আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সরাইলে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম ’ভাগ্যবান’ ধনাঢ্যরা বেচে দিল গরু

A LITTLE MAN FROM SARAIL আরিফুল ইসলাম সুমন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে ভেস্তে যেতে চলেছে ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের সুফল। অনেক ’ভাগ্যবান’ ধনাঢ্য প্রকল্পের গরু বিক্রি করে দিয়েছেন। অভিযোগ উঠেছে, গরু জবাই করে অতিথি আপ্যায়নের। তালিকা তৈরিতে অনিয়ম হওয়ায় প্রকাশ্যেই ক্ষোভ প্রকাশ করে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন খোদ সংসদ সদস্য। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট লোকেরা সরজমিনে গিয়ে এসব বিষয়ের সত্যতা পেলেও কার্যত কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।

এ নিয়ে সর্বত্র এখন সমালোচনা ঝড়। উপজেলা বিআরডিবি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সরাইল সদর, নোয়াগাঁও, কালীকচ্ছ ও পানিশ্বর ইউনিয়নের ২০টি গ্রামে প্রকল্পের কাজ চলছে। প্রতিটি গ্রাম থেকে ৬০ জন সুফলভোগী বাচাই করা হয়। এখন পর্যন্ত একশ’ জন সুফলভোগীর মাঝে গরু বিতরণ করা হয়েছে। প্রতিটি গরুর মূল্য ২০ হাজার টাকা।

সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রকল্পের তালিকা তৈরিতে অনিয়মের আশ্রয় নেওয়া হয়। গরীবের বদলে ধনাঢ্যরাই পেয়েছেন এ প্রকল্পের গরু। ’ভাগ্যবান’ ওই ধনাঢ্যরা বাড়িতে পালনের জায়গা না থাকায় গরু বিক্রি করে দিয়েছেন। অনেকে ওই গরুতে আপ্যায়ন করেছেন অতিথিদের। কথা হয়, প্রকল্পের সুফলভোগী কালীকচ্ছ গ্রামের মধু ঘোষের সঙ্গে।

তিনি চাকুরি করেন অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান (এনজিও) বীজ-এ। তিনি প্রকল্পের গরু পেয়ে, অন্যত্র বিক্রি করে দিয়েছেন। মধু ঘোষ বলেন, ’বাড়িতে বিল্ডিং ঘর। গরু পালনের পরিবেশ নেই। তাই পালনের জন্য গরু অন্যের কাছে রেখেছি’।

কালীকচ্ছের মধ্যপাড়ার পরিমল দাস। প্রতিষ্ঠিত মৎস্যজীবি। ৮ লাখ টাকা ব্যয়ে পুটিয়া হাওরে জলমহাল ইজারা নিয়েছেন। তিনিও প্রকল্পের সুফলভোগী হিসেবে গরু পেয়ে বিক্রি করে দিয়েছেন। পরিমল দাস জানান, গরু পালনে সমস্যা।

পরে বেশী টাকা দিয়ে উন্নত জাতের গরু কিনে নিব। গলানিয়া গ্রামের সাজু বেগম এবারের কোরবানীর হাটে গরু বিক্রি করে দিয়েছেন। সাজু বেগম সাংবাদিকদের বলেন, সরকার গরু আমাকে দিয়েছে। এটা যা খুশি তা-ই করবো। এতে কারো কিছু বলার নেই।

বিশুতারা গ্রামের রহিম আলী ও রাজা মিয়া দু’জনেই প্রকল্পের গরু নিয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধেও প্রকল্পের গরু বিক্রি করে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। তাদের বাড়িতে গিয়ে গরু পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে কেউ কথা বলতেও রাজি হয়নি। উপজেলার বড্ডাপাড়া গ্রামের যুবলীগ নেতা মোহাম্মদ আলী প্রকল্পের গরু পেয়েছেন।

গ্রামের একাধিক ব্যক্তির অভিযোগ বহু আগেই তার গরু বাজারে বিক্রি হয়ে গেছে। মোহাম্মদ আলী জানান, বাড়িতে পালনের সুবিধা নেই। তাই গরুটি শাহবাজপুরে অন্য লোকের কাছে বর্গা দিয়ে রেখেছি। নতুন হাবলী গ্রামের আবদুল্লা মিয়া প্রকল্প থেকে গরু নিয়েছেন। গ্রামের বেশক’জন জানান, তিনি গরু বিক্রি করে দিয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে খোঁজ করলে তাকে পাওয়া যায়নি। নতুন হাবলী গ্রামের উম্মর মিয়া গরু পেয়ে বাজারে বিক্রি করে দেন। এ বিষয়ে তিনি কথা বলেননি। এ রকম আরো বহু বিত্তশালী সুফলভোগী লোকজন প্রকল্পের গরু, টেউটিন, মুরগি পেয়ে বাজারে বিক্রি করে দিয়েছেন বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন। এ বিষয়ে উপজেলায় দায়িত্বরত প্রকল্পের মাঠ সংগঠক মো. আশরাফুল জানান, অনেক সুফলভোগী প্রকল্পের গরু বিক্রি ও জবাই করে ফেলেছেন এমন অভিযোগ পেয়েছি।

কিন্তু সরেজমিন গেলে তারা একাধিক গরু সামনে হাজির করেন। প্রকল্প থেকে দেওয়া গরুগুলোর রং, আকার-প্রকৃতি আমার জানা নেই। তাই বিষয়টি ধরা পড়ছে না। উপজেলা বিআরডিবি’র সহকারী কর্মকর্তা মাঞ্জুমা আক্তার জানান, প্রকল্পের গরুগুলো সরকারী সম্পদ। এগুলো অনুমতি ছাড়া বিক্রি কিংবা জবাই করলে অভিযুক্ত সুফলভোগীর বিরুদ্ধে আত্মসাতের মামলা করা হবে।

গরু বিতরণকালে এগুলোর ছবি তোলাসহ এর রং ও আকৃতি রেজিষ্টার খাতায় লিপিবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। সরাইল বিআরডিবি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও আ’লীগ নেতা মজিবুর রহমান জানান, গরু বিক্রির কথা শুনেছি। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সাফায়াত মো. শাহেদুল ইসলাম বলেন, প্রকল্পের গরুগুলো সরকারী সম্পদ। এ বিষয়ে তদন্তপূর্বক দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আত্মসাতের মামলা হবে।

সরাইল উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) মো. শাহজাহান মিয়া বিত্তশালীরা গরু পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, প্রকল্পের তালিকা তৈরীতেই অনিয়ম হয়েছে। আমি কমিটির সদস্য হয়েও তালিকা তৈরীর বিষয়ে কিছুই জানি না। ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.