যুদ্ধ আর মৃত্যু যেন একে-অন্যের প্রতিশব্দ। সভ্যতার আদি থেকেই ক্ষমতা দখল ও নানামুখী বিরোধের জের ধরে পৃথিবীর ইতিহাসে অসংখ্য যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। আর এ যুদ্ধের কারণে লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ধ্বংস হয়েছে অনেক নগর এমনকি সভ্যতাও। একের পর এক যুদ্ধ বৈশ্বিক সভ্যতার অগ্রগতিকে করেছে বাধাগ্রস্ত মানবিকতাকে করেছে বিপন্ন।
এমনই ভয়াবহ স্মৃতির চাক্ষুষ উদাহরণ প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা বিশ্ব মানচিত্রকে এলোমেলো করে দিয়েছিল। ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ও দীর্ঘতম যুদ্ধটির মাত্র ২৫-৩০ বছর না পেরোতেই আরেকটি বিশ্বযুদ্ধের খড়গ নেমে আসে শান্তিপ্রিয় পৃথিবীবাসীর কপালে। গোটা পৃথিবী বিস্ময় আর বিহ্বল চোখে তাকিয়ে দেখল আরও একটি ধ্বংসযজ্ঞ। দেখল আরও একটি বিশ্বযুদ্ধ।
এই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে সভ্য সমাজের সবচেয়ে বড় আর ধ্বংসাত্দক যুদ্ধ বলা হয়। ১৯৩৯ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত এই যুদ্ধে গোটা পৃাথবী লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়ে। জার্মানির সঙ্গে মিত্রপক্ষের যুদ্ধের মাধ্যমে এর সূচনা ঘটে। মিত্রপক্ষে প্রথমদিকে ছিল যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং পোল্যান্ড। জার্মানির সঙ্গে পরবর্তীতে ইতালি যুক্ত হয়ে অক্ষশক্তি হিসেবে আত্দপ্রকাশ করে।
জার্মানি কর্তৃক দখলকৃত কিছু দেশ হতেও অক্ষশক্তির বিরুদ্ধে সৈন্যবাহিনী প্রেরিত হয়। বিশেষত পূর্ব সীমান্তের যুদ্ধে এসব দেশের সৈন্যরা অংশগ্রহণ করে; অন্যান্য জাতিসমূহ মিত্রশক্তির সঙ্গে যোগ দেয়। সোভিয়েত ইউনিয়ন জার্মানির সঙ্গে যে কোনো ধরনের আক্রমণ থেকে বিরত থাকার মর্মে অনাক্রমণ চুক্তি নামে একটি চুক্তি সম্পাদন করেছিল। কিন্তু ১৯৪১ সালের ২২ জুন জার্মানি সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করে এবং এর ফলে সোভিয়েত ইউনিয়নও যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। ১৯৪১ সালের ৭ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্র মিত্রশক্তির সঙ্গে যোগ দেয়।
মূলত জার্মানি এবং জাপান দুই অক্ষশক্তিই যুক্তরাষ্ট্রে আক্রমণ করার মাধ্যমে একে যুদ্ধে ডেকে আনে। অপরদিকে চীনের সঙ্গে জাপানের ছিল পুরাতন শত্রুতা; ১৯৩০ সালের মাঝামাঝি সময় থেকেই এই দুই দেশের মধ্যে দ্বিতীয় চীন-জাপান যুদ্ধ চলছিল। এর ফলে চীনও মিত্রপক্ষে যোগদান করে। ১৯৪৫ সালে জার্মানি এবং জাপান উভয় দেশের নিঃশর্ত আত্দসমর্পণের মধ্য দিয়েই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। ভয়াবহ এই যুদ্ধে আনুমানিক ৬ কোটি ২০ লাখ মানুষ মারা যায়, যার মধ্যে প্রায় অর্ধেকই ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন বা রাশিয়ার নাগরিক।
নিহতের এই বিশাল সংখ্যার মূল কারণ ছিল গণহত্যা আর অস্ত্রের ব্যাপক ব্যবহার। আধুনিক সময়ে সংঘটিত এই যুদ্ধে অস্ত্র হিসেবেও আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার করা হয়। ব্যাপক গণবিধ্বংসী অস্ত্রের ব্যবহার এই যুদ্ধের ভয়াবহতাকে কয়েক হাজার গুণ বাড়িয়ে দিয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য পৃথিবীর ইতিহাসে একজন ব্যক্তিকে দায়ী করা হয়। তিনি অ্যাডলফ হিটলার।
হিটলারের নাৎসি বাহিনীর পোল্যান্ড আক্রমণের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়। মিত্রপক্ষে ছিল যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, পোল্যান্ড, রাশিয়া ও গণচীন। জার্মানির সঙ্গে ছিল ইতালি ও জাপান। এই যুদ্ধে প্রথমে রাশিয়া অংশগ্রহণ না করলেও পরবর্তীতে জার্মানি রাশিয়াকে আক্রমণ করে যুদ্ধে বাধ্য করে।
এই যুদ্ধের মধ্য দিয়ে মিত্রশক্তির বিজয় হয়।
জাতিসংঘ সৃষ্টি হয়। বৃহৎ শক্তি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের আত্দপ্রকাশ ঘটে আর রাশিয়া-আমেরিকা স্নায়ুযুদ্ধের সূচনা হয়। এই যুদ্ধের মাধ্যমে সর্বপ্রথম পারমাণবিক বোমার ব্যবহার হয় আর এর শিকার হয় জাপান। ১৯৪৫ সালে জার্মানি এবং জাপান উভয় দেশের নিঃশর্ত আত্দসমর্পণের মধ্য দিয়েই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। তবে আধুনিক সময়ের এই যুদ্ধের ভয়াবহতার কারণে মানুষ একে কখনো ভুলতে পারবে না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।