সাপের শরীর হয়ে আঁধারের গাছ/ কুয়াশার বন্যায় ডুবো দেবী মাছ! কোনো গল্প নেই কোথাও। আমি গল্পগুলোকে মুড়ির মত দাঁতের তলায় ফেলে দিয়েছিলাম সেদিন। তারপর ধার পরীক্ষা করেছি চাবিয়ে চাবিয়ে।
আমাকে প্রতিদিন কত কি করতে হয়। তবু গল্পের মত কিছু করা হয়ে ওঠেনা।
আর প্রতিরাতে! কোনো কোনো রাত অগল্পের মত সুস্থির। স্বপ্ন নেই! আমার স্বপ্ন ভাল লাগে। আমি সারাদিন সেই ঘোর টাকে খুঁজি। সারারাতে দেখা স্বপ্নটাকে!
তিতির বাঁশের ভারার দুপাশে ফুলের মত ভাপ ওঠা মোমো নিয়ে চলে যাচ্ছিল। কুয়াশার মত তাকে সেই ভাপ ঘিরে ধরেছিল।
আমি যত চোখ কচলে দেখছিলাম তত বেশি সে অস্পষ্ট ধোঁয়াটে। সে আড়ালের খোঁজে।
ওখানে আমরা ছেলেবেলায় নাটক করতাম। আমাদের ক্যাপ্টেন হত সেই অত্যাচারী মোড়ল। যে তার ইচ্ছেমত বৌদের আত্যাচার করে।
আমি এক অত্যাচারী বৌ। তিতির নদীর ঘাটে এসে নামত তার বজরা নিয়ে। বাঁশের শুকনো পাতা বিছিয়ে আমরা এক পথ করতাম। ওটা নদী। তারপর একদিন ঘাটে জল আনতে গেলাম।
বসে বসে দুঃখের গীত করলাম। তিতির ছুটে এসে আমার হাত ধরল। বলল চল আমার সাথে।
তখন কার নাটক মানেই নাটকীয়তা।
আচ্ছা এটা কি কেউ জানে? জীবনের নাটক অনেক বেশি বৈচিত্রময়! এত বৈচিত্র নাটকে আনলে অবিশ্বাস্য লাগে।
ঘটনার আকস্মিকতায় অস্থির লাগে বলেই কি মেনে নিতে কষ্ট হয়!
তখন আমরা ক্লাস নাইনে। মাঠপাড়ার ওদিকে জেসমিন আত্মহত্যা করল। আম্মা তার বান্ধবীদের নিয়ে দল বেঁধে গেল সই ঘটনার সাক্ষী হতে। আমি কত করে বললাম আমিও যাই। এমনিতে বাড়িতে আমাকে রেখে কোথাও যেতে চাইতনা আম্মা।
আর সেদিন মুখের উপর না বলে দিল।
আমি রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বললাম কেন গেলে কি হয়?
আম্মা বলল ওসব দেখতে হয়না। কে জানে! ও বয়সটায় হয়ত এমন। কেউ মরে গেল দেখলে যদি মরে যেতে ইচ্ছে হয়! আমার মা কি আমার মরার ভয় করেছিল? আমি কিন্তু দিব্যি এখনো চোখ বন্ধ করলেই সেই জেসমিন কে দেখি। গাছের ডালে আলতো বসে থাকা।
তার আসলে বসে থাকার কথা ছিলনা। আত্মহত্যা হলে ঝুলে থাকার কথা। সবাই বলে বাড়ির লোকেরাই জেসমিন কে মেরে গাছের ডালে রেখে এসেছিল। জেসমিনের পেটে যে অবৈধ বাচ্চা এসে গিয়েছিল।
আমি কেন যেন কান বন্ধ করলেও জেসমিনের প্রেমিকের কান্না শুনতে পাই।
একদিন গল্পটা লিখে ফেললাম। পাঠিয়ে দিলাম যুগান্তরে। তারপর কতদিন কেটে গেল। একদিন হঠাৎ এক বড় ভাইয়া ফোন দিয়ে আমাকে বলল গল্পটা ভাল লিখেছো। আমি যুগান্তর কিনে আনলাম।
দেখে চোখ ভরে গেল।
আম্মাকে গর্ব নিয়ে দেখালাম। বললাম এই দেখো। সেদিন যে আমাকে দেখতে নিয়ে যাওনি আমি কি তোমার চেয়ে কম দেখেছি ঘটনাটা? আমি তো সেই মাঠ টাকে দেখি। নির্জন।
সেই গাছ। জেসমিনের কপালের বাম পাশটাতে কাঁসার বাটিতে লেগে কেটে যাওয়া দাগটা। আমিতো বড্ড দেখতে পাই। জেসমিনের মা রাগে থরথর করে কাঁপছিল। তলপেটে লাত্থি দিয়ে জিজ্ঞেস করেছিল বল মাগী কে করছে এই আকাম?
বিকেলের ভাত ঘুমে আমি জেসমিন কে দেখলাম।
এত কথা মনে পড়ে গেল। অগল্পের মত গল্প গুলোকে আমার খুব ভালবাসতে ইচ্ছে করে।
সেই নাটকের অত্যাচারী মাতব্বর কে সিনেমার খলনায়কের মত ভাবি। তারপর তিতির! শুকনো বাঁশের পাতার নদী পেরিয়ে আসা মানুষটাকে বড় আপন লাগে। নতুন একটা গল্পের কথা ভাবলেই কেমন শিহরন খেলে যায়।
আশে পাশে কত চরিত্ররা থাকে। দুরুল মামা অনেক টাকা কামিয়েছিল। জেসমিনের প্রেমিকের বাড়ির লোকদের ফাঁসিয়ে দিয়ে। ছেলেটি মাঝে মাঝে এখনো গাছটার নিচে দাঁড়িয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। আমার এসব ভাবতে ভাল লাগে।
গল্পটা গল্পের মত মিস্টি হোক। আমার গল্পেরাও গল্পের মত হোক। একটা তুলতুলে কোমল বালিশের মত। মাথা রাখলেই তলিয়ে যেতে ভাল লাগবে আমার।
আজ রাতে আর একটা অস্থির স্বপ্ন আসুক।
তিতির আসুক! ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।