আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অসমাপিকা, ১৯শ অধ্যায়

সত্য সুন্দরকে ব্রত করি জীবনে Click This Link ১৮শ পব: আংটির দিকে তাকিয়ে রাকিব দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল । এমন একটা আংটি দীপুরা পরিয়ে গেল এন্গেজমেন্টে , বড় অদ্ভুত সব কান্ড কারখানা । এমন একটা আংটি তো ওর মায়ের ছিল যা ওর পছন্দের আংটি ছিল । রাকিব ভাল করে তাকিয়ে দেখল এবং এবার ওর অবাক হবার পালা । ওর স্পষ্ট মনে পড়ল ওর মায়ের হাতের সেই আংটির এক পাশে একটা মুক্তোদানার রঙ অন্য রকম ছিল , এটাতেও তাই ।

কিছু বুঝতে পারছে না রাকিব ,সব কেমন গোলমেলে ঠেকছে ওর কাছে । রাকিবের মনে পড়ল লীনার জন্য আনা উপহারের কথা । রুমে গিয়ে সেই পুতির ব্যাগটা নিয়ে বের হতে গিয়ে আংটির বক্সটা বের করে পকেটে পুরে নিল । আগে লীনার আঙুলের পান্নার আংটি রহস্য উদঘাটন হোক । ব্যাগটা দিতেই লীনা চোখ তুলে চাইল এবং চকিতে নামিয়ে নিল ; রাকিবের মনে হোল যেন লীনার মধ্যে একটা পলায়নবৃত্তি ভাব , কিছু একটা গোপন করবার আপ্রান চেষ্টা , সেটা কি, কেন ? চায়ের কাপে শেষ চুমুক দিতেই রুমানা এসে দাড়ালো; বললো, 'চল্ ছাদে যাই সবাই ।

লীনাও চল্ আম্মা বলেছে তোকেও নিয়ে যেতে। ' ছাদে উঠেই রুমানা কি একটা জরুরী কাজ আছে বলে নেমে এলো তড়িঘড়ি । আসবার সময় রাকিবের হাতে একটা ছোট এ্যালবাম ধরিয়ে দিল । ছাদের রেলিং এর কাছে মোড়া টেনে নিয়ে বসতে গিয়ে রাকিব লক্ষ্য করলো লীনা কেমন জড়তা নিয়ে দাড়িয়ে আছে । ওকে মোড়া দেখিয়ে বলল , ' তোর কি হয়েছে লীনা , কিছুই তো বুঝতে পারছি না ; এমন ভাব করছিস যেন তুই অন্য বাসার কেউ ।

আমার সাথে কথাও বলছিস না ঠিকমত । ' লীনা: সব ঠিক আছে রাকিব ভাইয়া । তোমার লন্ডনের গল্প বল । 'বলছি' বলতে বলতে রাকিব এ্যালবামটার প্রথম ছবিটা দেখে চমকে গেল থমকে গেল । লীনার এন্গেজমেন্টের ছবি এবং রাকিবের কিনে দিয়ে যাওয়া সেই জামদানী পরে আছে সেদিন লীনা , কি অপূর্ব দেখাচ্ছে লীনাকে ! তারপরের ছবিটা দেখে আরো হতবাক , রাকিবের আম্মা লীনাকে আংটি পরিয়ে দিচ্ছেন একপাশে বসে অন্য পাশে রাকিবের বাবা ।

দ্রুত কয়েকটা ছবি দেখে নিল রাকিব , সব ছবিতে রাকিব এবং লীনাদের পরিবারের সদস্যরা । সাথে আছে ওদের ফুফু এবং লীনার মামাদের পরিবার । কোথাও দীপুদের বা অন্য অপরিচিত কারো মুখ নেই ছবিতে । রাকিব কি দেখছে বুঝতে পারছে না , আবার দেখল প্রথম থেকে ; তারপর মনে হল সে বুঝতে পারছে কি ঘটেছে, লীনার এন্গেজমেন্ট হয়েছে এবং তার হবু বর দীপু নয় স্বয়ং রাকিব, অথচ রাকিব ঘুণাক্ষরেও কিছু জানল না । অদ্ভুত ব্যাপার তো ! সামনে লীনা বসে আছে, কি করে সে লীনার দিকে চাইবে ? একটু কেশে গলা পরিষ্কার করে নিয়ে বললো, ' কি ব্যাপার বল্ তো, তুই ওই আংটি কোথায় পেলি ?' লীনা: চাচী দিয়েছে ।

রাকিব: ওই আংটি নিয়ে আমার ছোটবেলার গল্প আছে জানিস? লীনা : জানি , চাচী বলেছে । রাকিব: তারপরেও পরেছিস, তোর তো অনেক সাহস । বলতে বলতে এমন করে হেসে দিল যে লীনাও না হেসে পারল না । লীনা: কেড়ে নেবে ? নাও । মারবে আমাকে ? রাকিব: ধ্যাৎ আম্মা দেখছি সবটাই বলে দিয়েছে ।

একটু সময় নিল রাকিব তারপরে বললো, ' আমি মনে হয় অনেক ঘটনা জানি না । তুই কি একটু বলবি নিজে থেকে । ' লীনা: তুমি পরে শুনবে এখন চল নামবো । রাকিব পকেট থেকে আংটিটা বের করল , বলল, ' এটা তোর জন্য এনেছিলাম অনেক সখ করে , নিবি?' লীনা: নেব তবে এখন নয় পরে দিও, আরো কত সময় আছে , চল । নীচে নেমে এল দুইজন একসাথে, লীনা নিজেদের দোতলায় চলে গেল ।

রাকিব তিনতলার নিজের রুমে ঢুকে ইমনকে ফোন করে জানল যে সন্ধ্যার পরে আসছে । রাকিব ভাবছে ইমন যে ঘটনা জানেনা হতেই পারে না সেও কেন গোপন করল ! তাছাড়া দীপুর সাথে বিয়ে হবার কথা , সেটাই বা কেন হোল না । ইমনের কাছ থেকে সব জানা দরকার । লীনার বিয়েটা যে রাকিবের সাথে হচ্ছে এটা পরিষ্কার কিন্তু আর সব অস্বচ্ছ । সবাই মিলে নীরবে এমন একটা ষড়যন্ত্র করে ফেলল আর রাকিব কিছুই টের পেল না ! লীনা স্বপ্নের কাছে চাওয়া একটা মেয়ে ছিল, বাস্তবে অসম্ভব ছিল পাওয়া ।

লীনাকে ছাড়া আর কোন মেয়ে তার জীবনে আসতে পারবে না তাই বিয়ে বিষয়টা সযত্নে দূরে সরিয়ে রেখেছে রাকিব । আর আজ এখন সব কেমন অন্যরকম হয়ে গেল । সেই লীনা তার জীবনে আসছে এ যেন স্বপ্নের অতীত । অতিথি করে যাকে চাওয়া শুধু কল্পনায় ছিল সে যখন দরজায় কড়া নাড়ছে তখন হতবিহ্বল রাকিবের কেবলই মনে হচ্ছে তার কোন প্রস্তুতি নেই । কি করে এমন একজনকে বরন করতে হয় ! কেমন একটা অস্বস্থিভাব ঘিরে থাকে রাকিবকে ।

ইমন আসতেই রাকিবের মনে হোল ঠিক সময়ে ঠিক মানুষটা এসে পড়েছে আবার রাগও হোল , কেন ইমন আগে ভাগে সব জানালো না । কিন্তু রাকিব খেয়াল করল তার নিজের বোধশক্তি ঠিকমত কাজ করছে না ; লীনাকে নিয়ে তার জীবনের কোথায় কেমন করে বসাবে , কিভাবে সব সহজ করে নেবে ! কোন রকম ভূমিকা ছাড়া রাকিব প্রশ্ন করল রাকিবকে ' দীপুর সাথে কেন বিয়ে হচ্ছে না লীনার , দীপু কি বেঁচে নেই?' ইমন হকচকিয়ে গেল , এমন কথা যে কারো মনে আসতে পারে ইমন ভাবে নি আগে । সামলে নিয়ে জানাল যে দীপু বেঁচে আছে , ভাল আছে । তারপর বলল, ' তুই যে লীনার জন্য পাগল, এখন তোর সাথে বিয়ে হচ্ছে মিটে গেল সব। ' রাকিব: না এত সহজে সব মিটে যায় না, আমাকে জানতে হবে কেন এমন সব ঘটছে, লীনাকে কি কোনভাবে প্রভাবিত করা হয়েছে বা বাধ্য করা হয়েছে ? ইমন: লীনা কি তেমন মেয়ে যে তুই এমন সব ভাবছিস ।

রাকিব: খুলে বল আমাকে, তা না হলে আমি কথা বলবো লীনা এবং দীপুর সাথে ; তোরা সবাই মিলে এতজনের জীবনের হিসেব ওলট পালট করে দিতে পারিস না, কোনভাবে লীনা অসুখী হোক আমি চাই না ; আমাকে কি ভেবেছিস তোরা ? আমি কি কেড়ে নেওয়ার মত মানুষ ? ইমন: ভুল করলে বন্ধু, তুমি যা ভাবছো তা নয়, লীনা নিজে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং দীপু স্বেচ্ছায় সরে গেছে লীনার জীবন থেকে । আমি জানতাম তোর মনে নানা প্রশ্নেরা জট পাকাবে তাই আমি লীনা দীপু সবার কাছ থেকে পরিষ্কার করে নিয়েছি । দীপুর সাথে আমার একান্তে কিছু আলাপ হয় যেটা লীনাও জানে না । সে বলে দিয়েছে সে লীনার জীবনে থাকছে না, তবে কারনটা সে কিছু বলে নি । রাকিব , তোর অধিকার আছে লীনার কাছে সব জানবার , তবে তার ধরন যেন একটা মেয়ের কাছে স্বাভাবিক থাকে, সে বিব্রত হতে পারে এমন কিছু না হলে ভাল ।

রাকিব: আমার কেন এমন লাগছে ? মনে হচ্ছে একা থাকি কটা দিন । ইমন: কেন এত ভাবছিস ? সময় নিয়ে ভাবতে গেলে সব আরো জটিল হয়ে যাবে , দাড়া আমি এখুনি লীনার সাথে তোর বোঝা পড়া শেষ করিয়ে দেই । রাকিব কিছু বলবার আগে ইমন চলে গেল উঠে । কি করবে রাকিব , কি বলে শুরু করবে আর কীইবা জানতে চাইবে লীনার কাছে ! ইমন এল ফিরে কিছুক্ষনের মধ্যে , সাথে লীনা । ' তোদের যা কথা বলবার বা জানবার জেনে নেয় , আমার কাজ আছে খালাম্মার কাছে' বলে দ্রুত বেরিয়ে গেল ।

হায়রে ভালবাসা , হায়রে মানুষের মন ! এই রাকিব লীনার জন্য কেমন আকুল ছিল , প্রতি মূহুর্তে মনে হয়েছে কেন লীনা ওর হোল না । অথচ আজ মনে হচ্ছে এই অপ্রত্যাশিত উপহারের ভার বড় বেশী বড় করুন । গুটিয়ে যাচ্ছে ভিতরে ভিতরে সে। না , চুপ করে থাকলে চলবে না ; লীনার মুখ থেকে শুনতে হবে সত্যিটা । খানিকটা সময় পার করে খেয়াল হোল লীনা তার ঘরে একা ।

লীনার আনত চোখজোড়ার দিকে তাকিয়ে ওর মনে হোল লীনা আহত হতে পারে এমন কোন কথা রাকিব পারবে না উচ্চারন করতে । বলল, ' লীনা , তোর কোন কারনে কোন সমস্যা হচ্ছে কি ? তুই কি তোর জীবনের এত বড় একটা বিষয়ে ভেবে সিদ্ধান্ত নিয়েছিস ? আমার সাথে সম্পর্কে তুই সুখী হতে পারবি তো?' লীনা: রাকিব ভাইয়া, সুখী অসুখী হবার ভার ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিয়েছি । যা হবার হবে, তবে তুমি নিজের কথা ভেবে সিদ্ধান্ত নিও; অন্যের কথা নয় । আর তুমি যদি মত স্থির করতে না পারো আমাকে বল, আমি তোমার অনিচ্ছায় কিছু হোক চাই না। ' বলে কি মেয়েটা ! রাকিবের নিরন্তর সাধনার ধন, নিরলস আরাধনার প্রাপ্তি কে কি করে নিজ হাতে দূরে সরিয়ে দেবে ? কি করে অগ্রাহ্য করবে তার স্বপ্নের স্বর্গ বিচরন ! উঠে গিয়ে লীনার পাশে বসল রাকিব তারপর লীনার ডান হাত নিজের দুই হাতে নিয়ে বলল ' তুই কি কিছুই বুঝতে পারিসনি এত দিনে, তোর জন্য আমি সব করতে পারি লীনা, সব কিছু ।

' আরো কি যেন বলতে চাইছিল রাকিব, কিন্তু লীনার চোখের উষ্ণ কয়েক ফোটা পানি রাকিবের হাতের ওপর পড়তেই রাকিব অপ্রস্তুত হয়ে গেল । উঠে গিয়ে সেই আংটি টা নিয়ে এল যেটা সে তার মানসকন্যার জন্য এনেছিল এতসব ঘটনা না জেনেই। সে আর কালক্ষেপন চায় না । সোজা সেটি লীনার হাতটা নিয়ে পরিয়ে দিল যেন একটু বেশী তাড়াহুড়ো করে , যেন হাতছাড়া করতে চায় না হাতের ভেতর পাওয়া রত্ন ; তাই জাগতিক রত্ন দিয়ে স্বপ্নরত্ন বেঁধে নেওয়া । চলবে.......  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।