আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অসমাপিকা , তৃতীয় পর্ব ।

সত্য সুন্দরকে ব্রত করি জীবনে

অসমাপিকা , দ্বিতীয় পর্ব Click This Link উচাটন মন নিয়ে পর পর দুকাপ চা শেষ করলো একা বসে । কি থেকে কি হয়ে গেল । ও গতকাল থেকে নিজের মত করে সাজিয়ে গুছিয়ে বানিয়ে রাখল এক দৃশ্য অথচ মঞ্চস্থ হয়ে গেল ভিন্ন এবং পর্দা পড়েনি এখনও । কবে কি ভাবে শেষ হবে দৃশ্য ! লীনার ইচ্ছে করছে দূর পাল্লার কোন এসি বাসে বসে রবীন্দ্রসঙ্গীতের সূরে মন ভাসিয়ে একা কোথাও চলে যেতে । একা নাকি পাশে একজন বসে থাকবে সাদা শার্ট , কালো প‌্যান্ট পরা ।

রাগী , অভিমানী ! নাহ্ , কিছু ভাল লাগছে না । উঠে পড়ে , আজ আর ক্লাসে যাওয়া নয় । সোজা বাসায় রওয়ানা হল সে । রিকশায় যেতে যেতে বুকের ভেতরে শীত শীত করতে লাগল এই গরমেও । কোথায় যেন এক শূণ্যতা বিশাল , কে যেন সব নিয়ে যেতে চাইছে , ওর অন্তর জুড়ে শূণ্য ভিটায় কার নি:শ্বাস ! পেছন থেকে ধাক্কা লাগল আরেকটা রিকশার , সম্বিত ফিরে পেল সে ।

বাসায় ফিরে বুঝতে পারল তার গত রাত জাগার ধকল , দীপুর উদভ্রান্ত চেহারা এসব তাকে কতটা ক্লান্ত করেছে । গোসল সেরে কোনমতে দুটো মুখে গুজে দিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই নিদ্রাদেবী তাকে টেনে নিল দ্রুত । বিকেলে ঘুম থেকে উঠতে দেরী হল তার । আসর নামাজ পড়বার জন্য মা কয়েকবার ডাকবার পরে উঠে দেখে বড় চাচী এসেছে । দুপুরে ফিরে দোতলা পার হবার সময় বড়চাচী ওকে ডেকে বলেছিলেন বিকেলে ওর জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে ।

কে জানে এখন সেই সারপ্রাইজ নিয়ে উপস্থিত কিনা । চাচীর দুই মেয়ে রুমানা আর রিমি , ছেলে রাকিব । তারা মেনেই নিয়েছে তাদের মায়ের বেশী বেশী আদর- ভালবাসা তাদের এই চাচাতো বোনের জন্য । বড় বোন রুমানা বিশেষ স্নেহের চোখে দেখে লীনাকে । রাকিব বরাবর তার এই তিন বছরের ছোট কাজিনকে আলাদা করে দেখে ; কতবার ছোটবোন রিমিকে শুনতে হয় কেন লীনার মত হয় না সে সব কিছুতে ।

রিমি লীনাকে সহ্য করতে পারে না , রিমি অনেকটা তার বাবার মত , উদ্ধত অহংকারী এবং বাস্তববাদী । দাদার তৈরী এই বাড়ীর দোতলায় বড় চাচার পরিবার , তিনতলায় লীনার তিনবোন বাবা মায়ের সংসার । লীনা সবার বড় , দীনা আর টিনা পরপর দুই বোন তার । বড় চাচীর তাড়া আছে বলে তার কাছে এসে দেখাল চাবীর গোছা রূপোর । বড় চাচী ছুটি নিয়েছেন অফিস থেকে , জমানো ছুটি আছে তার ।

তারপর চলছে সংসারে পরিচ্ছন্নাতা অভিযান । একদিন লীনা চাচীর মায়ের এক ছবিতে চাবির গোছা দেখে বিস্মিত হয়ে বলেছিল , ' এত বড় চাবির গোছা '! চাচী হেসে বুঝিয়েছিলেন সে যুগে ওই লোক দেখানো চাবিগোছাই মেয়েদের অহংকার । ওটা বুঝে নিয়ে মেয়েরা বুঝত তার সব পাওয়া হল । পুরোন জিনিস বের করে খুঁজে তার মায়ের সেই চাবিগোছা ধুয়েছেন কাল রাতে পেষ্ট দিয়ে , যতটা ঔজ্জল্য আশা করেছিলেন হয় নি ; অসুবিধা নেই । লীনাকে জানেন তিনি , মেকী ঔজ্জল্যের ধার ধারেনা মেয়েটা ।

নিজের দুই মেয়েকে বলেছেন , এটা উনি লীনাকে দেবেন , তারা অমত করেনি । এ্যান্টিকে লীনার বিশাল আগ্রহ , তারপরে আবার চাচীর মায়ের ব্যবহৃত জিনিস । তবু মনটা খচখচ করতে লাগল । বলল , ' চাচী, রুমানা আপুরা কি মনে করবে তাদের নানীর জিনিস । ' চাচী , ' ভুল বললি , এটা এখন আমার জিনিস , তাদের নানীর ছিল ।

তা'ছাড়া আমার অনেক দামী দামী গহনা আছে , সে সব তোকে আমি দিচ্ছি না , তাদের জন্য রাখা আছে । ব্যাস , ল্যাঠা চুকে গেল । লীনার কাল থেকে আজ এ পর্যন্ত মনের ভেতর যে ভাঙ্গা গড়া খেলা চলছে সেটা কি চাচীর ষষ্ঠ ইন্দ্রয়ে ধরা পড়েছে , মাঝে মাঝে চাচীর কিছু কাজ আর কথায় অবাক হয় সে । আজ এমন সময় এমন লোভনীয় আকর্ষনীয় একটা জিনিস উপহার পাচ্ছে সে । আনন্দে তার চোখ মুখ চিকচিক করছে , ধরা যায় তাকালে ।

চাচী তার হাতে চাবির গোছা ধরিয়ে দিলেন , বললেন , ' তুই এটার মর্ম বুঝবি জানি । তোর কাছে সব সবকিছু যত্ন পায় । তুই কিছুদেখি অবহেলা করতে শিখিসনি এক নিজেকে ছাড়া । সেটা ঠিক না ' । লীনা শুনছিল , তার ভাল লাগছিল শুনতে আজ এ মূহুর্তে ।

এক একবার ইচ্ছে করছিল দীপুর ব্যাপারটা চাচীকে বলবে কিনা , চাচী তার বন্ধুর মত , যদিও মায়ের বয়সের কাছাকাছি । তারপর কি ভেবে চেপে গেল । চাচী চলে যেতে যেতে ঘুরে দাড়ালেন তারপর উদাস ভাবে বললেন , ' এ সব চাবি টাবি কিছু না , সহায় সম্পত্তির জন্য তালা-চাবি ব্যবহারে আর কি হয় ? কিছু হয় না আল্টিমেটলী । আসল চাবির খেলা মনের ঘরে । সাবধানে , শক্ত করে চাবি দিতে হয় মনে ।

অযাচিত প্রবেশ , অনধিকার প্রবেশ , অযোগ্য প্রবেশের সুযোগ যেন কেউ না পায় । তা 'ছাড়া মনটা যেন বেরিয়ে যেখানে সেখানে না চলে যায় , খুব সাবধানে যত্নে মনের ঘরের চাবি ব্যবহার করতে হয় , সতর্ক থাকিস ' । কথা শেষ করে এক গাল হেসে চলে গেল । লীনা হা করে তাকিয়ে রইল চাচীর চলে যাবার পথে , দরজার দিকে । চাচী কি অন্তর্যামী ! আজ তার জন্য এসব বলার মানে কি ? হয়তো চাচী সচরাচর যেমন বলেন বলেছেন , তার মনটা পরিস্থিতির সাথে বিচার করছে এ সব ।

মিজান কি ঠিকমত কথা বলতে পেরেছে দীপুর সাথে । জানে লীনা দীপু ওর অনুরোধ ফেলতে পারবে না , এক একবার তবু শঙ্কিত হয় যদি দীপু কথা না শোনে , যদি সত্যি রওয়ানা দেয় কাল কক্সবাজার , যদি দীপুর কোন অমঙ্গল হয় ! জীবনে এত 'যদি' পদে পদে , আড়ষ্ট করে মানুষকে ; মানুষকে টেনে রাখে সামনের পথ থেকে সেটা লীনার চেয়ে কে আর জানে বেশী ! চলবে........ পরের অধ্যায় Click This Link

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।