আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঘটনার অঘটন ।

-কীরে হালা ?? কি করছ ??? ফোনের ওপাশ থেকে চিকন একটা শব্দ ভেসে এলো -এইতো ,এইতো ,আমতা ...আমতা ...। বুঝলাম ব্যাটা ফেইসবুকে আছে ,না হলে এই সন্ধায় বিছানায় শুয়ে মুচড়ামুচড়ি করছে । কন্ঠটা উত্‍কন্ঠা করে বললাম , -তোর নামে এসব কি শুনছি ,মৃদুল ??? -কি ? কি শুনতেছিস ?? -ভাব লও ,না ?? বুঝো না ...? -না তো ,কি হইছে ?ওর কন্ঠে উত্‍কন্ঠা... ভাব লইছ না , আমরা এখন জিরো পয়েন্টে আছি । তুই দুই মিনিটের মধ্যে জিরো পয়েন্টে আয় । কাপড় চাপড় পড়া না থাকলেও সমস্যা নাই ..যে অবস্হায় আছিস...ঐ অবস্হায় আয় ।

লাইনটা কেটেঁ দিয়ে আমি আর রাতুল হাসতে থাকলাম । ব্যাটা আজকে বুঝবে ,বললাম রাতুলকে । রাতুল ,আমি ,মৃদুল আর জয় একসাথেই এই জিরো পয়েন্টে আড্ডা দেই । ভাবছেন জিরো পয়েন্ট !!! এটা আবার কিরকম জায়গা ??? চারজন চারদিক থেকে এই পয়েন্টে আসি । অনেকটা চৌরাস্তা টাইপ ।

তাই পয়েন্টকে সজ্ঞায়িত করা হয়েছে জিরো পয়েন্ট হিসেবে । যাই হোক ... পয়েন্ট থেকে মৃদুলের মেস দেখা যায় । ও থাকে দ্বিতীয় তলাতে । ওখান থেকে এখানে আসতে চারমিনিটের বেশী লাগার কথা না । কিন্তু মৃদুল স্যার ওখান থেকে এখানে আসতে ১৫ মিনিট থেকে ২০ মিনিট সময় লাগান ।

তবে আজকে তাকে যে মশলা দেওয়া হয়েছে তাতে তার হেলিকপ্টারের বেগে আসার কথা । মৃদুল,দেখতে লম্বা আর চিকন ,চোখে চশমা। পয়েন্ট থেকে মৃদুলের মেসের দিকে চেয়ে আছি । -ঐতো স্যার বের হয়েছে ,বলল রাতুল । শুভ সন্ধা ,স্যার ,মেইনরাস্তা পার হয়ে বলে উঠল মৃদুল ।

-শুভ সন্ধা ,আমি আর রাতুল একসাথে বললাম । তার কানে হেডফোন । মাথায় সুয়েটারের ঢাকনা । দেখতে এলিয়েন লাগছে । তুই এইসব কি করেছিস ,মৃদুল ?-বলে উঠলো রাতুল -কি করছি ? কি ? -তুই নিজেই নিজেই বলবি না আমরা বলবো ।

ওকে বেশ চিন্তিত দেখালো । না ,তোরাই বল ,আমি জানি কিছুই হয় নাই । আমি আর রাতুল হাসলাম । আসলেই কিছুই হয় নাই । তোকে দ্রুত আনতে এই ব্যবস্হা ।

তিনকাপ চায়ের অর্ডার দেওয়া হলো । জয় থাকলে চার কাপের অর্ডার দেওয়া হতো । জয় এখন ঢাকায় । ওর বাবা অসুস্হ । ভার্সিটির ষ্টুডেন্টদের এই একটা মজা ,দেখা হলেই পচানো শুরু হয় ।

আমি ও পচানো শুরু করলাম । -কীরে নায়িকার কি অবস্হা ,মৃদুল ? -কার ??ও বলে উঠলো । -আরে তোর !!বুঝিস না যেন কিছুই ! -দেখ ,আমার কোন নায়িকা নেই । -নায়িকা নেই মানে ?তাহলে মায়েশা???মায়েশার নাম মুখে নিতেই ও রেগে গেল । বলা বাহুল্য , মৃদুল ,জয় আর মায়েশা তিনজনই খুব ভালো ফ্রেন্ড ।

ওদের মধ্যে মিউচুয়াল আন্ডারষ্ট্যান্ডিং খুব ভালো । কিন্তু ভার্সিটিতে যা হয় আর কি !!মৃদুল আর জয় মায়েশাকে ভালোফেসে ফেললো !!এখন আর কি , ঘটনা পুরাই জটিল থেকে জটিলতর । আমি আর রাতুল ঘটনার পর্যবেক্ষণ করছি পার্শ্ব থেকে । ফ্রেন্ডদের মাঝখানে এইরকম জটিলতা হোক সেটা আমরা চাই না । কারণ ঘটনার পরথেকেই মৃদুল অলটাইম আন্ডার হ্যাং , আড্ডার মাঝেও হ্যাং হয়ে থাকে ।

তার কানে অলটাইম হেডফোন,মনমরা । তাকে কোনবিশেষণে বিশেষিত করা যায় না । মৃদুলের এই প্রেমে পড়ার কাহিনী আমি আর রাতুল অনেক কষ্টে বের করেছি । যাই হোক ... -দেখ ,মায়েশা আমার জাষ্ট ফ্রেন্ড,চেঁচিয়ে উঠলো মৃদুল । তোরা যা ভাবিস সেইরকম কিছুই না ।

-তার মানে তুই মায়েশাকে ভালোবাসিছ না ? -না ! উত্তরটা শুনেই মেজাজটা আমার চরম খারাপ হয়ে গেলো । কোন মেয়ে ফ্রেন্ডেরপ্রেমে তো আমি পড়তেই পারি ,এতে লুকানোর কি আছে । এটাতো ন্যাচারাল একটা ব্যাপার । ফ্রেন্ডদেরকে তো বলবি না ,শুধু বুকে পাথর নিয়ে বসে থাকবি ,বলে উঠলাম ওকে । -প্রেম ভালোবাসা একটা থার্ড ক্লাস ম্যাটার ।

ইটজ অন কাইন্ড অব attraction অব ...ফিজিক্যাল ...*** । আইজাষ্ট হেইট ইট ,মৃদুলের দার্শনিক বক্তব্য । -তার মানে তুই ভালোবেসে ও দূরে থাকবি ,শুধুমাএ জয়ের জন্য । তুই জয়েরজন্য মায়েশাকে sacrifice করবি । বলে উঠলাম আমি ।

ওর নীরব মুখ । আমি সাইকোলোজির কোন বই পড়েনি । তবে সাইকোলোজির প্রতি আমার হিউজ ইন্টারেষ্ট আছে। ও মায়েশাকে সত্যি ভালোবাসে কিনা সেটা বুঝার জন্য সাইকোলোজির এপ্লাই শুরু করলাম ,তবে এই সাইকোলোজি জীবন থেকে পাওয়া ,বই পড়ে নয় । -তুই জয়কে মায়েশার পাশে দেখতে চাস ।

ওকেই , তাতে আমার কোন আপত্তি নেই । বাট আই লাভ মায়েশা ,বলে উঠলাম আমি । এবার আমার ব্যাপারটা তুই দেখ । তুই নিশ্চয় এখন জয়ের আগে আমার ব্যাপারটাদেখবি । কথাটা বলেই ওর এক্সপেরেশন বুঝার চেষ্টা করছিলাম !ও রেগে যায় কিনা ।

তোরা আসলে মানুষ না ,ও রেগে বলে উঠলো । কথাটা বলেই ও দ্রুত পায়ে রাস্তা পার হওয়া শুরু করলো । পিছন থেকে আমি চেচিয়ে উঠলাম , "মায়েশা মাই জান , মাই লাভ ,আই লাভ ইউ..."। আমার দিগন্ত বিস্তৃত হাসি । মৃদুলের তার হাটার বেগ আরো বাড়িয়ে দিল ।

কথাটা বলেই আশপাশদেখলাম । কেউ আমাকে দেখছে নাতো । তাহলে নিঘার্ত পাগল বলবে । নাহ কেউ দেখে নি । ব্যাটা আজকে চেতেছে বলে উঠলাম রাতুলকে ।

কথাটা বলেই সামনের দিকে তাকাতেই যা দেখলাম ,তার জন্য আমি রাতুল কেউই প্রস্তুত ছিলাম না । একটা দ্রুতগামী সি.এন.জি মৃদুলকে ধাক্কা দিয়ে দ্রুত চলে গলো । আমি আর রাতুল দ্রুত ঘটনাস্হলে পৌছুলাম । তবে এই দৃশ্য দেখার জন্য আমি আর রাতুল একদমই প্রস্তুতছিলাম না । ওর দেহটা রক্তাক্ত ।

মাথার চারদিক থেকে রক্ত ঝরছে । তার সাথে সাদা জাতীয় পদার্থ ,মাথার ঘিলু মনে হলো । চোখ একটা বাইরে বের হয়ে আছে । মৃদুলকে দেখে চেনায় যাচ্ছে না । এ কি সেই মৃদুল যে কিছুক্ষণ আগে আমার সাথে কথা বলেছে ! রক্ত আমি একদম সহ্য করতে পারি না,তারপর ও ওর রক্তমাখা মুখের দিকে চেয়ে আছি ।

আমার শরীরে অদ্ভুত এক শিহরণ জেগে উঠলো । চোখ বন্ধ করে ফেললাম আমি । ওর রক্ত মাখা ভয়ার্তমুখটা বারবার ভেসে আসছে । এটা কি কোন খুন না এক্সিসিডেন্ট???-নিজেকে প্রশ্ন করলাম আমি । মাথার ভেতর থেকে শুধু একটা উত্তরই আসলো-এটা একটা খুন ,তুই একটা খুনী...... !!! আমি আজ নেই তবু কতসুর উঠে .... তোমার ঐ গানের মাঝে ... এই পথ গেছে মিশে ... আমার বেলা শেষে .... পৃথিবীর ... দূরদেশে জীবনকে কোন এক... স্বপ্নভেবে ..... :'( :'( ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.