আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঘটনার নেপথ্যে

আমি নতুন কিছু লিখবো সরকারকে 'চাপের মুখে' রাখার পাশাপাশি নিজেদের 'বিশেষ উদ্দেশ্য' হাসিল করতে রাজধানীতে ব্যাপক 'শোডাউন' করার পরিকল্পনা নিয়েছিল বিএনপির একাংশ। গতকাল সারাদেশ থেকে ঢাকায় সংবর্ধনা নিতে আসা মুক্তিযোদ্ধাদের 'রিসিভ' করার নামে এ শোডাউনের 'কৌশল' নিয়েছিলেন তারা। দলের অধিকাংশ সিনিয়র নেতাকে না জানিয়ে 'কট্টরপন্থি' হিসেবে পরিচিত মুষ্টিমেয় কয়েকজন নেতার উদ্যোগে গ্রহণ করা হয় এ 'গোপন কর্মসূচি'। আর বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীদের। কিন্তু গোয়েন্দা তথ্যের কারণে ভোর ৬টা থেকে অন্তত ৩০টি স্পটে জড়ো হওয়া নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশ চড়াও হওয়ায় পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারেননি তারা।

ফলে রাজধানীজুড়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে। এতে বোমা বিস্ফোরণে একজন নিহত হন। বিএনপি সূত্র জানিয়েছে, রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে কয়েক লাখ লোকের সমাগম ঘটিয়ে সরকারকে হুশিয়ারি বার্তা পেঁৗছে দেওয়ার পরিকল্পনা আছে তাদের। তাদের ভাবনা_ মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের মতো বাংলাদেশেও একই ধরনের প্রেক্ষাপট তৈরি করা। গতকাল প্রথম 'মিশন' নিয়েছিল তারা।

এ লক্ষ্যে প্রায় এক মাস ধরে দেশ-বিদেশে 'সিরিজ' বৈঠক করে নেপথ্যের কুশীলবরা। রাজপথে শক্তি প্রদর্শনকে দলের হাই কমান্ডের কাছে 'গুরুত্বপূর্ণ' হয়ে ওঠারও একটি 'কৌশল' হিসেবে নিয়েছেন ওইসব নেতা। সূত্রে জানা গেছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় মহাসমাবেশ করার চিন্তাভাবনা করছে বিএনপি হাই কমান্ড। বিএনপির কট্টরপন্থি এ অংশটি ওই মহাসমাবেশ থেকেই মহাজোট সরকারকে পদত্যাগে 'বাধ্য' করতে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি নেওয়ার পক্ষে মত দিচ্ছে। তবে উদারপন্থি নেতারা ওই মহাসমাবেশ থেকে শুধু তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবি না মানা পর্যন্ত লাগাতার অবস্থান নেওয়ার পক্ষে।

পুলিশসহ একাধিক সূত্র জানিয়েছে, মূল পরিকল্পনা করা হয় পার্শ্ববর্তী একটি দেশে। নেপথ্যের নায়করা ওই দেশে বসে শোডাউনের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে। প্রাথমিকভাবে তারিখ নির্ধারণ ছিল ১৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যা। এ জন্য ওইদিন বিএনপির পূর্বঘোষিত বিজয় র‌্যালি বাতিল করে ১৯ ডিসেম্বর করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু কৌশলগত কারণে ওইদিন 'শোডাউন'ও বাতিল করা হয়।

অবশেষে মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশকে কেন্দ্র করে মুক্তিযোদ্ধাদের 'রিসিভ' করা উপলক্ষে গতকাল রোববার ভোরেই ওই কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। জানা গেছে, অধিকাংশ সিনিয়র নেতা এ কর্মসূচির কথা জানেন না। এমনকি ঢাকা মহানগরীর শীর্ষ নেতা, সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও থানা-ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতারা কিছুই জানতেন না। বিএনপি একাংশের এ শোডাউনে মূলত ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীদের শনিবার মধ্যরাত থেকে সম্পৃক্ত করা হয়। বিএনপি হাই কমান্ডের কয়েকজন এবং একাধিক বর্তমান-সাবেক ছাত্র ও যুবনেতা পরিকল্পনার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন।

পরিকল্পনা অনুযায়ী ঢাকার সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর, ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের বিভিন্ন ইউনিটকে মধ্যরাতে বড় ধরনের জমায়েতের পরিকল্পনার কথা জানানো হয়। অবশ্য মূল পরিকল্পনাকারীদের নির্দেশনা ছিল_ "সংবর্ধনা উপলক্ষে মুক্তিযোদ্ধাদের 'রিসিভ' করতে ভোর থেকে জড়ো হতে হবে। নির্দেশ দেওয়া মাত্রই সবাইকে একটি স্পটে আসতে হবে। '' জানা গেছে, এ জন্য ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের বিভিন্ন ইউনিটকে প্রাথমিক অবস্থায় কোথায় জড়ো হতে হবে_ তা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, শান্তিনগর, দৈনিক বাংলার মোড়, রমনা পার্ক, শাহবাগ, গুলিস্তান, প্রেস ক্লাব, ফকিরাপুলসহ অন্তত ৩০টি স্পটে জড়ো হয় নেতাকর্মীরা।

ভোরে নারায়ণগঞ্জ এবং গাজীপুর থেকে কয়েক হাজার কর্মী ঢাকায় আসে; কিন্তু গোয়েন্দারা আগাম তথ্য পাওয়ায় একটি পয়েন্টে এসে জড়ো হতে পারেনি নেতাকর্মীরা। ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (সদর দফতর) হাবিবুর রহমান বলেন, মতিঝিল, পল্টন, প্রেস ক্লাব এলাকার ঘটনার সঙ্গে জামায়াতের কর্মীরা জড়িত ছিল। তবে অন্যান্য এলাকায় বিএনপির কর্মীরা সক্রিয় থেকে এসব সহিংস ঘটনা ঘটায়। ঢাকা মহানগর পুলিশের জনসংযোগ বিভাগের প্রধান অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মাসুদুর রহমান সমকালকে বলেন, আজ (গতকাল) সকাল সাড়ে ৬টা থেকে জামায়াত-শিবির কর্মীরা রাজধানীর কিছু স্পটে আকস্মিক খণ্ড খণ্ড মিছিল বের করে। তারা গাড়িতে আগুন ও হাতবোমা বিস্ফোরণের মাধ্যমে জনমনে আতঙ্ক তৈরি করে।

ঘটনার পর গতকাল দিনভর বিএনপির বেশ ক'জন নেতার সঙ্গে সমকাল প্রতিবেদকের আলাপ হয়। অনেকেই বলেছেন, কী হয়েছে তারাই বুঝতে পারছেন না। তবে কয়েকজন দাবি করেন, কোনো সহিংসতা ঘটানোর ইচ্ছা তাদের ছিল না। বড় ধরনের জমায়েতই ছিল তাদের উদ্দেশ্য। কিন্তু পুলিশ তাদের বাধা দিয়ে পরিস্থিতি 'ঘোলাটে' করে।

অবশ্য বিএনপির কয়েকজন সিনিয়র নেতা আকস্মিকভাবে এ 'শোডাউনের' সিদ্ধান্তকে অপরিপকস্ফতার পরিচয় বলে মন্তব্য করেন। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিএনপি কোনো নিষিদ্ধ সংগঠন নয়। দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের সিদ্ধান্ত ছাড়া এত বড় একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হয়নি। এতে দলের নেতাকর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করেন তারা। তবে পুলিশ বলছে, জামায়াত-শিবিরই ছিল মূল পরিকল্পনাকারী।

তাদের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীরা বিভিন্ন স্পটে থেকে এ 'নাশকতা' চালায়। এ অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে বিএনপি ও জামায়াত। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তাদের সমাবেশ বানচাল করতেই সরকার নিজেদের লোক দিয়ে নাশকতা চালায়। এ হামলার সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করেন জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান। র‌্যাব-৩-এর পরিচালক লে. কর্নেল রফিকুল ইসলাম সমকালকে বলেন, হামলার পরিকল্পনা ঠেকাতে আমাদের পূর্বপ্রস্তুতির অংশ হিসেবে ২২টি টিম মোতায়েন ছিল।

Click This Link ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.