একটা আটপৌরে ঘরোয়া সাদামাঠা প্রেমের কবিতা লিখতে চাই --------------- দৈনিক ইত্তেফাক থেকে নেয়া
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীন রাজশাহীর পুঠিয়ার ঐতিহ্যবাহী রাজবাড়ি, মন্দির ও পুরাকীর্তি সম্বলিত রাজ এস্টেটের ৩৬ একর জমি ব্যক্তি মালিকানায় চলে যেতে বসেছে। রাষ্ট্রপক্ষ প্রয়োজনীয় দলিলাদি দাখিল করতে না পারায় গত ৭ ডিসেম্বর হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চে রিট আবেদনকারীর পক্ষে একতরফা শুনানি হয়। পরে রাষ্ট্রপক্ষের সময়ের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত আগামী ১৩ ডিসেম্বর পুনরায় শুনানির দিন ধার্য করেছেন। প্রসঙ্গত, পুঠিয়া রাজবাড়ি, মন্দির ও মাঠ উন্নয়নে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সরকার ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকার প্রকল্প একনেকে পাস করেছে। অধিদপ্তর ইতোমধ্যে ৫৬ লাখ টাকার সংস্কার কাজও করেছে বলে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দু’টি কারণে রাষ্ট্রীয় সম্পদ পুঠিয়া রাজবাড়ির মালিকানা নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। রাষ্ট্রীয় সম্পত্তির মালিকানা ও দখল দাবি করে পুঠিয়ার সাবেক তহশিলদার খলিলুর রহমানের রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্টের রুলনিশির আদেশের কপি রহস্যজনক কারণে রাজশাহীর জেলা প্রশাসকের দপ্তরে পৌঁছায় নির্ধারিত সময়ের পর। কিন্তু আইন মন্ত্রণালয়ের সলিসিউটর অফিস থেকে ওই রুলনিশির জবাবও রহস্যজনকভাবে উধাও হয় বলে জানা গেছে। ফলে রাষ্ট্রপক্ষ হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে কাগজপত্র দাখিল করতে পারেনি বলে একতরফা রিট আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
কে এই রিট আবেদনকারী : জমিদারী প্রথা বিলোপ ও ১৯৫০ সালে প্রজাস্বত্ব আইন পাসের পর সরকারের এসএ অ্যাক্ট এস্টেটের সহকারি তহশিলদার হিসেবে পুঠিয়ায় চাকরি করেন খলিলুর রহমান।
তিনি ১৯৩৩ সালে ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলার হুরড়িপাড়ায় (বর্তমান রাণীনগর থানার ঝাড়ুপাড়া গ্রামে) জন্ম গ্রহণ করেন। পরে পিতা সামসুদ্দিনের সঙ্গে তিনি গোদাগাড়ী উপজেলার দেউপাড়া ইউপির কানাইডাঙ্গা গ্রামে চলে আসেন। প্রায় ২৫ বছর পর সেখান থেকে তিনি রাজশাহী কোর্ট এলাকায় বসবাস শুরু করেন।
সূত্র জানায়, ১৯৩৮ সালে ট্রাস্ট সম্পত্তি হিসেবে মহারাণী হেমন্ত কুমারীর নাতি অমিয় স্যান্যাল, সঞ্চয় স্যান্যাল, সাবিত্রী স্যান্যাল পুঠিয়ার রাজ এস্টেটের সম্পত্তি পরিচালনার দায়িত্ব পান। ভারত-পাকিস্তান ভাগের আগেই তারা সম্পত্তি ফেলে ভারতে চলে যান।
পরিত্যক্ত এসব সম্পত্তি প্রজাস্বত্ব আইনের আওতায় সরকারের অধীনে চলে যায়। ইতোমধ্যে পুঠিয়ার তহশিলদারের চাকরির সুবাদে রাজ এস্টেটের সব সম্পত্তির উপর খলিলুর রহমানের নজর পড়ে।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অনেক পুরনো
খলিলুর রহমান এর আগে ভাওয়াল রাজার সম্পত্তি নিজের বলে দাবি করে দখল ফেরত চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছিলেন। ওই রিটে ভাওয়াল এস্টেটের জমিদারের পক্ষে ভাওয়াল রাজার জয়দেবপুর রাজবাড়ি, বাগান, পুকুর, দিঘী, দোকান, টঙ্গী বাজার, ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের অধীন নলগোলা কুঠিসহ জমি, ঢাকার তেজকুনিপাড়ার ভাওয়াল বাজার, হাতির বিল, ঝিল, সেগুন বাগিচার জমি, আশুলিয়া মডেল টাউনের জমি, নোয়াপাড়ার বাগান, সাবেক কেরানীগগঞ্জ থানার বিল-খাল এবং সাবেক জমিদারের রক্ষিত টাকা-পয়সা ও সম্পত্তির মালিকানা দাবি করেন এই খলিলুর রহমান। ২০০৬ সালের ২৩ জানুয়ারি তার রিট আবেদন হাইকোর্ট খারিজ করে দেন।
এর আগে খলিলুর রহমান পুঠিয়া চারআনা স্টেটের জমিদার নরেশ নারায়ণ রায়ের সম্পত্তি দখলের জন্য জেলা সাব জজ আদালতে মামলা করেন। ওই মামলায় নরেশ নারায়ণের কথিত স্ত্রী কমর বেগম ও বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে জেলা প্রশাসককে বিবাদী করা হয়। ১৯৯৮ সালের ২৮ জানুয়ারি নিজের পক্ষে রায় পান খলিলুর রহমান। পরে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে ৫৪/১৯৮২ নম্বর আপীল করেন কমর বেগম। এ মামলায় ‘ভুয়া দলিল’ ও ‘জাল কাগজপত্র’ তৈরির জন্য খলিলুর রহমানকে ভর্ত্সনা করেন হাইকোর্ট।
এছাড়া তার বিরুদ্ধে পুঠিয়ার কৃষ্ণপুর এলাকার জমিদার শিবদা রঞ্জন লাহিড়ীর জমি দখল করে বিক্রির মাধ্যমে আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। কান্দ্রা মৌজার প্রায় ৫ একর সরকারি সম্পত্তির দখল নিতে ভুয়া পত্তননামা দিয়ে মামলা করেন তিনি। এ মামলায় কৌশলে রাষ্ট্রকে পক্ষ না করে তিনি একতরফা রায় পান। পরে এ জমি তার স্ত্রী শামসুন্নাহারের নামে খারিজ করা হয়েছিল। পরে অবশ্য তা বাতিল করা হয়।
‘কথিত’ একটি বিনিময় দলিলই সব
হাইকোর্টে রিট আবেদনকারী খলিলুর রহমানের দাখিলকৃত দলিল অনুযায়ী, ১৯৬৫ সালের ১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবসের দিন বিনিময় দলিলের মাধ্যমে ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলার হুররিপাড়ায় খলিলুর রহমানের ১১৯ একর জমির সঙ্গে পুঠিয়ার রাজ এস্টেটের ৩৬ দশমিক ০৩ একর জমির বিনিময় করা হয়। ওই দলিলের অজুহাতে ১৯৭৫ সালের ২ অক্টোবর রাজশাহীর তত্কালীন জেলা প্রশাসক পুঠিয়া রাজবাড়ির সম্পত্তি খলিলের নামে রেজিস্ট্রি করে দেন। ঘটনাটি ফাঁস হলে ১৯৭৬ সালের ২০ জুন ওই রেজিস্ট্রি দলিল বাতিল করেন তত্কালীন জেলা প্রশাসক। এনিয়ে খলিলুর রহমান হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। হাইকোর্ট খলিলের পক্ষে রায় দিয়ে ১৫ দিনের মধ্যে তাকে সম্পত্তি বুঝিয়ে দেয়ার নির্দেশ দেন।
কিন্তু জমি বুঝে না পেয়ে খলিলুর রহমান জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আদালত অবমাননার অভিযোগে আরেকটি রিট আবেদন করেন। এরপর আদালতের আদেশে প্রশাসন তাকে সম্পত্তির দখল বুঝিয়ে দেয়। এরপর খলিলুর রহমান রাজবাড়ির অন্দর মহলে কিছুদিন বসবাসও করেন।
সলিসিউটর অফিস থেকে কাগজপত্র উধাও
চলতি বছরের ২৮ মার্চ বিচারপতি আনোয়ারুল হক এবং বিচারপতি আকরাম হোসেন চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ খলিলুর রহমানের রিট আবেদনের শুনানি শেষে বিচারপতিদ্বয় ‘২৫ এপ্রিলের মধ্যে এমএলও-৩ এর কার্যকারিতা নেই এবং সম্পত্তির দখল হস্তান্তরের আদেশ কেন দেয়া হবে না’ মর্মে সরকারের প্রতি রুলনিশি জারি করেন। কিন্তু রহস্যজনক কারণে আদালতের রুলনিশির আদেশের কপি না পাওয়ায় রাষ্ট্রপক্ষে নির্ধারিত তারিখের মধ্যে জবাব দেয়া সম্ভব হয়নি।
গত ১৭ অক্টোবর রুলনিশির জবাবসহ দলিলাদি বিশেষ দূত পাঠিয়ে ঢাকায় আইন মন্ত্রণালয়ের সলিসিউটর অফিসে পাঠানো হয়। কিন্তু থেকে আইন মন্ত্রণালয়ের সলিসিউটার অফিস থেকে ওই কাগজপত্র রহস্যজনক উধাও হয়ে গেছে বলে জানা গেছে। ফলে গত ৭ ডিসেম্বর হাইকোর্টের ৬ নম্বর আদালতে রিট মামলাটি খলিলুর রহমানের পক্ষে একতরফা শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। ওই দিনই রিটের রায় ঘোষণার কথা ছিলো। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ সময়ের আবেদন করায় আগামী ১৩ ডিসেম্বর পুনরায় শুনানির তারিখ ধার্য করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে রাজশাহীর বর্তমান জেলা প্রশাসক আব্দুল হান্নান সাংবাদিকদের বলেন, ‘হাইকোর্টের রুলনিশির আদেশে ২৫ এপ্রিলের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষের জবাব ও দলিলাদি পাঠাতে বলা হয়। কিন্তু আমরা ওই আদেশের কপি পেয়েছিলাম গত ১৫ মে। এরপর জবাব ও প্রয়োজনীয় দলিলাদি ১৭ অক্টোবর আইন মন্ত্রণালয়ের সলিসিউটার অফিসে পাঠানো হয়। যার রিসিভ কপিও সংরক্ষিত রয়েছে। সমপ্রতি হাইকোর্টের সহকারী অ্যার্টনি জেনারেল ইয়াদিয়া জামান তাকে বিষয়টি জানালে পুনরায় দলিলাদি বিশেষ দূতের মাধ্যমে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
একটি চক্র জাল দলিলের মাধ্যমে এ ধরনের তত্পরতা চালাচ্ছে। ’
এ বিষয়ে হাইকোর্টের সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইয়াদিয়া জামান সাংবাদিকদের বলেন, ‘একতরফা শুনানির পর ৭ ডিসেম্বরই রায় হয়ে যেতো। রাষ্ট্রপক্ষে সময়ের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত আগামী ১৩ ডিসেম্বর পুনরায় শুনানির দিন ধার্য করেন। রাজশাহীর জেলা প্রশাসকের নিকট পুনরায় কাগজপত্র চেয়ে পাঠানো হয়েছে। ’
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।