সত্য সুন্দরকে ব্রত করি জীবনে
১১শ পর্ব Click This Link
ঘরে বাইরে সংযত লীনা । মনের ভেতর যা কিছু ঝড় তোলপাড় সব চেপে রাখে রাখতে হয় ।
চাচাতো বোন রুমানার বিয়ে কদিন পর । বাড়ীতে আনন্দ হৈ চৈ গরম করে রেখেছে সারাক্ষন । রুমানার ছোট বোন রিমি হলুদ অনুষ্ঠানের দায়িত্ব নিয়েছে, আর্থিক ব্যাপারটা সানোয়ার সাহেবের ।
উনি নগদ এবং চেকে নিরলস সেটা সামাল দিয়ে যাচ্ছেন । কিছু অফিসিয়াল নিমন্ত্রনের দায়িত্ব তার । বাদবাকী এবং প্রকৃত দায়িত্ব সব মিসেস রেহানার ; কনের মা বলে কথা ।
ওদিকে রুমানার ভাই রাকিবকে যখন যেটা বলা হয় করতে করে দেয়;নিজ থেকে কোন ব্যাপারে মাথা ঘামায় না ।
মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে রেহানা নিজের এবং দোতলায় দেবরের মেয়েদের সবাইকে টাকা দিয়েছেন কাপড় কেনার জন্য ।
বাকী ছিল লীনা । লীনাকে ডেকে টাকাটা দিতে গেলে সে বলল, চাচী আপনার একটা ছাই রঙ কাতান আছে না নীল আর সিলভার কালারের পাড়ওয়ালা সেটা রুমানার বিয়ের দিন পরতে দিলে হবে , অবশ্য আপনার যদি কোন আপত্তি না থাকে ।
রেহানার বুকের ভেতরটা কেমন মোচড় দিয়ে উঠল । এই মেয়েটা তার পেট থেকে হয়নি ঠিকই, বুকের বা পাশ থেকে জন্মেছে । সে জন্মের একটা তীব্র সুগন্ধ আছে যা তাকে মা তাকে এই মেয়েটার কথা সারাক্ষন মনে করিয়ে রাখে ।
কিছুদিন আগে পুরোন শাড়ীগুলো ছাদে মেলে দিচ্ছিলেন রেহানা । লীনা দেখছিল , ছাইরঙ শাড়ীটা হাতে নিয়ে নেড়ে চেড়ে দেখল ; পরে বলল , ' খুব সুন্দর, অন্যরকম এই শাড়ীটা '। নিজের বিয়ের সময় এই শাড়ীটা পছন্দ করে কিনেছিল রেহানা , এখনও এই শাড়ীটা তার ভাল লাগা শাড়ী । লীনার বলা কথায় অবাক হলেন , মনটাও কেমন ভাল লাগায় ভরে গেল ।
আর আজ নির্বাক হলেন ; বললেন , পারিসও তুই ।
ঐ পুরোন শাড়ী কি করে পরবি সেদিন ? সবাই কত আধুনিক শাড়ী পরবে, এখন কত কি ডিজাইন বেরিয়েছে ।
তারপর ওর জন্য বরাদ্দ টাকাটা প্রায় জোর করে ওর হাতে ধরিয়ে দিলেন আর বললেন পরিস তোর পছন্দের সেই শাড়ী সেদিন । দেব বের করে তোকে সেটা ।
বিয়েবাড়ী বলে কথা ! কত হৈচৈ, কেনা কাটা , কারনে অকারনে শোরগোল ।
হলুদ সন্ধ্যার আয়োজন চলছে আজ ।
দুপুরের খাবারের পর রেহানা কাজের লিস্ট হাতে নিয়ে দেখছিলেন সব ঠিক আছে কিনা । হঠাৎ মনে পড়ল লীনার জন্য সেই কাতান শাড়ীটা বের করে দেয়া হয়নি । তারপর মনে পড়ল সেটার ব্লাউজও তো নেই লীনার মাপের । রুমানা বিউটি পারলারে গেছে গাড়ী নিয়ে সাথে দীনারা । রিমি মহাব্যস্ত হলুদ মঞ্চ সাজানোর কাজে ।
লীনাকে দেখেছে একটা বাসন্তী রঙের শাড়ী পরা ; কোমরে আঁচল পেচিয়ে ছোটাছুটি করছে । বিয়ের দিনটা বেশী ফরমাল আজকাল, হলুদের দিনটাই আজকাল বিয়ে বিয়ে আমেজ নিয়ে আসে ।
লীনাকে পাঠাতে হবে শাড়ীটা সাথে দিয়ে , রঙ মিলিয়ে ব্লাউজ বানাতে । যেমন এক মেয়ে সে , দেখা যাবে অন্য একটা ব্লাউজের সাথে শাড়ীটা পড়ে মহা সুখী । আজ এখুনি পাঠানো দরকার ।
রাকিবকে ডেকে অনুরোধ করলেন লীনার সাথে একটু নিউমার্কেট যেতে, তেমন কাউকে পাচ্ছেন না লীনার সাথে পাঠাবার জন্য । লীনাকে ডেকে বুঝিয়ে দিলেন ।
রাকিব বেরিয়ে রিকশা ডেকে নিল । লীনাকে আগে উঠতে বলে সেও উঠে বসল । বলল, মা তাড়া দিচ্ছিল ; গাড়ীও নেই সাথে ।
ইমনকে বলে তার গাড়ীটা নিয়ে যাওয়া যেত, তোর এখন রিকশায় যেতে হচ্ছে । '
লীনা অবাক হতে গিয়েও হল না, রাকিব ভাইয়ার অনেক ব্যাপারই সে বোঝেও না, আজকাল অবাক হওয়াও ছেড়ে দিয়েছে । শুধু বলল , ' কি বলছো ? আমরা তো গাড়ীতে অভ্যস্থ নই; রিকশায় কোন অসুবিধা হচ্ছে না আমার । '
রাকিব কিছু বলল না ; আসলে সে বলতে পারল না ।
বলতে পারল না যে বাসন্তী রঙের শাড়ী পরা এই লীনাকে রিকশায় পাশে বসিয়ে প্রতিটা মূহুর্ত তার কেমন এক অবর্ননীয় ভাল লাগায় পার হচ্ছে ।
লীনাকে এমন স্নিগ্ধ সুন্দর লাগছে যে মনে হচ্ছে এর চেয়ে সুন্দর আর কিছু নেই পৃথিবীতে , হতে পারে না ।
নিউমার্কেটে ব্লাউজের কাজ সারবার পরে লীনা রিমির ফরমায়েশে গ্লিটার কিনল একটা দোকানে ঢুকে । একটা ন্যাচারাল কালারের লিপস্টিক দেখছিল নেবে বলে । রাকিব সেটা দাম দিল নিজে যেচে; নেবার সময় সাথে গোলাপী আর একটা লিপস্টিক নিল । বলল, এটাও লাগাবি , মানাবে তোকে ।
বাড়ী ফেরবার সময় রাকিব একটু কেশে নিল , যেন গলা পরিষ্কার করছে । তারপর বলল, পারলারে সবাই গেল , তুই গেলে পারতি ।
লীনা: রুমানা আপুর আজ হলুদ , সে তো সাজবেই ; অন্যরাও সখ করছে সাজুক । আমি আবার কেন?
রাকিব: কেন গায়ে হলুদ না হলে কি সাজতে যাওয়া যাবে না ? চুল বাঁধতে যাওয়া যায় না? তুই একটা খোঁপা করতে পারতি পারলারে গিয়ে ।
লীনা: কি বলছো তুমি? আমি খোঁপা করতে যাবো ? কি দরকার ?
রাকিব: কেন দেখিতো অনেকে সুন্দর করে খোঁপা করে, খোঁপায় গোলাপ গুজে দেয় ।
তুইও তেমন করে চুল বাঁধবি, দেখবি তোকে মানাবে খুব ।
রীনা : রাকিব ভাইয়া তোমার কি হয়েছে? তুমি দেখছি কবি কবি কথা বলছো ।
রাকিব: না মানে তোকে এই শাড়ীটায় খুব ভাল দেখাচ্ছে তাই এসব কথা মনে হল ।
লীনা: আচ্ছা দেখা যাবে , চল তাড়াতাড়ি ; কত কাজ পড়ে আছে ।
রাকিব কিছু শোনেনা কানে , চলন্ত রিকশায় পাশে একজন বসে আছে; আর কিছু জানে না সে ।
নিজের মনের কথা কানে কানে শোনে সে --
সুখ সুখ সূতোয় বোনা বাসন্তী এ শাড়ী
শাড়ী নয়, মুগ্ধতায় জড়ানো
এক রাশ সুখ তোমাকে ঘিরে থাকে
আমাকে ধরে রাখে শাসনের সূতোয়
ভাজভাঙ্গা এ শাড়ীটায় এক স্বপ্ন
আমার বুক ভাঙ্গে চুরমার
তুমি তার শব্দ শুনতে পাও না
তুমি তার শব্দ শুনতে পাও না
পাবে না কোনদিন ।
আমি নি:শব্দে কুড়িয়ে রাখি
মূহুর্ত সমগ্র , ঐশ্বর্য আমার ।
মনের ভেতর কবিতার মত করে কিছু কথা ঘুরপাক খায় । বন্ধু ইমনের কল্যানে কবি হয়ে যাচ্ছে নাকি আজ এই সময়টা তাকে কবি করে ফেলছে । জানে না রাকিব ।
অনুচ্চারিত এই কবিতা আর কারো শোনা হয় না ; কারো জানা হয় না । এমন কত কবিতার পংক্তি নীরবে ঘুমিয়ে থাকে কত প্রানে, কত প্রানের অতলান্তে ।
কেউ কি জানবে কোন দিন ?
চলবে......
পরের অধ্যায় Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।