আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সরাইলে হতভাগ্য মায়ের কান্না থামাবে কে !

A LITTLE MAN FROM SARAIL আরিফুল ইসলাম সুমন, সরাইল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার বড় দেওয়ানপাড়ার সন্তানহারা-বিধবা হতভাগ্য মা রওশন আখতার। তিনি চিকিৎসকদের নির্মম অবহেলা ও অপচিকিৎসায় হারিয়েছেন তার প্রাণোচ্ছল মেয়ে ঝুমুরকে। সেই শোকে একমাস পর মারা যান তার স্বামী অবসরপ্রাপ্ত বন কর্মকর্তা নুরু উদ্দিন ঠাকুর। তিনি গত চার বছরে সেই ঘাতক চিকিৎসকদের বিচার চেয়ে তার হৃদয়ছেঁড়া বেদনার কাহিনী বহুবার কাগুজে লিখে বিভিন্ন দপ্তরে পাঠিয়েছেন। এ বিষয়ে একাধিক সংবাদ মাধ্যমে প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়।

কিন্তু এসবে কোনো সুফল পায়নি ওই সন্তানহারা মা। এদিকে হতভাগ্য এ মায়ের কান্না এখনো থামেনি। তিনি অপচিকিৎসায় মেয়ের মৃত্যুর বিচার দাবি করছেন। গতকাল (শুক্রবার) মৃত ঝুমুরের পরিবার জানায়, জান্নাতুল ফেরদৌস ঝুমুর। মেধাবী ওই ছাত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিল।

হঠাৎ সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। স্থানীয় চিকিৎসক বললেন, তার অ্যালার্জি হয়েছে। কিন্তু চর্মরোগের চিকিৎসক পরীক্ষা করে বলেন, তার ডেঙ্গু। পরে ঢাকায় একটি সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে বেসরকারি একটি ক্লিনিকে ঝুমুরকে নেয়া হয়।

সেখানে আরও খারাপ অবস্থা হলে অন্য কোথাও নিতে চাইলে ক্লিনিক থেকে বাধা দেওয়া হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, তিন ‘শ্রেষ্ঠ’ হাসপাতালের (ঢাকা মেডিকেল, হলি ফ্যামিলি, সলিমুল্লাহ্) তিনজন চিকিৎসকদের সমন্বয়ে মেডিকেল বোর্ড গঠন করে ঝুমুরের রোগনির্ণয় করা হয়েছে। এই মর্মে আশ্বাস দিয়ে তাকে ওষুধ খেতে দেন। ওষুধ খাওয়ার পর ঝুমুর বিকট শব্দে চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। পরে তাকে আইসিইউতে রাখা হয়।

অনেক খোঁজ করেও ওই ঘাতক চিকিৎসকদের আর পাওয়া যায়নি। আইসিইউতে তিন দিন থাকার পর ২০০৭ সালের ২২ নভেম্বর ঝুমুর মারা যায়। পরিবারে সাত বোন ও এক ভাই। ঝুমুর ছিল সবার ছোট। একমাত্র ভাই ইংল্যান্ডে পড়ালেখা করেন।

দুই বোন সরকারি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষিকা। ঝুমুরের অসহায় মা রওশন আখতার অভিযোগ করে বলেন, আমার মেয়েকে বাসের সিটে বসিয়ে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু ডাক্তাররা চিকিৎসা করে তাকে কবরে পাঠিয়ে দিয়েছে। চিকিৎসকদের নির্মম অবহেলা ও অপচিকিৎসায় চোখের সামনে মেয়ের অকাল মৃত্যুর দৃশ্য প্রতিটি মূহুর্ত আমার কলিজায় আগুন ধরিয়ে দেয়। মেয়েকে হারিয়ে তখন আমি মুমূর্ষ হয়ে পড়ি।

ঝুমুরের পিতাও ছিল মুমূর্ষ অবস্থায়। মেয়ের শোকে একমাস পরই মারা যান ঝুমুরের পিতা। তাই ওই সময়ে ঘাতক ডাক্তারদের বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি। মানসিক সুস্থতার পর মেয়ের মৃত্যুর বিচার চেয়ে আসছি। অনেককে চিঠির মাধ্যমে দুঃখের কথা জানিয়েছি।

কিন্তু এই হতভাগী মায়ের বুকফাটা কান্নাজড়িত অভিযোগ কেউই আমলে নিচ্ছেন না। তিনি আরো জানান, ঝুমুরের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও নম্বর স্মৃতি হিসেবে তিনি ব্যবহার করছেন। মৃত্যুর আগে ঝুমুর তার মোবাইল ফোনে একটি নম্বরই সেভ করেছিলেন। আর সেটি হল সেই ঘাতক চিকিৎসকের। ঝুমুরের মা প্রতিদিন ওই নম্বরটি দেখেন।

আর আল্লাহ্’র কাছে বিচারপ্রার্থী হন। রওশন আখতার তার হৃদয়ছেঁড়া কথা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুলকে চিঠি লিখে জানান। চলতি বছরের ২৪ জুন দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় আসিফ নজরুল ঝুমুরের বিষয়টি নিয়ে কিছু লিখেন। রওশন আখতার ওই লেখাটি পড়ে অনেক কিছুই আঁচ করতে পেরেছেন। তিনি জানান, ওই অধ্যাপকের লিখনির মধ্যে বেশকিছু অপ্রিয় সত্য কথা রয়েছে।

যা আমি নীরবে প্রায়ই পড়ে চোখের জল ফেলি। কথাগুলো হলো- ‘তাদের বেদনার প্রতিকার করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের, রাষ্ট্রের কর্ণধারদের। কিন্তু এই রাষ্ট্র ব্যস্ত সংবিধান কাটাছেঁড়া-পুনর্মুদ্রণ, পুনঃ সংশোধন নিয়ে। এই রাষ্ট্রের কর্ণধারেরা ব্যস্ত আগামী দিনে কীভাবে ছলে-বলে-কৌশলে ক্ষমতায় যাওয়া যাবে, সেই প্রতিযোগিতায়। এই রাষ্ট্রের মেধা-চিন্তা-চেতনা নিয়োজিত ধর্ম, জাতীয়তা আর জনকল্যাণ বিছিন্ন ইস্যুতে।

এই রাষ্ট্রের প্রভুরা সামান্য নাক-কানের যন্ত্রণা হলে চিকিৎসার জন্য ছুটে যান ব্যাংকক, সিঙ্গাপুর বা আমেরিকায়। তাঁদের খাবার বিদেশ থেকে আমদানীকৃত, তাঁদের সন্তান পড়াশোনার জন্য বিদেশে প্রেরিত, তাঁদের টাকা-পয়সা জমা থাকে বিদেশের ব্যাংকে, তাঁদের চিকিৎসা চলে বিদেশে। বাংলাদেশ গোল্লায় গেলেও কিছু আসে-যায় না তাঁদের। অপচিকিৎসায় সরাইলের কিশোরীর মৃত্যু তো তুচ্ছ এখানে। ’ ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.