আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অসমাপিকা ,১১শ পর্ব

সত্য সুন্দরকে ব্রত করি জীবনে নবম ও দশম পর্ব Click This Link বাসে পাশাপাশি বসে আছে লীনা আর দীপু। আজ দুপুরে পুকুর পাড়ে দীপুর কথাগুলো দুজনকে অদৃশ্য রেশম কোমল আবরনে ঢেকে দিয়েছে । লীনা সেটা ভেদ করে বাসের জানালায় চোখ মেলে দূরে তাকিয়ে, যেন স্পর্শের খুব কাছের মানুষটা থেকে দূরে নিজেকে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে । চোখ বন্ধ দীপুর, পেছনে হেলান দিয়ে আছে । কেমন করে দীপু এতটা আবেগপ্রবন হয়ে পড়ল আজ ! আড়ষ্ট ভাব কাটাতে লীনা কথা শুরু করলো; অ্যাকশন এইড অফিসের বাবুর্চীর রান্নার হাত ভাল , ওরা আপ‌্যায়ন করেছে আন্তরিকতা নিয়ে ইত্যাদি বলে হালকা করতে চাইল পরিবেশ ।

চোখ বন্ধ রেখেই হু হা করছিল দীপু । হঠাৎ চোখ খুলে সরাসরি লীনার দিকে চাইল; বলল, ' পুকুরের কাছে আজ কি কি বলে ফেলেছি , কি যে হয়েছিল আমার'। লীনা, 'থাক্ না ওসব কথা । বাইরে দেখ, সবুজের কত প্রকার ভেদ ; গাঢ়, হালকা, কালচে, হলুদ, উজ্জ্বল চকচকে কত রকমের সবুজ । আবার দেখো বৃষ্টি ঝরে গেলে পরে পাতারা কেমন স্নিগ্ধ সলাজ সদ্যস্নাতা রূপ দারন করে ।

প্রকৃতি নানা রঙের ওপর তার সযত্ন পরশ বুলিয়ে দিয়ে কেমন বদলে দেয়; মনের রঙের ক্ষেত্রেও সেটা প্রযোজ্য ' দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল দীপু । তারপর বলল , ' আমার ওপর পারিবারিক কিছু দায়িত্ব আছে আমি এড়াতে পারি না । আমার অবস্থানের কোন ছেলে পারে না । কি করে আবেগ প্রবন হই ? আমাদের কি মানায় ওসব ?' লীনা, ' হু , আমারও , আমি তিন বোনের বড় জন । পুত্রহীন পিতামাতার প্রথম সন্তান , অবলম্বন তাদের ।

চেষ্টার কোন ত্রুটি করতে চাইনা আমি '। দীপু, 'সবচেয়ে নিষ্ঠুরতা কি জানো ? আমাদের মত লেখা পড়া করা মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে মেয়েদের মানসিক গড়ন এমন যে তারা হৃদয়বৃত্তিকে এড়িয়ে যেতে পারে না । রবীন্দ্র, নজরুল, সুনীল, সমরেশ রা জীবনের বিভিন্ন বাঁকে এদের বিভিন্ন দিক্ নির্দেশনা দেন । তারপর তাদের অভীরুচি অন্য ধাঁচের হয়ে যায় । অথচ জীবনের হিসেবী জালের মধ্যে ছটফট করে প্রান ।

প্রতি পদক্ষেপে এদেরকে সতর্ক থাকতে হয়; তা নাহলে বাস্তবের রূঢ়তা ওদের ছুড়ে ফেলে দেয় গভীর নিকষ আস্তাকুড়ের ভেতর । বিশেষ করে ছেলে হয়ে জন্মানো আমাদের দেশের মধ্যবিত্ত পরিবারে বিভিন্ন ধরনের দায়িত্বের বোঝা নিয়ে জন্মানো ছাড়া আর কিছু নয় । স্বনির্ভর হতে হতে অনেক অনুভুতি শুকিয়ে নিষ্প্রান কাঠ হয়ে যায় ; রোমান্টিক মনটা পেশাগত জটিলতায় চাপা পড়ে যায় । দীর্ঘদিনে আচ্ছাদিত দূর্বাঘাসের মত ফ্যাকাশে রুগ্ন অবস্থা । সময়ের সিদ্ধান্ত অসময়ে নিতে গিয়ে সমস্যার অন্তহীন ঘূর্ণিপাক ।

ধনী পরিবারের ছেলেদের এতসব দু:চিন্তা করতে হয় না । তাদের জন্য হৃদয়বৃত্তিকে প্রশ্রয় দেয়া সহজতর । দুর্ভাগ্যজনক ভাবে তারা হৃদয়ের গভীর উপলব্ধিকে ঠিক অনুধাবন করতে পারে না । কিছু ব্যতিক্রম যে নেই তা নয় ; যেমন তোমার রাকিব ভাই । ধনী পরিবারের সন্তান হয়েও তার মধ্যে সুসংহত শালীন একটা বোধ আছে ।

শুনেছি যে উনি একটু অন্যরকম । কে জানে কোথায় কোন্ মানবীর জন্য এক মানবের আত্মনিবেদন কিনা । নিরন্তর সাধনা । ' লীনা অবাক হয়ে যায় দীপুকে এমন করে এত কথা বলতে দেখে । বলে , আমাদের একাডেমিক দিকে মনোযোগ দেয়া দরকার ।

লেখা পড়া শেষ না করে আর অন্য কোন কথা নয় ; আবেগের ঝুড়ি ডালা বন্ধ করে রেখে দিতে হবে '। কেমন কঠোর শোনালো কথাগুলো । দীপু জানে লীনাকে তাই এ সব কথার পরেও কেন যেন খুব ইচ্ছে করল লীনার হাতটা একটু খানি ধরতে । পারল না । অনেক ইচ্ছা পরিস্থিতির কারনে ত্যাগ করতে হয় , এটাই ভব্যতা এটাই সভ্যতা ।

শুধু গভীর চোখে চেয়ে রইল লীনার মুখের দিকে । মনে মনে বলে লীনা, 'দীপু তুমি আর কিছু নাইবা দিলে , দুচোখের গভীর মায়ায় যে বন্ধনে জড়িয়েছো সেই ঢের, সে আমার অনেক' । পথ দ্রুত ফুরিয়ে আসে; দুজন দুজনকে মনে প্রানে যতটা কাছে টানে ততটাই তূরত্ব সৃষ্টির প্রচেষ্টা প্রকাশ করতে করতে ফিরে যায় পুরোন চেনা ঠিকানায় । চলবে..... পরের অধ্যায় Click This Link  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।