আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অসমাপিকা , সপ্তম পর্ব

সত্য সুন্দরকে ব্রত করি জীবনে

ষষ্ঠ পর্ব Click This Link একটা নতুন অভিজ্ঞতা হয়ে গেল লীনার । চাচাতো বোন রুমানার সাথে সাথে সেও আবেদন করেছিল অ্যাকশন এইড নামের এন জিও তে । ওদের পাঠানো ইন্টারভিউ কার্ড হাতে পেয়ে সিদ্ধান্ত নেয় যাবে ইন্টারভিউ বোর্ডে । জানে ওর হবে না এ চাকরী । চাকরীর এই দুর্মূল্যের বাজারে ।

রুমানার লন্ডনের ডিপ্লোমা মাস্টার্সের পরেও , এখানে ট্রেনিং আছে দুটো । লীনার কেবল অনার্স পাশের যোগ্যতা , রেজাল্ট বরাবর ভাল তার । অ্যাকশন এইড নামের সাথে একজন মহীয়সী নারীর নাম জড়িয়ে আছে । তার যথার্থ মূল্যায়ন হবার আগে তাকে চলে যেতে হল পৃথিবী ছেড়ে । মৃত্যু সবার জন্য অবধারিত , তবে নাসরিন হকের রহস্যময় মৃত্যুতে ক্ষুব্ধ , ক্রুদ্ধ হয় লীনা মনে পড়লে ।

চাকরীটা পেলেও তার করা হবে না , মাস্টার্স আরো অনেকদিন বাদে । তবু নাসরিন হকের স্মৃতিধন্য প্রতিষ্ঠানে ঘুরে আসবার সুযোগ কাজে লাগাতে চাইল সে । ইন্টারভিউবোর্ডে যখন তার কাছে জানতে চাইল এখানো চাকরীর ব্যাপারে আগ্রহী হবার কারন তখন সে বলেছিল , ' নাসরিন হকের মত একজন গুনী ক্ষনজন্মা বাংলাদেশী নারী যিনি অল্প বয়স থেকে দীর্ঘদিন পাশ্চাত্যে শিক্ষা লাভ করে এদেশের মানুষ বিশেষ করে মেয়েদের ভাগ্যন্নোয়নের জন্য আত্মনিবেদন করেছিলেন অ্যাকশন এইডের সাথে জড়িত ছিলেন , এই প্রতিষ্ঠানকে কাছ থেকে দেখবার ইচ্ছা নিয়ে এখানে আসা । ' বেশ সাবলীল ভাবে বলে গেল কথা এসব যেন নিজের সাথে বলছে । ইন্টারভিউবোর্ডের তিনজন তার দিকে চেয়ে থাকল , লীনা তাদের সে দৃষ্টিপাতের মর্ম হৃদয়ঙ্গম করতে পারলনা ।

চাকরীটা যেহেতু সে জরুরীভিত্তিতে চাইছে না , তাই কোনকিছু নিয়ে তার মাথাব্যাথা নেই । ইন্টার ভিউবোর্ড থেকে বেরিয়ে মনে হল তার প্রিয় এক নারীকে নিয়ে কথা বলবার এমন একটা যথার্থ সুযোগ পেয়ে সে ধন্য । আজকাল কে কার কথা শোনে , কে কার জন্য ভাবে ? আর পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে যে সে আরো ধর্তব্যের মধ্যে পড়ে না । বেঁচে থেকে কত জন মরে আছে তাদের দিকে ফিরে তাকাবার লোক কই ? বাসায় ফিরল রুমানার সাথে । বাসার সব ঠিক আছে আবার নাই ।

বড় চাচা একাই একশ উপদ্রব সৃষ্টি করবার জন্য । অপ্রাপ্ত বয়স্ক , অশিক্ষিত হলেও কথা ছিল । একজন বয়স্ক , উচ্চশিক্ষিত , ধনী ব্যক্তির উপদ্রব সহ্য করা কঠিন । কোন কিছুতে সন্তুষ্ট হন না উনি । লীনার বাবারা দুইভাই দুই বোন , এই চাচা একমাত্র ব্যতিক্রম ।

যে কাজটা নিঁখুতভাবে উনি করতে পারেন তা হল অর্থ উপার্জন । সাথে আরো দুটো কাজ --মানুষকে অসন্মান করা এবং অন্যকে আঘাত করে তৃপ্ত হওয়া । কোন মানুষের পরওয়া উনি করেন না , সেটা উচ্চারনও করেন । একজনকে খানিকটা পরোয়া করেন সে ভাগ্যবান ব্যক্তিটি তারই ঔরসজাত সন্তান রাকিব । উল্টো রাকিব তার বাবাকে একজন শিক্ষিত বিশিষ্ট ভন্ড হিসেবে বিবেচনা করে ।

বলতেও ইত:স্ত করে না । পারত:পক্ষে মুখোমুখি হয় না বাবা এবং ছেলে একই ছাদের তলে বসবাস করেও । রাকিবের ছোটবোন রিমি বাবার আদরের ননী । কুচ পরওয়া নেহী হ্যায় টাইপের মেয়ে । সে বলে , ' আব্বার চেয়ে রাকিব ভাইয়ার তেজ বেশী ।

তাকে কেউ ঘাটাঘাটি করে না । আব্বাও না । রাকিব ভাইয়া কাউকে পাত্তা দেয় না । অবশ্য লীনা আপুর কথা বাদ , ওনাকে ভাইয়া অনেক সমীহ করে । ' রুমানাও তার কথায় সমর্থন জানায় ।

না জানাবার কোন কারন নেই । কথাটা সত্য । রাকিব লীনার চেয়ে বয়সে তিন বছরের বড় । তবু লীনার ব্যাপারে তার আচরন অন্যরকম যা কারোর চোখ এড়াবার কথা না । রুমানা প্রায়ই বলে , ' রাকিব আর কারো কথা শুনুক বা না শুনুক লীনার কথা কখনো ফেলে না ।

রাকিব আম্মাকে এত ভালবাসে তবু তার কথার অবাধ্য হতে পারে , লীনার না । ' লীনার চাচী ওদেরকে থামাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন । রাকিব এবং লীনা প্রসঙ্গে অনেক সময় এমন আলাপ রাকিবকে শুনিয়ে করা হয় এমনকি দুই একবার লীনাও শুনেছে । চাচী চিন্তিত হয়ে পড়েন এসব শুনে রাকিবের কি না কি প্রতিক্রিয়া হয় ! মা বলে কথা । তবে সুখের বিষয় যে রাকিবের কোন প্রতিক্রিয়া হয়না ।

লীনা নিজেও খেয়াল করেছে রাকিব ভাইয়া তার সব অনুরোধ রাখে । যে মানুষ কাঁচা বাজারে যাবার রাস্তাও ঠিকমত চেনে না সেই রাকিব একদিন চিংড়ী মাছ কিনে নিয়ে এল বাজার থেকে । লীনা চাচীদের ফ্রিজে চিংড়ী আছে কিনা আনতে গিয়েছিল নুডলস রাধঁবে বলে , নিজেদের ফ্রিজে ছিল না । লীনা না পেয়ে ফিরে এসেছিল । রাকিবের আম্মা দেখেন ছেলে তার চিংড়ী নিয়ে এসেছে কিনে বাজার থেকে ।

মাকে দিয়ে বলল ,' লীনার নুডলস মজা হয় , চিংড়ী ছাড়া রাঁধবে , তাই নিয়ে এলাম । দিয়ে এসো মা । ' রাকিবকে পেটে ধরেছেন , বড় করেছেন তিনি । তার মনে কিছু একটা দানা বাঁধে , এড়িয়ে যান তিনি বিষয়টা । ভাবতে চান না ।

তিনি রাকিবকে তিন সন্তানের মধ্যে একটু বেশী ভালবাসেন , কে জানে হয়তো বাবার ভালবাসা ছেলেটা পায় না বলে ওনাকে পুষিয়ে দিতে হয় । আর লীনা ? লীনাকে তিনি কতটা স্নেহ করেন সেটা সবাই জানে । রাকিবের চঞ্চলতা এ দেশে আসবার পর কমে গেছে ধীরে ধীরে । ছেলেটা ছোট বেলায় পরিবারের সাথে দেশ ছেড়েছিল আবার ফিরেছে বড় হয়ে । লীনা হঠাৎ কখন বড় হয়ে গেছে উনি নিজে বুঝতে পারেন নি ।

আরো অনেককিছু না বুঝে থাকতে পারলে ভাল হত । মাতৃত্বের স্বাদ যেমন স্বর্গীয় সে মাতৃত্ব অনেক অসহায় করে মানুষকে যখন তার সাধ্যের বাইরে সন্তানের সাধ ভিত গড়ে । চলবে...... পরের অধ্যায় Click This Link নাসরিন হকের বিষয়ে আরো কিছু জানতে Click This Link

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।