৩৯ বছর পেরিয়ে গেছে আমরা স্বাধীনতা এনেছি। কিন্তু এখনো যে প্রশ্নটি সচেতন দেশপ্রেমিক বাংলাদেশিকে তাড়িয়ে বেড়ায়, তা হচ্ছে,
যে স্বাধীনতা আমরা পেয়েছি, তেমন স্বাধীনতা কি আমরা চেয়েছিলাম? আর যে স্বাধীনতা চেয়েছিলাম তেমন স্বাধীনতা কী আমরা পেয়েছি?
একটি পতাকা এবং স্বতন্ত্র ভূ-খণ্ডের মাঝেই যদি আমরা স্বাধীনতার স্বাদ পেয়ে যাই, তৃপ্তি পেয়ে যাই, তাহলে অবশ্য ভিন্ন কথা। কিন্তু শুধু আলাদা ভূ-খন্ড ও পতাকার নামই কি স্বাধীনতা?
স্বাধীনতা মানে তো অধিকার নিয়ে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকা।
আমরা কি সেটা পারছি?
স্বাধীনতা মানে তো নতজানু নীতি থেকে বেরিয়ে আসা।
আমরা কী পেরেছি? তাহলে এত ভারত তোষণ কেন?
স্বাধীনতা মানে তো বুক ফুলিয়ে অধিকারের আওয়াজ দিতে পারা।
আমরা কি পারছি? তাহলে টিপাই বাধ ইস্যুতে মিঁউ মিঁউ কেনো? তিস্তার ব্যপারে কেনো জ্বি হুজুর নীতি?
স্বাধীনতা মানে তো স্বয়ং সম্পূর্ণতা।
আমরা কী হতে পেরেছি? তাহলে বারবার কেন আমাদের অভ্যন্তরীণ সমস্যা সমাধানের জন্য নির্লজ্জের মত হাত বাড়াচ্ছি বিদেশিদের দিকে।
বিজয় মানে তো পরাজয় এর গ্লানি গা থেকে ঝেড়ে ফেলা।
আমরা কি সেটা করতে পেরেছি? তবে কেন সন্ত্রাস ও দুর্নীতির কাছে অসহায় আত্ম সমর্পন!
বিজয় মানে তো বীরত্বের গৌরব গাঁথা।
তাহলে বারবার কেন আমরা কাপুরুষের মত বিদেশিদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য ও কটুকথা হজম করে যাচ্ছি।
কে দেবে জবাব? কার কাছে চাইবো আমরা এই প্রশ্নগুলোর উত্তর?
আওয়ামীলীগের কাছে?
বিএনপি’র কাছে?
সামরিক সরকারের শাসনামল ছাড়া বাংলাদেশের পুরোটা সময়তো পালাক্রমে এই দুটি দলই শাসন করলো। কী দিয়েছে তারা আমাদের? কী করেছে তারা আমাদের জন্য? বিদেশে আমাদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে তাদের কোনো অবদান আছে কী? দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন বানানো ছাড়া আন্তর্জাতিক অঙ্গণে আমাদের জন্য তারা আর কী করেছেন?
তারা এক পক্ষ অন্য পক্ষকে ঘায়েল করার প্লান-প্রোগ্রামে যে সময় ব্যয় করেন, সেই সময়টুকুই যদি দেশের জন্য দিতেন, নিঃসার্থ হয়ে, তাহলে বাংলাদেশকে কি অনেক উপরে উঠে যেত না? পরিবারতন্ত্রের খপ্পর থেকে আমরা কি কখনো মুক্তি পাবো না? পরিবারতন্ত্রের গ্যাড়াকল থেকে কবে বেরুবে আমাদের গণতন্ত্র? দল-নিরপেক্ষ একজন সচেতন নাগরিক তো প্রশ্ন করতেই পারে বাংলাদেশ তুমি কার?
আওয়ামীলীগের?
বিএনপি’র?
অথবা আরেকটু সাহস করে বলতে পারে বাংলাদেশ তুমি কার?
খালেদা জিয়ার?
নাকি শেখ হাসিনার?
--------------------------------
ডিসেম্বর এসেছে। প্রতি বছরই একবার করে আসে। আমাদের জানিয়ে দিতে যে, আমরা কতো বড় অকৃতজ্ঞ। আমরা সেটা গায়ে মাখিনা।
লজ্জা আমাদের থেকে কতো আলোকবর্ষ দূরে চলে গেছে-কে জানে!
আমরা পুরুষরা লজ্জা পাইনা কারণ, লজ্জা নারীর ভূষণ! নারীরা পাইনা কারণ পুরুষের সমান অধিকারের যুগ! আর এভাবেই নির্লজ্জতা, নিমকহারামী, অকৃতজ্ঞতা ও বেঈমানিকে নিত্য সঙ্গি করেই আমাদের অদ্ভুত জীবন চলা!!
আজব এক দেশে বাস করি আমরা।
এক দেশে ছিলো এক রাজা... টাইপ দেশগুলোতেও মনে হয় এই অবস্থা নেই! এদেশে আমরা রাজাকারকেও রাষ্ট্রপতি বানাই! স্বাধীনতা বিরোধীদের গাড়িতে পতাকা টানিয়ে দেই! যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে চাই অথচ, আস্তিনের ভেতরের সাপগুলো চোখে পড়ে না! মানবতা আর বিবেক তখন পরাজিত হয় বেয়াইআলার কাছে!
মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পসরা সাজিয়ে বসি। এটি একটি সলিড পণ্য আজ। রাজনৈতিক বাণিজ্যের জন্য এরচে’ ভালো পণ্য আর হয় না। তবে মুক্তিযোদ্ধাদের দিকে ফিরেও তাকাই না।
যদি তাকাই-ও, তারা শরীরে দেশদ্রোহিতার গন্ধ পাই। তাকে ফাসির সুসংবাদ(!) পর্যন্ত শোনাতে দ্বিধা করি না। মেজর জলিলরা, কর্ণেল তাহেররা, মুক্তিযোদ্ধারা এভাবেই যুগে যুগে আমাদের দ্বারা পুরস্কৃত হয়ে থাকেন!!!
মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের জন্য স্বয়ং বঙ্গবন্ধু যাকে বীর উত্তম খেতাব দিয়ে সম্মানিত করেছিলেন, সেই কাদের সিদ্দিকীকে আওয়ামীলীগের অপ শাসনের বিরুদ্ধে কথা বলায় তাকেও আজ রাজাকার হয়ে যেতে হয়েছে! অবাক হবো না যদি কোনোদিন ঘুম থেকে উঠে পত্রিকায় কাদের সিদ্দিকীর নামও যুদ্ধাপরাধীর তালিকায় দেখি।
সরকার কথায় কথায় যুদ্ধাপরাধের বিচার বাধাগ্রস্থ করার ষঢ়তন্ত্র’র কথা বলে। কাদের সিদ্দিকীর মতো মানুষকে যারা রাজাকার বলে, বিচার বাধাগ্রস্থ করবার ষঢ়যন্ত্রকারী হিসেবে সন্দেহের তীরটা তাদের দিকে যায় না! কাচি বগলে রেখে বাইরে এতো খোঁজাখুঁজির দরকার কি! এই প্রশ্নটি কেউ করে না!
-------------------------------------------
মূল লেখাটি বছর খানেক আগেই লিখেছিলাম।
আজ কিছু সংযোজন-বিয়োজন করে আবার হাজির করলাম। ভাবলাম, আমরা যেখানে ছিলাম, সেখানেই রয়ে গেছি। খাসলতের কোনো পরিবর্তন আর হয়নি। তাহলে লেখাটির উপযোগ শেষ হয়ে যায়নি।
-----------------------
আমরা ছিলাম পাকিস্তান নামক একটি দেশের খাদ্য।
২৪টি বছর তারা আমাদের ঘাড়ে চেপে রয়েছে। লেবু চিপে রস বের করার মতো বের করে নিয়েছে আমাদের শরীরের যত রক্ত। স্বাধীনভাবে নিঃশ্বাসটুকু পর্যন্ত নিতে দেয়নি আমাদের! অনেকটা মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটপট করছিলো তখন সাড়ে সাতকোটি বাঙালি।
এই অবস্থায় রুখে দাঁড়ানো হয়ে পড়েছিলো অনিবার্য। রুখে দাঁড়ালো সোয়া সাতকোটি মানুষ।
(নিরব ও রাজাকারের আনুমানিক সংখ্যা বাদ দেয়া হলো) বিজয় ছিনিয়ে আনলাম আমরা। কিন্তু কী পেলাম? স্বাধীনতার আগে ২৪ বছর নির্যাতিত হলাম পাকিস্তান দ্বারা। আর ভারত কর্তৃক নির্যাতিত হচ্ছি চল্লিশ বছর ধরে। দিন দিন বেড়েই চলেছে নির্যাতনের মাত্রা। এ কেমন স্বাধীনতা?
২৬শে মার্চ ১৯৭১ থেকে নিয়ে ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ পর্যন্ত দীর্ঘ ৮ মাস ২২ দিনে ৩০ লক্ষ জীবন এবং ২ লক্ষ সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমরা পেলাম সতন্ত্র একটি পতাকা, লাল-সবুজ।
অথচ, যাদের জন্য আজ আমরা মুক্তভাবে নিঃশ্বাস নিতে পারছি, তাঁরা কিন্তু ভোগছে শ্বাস কষ্টে! ফিরে তাকাবার সময় নেই আমাদের।
পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা পা হারিয়ে ঘরে বসে আছে আজ ৪০ বছর হলো। থাকুক বসে, আমাদের কী! আমরা আমাদের পায়ে সামান্য ব্যথা হলে ছুটে যাচ্ছি মাউন্ট এলিজাবেত কিংবা কিং ফাহাদে।
বোমার বিকট শব্দে শ্রবণ ক্ষমতা হারিয়ে মানুষটি বেঁচে আছে ৪০ বছর ধরে, মরার মতো। আমাদের কী! আমরা তো আমাদের কানের চিকিৎসায় ছুটে যেতে পারছি আমেরিকায়? আমাদের হলোটা কী?
আবার ফিরে এসেছে ডিসেম্বর।
কদর বেড়েছে মুক্তিযোদ্ধদের। মাস জুড়ে হৈ-হল্লাড় হবে, স্মৃতি সৌদে কিছু ফুল দেয়া হবে, কিছু পদক বিতরণ হবে, কিছু আলোচনা সভা হবে, কিছু সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে, স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে কিছু বিতর্ক হবে, এইতো!!
জীবিত থাকতে খোঁজ-খবর নেয়ার দরকার মনে না করলেও কিছু মুক্তিযোদ্ধার বিধবা স্ত্রী বা এতিম ছেলে ধরে এনে তাদের হাতে তুলে দেয়া হবে একটি তোষা শিরণী’র প্যাকেট। যার কেতাবী নাম-মরণোত্তর পদক!
আমার যদি ক্ষমতা থাকতো, তাহলে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের জিজ্ঞস করতাম, জীবিত থাকতে আমরা তোমাদের খোঁজ নিইনি! খুব যখন বাঁচতে চাইছিলে, আমরা এগিয়ে আসিনি! আর আজ, তুমি যখন নেই, আমরা তোমাকে মরণোত্তর পদক দিচ্ছি! তুমি কি খুব খুশি হয়েছো???
আজ আমরা স্বাধীন দেশের মানুষ। কিন্তু আমাদের ঘীরে আছে পরাধীনতার ডালপালা। আমাদের স্বাধীনতা আজ অরক্ষিত।
আর অরক্ষিত স্বাধীনতা এবং পরাধীনতার মাঝে খুব কিছু ব্যবধান নেই।
স্বাধীনতার প্রকৃত উদ্দেশ্য আমরা ভুলে বসে আছি। ৩০ লক্ষ লোক জীবন দিয়ে এই দেশটি স্বাধীন করে এ জন্য দিয়ে যায়নি যে, আমরা যা ইচ্ছা তাই করবো। যেমন খুশি, তেমন চলবো। তারা তো চেয়েছিলো তাদের বাংলাদেশের মানুষগুলো মাথা উচু করে বাঁচবে।
নিজেদের সমস্যা নিজেরাই সমাধান করবে। সর্বোপরি নিঃশর্তভাবে দেশকে ভালবাসবে। শুধুই বাংলাদেশকে।
আমরা যদি সেটা করতে না পারি, তাহলে স্বাধীনতা আর পরাধীনতার মাঝে ব্যবধান থাকলো কই?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।