সত্য সুন্দরকে ব্রত করি জীবনে
অষ্টম পর্ব Click This Link
(নবম পর্ব)
চাচীর সাথে বাসায় পৌছে চাচীর ফলের ব্যাগটা নিয়ে দোতলায় যেতে লীনা দেখে রাকিব বসে আছে । অসময়ে বাসায় এখন । বলে ,' কি ব্যাপার রাকিব ভাইয়া তুমি বাসায় এ সময়ে ? সব ঠিক আছে ?' 'হু' বলে তাকায় লীনার মুখের দিকে । বলে, 'তোর ক্লাস তো অনেক আগে শেষ , এতক্ষন ছিলি কোথায়?' ' আমার সাথে ছিল , দেখ্ কত দেশী ফল এনেছি ' বলেন ওর মা মিসেস রেহানা দরজা দিয়ে ঢুকতে ঢুকতে । লীনা তিনতলার সিড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে একটু অবাক হয় রাকিব ভাইয়া কি এত কিছু লক্ষ্য করে ! ব্যাপার কি !
ঘরে ঢুকতে মেঝবোন দীনা যোগদানপত্র নিয়ে মেলে ধরে লীনার সামনে , ' লীনা আপু তোমার চাকরীটা হয়ে গেছে ।
' লীনা সেটা নিয়ে মায়ের কাছে যেতে মায়ের কোন উৎসাহ দেখে না । উনি শুধু একটু হেসে নিয়ে বলেন , লেখা পড়া শেষ করবে , বড় ডিগ্রী নেবে । চাকরী পেয়েছো , এটা একটা সাফল্য , অভিজ্ঞতা হল চাকরীর চেষ্টার । '
লীনা ঘরে বিছানায় বসতেই রাকিব ভাইয়ের আচরনটা মনে পড়ল , মনটা খচখচ করতে থাকল । লীনা জানেনা ঘটনার সূত্রপাত গত বৃহসপতিবার রাতে যেদিন ও দীপুদের সাথে বেঙল ফাউন্ডেশনে গিয়েছিল ইফফাত আরার গান শুনতে ।
সেদিন রাকিবের ঘনিষ্ট বন্ধু ইমন মাকে নিয়ে গান শুনতে গিয়ে লীনাকে দেখে সুদর্শন এক ছেলের পাশে বসে গান শুনতে , যে ছেলে গান শোনার চেয়ে লীনাকে দেখার ব্যাপারে বেশী আগ্রহী ছিল । ইমন গোয়েন্দাগিরি করে নিশ্চিত হয় ওই ছেলের সাথে মন দেয়া নেয়া চলছে লীনার , নাম দীপু । রাকিবের জন্য খারাপ হয় মন ইমনের । কতবার রাকিবকে বলেছে লিনাকে সরাসরি তার ভাল লাগার কথা জানিয়ে দিতে । লন্ডনে লেখা পড়া করা , স্বভাব চরিত্রে সাধারন পাঁচটা ছেলের চেয়ে বেটার রাকিব প্রতিবার লীনার যোগ্য হবার অজুহাত দেখিয়েছে ।
লীনা মেধাবী সেটা জানে ইমনও , তবে এই যোগ্য হবার বিষয়টা গ্রহন যোগ্য লাগেনি তার কখনো । এখন কি হবে ?
দুইদিন ভেবে গত রাতে রাকিবকে ফোনে দীপুর প্রসঙ্গে জানাতে সে চলে এসেছে ইমনের বাসায় । বলে , ' একটা কিছু কর ইমন , আমি লীনাকে ছাড়া কিছু ভাবতে পারি না । তুই লীনার সাথে কথা বল । '
ইমন কিছুক্ষন বিমূঢ় তাকিয়ে দেখে এই সহজ সরল বন্ধুকে ।
বুঝিয়ে বলে , ' আর ভুল করা যাবে না , সময়ও নষ্ট না একদম । তুই নিজে তোর ভাল লাগার কথা বলে দে লীনাকে । জানিনা আদৌ কোন ফল হবে কিনা , শেষ চেষ্টা আর কি । ' রাকিব সেভাবে প্রস্তুতি নিয়েছে আজ বলবে বলে । সকালে অফিসে গিয়ে কিছুক্ষন অফিস করে বাসায় চলে এসেছে ।
লীনার ছুটির সময় পার হয়ে গেছে দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে । পরে এক সময় মনে হল ঠিক সেই দীপু ছেলেটার সাথে সময় কাটাচ্ছে লীনা । অত্যন্ত বিরক্তির সাথে দুপুরের খাওয়া শেষ করল । পরে আবার দুঃচিন্তা কিছু হয়েছে কিনা পথে লীনার । ফোন করতেও দ্বিধা ।
লীনার চাচাতো ভাই সে সেই কথাটা ভুলে গিয়ে মনে হল ফোন করলে যদি কিছু মনে করে ! এসব আকাশ- পাতাল ভাবনার মাঝখানে উপস্থিত হল লীনা আর জেরা করে বসল সে। মানুষের মন এমন সন্দেহপ্রবন !
এক কাপ কড়া কফি খেয়ে নিল রাকিব । নিজের রুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে নিল । যতই ভাবছে লীনার কাছে গিয়ে আজ সব বলে দেবে মনের কথা ততই সব ভুলে যাচ্ছে । আশ্চর্য ! সৎ নীতিবান রাকিব পারত:পক্ষে কারো পরোয়া করে না , সঠিক মন্তব্য করতে দ্বিধা করে না , কারো সাথে কথা বলতে তার এমন গলা শুকিয়ে আসে না ।
কি ব্যাপার তার এই বিশেষ চাচাতো বোনের সাথে কথা বলতে তার এমন লাগছে কেন ? তা'ছাড়া দীপুর বিষয়টা জানবার পর তাকে যে লীনা হ্যা বলতে পারবে না সে কথাও ওর জানা ।
তবু বের হয়ে এল রুম থেকে , তিনতলায় গিয়ে লীনাকে ডেকে নেবে ছাদে । সন্ধ্যা হয়ে গেলে ওরা যাবে না ছাদে । তাড়াতাড়ি উঠে আসে তিনতলায় , ভেজানো দরজা ঠেলে বসার ঘরে ঢুকতে গিয়ে শোনে লীনার মেঝ বোন দীনার কন্ঠস্বর ' তুই আপু চাকরীটা নিয়ে নে , আমার আর দুই বছর বুয়েটে ; তারপর আমিও একটা কাজ খুঁজে নেব । তখন আমরা অন্য কোথাও চলে যাব ।
যেখানে বড় চাচার উদ্ধত আচরন সহ্য করতে হবে না । ' লীনার কথা কানে আসে রাকিবের , ' আম্মারা পছন্দ করে না বড়দের নিয়ে কিছু বলা , কিন্তু আমারো ইচ্ছে করে এমন কোথাও চলে যেতে যেখানে বড়চাচার ছায়া পর্যন্ত পড়বে না । অহংকারী , উদ্ধত , অর্থলিপ্সু জঘন্য । ইনি নাকি চাচা । '
রাকিবের মাথা ভনভন করে ঘুরতে থাকে , সে ফ্যানের সুইচ অন করতে এগিয়ে যেতে লীনার মায়ের চোখ পড়ে ।
উনি ডেকে বলেন , ' বসো রাকিব , আমাদের সাথে চা খাবে । '
রাকিব বসেছিল চা খেতে , খেয়েও ছিল । তারপর দুটো পায়ে ভর করে ঘর পর্যন্ত এসেছে । তারপর সব বিভ্রান্তিকর , সব অবিন্যস্ত লাগতে লাগল । এমনকি তার জন্ম , তার পরিচয় ।
বের হয়ে রাস্তায় হাটাহাটি করল অনেকক্ষন । রাতে ঘরে ফিরে মাকে জানিয়ে দিল খাবে না সে রাতে । ড্রয়ার খুলে তিনটা রিলাক্সেন ট্যাবলেট পেয়ে খেয়ে নিল । আরো বেশী খেতে পারতো যোগাড় করে । মনে হল মা কষ্ট পাবে , লীনা কষ্ট পাবে ।
ঘুরে ফিরে লীনার কথাই মনে পড়ল ।
ইমনকে একটা ফোন দিল । ধরা গলায় বলল , ' রাগ করিস না ইমন , আমি পারি নি আজো বলতে লীনাকে আমার ভাল লাগার কথা । আমি মানে সানোয়ার সাহেবের ছেলে । আমি অল্প কটা মানে মাত্র তিনটে রিলাক্সেন খেয়েছি , একটু ঘুমুব ।
ঘুম থেকে উঠে আর সানোয়ার সাহেবের ছেলে থাকবো না । শুধু মিসেস রেহানার ছেলে হয়ে যাব । তারপর অকপটে আমার ভাল লাগার কথা করজোড়ে জানিয়ে দেব লীনাকে । তুই কোন চিন্তা করিস না । ঘুমা ইমন ।
লীনা ঘুমাও । '
ইমন কিছুক্ষন রিসিভার ধরে থাকে কানের কাছে । রাকিবের এই ভালবাসার যন্ত্রনার আঁচ তার মনেও লাগে , সুখটা সে পারে না অনুভব করতে । পারলে ভাল হত । যন্ত্রনা এত অসহ্য লাগত না তার ।
(দশম)
লীনা বাবার সাথে ট্যাক্সি ক্যাবে বসে আছে । কলা বাগানে গিয়ে ফরিদপুর গামী বাসে উঠবে । মিতা সাথে যাবে । এই মূহুর্তে মিতার মত সুহৃদ আর কেউ নেই ওর । বাসায় থমথমে পরিবেশ ।
ওর মাষ্টার্সের আগে এভাবে চাকরীতে যোগ দেয়া মেনে নিতে পারছে না কেউ । চাচী শুধু বলেছেন , " ঠিক আছে যেতে দাও তোমরা ক'দিন দেখে আসুক । ও ভুল করবার মত মেয়ে নয় । ও সিদ্ধান্ত নিতে অভ্যস্থ হোক "। মিতাকে যেদিন লীনা জানায় সব সেদিন মিতাকে দিয়ে প্রতিজ্ঞা করিয়েছে যাতে কেউ না জানে তার এই সিদ্ধান্ত বিশেষ করে দীপু ।
যার জন্য সে এমন করছে । মিতা সবকিছুতে রাজী হয়ে গেছে লীনার বিষন্ন অস্থির দু:সময়ে । লীনা বলেছিল ,' একদিকে আমার পরিবার । ভাই নেই তিনবোনের , সে পরিবারের বড় সন্তান । অন্যদিকে দীপু যার কাছাকাছি হতেই দুনিয়া ভুলে যাই , ওই সব হয়ে যায় ।
ভুলে যাই আমার দায়িত্ব , ভবিষ্যৎ কতর্ব্য । আমি বাঁচতে চাই , কেউ আমার জন্য কষ্ট না পাক তাই চাই । আমার নিজের কষ্ট হোক তবু । '
বাস স্টপে পৌছে দেখে মিতা দাড়িয়ে আছে । স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলে লীনা ।
যাহোক শেষ পর্যন্ত ও যেতে পারছে । বাবা যেতে চেয়েছিলেন সাথে মিতা বলেছে সে যাবে , লীনাও বাবাকে ঝামেলা দিতে চায় নি । এতটুকু পথ পদ্মা পার হলেই ফরিদপুর ।
হঠাৎ চোখে পড়ে রাস্তার পাশে দীপু দাড়িয়ে আছে , দীপুই তো । কি ব্যাপার ? চোখে চোখ পড়তে হাসে দীপু ।
লীনার বাবা লীনার জন্য নাপা ট্যাবলেট আনবেন বলে পা বাড়াতে মিতা লীনার কাছে হাত জোড় করে । বলে , ' তুই বারন করেছিলি তখন কথাও দিয়েছিলাম তোকে যে দীপুকে বলবো না । অনেক ভেবে মনে হল এ অন্যায় আমার করা ঠিক হবে না । নিজের কাছে অপরাধী হয়ে থাকবো সারা জীবন । তোর ক্যারিয়ার , তোর ভবিষ্যৎ এত ঠুনকো হতে পারে না ।
তাই সব খুলে বলেছি দীপুকে । ও যাবে তোর সাথে ফরিদপুর । আমাকে যেতে বারন করেছে । বাকীটা ওর ব্যাপার । '
বাস ছাড়বার সময় হয়ে আসতে দীপু এগিয়ে আসে ।
লীনা বাবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় । মিতা বলে , ' ভাল হল খালু , দীপু তার নিজের কাজে যাচ্ছে ফরিদপুর । খুব কাজের ছেলে । লীনার কাজে আসবে । আমাকে আর যেতে হবে না বোধ হয় ।
'
লীনাও সম্মতিসূচক মাথা নাড়ে ।
বাস ছেড়ে দেয় । লীনার কেন মনে হয় চলন্ত বাস থেকে লাফ দেয়া ছাড়া আর কোন শান্তি পূর্ণ সমাধান তার নেই । কেন মিতা এমন করল ? কেন দীপু ওকে মুক্তি দেয় না ।
দীপু বলে , ' তুমি জানাও নি , ভাগ্যিস মিতা বলেছে ।
তোমার ওই অফিসে কোন পোষ্ট খালি আছে কিনা দেখি গিয়ে । তা' না হলে তোমার কোয়ার্টারে দারোয়ান টারোয়ান হয়ে থাকবো । '
লীনা দূরে তাকিয়ে থাকে । ও গাছ লতা পাতা এত ভালবাসে কিন্তু আজ কিছু ভাল লাগছে না । ওর এই ২২ বছর বয়সের জীবনে ও অনেক বড় হয়ে গিয়েছে ।
দীপু রাজনীতি করে ,এক নিষ্ঠ কর্মী । দীপুর বাবা রিটায়ার্ড করে ফেলছেন কিছুদিনের মধ্যে । সংসারে তার দায়িত্ব বাড়ছে । দীপু কথায় কথায় বলেছে সে উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে চায় , সে আমেরিকা যাবার কাগজ পত্র রেডী করে রেখেছে । লীনার সব কিছু সে রেডী করে রাখতে চায় ।
অথচ লীনা ? তার পুত্রহীন বাবা মায়ের প্রথম সন্তান , এ দেশের প্রেক্ষাপটে করুনা ছাড়া আর কি পেতে পারে তার পরিবার । রুমানা আপুদের মত উচ্চবিত্তের হলে তবু এ ইস্যু সামনে আসতো না । লীনা দীপুকে ভালবাসে , সে কথা তার মন বারবার তাকে বলে । সে পালিয়ে যেতে চায় দীপুর সান্নিধ্য থেকে । আপাতত: আর কোন পন্থা জানা নেই তার ।
চুপ করে থাকতে দেখে দীপু বলে , ' তুমি চাকরী করবে সে ভাল কথা । আমি শুধু চিনে আসি তোমার অফিস । '
লীনা বাষ্পরুদ্ধ কন্ঠে বলে , ' দীপু তুমি কি আমাকে বুঝতে চাইবে না ? আমি কি করবো ? আমার কিছু ভাল লাগছে না । আমি আর পারছি না । '
বাসের ভিতর কোন সিনক্রিয়েট যেন না হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হয় ।
দীপু ডাল ভাজার প্যাকেট ছিড়ে লীনার হাতে দেয় । বলে ,' বাস থামলে তোমাকে চা খাওয়াবো । '
বিভূতিভূষনের একটা বই বের করে দেয় লীনার হাতে । বলে 'প্রকৃতি উপভোগে দারুন সঙ্গ । একটু হাসো ।
' হেসে দেয় লীনা । হাসে দীপুও ।
বাস ফেরীতে উঠলে লীনাকে নিয়ে ওপরে উঠে আসে দীপু । লীনা নদী দেখে কেমন উৎফুল্ল হয়ে যায় । দীপু এ রেশ ভাঙ্গতে চায় না ।
তাই আবার বাস পথে চলতে দীপু বলে , ' লীনা তুমি এভাবে চাকরীতে জয়েন করতে পারো না । আমার জন্য তোমার এমন ক্ষতি আমি সজ্ঞানে হতে দিতে পারি না । আমাকে কি করতে হবে বল । কি দোষ করেছি আমি ? '
' সব দোষ আমার '। স্বগোক্তি করে লীনা ।
বাসের জানালা দিয়ে দূরে তাকিয়ে আপন মনে বলে , ' জগতে এমন পুরুষ নেই যে প্রেমের জন্য নিজেকে বদলাতে পারে । একটি মেয়েকে ভালবেসে তার জন্য মানুষ হাসিমুখে প্রাণ দিতে পারে কিন্তু নতুন মানুষ , ভিন্ন মানুষ হতে পারে না । পুরুষটির মধ্যে যা আছে তাকেই মেয়েটি বিকশিত করতে পারে , পরিনত করতে পারে , নতুন কিছুই সৃষ্টি করতে পারে না । '
দীপু বলে , ' এ কি কথা ? কেন বলছো এমন করে ? '
' আমি বলিনি , বলেছেন তোমাদের স্বগোত্রীয় একজন পুরুষ মানিক বন্দোপাধ্যায় ' জানায় লীনা ।
দীপু বলে , ' তুমি আজ অফিস ঘুরে দেখো , কথা বল ।
জয়েন করো না প্লীজ । তুমি যদি আজ কথা না শোন আর কোনদিন আমার সাথে তোমার কথা হবে না । '
ওর কন্ঠস্বরে একটা কিছু ছিল যা লীনাকে পর্যদস্ত করে । দীপুর দিকে তাকাতে পারে না চোখ তুলে । পথ ফুরিয়ে যায় , দ্রুত পৌছে যায় অ্যাকশন এইডের ফরিদপুর অফিসে ।
উপশহরে পড়েছে অফিস । কেমন গাছ পালা দিয়ে ঘেরা , অন্ধকার অন্ধকার তবু শান্তি শান্তি । লীনা অফিসে এসে বসতেই সবাই সাগ্রহে তাকে স্বাগত জানায় । লীনা জানায় সে আজ জয়েন করছে না , দেখতে এসেছে ।
দুপুরে ওদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে আগে থেকে ।
ওরা চা খেয়ে বেরিয়ে পড়ে অফিস এলাকা ঘুরে দেখতে । সাথে অফিসের পিওন । একটা ১০/১১ বছরের মেয়েও সঙ্গী হয় ওদের । পিওনের মেয়ে । নাম তার বিনু ।
লীনা পিওনকে বলে দেয় সাথে বিনু থাকলে হবে । হাটতে হাটতে ওরা চলে আসে ঘাট বাঁধানো বড় পুকুরটার পাড়ে । ঢোল কলমী ফুল ছিড়ে চুলে গুঁজে নেয় লীনা । লম্বা ঘাস , চিকন লতা , বুনো কত ফুল , ছোট ছোট ফল , সবুজের কত রকম ফের ! দেখতে দেখতে লীনা ঘাসফড়িং হয়ে যায় । ছোট ছোট শামুক খোলস ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ।
বিনুকে বলে কুড়িয়ে দিতে ঢাকায় নিয়ে মালা গাঁথবে । দীপু পুকুর পাড়ের কদম গাছে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে থাকে । লীনা নেমে আসে পুকুরের সিড়ি বেয়ে । দুই পা পানিতে ডুবিয়ে । পানির মধ্যে চেয়ে দেখে তার মুখ অন্যরকম এক পেইন্টিং যেন ।
পেছনে অনেক গাছ পালা জড়ো হয়ে দাড়িয়েছে , দূর আকাশটাও যেন নেমে এসেছে কাছাকাছি । উৎফুল্ল লীনা ডাকে দীপুকে ।
সিড়ি বেয়ে নামে দীপু দেখে । দেখে আবার চলে যায় উপরে নীরব । কিশোরীর চপলতায় পেয়ে বসা এই মেয়েকে সে চিনতে পারছে না ।
লীনাকে জানত এতদিন শান্ত শিষ্ট পড়ুয়া এক মেয়ে হিসেবে । ইস্ আজ না এলে কি মিস না হয়ে যেত । গোলাপী তাঁত শাড়ি পরা চুলে বেগুনী ফুল গোঁজা অপসরী এই মেয়ে কোথায় ছিল এতদিন !
মন্ত্রমুগ্ধের মত তাকিয়ে কেটে যায় কিছু ক্ষন ।
দীপু ওপর থেকে ডেকে বলে , ' এস উঠে , যেতে হবে না আমাদের ।
লীনাঃ আরো একটু থাকি না ।
দীপুঃ ভাগ্য ভাল আমাদের আজ জয়েন করনি , করলে আজই ছাড়পত্র ধরিয়ে দিত তোমার হাতে ।
লীনাঃ খুব খারাপ হচ্ছে ? তোমার খারাপ লাগছে আমার ছেলেমানুষীতে ?
দীপুঃ উঁহু
লীনাঃ তাহলে ?
দীপু দূরে শূণ্যে তাকিয়ে বলে ' ইচ্ছে করছে বিয়ে করে ফেলি '
লীনা চমকে ঘাড় ঘুরে তাকায় দীপুর দিকে । বলে , ' মানে ?'
দীপুঃ আজ এখুনি আমার বিয়ে করতে ইচ্ছে করছে । মনে হচ্ছে এই মেয়েটিকে ছেড়ে আর এক মূহুর্ত আমি থাকতে পারবো না ।
লীনা সামনে নিস্তরঙ্গ পুকুরের দিকে তাকিয়ে থাকে অপলক , নিস্তব্ধ দুপুর থমকে থাকে তার বুকের আলোড়ন শুনবে বলে ।
কাছে কোথাও গাছের ডালে পাতার ফাঁকে লুকিয়ে থাকা বউ কথা কও পাখী গেয়ে ওঠে " বউ কথা কও , বউ কথা কও । " কেমন দুষ্টু পাখী , ডাকবার আর সময় পেল না ।
নীরব দীপু , নীরব লীনা । বিনু আসে লীনার কাছে । ফ্রকের শামুক খোলস দেখিয়ে বলে , ' এই যে ম্যাডাম নেন ।
কি করে ছিদ্র করবেন এগুলো ? কি করে মালা গাঁথবেন ?'
লীনা আসলেই জানেনা কি করে মালা গাঁথতে হয় । শিখে নেবে । ওর খুব খুব ইচ্ছে করছে মালা গাঁথতে ।
চলবে..............
পরের অধ্যায় Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।