাবে মাকে লন্ডনে। বাড়ীর প্রায় কাছাকাছি এসে রাকিবের মনে হোল আসলেই রিমিটা অন্যরকম হয়েছে , আর রুমানার হাজবেন্ড এর কি যায় আসে তার তো আর নিজের মায়ের অসুখ করেনি । ওরা দুজন এয়ারপোর্ট থেকে ফেরার সময় এমন উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠছিল বারবার যে সত্যি রাকিবের মনে হল মায়ের জন্য তাকেই প্রয়োজন ।

প্রথমেই মায়ের ঘরে ঢুকল রাকিব । মিসেস রেহানা ঝরঝর করে কেঁদে ফেললেন সুখের কারনে । সন্তানের মুখ এতদিন পরে দেখে বুকটা ভরে গেল । রাকিব ভাবছে মায়ের কত কষ্ট হচ্ছে অসুখে , হয়তো চেপে যাচ্ছে । রাকিব: আম্মা তুমি আর কোন চিন্তা করবে না আমি চলে এসেছি , ওখানে কত ভাল ব্যবস্থা আছে চিকিৎসার সব ঠিক হয়ে যাবে ।

আজকে কেমন আছো ? মিসেস রেহানা: এখন তুই এসেছিস আর কি করে ভাল না থাকি ? তুই ফ্রেশ হয়ে নে , কোন চিন্তা করিস না । তোর সব চিন্তা সব উৎকণ্ঠা দূর করবার জন্য তোর এই আম্মা আছে । রাকিব স্যূটকেস খুলে সবার জন্য আনা উপহার মায়ের কাছে দিয়ে দিল শুধু লীনার জন্য আনা ব্যাগ ছাড়া । ওটা সে নিজে হাতে দেবে । রাকিব এসেছে জেনে এক এক করে সবাই চলে এল দেখা করতে , আব্বা আর ছোট চাচা বাসায় নেই তাই দেখা হল না ।

কিন্তু দুপুর পার হয়ে বিকেল হয়ে এল একজনের দেখা মিলছে না ; এই একজন সকল জন হয়ে সব হয়ে তার চোখের সামনে ছবি হয়ে আছে অথচ তার কি এমন ব্যস্ততা যে রাকিব এসেছে জেনেও একবার এল না । কেন আসছে না লীনা এখনও ওদের উপরের তলায় । নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে রাকিব খাবার টেবিলে বসল । মিসেস রেহানা বললেন একটু পরে চা পেলে ওর অসুবিধা হবে কিনা । রাকিব ওর মায়ের স্বাভাবিক চলাফেরায় স্বস্থি পেলো , কিন্তু লীনার এই অনুপস্থিতি তাকে বার বার উদাস করে ।

কেউ তো কিছু বলছে না ওর শরীর ঠিক আছে তো ? কিছু হয় নি তো ? শেষ পর্যন্ত বলেই ফেলল, 'আম্মা, লীনা কি বাড়ীতে নেই ? ওকে দেখছি না যে, আমি এসেছি সেই কত সময় আগে । ' মিসেস রেহানা: নাহ্ সব ঠিক আছে , তোর জন্য নুডলস্ রান্না করতে বলেছিলাম হয়তো সেটা করতে গিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে ; একটু বস আসবে এখুনি । তোর চা সেইজন্য দেরী করে দিচ্ছি । মেঘ না চাইতে জল । লীনা তার জন্য নুডলস করে নিয়ে আসবে ভাবতে ভাল লাগছে ।

লীনার হাতের নুডলস রাকিবের বিশেষ পছন্দ ছিল , কতবার খেতে চেয়েছে কখনো পেয়েছে কখনো পায়নি অথচ আজ যখন লীনার দেখা পাওয়া শুধু তার এত আকাঙ্খিত তখন সেই লীনার হাতের নুডলস ! রাকিবের এত আনন্দ হচ্ছে যে নিজেই বুঝতে পারছে না, অনেক বিষয় আছে সহজ হলেও অযাচিতভাবে উপস্থিত হলে বোধগম্য হওয়া কঠিন । নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে একটা ম্যাগাজিন টেনে নিল । প্রতিটা সেকেন্ড এত দীর্ঘ মনে হচ্ছে আজ , কেন এখনো আসছে না লীনা । সিড়িতে কোন পায়ের শব্দও হচ্ছে না ভাবতে না ভাবতে ঢাকা দেয়া একটা বাটি নিয়ে টেবিলের কাছে এসে দাড়ালো লীনা ; একটা হালকা সবুজ রঙের সালোয়ার কামিজ পরে আছে, ওড়না মাথায় শুধু মুখটা দেখা যাচ্ছে । বাটিটা নি:শব্দে রেখে দাড়িয়ে থাকল মুখটা নীচু করে ।

রাকিব: কেমন আছিস , সব খবর ভাল তো ? লীনা: হু , তুমি ভাল আছো ? খেয়ে নিও । মিসেস রেহানা: তুই এখানেই বস , চা খাবি এখানেই। রাকিবকে তুলে দে বাটিতে । রাকিব লক্ষ্য করল লীনা কিছুতেই মুখ তুলছে না আবার ওড়না দিয়ে কেমন ঢেকে রেখেছে নিজেকে , সপ্রতিভ হয়ে কিছু বলছেও না ; হয়তো দীপুর সাথে বিয়ে হয়ে যাচ্ছে ক'দিন পরে তাই এখুনি একটা বউ বউ ভাব নিয়ে নিয়েছে । লাজনম্র লীনাকে দেখে রাকিবের বুকের ভেতরটা কেমন যেন ভেঙ্গে চুরমার হয়, কি বিশাল শূণ্যতা সেই বুকের ভেতর ! সুখে থাকুক ওরা ; রাকিব মনে প্রানে চায় লীনা সুখী হোক ।

পরিবেশ হালকা করবার জন্য বলল রাকিব, 'কি রে তুই কি পর্দা করা শুরু করেছিস নাকি , আগে তো মাথায় ওড়না দিয়ে রাখতি না '। লীনা: নাহ্ আসরের নামাজের পরে ওযু রেখেছি মাগরেব পড়বো তাই মাথায় কাপড় দিয়ে আছি । রাকিবকে নুডলস তুলে দিয়ে নিজেও নিল । লীনা চায়ের কাপে চুমুক দেবার সময় ওর অনামিকায় আংটির দিকে চোখ পড়ল রাকিবের । খুব যেন চেনা চেনা এ আংটি; পান্না আর মুক্তোদানা দিয়ে তৈরী এমন একটা আংটি অনেকবার মায়ের হাতে দেখেছে ছোটবেলায় ।

সব মনে পড়ছে রাকিবের এক এক করে , সেই ছোট্ট রাকিব একদিন ওর মায়ের আঙুল থেকে খুলে নিয়ে পরেছিল নিজের আঙুলে । ছোট আঙুলে সেটি আরেক হাত দিয়ে ধরে রাখতে হয়েছিল । এটা তার তখনই নিয়ে পরে থাকবার সখ অনেক কষ্টে মিসেস রেহানা দমন করিয়েছেন । রাকিব বলতো ,' আম্মা এটা আমার , আমি বড় হয়ে পরব '। মিসেস রেহানা: ঠিক করেছি তোর বউকে দেব, এটা আমার মায়ের হাতের আংটি ।

' রাকিব: আমার বউকে এটা কেন দেবে ? দিতে পারবে না , সে তার আম্মার আংটি পরবে; আমার আম্মারটা কেন ? খবরদার একদম দেবে না । মিসেস রেহানা: এটা তো মেয়েদের আংটি তুই বড় হয়ে পরবি মানে কি? তোর বউ পরবে । রাকিব: দিয়ে দেখো আমার বউকে এটা , আমি মারবো ধরে বউকে , খুব জোরে মারব তারপর কেড়ে নেব ঠিক বলে দিলাম । মিসেস রেহানা আঁচলে মুখ ঢেকে হাসি লুকাবার যে চেষ্টা করতেন সেটা রাকিব তখন বোঝেনি কিন্তু আজ কেন মনে হল তার মায়ের সেই চোখে অবাধ হাসি জমে ছিল সেইদিন । রাকিবের হঠাৎ হাসি পেয়ে গেল ; দ্রুত ফিরে এল বর্তমানে, এই বড় বেলায় --যেখানে সহজ করে কিছু চাওয়া যায় না, চাইলেও পাওয়া বড় কঠিন ।

চলবে......  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।