বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে আকর্ষনীয় বা জনপ্রিয় পদ্ধতি হল গণতন্ত্র । আমি নিজেও গণতন্ত্রকে শ্রদ্ধা ও সন্মান করি , তবে ইসলাম কি বলে আর সেটা তুলে ধরা আমি আবশ্যক মনে করি । সংবিধানে যতদিন গণতন্ত্র শব্দটি থাকবে আমি এটাকে শ্রদ্ধা ও সন্মান করে যাব । বর্তমান পদ্ধতিতে ব্যাংক ব্যবস্থায় যেমন সুদকে হারাম বলা হয় , অথচ গণতন্ত্রে এটিও একটি অর্থ ব্যবস্থা , ঠিক তেমনি গণতন্ত্রে বাস করে সঠিক ইসলামি পদ্ধতিটা কি তা আলোচনা করা আমি দোষের কিছু দেখিনা । আমি যা লিখব তা শুধু ইসলাম ও গনতন্ত্রের সার্থেই , কারণ আজ এমন কূলষিত ব্যক্তির অভাব নেই যারা ধর্মের নামে গণতন্ত্রের মধ্যে রাজনীতি করে বেড়াচ্ছে !! আমি যা লিখব তা শুধু ইসলামি পদ্ধতি বর্ণনাই নয়, বরং গণতন্ত্র
কেও সেভ করতে ! ...
গণতন্ত্রের মধ্যে ধর্মের রাজনীতি কতটা যুক্তিযুক্ত তা জানতে হলে গণতন্ত্র সম্পর্কে সর্ব প্রথম জানতে হবে ।
আর এটাও জানতে হবে ধর্মের কোন পদ্ধতি আছে কি-না, বা ধর্মের কোন মৌলিক বিষয়ের সাথে গণতন্ত্রের সংঘাত অথবা সম্পর্ক আছে কিনা ।
>> গণতন্ত্র কি ?: গণ- অথাৎ মানুষ, মানব বা জনগণ এবং তন্ত্র- অর্থাৎ সাধন প্রণালি, প্রধান শাস্ত্র বিশেষ, নিয়ম কানূন । অর্থাৎ গণতন্ত্র মানে হল "মানব কল্যান সাধনে মানবের তৈরি আইন বা পদ্ধতি, যে পদ্ধতি প্রয়োগ হয় শুধু মানব সমাজ বা রাষ্ট্র ব্যবস্থা পরিচালনার জন্য, আর এটাই হল গনতন্ত্র । এটা এমন একটি পদ্ধতি যেখানে কোন ঈশ্বরীক বা ধর্মীয় আইন প্রয়োগের কোন স্থান নেই । এই শ্বাসন ব্যবাস্থায় শুধুমাত্র মানবের জন্য মানব আইন প্রয়োগের মাধ্যমে মানব কল্যাণ সাধন করা ।
যদি ধর্মীয় বা ঈশ্বরীক আইন চালু বা প্রয়োগ করা হয় তবে তা আর গণতন্ত্র থাকেনা ।
পূর্ণাঙ্গভাবে গণতন্ত্রের পদ্ধতি খুজতে গেলে আমরা পাব - গণতন্ত্র হচ্ছে সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা ও চর্চা । এটি গ্রীক শব্দ demokratia অর্থাৎ "rule of the people" থেকে এসেছে , যার শাব্দিক অর্থ “demos = people “ and “ kratos = power” অর্থাৎ জনতার পদ্ধতি বা শক্তি । এটি বর্তমানে খুব আধুনিক ও জনপ্রিয় পদ্ধতি হলেও এর জন্ম প্রাচীন ৫ম থেকে ৪র্থ খ্রী:পূ: শতাব্দিতে ।
Father of the democracy Abraham Lincoln says “ Democracy is the Government of the People , by the People and for the People “
তাহলে আধুনিক গনতন্ত্রের প্রবক্তার সংজ্ঞা থেকে আমরা জানতে পারলাম গণতন্ত্র হল সেই পদ্ধতি যা শুধুই মানব কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত পদ্ধতি ।
যেখানে মানবই প্রবক্তা , মানবই আইনের জন্মদাতা, ক্ষমতার উৎস মানব এবং প্রয়োগ পদ্ধতিও মানবেরই উপর । গণতন্ত্রের মূল কথার পেছনেই হল মানবতাবাদ, এখানে ধর্মীয়বাদের কোন স্থান নেই তা যে ধর্মই হোক-না কেন । পরবর্তীতে আমরা আরও জানব বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ট মানুষের ধর্ম "ইসলামের" সাথে গণতন্ত্রের রাজনীতির হাল-হকিকত সম্পর্কে । আপাততো জানলাম গণতন্ত্রের সাথে ধর্মীও পদ্ধতির পার্থক্যের কথা । ধর্মের শ্বসন জারিকরার জন্য অন্য কোন পদ্ধতি খোঁজাযেতে পারে কিন্তু গণতন্ত্রের মাধ্যমে ধর্ম বা ঈশ্বরীক রাজত্ব কায়েম সম্ভব নয় ।
>>তবে ইসলামের পদ্ধতি কি ?: ইসলামিক শ্বাসন ব্যবস্থা কায়েম করতে হলে ইসলামিক পদ্ধতিতেই করতে হবে । ইসলাম ও গণতন্ত্র একসাথে চলতে পারেনা । এরা একে অন্যের সাথে সামন্য মিল থাকলেও পরস্পরের মধ্যে রয়েছে আদর্শগত ও পদ্ধতিগত অনেক সাংঘর্ষিক বিষয় । কারণ ইসলামের একটি স্বতন্ত্র পদ্ধতি আছে আর তা হল "খিলাফত' ! যে পদ্ধতিতে ব্যবহার করে ইসলামের বিজয়কেতন উড়েছে, জয় হয়েছে সাম্রাজ্য, পরাস্থ হয়েছে শত্রু আর অর্ধ-জাহান হয়েছে ইসলামের পতাকা তলে একত্রিত । সেই পদ্ধতিই হল খিলাফাত যে পদ্ধতিতে রোম সম্রাজ্যের পতন হয়েছে, একাধিক ক্রুসেডে জয়ী মুসলীম তো খিলাফাতের শ্বাসনেই সম্ভব হয়েছে ।
বীরত্বের আত্মগাথা হল খিলাফাত .
>> খিলাফাত: খিলাফাত হল একটি স্বতন্ত্র পদ্ধতি । ইসলামই হল এর জন্মদাতা । এ পদ্ধতি কি তা বলবার আগে বলেরাখি "যারা ইসলামকে Completely code of life
বা পরিপূর্ণ ধর্ম বিধান ইসলামকে মানতে পারেনা তারাইত গনতন্ত্রের মাঝে ইসলামি রাজনীতির ফায়দা লুটেথাকে, তারাই ধর্মের রাজনীতির নামে অধর্ম করছে । এদের অন্তরে যদি খিলাফাত বা ধর্মের পদ্ধতির মাধূর্যের প্রতি অবহেলা থাকে বা ঢেঁকে রাখার চেষ্টা করে তবে তারাই ত বড় জালেম । তাদের ঈমান ও নিয়াত হালকা ! খিলাফাত কি তা জানতে হলে প্রথমেই স্বরণ করতে হবে "খুলাফা-এ-রাশেদিনের" কথা ।
তাদের রাস্ট্র পরিচালনা পদ্ধতির ইতিহাস খুঁজলেই আমরা পাব খিলাফাতের প্রকৃত ইতিহাস ও গঠনের ভিত্তি ।
ইসলাম ৩টি আকিদার উপর প্রতিষ্ঠিত, যথা:
১। তাওহীদ,
২। রিসালাত,
৩। খিলাফাত।
"এক আল্লাহ কর্তৃক প্ররিত রাসূলের আদর্শে ও প্রদর্শিত পথে তৈরি হল খিলাফাত পদ্ধতি। রাসূল সিলসিলা সমাপ্ত । তবে রিসালাত নেই, আছে খিলাফাত যা বর্তমানে কোন দেশে দেখা যায়না । সর্বশেষ কামাল আতার্তুত ১৯২২ সালে এটার সর্বশেষ ইতি টেনেছেন । তিনি যখন তুরস্কের খিলাফাত ধ্বংস করেছেন তখন গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন ।
১। এখানেই প্রতিয়মান হয় যে খিলাফাত ও গণতন্ত্র এক নয় এবং বিরোধী ।
২। গণতন্ত্রের জন্ম রাসূলের জন্মেরও একহাজার বছর আগে , তাই যদি গণতন্ত্র জায়েয হত তবে রাসূল (সা তার সু-স্পষ্ট হাদিস দিয়ে বলেই দিতেন । তিনি নিশ্চই বলতেন "গণতন্ত্র হল তোমাদের সরকার পদ্ধতি, এটাই সর্বশ্রেষ্ট !" কিন্তু তিনি তা বলেন নাই ।
এমন কথা তিনি উচ্চারণও করেন নাই ।
খিলাফাত হলো সেই পদ্ধতি যা রাসূল (সা প্রত্যক্ষ শিক্ষা এবং তার রিসালাতের সমাপ্তের পর তারই আদর্শিত সিরাত পদ্ধতি থেকে গৃতীত রাসূলের প্রধান প্রধান সাহবীদের দ্বারা রাসূল (সা এর আদর্শিত প্রবর্তিত পদ্ধতি । আমি আবারও উল্লেখ করছি হাজার হাজার বছর ধরে চলা এই পদ্ধতি, যে পদ্ধতি মক্কা মদিনা থেকে শুরু হয়ে রোমের দূর্গ ভেদকরে ইসলামী ঝান্ডা উড়ানো, পারস্য থেকে আফ্রিকা জয় , সমগ্র অর্ধ জাহানকে এক পতাকাতলে একত্রিত করণই হল খিলাফাতের মহিমা । এই পদ্ধতির ফলে খ্রীষ্টানদের সাথে সকল ক্রুসেডের মুসলিমদের গৌরবময় বিজয় । এক কথায় মুসলিমরা যতদিন নিজ পদ্ধতি অবলম্বণ করে শ্বাসন কার্য পরিচালনা করেছে আর যতদিন এই পদ্ধতির উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল ততদিনই কেবল ইসলাম বিজয়ী হয়েছে ।
এরপর যখন আসল পদ্ধতি ত্যাগ করেছে তখনথেকেই ইসলামের শ্বাসকগণ পরাধীন ও পশ্চিমামূখী হয়ে বিধর্মীদের কাছে মাথানতো করে চলেছে , এমনকি ইসলামের আবনতিও এসেছে !
ইসলামী রাজনীতির তৃতীয় বনিয়াদ হচ্ছে খিলাফাত যা সর্বজনীন প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি । জীবণ ব্যবস্থার সর্বক্ষেত্রে আল্লাহর উপর একচ্ছত্র সার্বভৌমত্ব ও আইন প্রয়োগ অধিকার স্বীকার, এ সকবই হল খিলাফাতের অনিবার্য বিধান । মানুষের জীবন যাপন ও পূর্ণাঙ্গ বিধান রচনা ও প্রদানের একমাত্র অধিকার হল আল্লাহ তা'লার । আল্লাহ তা'লার বিধানের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে আল্লাহর প্রতিনিধি হয়ে দুনিয়াতে সেই পূর্ণাঙ্গ বিধান কায়েম করাই হচ্ছে মানব জীবনের একমাত্র কর্তব্য । এই বিশ্ব নিখিল আল্লাহ তা'লার হলেও যোগ্য মানুষকে তার প্রতিনিধি হয়ে দুনিয়াতে পরিচালনার দায়িত্ব প্রদান করেথাকেন, আর সেই প্রতিনিধি হল আল্লাহ তা'লার খলীফা ।
অর্থাৎ খিলাফাতের নেতৃত্ব আল্লাহর পক্ষতেকেই আসে, আর আল্লাহ তালা যাকে ইচ্ছা তাকেই ক্ষমতা প্রদান কারেন এবং তাকে প্রতিনিধি হিসেবে প্ররণ করেন । সেই প্রতিনিধি হয় সৎ, নিষ্ঠাবান, সৎচরিত্রবান, ধার্মিক, দয়ালু জ্ঞানি, অভিজ্ঞ, আবদানকারি, বিবেকবান, ন্যায়পরায়ণ চতুর ইত্যাদি গূনে গূনান্বিত এমন একজন পূরুষ । তিনি আল্লাহ তা'লার প্রতিনিধি হিসেবে জমীনে শ্বাসন পরিচালনা করেন, খিলাফাত হলো ইসলামের এমন একটি পদ্ধতি যার অস্বীকার করে নূতন পদ্ধতিতে প্রবেশের কোন অধিকার কারো নেই ।
> ইবনে খাদুনের মতে- "ইসলামী ঝীবন ব্যবস্থার সংরক্ষণ এবং তদনুযায়ী সমাজ সংগঠন ও পরিচালন পদ্ধতির নাম 'খিলাফাত'। বস্তুত মানুষ নিজে রাজ্যের খলিফা নোন প্রকৃত মালিক ( আল্লাহর ) প্রতিনিধি মাত্র ।
"
> আল্লাহ তা'লা কোরআনে বলেছেন: "ওয়াহু য়াল্লাযি খালাকুম খলিফাতে ফি-ল আরদি"
অর্থাৎ- সেই মহান আল্লাহই তোমাদিগকে পৃথিবীতে তাহার খলীফা নিযুক্ত করিয়াছেন ।
> আল্লাহ তা'লা সূরা নূর-৫৫ নং আয়াতে বলেছেন : " আল্লাহ তা'লা তাহাদের উপর পৃথিবীর খিলাফাতের দায়িত্ব অর্পন করিয়াছেন , যেমনটি তিনি তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের নিযুক্ত করিয়াছেন । "
এতএব, আল্লাহ তা'লা দুনিয়াতে স্বাশন কার্য পরিচালনের জন্য খিলাপাত ব্যবস্থার মাধ্যমে ফলিফা নির্ধারণ করেছেন । তাই খেলাফতই হল একমাত্র ইসলামি স্বতন্ত্র পদ্ধতি । এটাকে অস্বীকার করা হল আল্লাহর বিধান ও তার কর্তৃত্বের প্রতি অস্বীকার করা ।
বর্তমান সময়ে মুসলীম-বিশ্বে দেখতে পাব কোথাও ইসলামের সেই মূল পদ্ধতি (খিলাফাত) নেই । তাইত অনেক ধর্মশ্রয়ী কিছু কপট চেষ্টাকরে যে গণতন্ত্রের মধ্যেই ইসলাম নিহিত, কেননা এর ভালদিক অনেক যা ইসলামের সাথে মিলে যায় । যেমন তারা বলেথাকে রসূলের উফ্যাতের পর খলিফা নির্ধারনের জন্য আবু-বক্কর ও ওমরকে দাঁড় করে জণসমর্থন নেওয়া হয়েছিল ! এটা এক ভ্রান্ত-মস্তিস্কের উদাহরণ । কারণ সেই সময় সর্বাধিক সমর্থন পেয়েও ওমর খলিফা হতে পারেন-নাই, হয়েছিলেন আবু-বক্কর, সেটাও রসূল (সা এ ঝীবনের একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করেই । আর তা হল রাসূল(সা এর জীবদ্দ্বসায় তিনি অসুস্থ হলে আবু-বক্করকেই ইমামতির দায়িত্ব দিয়েছিলেন এবং তার পিছনে রসূল(সা নামাজ পরেছেন , সেখানেই রাসূল (সা ইঙ্গিত প্রদানও করেছেন তার পর ইসলামের কান্ডারি কে হবেন ।
এবং কোরানুল কারিমে রাসূল(সাএর মাত্র এক জনের নাম এসেছে আর তিনি হলেন আবু-বক্কর (রা । এই সকলদিক বিবেচনার খাতিরে ইসলামের প্রথম খলিফা হলেন আবু-বক্কর (রা ।
এখন বলতেচাই শুধু ভোটাধিকারই গণতন্ত্রের কথা নয় । যা বিরোধ আছে গণতন্ত্রে ও খিলাফাতের মাঝে তার স্ব-বিস্তারিত তুলে ধরতে প্রতিজ্ঞা করছি । পরবর্তীতে ইনশাল্লাহ তা'লা গণতন্ত্র ও খিলাফাতের মাঝে পার্থক্য সহজ আকারে তুলে ধরব ।
আসলে ধর্ম ব্যবসায়ীরা মানুষকে ধোঁকা দিতে যা যা করা এবং বলা প্রয়োজন তা বলবেই করবেই । তাদের কাছে খিলাফাত প্রতিষ্ঠা যথেষ্ট কষ্টকর তাইত তারা শর্টকাট ও বাইপাস পদ্ধতিতে চলে যেভাবে হোক ক্ষমতায় গিয়া ক্ষমতার স্বাদ গ্রহণ করাযায় এরা তাতেই লিপ্ত । যারা গণতন্ত্রে ধর্ম ভিত্ত্বিক রাজনীতি করছে এদেরকে সর্বাগ্রে ঘৃণাভরে পরিত্যাগ না করলে এবং এদের বিতারিত না করলে ইসলামের বিজয় ও মূল লক্ষ্যে কখনই পৌছানো সম্ভব হবেনা । তাইতো রাসূল (সা মসজীদ থেকে সর্বপ্রথম মুনাফেকদের বিতারিত করেছেন । কারণ রসূল জানতেন পিছনে শত্রুরেখে অগ্রযাত্রা সম্ভব নয় ।
তিনি মুনাফেকদের মত মুসলিম রূপধারী ব্যক্তিদের নিয়ে দল ভারি করতে চাননি, তিনি চেয়েছিলেন প্রকৃত ও সঠিক মানুষকে নিয়ে চলতে । ভাল মানুষ ও সঠিক অন্তরের মানুষ অন্যকে আকৃষ্ট করতে পারে । আর কপটকে দলে রাখলে ভাল মানুষও সেই দল থেকে সরেযেতে বাধ্য । মন্দের সাথে ভালরা কখনই একসাথে টিকতে পারেনা । ।
আজ ধর্মাশ্রয়ী গণতন্ত্রি যে দল ও মানুষ আছে তারা বহুরূপী তারাই প্রকৃত কপট । রাসূলের সেই মুনাফিক তাড়ানোর শিক্ষাথেকে শিক্ষা নিয়ে এদেরকেও তাড়ানোর সময় এসেছে ।
>>> খিলাফাত পদ্ধতি দিনে দিনে সুকৌশলে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। এখন আমরা আর প্রথিবীর কোথাও খিলাফাত দেখতে পাইনা । অথচ আগেই বলেছি এটা ছিল ইসলামের বিজয়কেতন ।
যেহেতু এটি ছিল ইসলামের প্রসারকারী তাইত এটি বিধর্মীরা সু-কৌশলে ধ্বংস করে দিয়েছে । আর গণতন্ত্রে তাদের পয়সায় কিছু ধর্মীয় দল প্রতিষ্ঠা করে রেখেছে যাতে গনতন্ত্রকে মানুষ জায়েজ মনে করে । যে সব ধর্মীয় দল ইসলামের নামে রাজনীতি করছে তাদের বাতিল করারও কোন সোযোগ নেই কারণ এদের বাঁচাতে ঐ বিদেশি বিধর্মী মুরব্বী দেশ ও সংস্থাগুলোই আগে এগিয়ে আসবে ওদের বাঁচাতে । এদুলো হল গনতন্ত্রকে মুসলীমদের মাঝে টিকিয়ে রাখার জন্য একটি কুট-কৌশল । প্রথিবীর সবাই জানে ধর্মের নামে যেসব দল নানান অপকর্মে লিপ্ত হলেও তাদেরকে নিষিদ্ধ করতে কখনই ঔসব দেশ চাপ প্রদান করেনা ।
এত সম্পর্ক কোথায় ? এটা হল গণতন্ত্রকে মুসলীম সমাজে হালালাইজেশন করার একটা পদ্ধতি মাত্র । বিধর্মী গোষ্ঠিরা এমন ধর্মীয় পার্টি নির্মাণে বহুভাবে সাহায্য সহযোগিতা করে থাকে ।
আজ আমরা পিশ্চমা গণতন্ত্রের মধ্যে ডুবে সারাজীবণ গণতন্ত্র চর্চাই করে চলেছি । আর তাদের শিখিয়ে এদয়া পদ্ধতিকে মনে করেছি হালাল পদ্ধতি । একদিকে আমরা খিলাফাত ভুলে গণতন্ত্র চর্চাকরছি আর অপরদিকে ভাটিকান সিটিতে পোপগণ খিলাফাত চর্চাই করছে ।
কেউ যদি বুঝাতে চায় যে ভাটিকান সিটির ধর্ম প্রচারক হলেন শান্তির প্রতিক তবে তাদের জানতে হবে এর মূলে রয়েছে তাদের প্রশাসন , যেটাকিনা আমারদের ইসলামের শান্তির প্রতিক খিলাফাত কে গ্রহণ করেই সম্ভব হয়েছে । ক্রুসেডে পরাজয় বরনের পর তাদের সকল মন্দ পদ্ধতি মুসলিমদের মাঝে ঢুকিয়েছে আস্তে আস্তে ঢুকিয়ে দিয়েছে আর তারা ইসলামি খিলাফাত ভাটিকান সিটিতে প্রতিষ্ঠা করেছে । লক্ষ্য করূণ খিলাফাতের যাবতীয় পদ্ধতি স্বরণ করছে -
১। পোপ নির্বাচনে সর্ব সাধারনের ভোট না নিয়ে গোপন বৈধকে কিছু প্রতিনিধি গোপন ভোটে নির্বাচন থাকে ।
২।
ভাটিকানে কোন দল পার্টি নেই । (খিলাফাতের মতই অবস্থা)।
৩। একজন নির্বাচিত পোপ তার মৃত্যু পর্যন্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত থাকেন । কোন মেযাদ বা ভোটে অপসারিত হয়না ।
৪। ৪ বা ৫ বছরের কোন বাঁধা-ধরা নিয়ম নেই ।
৫। সর্বচ্চো ধর্মীয় ব্যক্তি পোপ নির্বাচিত হন ।
৬।
পোপের যোগ্য উত্তরসুরিকে নির্বাচিত করা হয় । এমন বহুগুনে গুনান্বিত যা খিলাফাতের সকল নিয়ম মেনে চলছে ।
>> খিলাফাতকে গণতন্ত্র বা গণতান্ত্রিক ধারার ভাবার কোন অবকাশই নেই । অনেক ধর্মব্যবসায়ী দল তাদের উদ্দেশ্য হাসিলের ও ক্ষমতার লোভে বলে থাকে যে গণতণ্ত্রই হল ইসলামের শিক্ষা । এসব তাদের ফায়দা হাসিলের কৌশল মাত্র ।
এগুলো ভিত্ত্বিহীন মিথ্যা । ঐ ধর্ম ব্যবসায়ীগণ সত্যকে গোপন করে থাকেন , খিলাফাত এমন একটি স্বতন্ত্র ও সুগঠিত সংগঠন যা গণতন্ত্র অপেক্ষা সহশ্রগুণ উত্তম । তবে গণতন্ত্রেরও কিছু ভাল দিক আছে যা-কিনা খিলাফাতের সাথে মিলে যায় । তবে মিলেগেলেই গণতন্ত্র ও খিলাফাতের ধারা এক হবে এমন কোন কারণ নেই । গণতন্ত্রের ভাল ও মন্দ দুটি দিকই আছে ।
গণতন্ত্রের ভালদিক সমূহ খিলাফাতের সাথে মিলে যেতেপারে , কিন্তু গণতন্ত্রের মন্দদিক কোন ভাবেই খিলাফাতের সাথে মিলে না , গণতন্ত্রের এমনও অনেক দিক আছে যা খিলাফাত সমর্থন করেনা এবং ইসলামের আকিদার সাথে সাংঘর্ষিকও বটে । ধরি গণতন্ত্রের ভালদিক কিছু আছে:
১। স্বচ্ছতা,
২। জবাবদিহীতা,
৩। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা,
৪।
জনগণের কাছে দ্বায়বদ্ধতা ।
৫। জনগণের সম্পদের মালিকানা । ইত্যাদি ..
এগুলো খিলাফাতেও আছে , এগুলো খিলাফাতের নীতির মধ্যেই পরে । যা দেখে মনে হবে ইসলামীক খিলাফাত হলো গণতন্ত্রের আদিরূপ !! ইসলাম এগুলো অধিকার জনগণকে দেয় বলেই না খিলাফাত ইসালামের একটি পদ্ধতি ।
তবে ইসলামের সাথে দু'একটি আদর্শ মিলেগেই যে সেটা ইসলামীক হয়ে যাবে তাতো ঠিক নয় । ধরি , বৌদ্ধ্যধর্মের কিছু আদর্শ আছে , যেগুলো খুবই ভাল , যা ইসলামী আদর্শের সাথে মিলে যায়, যেমন- চুরি না করা, মিথ্যা না বলা , পরনিন্দা না করা । তাহলে কি ইসলাম আর বৌদ্ধ ধর্ম একই হলো ?? আবার ইহুদি ধর্মের আকিদা হলো এক ঈশ্বরাবাদ, তারা ঈদও উৎযাপন করে , রোজা রাখে , তবে কি ইসলাম ও ইহুদি ধর্ম একই হবে ? .
এইসব ক্ষেত্রে যেমন একই নিয়ম থাকা সত্বেও ধর্ম আলাদা ঠিক তেমনি গণতন্ত্রের কিছু ভালদিক খিলাফাতের সাথে মিলেগেলেও দুটো আলাদা পদ্ধতি । এসবের মাঝে দেখা যাবে ভালদিকের যতই মিল থাক মূল যে আকিদা সেগুলোই সাংর্ঘষিক এবং আলাদা !! গণতন্ত্র ও খিলাফাতের মূল-বিষয়ে রয়েছে বিশাল বিশাল পার্থক্য । তাই যারা খিলাফাতকে গণতন্ত্র সমকক্ষ্ ও গলতন্ত্রকে ইসলামী আদর্শ মেনে মানুষকে বিপদে ফেলছেন তাদের কাছথেকে সাবধান থাকতে হবে ।
এমনকি গণতন্ত্র পরিত্যাগ করতে দেরি হতেও পারে কিন্তু এই ধর্মাশ্রয়ী সাধুবেশী ভন্ডদের আগে না তারাতে পারলে সঠিক পথ খুজে পাওয়া খুবই কঠিন । খিলাফাত কায়েম একটি কঠিন ও দীর্ঘস্থায়ী বিষয় । তাই বলে হারামকে হালাল আর হালাল কে হারাম ঘোষণা করার কোন সুযোগ নেই । যা কোরানেও আল্লাহ তা'লা কঠোর ভাবে নিষেধ করেছে , তিনি ঘোষণা করেছেন
"তোমরা ক্ষুদ্রতম সার্থের কারনে হালালকে হারাম এবং হারামকে হালাল বলবেনা".
তাই যেসব ভন্ডরা যেনেশুনে মানুষকে বিপথের দিকে নিয়ে যায় সেইসব ভন্ডদের ভন্ডামির জবাব আগে দিতে হবে । তাদের পরিত্যাগ করে সঠিক পথে চলার পথ পরিস্কার করতে হবে ।
কারণ আমাদের মনে রাখা জরূরি যে হযরত মহাম্মদ (সা আগে মুনাফিকদের মুক্ত করেছিলেন ।
>> গণতন্ত্র ও খিলাফাতের মধ্যে যেসকল সংঘাত:
১। আকিদাগত পার্থক্য: গণতন্ত্র ও ইসলামের মধ্যে বিশাল পার্থক্য আছে, এই পার্থক্য হল নৈতিকতার ও আদর্শের । গণতন্ত্রের মধ্যে এমন কিছু কথা ও বিশ্বাস আছে যা আমাদের বিশ্বাস করা হারাম । এগুলো বিশ্বাস করা হলো ঈমান নিয়ে খেলাকরা বা ঈমান হারাবার মাধ্যো বলা যায় ।
সেগুলো হল:
(ক) গণতন্ত্রের ধারনা হল "সকল ক্ষমতার উৎস হল জনগণ" People’s sovereignty বা জনগণের সার্বভৌমত্বের মালিকানা ।
অপরদিকে আল্লাহ ইসলামের ভাষায় সকল ক্ষমতার উৎস ও মালিক হলেন আল্লাহ তা'লা । তিনি নিজেই তার ক্ষমতার ও রাজত্বের কথা কোরানে ঘোষনা করেছেন :
"তিনি আসমান যমীনকে যতাযত সৃষ্টি করেছেন"- আনআম-৭৩
""তুমি কি জাননা যে আসমান যমীনে রাজত্ব শুধু আল্লাহরই ?" বাকারা - ১০৭
"রাজত্বে তার শরীক নেই"- হাদীদ-৫
" আসমান যমীনে বাদশাহী তারই"- সাজদা-৫
"আসমান থেকে যমীন পর্যন্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালনা তিনিই করেন"- সাজদা-৫
তাহলে সার্বভৌমত্বের মালীক একমাত্র আল্লাহ তা'লার আর কারো তা নেই , হতেও পারেনা । সার্বভৌমত্বে তার অংশীদারিত্ব হবার কারো অধিকার নেই । এখানে গণতন্ত্রের সংঞ্জানুসারে জনগণের সার্বভৌমত্ব মানলে তা হবে ঈমান হারাবার এক পথ ।
আল্লাহকে সর্বশক্তিমান ও ক্ষমতার মালীক মানা থেকে সে মাহরূম হয়ে যাবে ।
(খ) গণতন্ত্র হল শক্তি পূজারী ! গণতন্তের কথা সংখ্যাধিকতাই হল সঠিক বিচার, মেজরিটিই হল ক্ষমাতা ও সত্য ! সঠিকতার মানডন্ড হল সংখ্যাধীকতা সেটা হাজারে একজন বেশি হলেও ! গণতন্ত্রের এই সংখ্যাধিক্যের রায় কখনও কখনও সঠিক হয়না ! তাইতো এই শক্তিপূজারী পন্থাকে একরোকম কঠরতা বলা যায় । তাইতো আকিদার বা মূলতত্বে ভুল হল গণতন্ত্র বিশ্বাস করে might is right কিন্তু ইসলাম বিশ্বাস করে right is might সত্যই শক্তি । ইসলাম সত্যের পক্ষ্যে । সংখ্যায় বেশি হলেও মিথ্যা যে ভুল তা হাদিস ও কালাম বলে দেবে ।
তাই শক্তিদিয়ে নয় সত্য দিয়েই যাচাই করতে হবে ।
.............।
>> বহুদল: গণতন্ত্র হচ্ছে এমন একটি পদ্ধতি যেখানে একটি দল থাকতে পারবেনা । এই পদ্ধতিতে একাধিক দল মত আদর্শ থাকতেই হবে । তাই গণতন্ত্র মানেই হচ্ছে বহুদল ও বহুমতবাদ ।
বহুদল মানেই ভিন্ন ভিন্ন আদর্শ । যেখানে এক আদর্শের কোন স্থান নেই । মতাদ থেকেই মতভেদ । তাইতো গণতন্ত্রের মধ্যেই এতসব সহিংসতা দাং্গা অপরাধের জন্ম হয় । পৃথিবীতে যেখানেই গণতন্ত্র আছে সেখানেই একাধিক আদর্শ ও মতবাদ আছেই ।
তাইত গণতন্ত্রে সর্বদাই একাধিক ধারা ও বিশ্বাস থেকেই যায় । সব সময় একে অন্যের দোষ খুঁজে বের করাটাই হল গণতন্ত্রের অধিকার । ফলে জাতি হয়েপরে বিভক্ত ! আর বিভাজিত জাতি মানেই হল দূর্বলতা ও পরনির্ভরশীলতা ! একটি দেশের সমস্যা সমাধানের জন্য কখনই একাধিক পক্ষ্য একটি সমঝোতায় এসে দাঁড়ানো সম্ভব হয় না । মক্কায় কাফেরগণ বহুদলে বিভক্ত ছিল, তাই বহুদল কোনক্রমেই ইসলামের আদর্শনা । এটা রাস্ট্রের মূল ভিত্তিকে ধ্বংস করে ।
তাই নিজেদের সুবিধা আদায়ের জন্য একাধিক দল হওয়াতে প্রতিযোগিতা কাজ করে তাই পশ্চিমাদের কাছেই সমাধানের জন্য করুনার পাত্র হয়ে থাকতে হচ্ছে !
কিন্তু ইসলামে বহুদল ও বহুমতাদর্শের কোন স্থান নেই , বরং বহুদল ও বহু আদর্শে ইসলাম ঘোর-বিরোধী । ইসলাম একক ও অভিন্ন জাতিতে বিশ্বাসী তাই ইসলাম ঐক্যবদ্ধতায় নির্দেশ প্রদান করে ।
এখানে জামায়াত-এ-ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা মওলানা মওদুদী সাহেবের বই "খিলাফাত ও রাজতন্ত্র" থেকে তুলেধরা আবশ্যক , পৃষ্ঠা নং ১০০, "তাদের (শ্বাসকদের) কোন সরকারী দল ছিলনা । তাদের বিরুদ্ধেএও কোন দলের অস্তিত্ব ছিল না । মুক্ত পরিবেশে সকল সদস্য নিজ নিজ ঈমান এবং বিবেক অনুযায়ী মত প্রকাশ করতেন ।
……ফয়সালা হতো দলীলে প্রমানের ভিত্তিতে । কারো দাপটে, পভাবে প্রতিপত্তি, স্বার্থে সংরক্ষণের বা দলাদলিতে নহে !"
আল্লাহ কোরানে বলেছেন: " and there may spring for you nation who invite to goodness and enjoin right content and forbid inducing, such are they who are successful , and be you not as those who separated and disputer all after the clear proofs had come unto them, for such there is an awful doom"-al-imran:104-5 আবার সূরা হুজুরাত: ১০ তে আল্লাহ বলেছেন "মুসলিমরা একে অন্যের ভাই" এখানে মুসলিমদের একদলে অন্তর্ভক্ত হতে বলেছেন । যারফলে গণতন্ত্রের একাধিক দল গঠন করা বা পার্টি গঠন করা হারাম । "ইসলামের রাজনীতির ভূমিকা" নামক বইএর ১৬৭ নং পৃষ্ঠায় উদৃতি দেয়া হয়েছে "মনেরাখা আবশ্যক যে দল গঠনের আধুনীক পদ্ধতি মূলত:ই ইসলামীক নয়। একালের দলীয় ভাবধারা ইসলাম স্বীকার করেনা।
"
উল্লেখ্য, যারা ইসলাম কে প্রসারিত করেগেছেন তাদের কোন দল পার্টি ছিল না । মুসলীমদের দল একটাই । তাই খলিফাগণ একএক দল গঠন করে এক এক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেননি । ক্ষমতা যখন যার উপর এসেছে তাকেই জনগণ নেতা মেনে তার হাতে বয়াত গ্রহণ করেছেন । এখানে সবার উপর খলিফা মূখাপেক্ষি ছিলেন, যে যখনই পারেন খলিফাকে জবাবদিহিতার সামনা সামনি করেছেন ।
সমালোচনার ও আন্দোলনের জন্য অপর একটি দল ও নেতাকে তৈরি করে রাখা হয়নি ।
ধরি, বাংলাদেশের মিডিয়অ এমন করে সরকারের দূর্বলতা ও দূর্নীতি তুলে ধরছে যে বিরোধী দলও এত সূক্ষভাবে তা তুলে ধরতে পাছেনা । বিরোধী দলও সরকারের সমালোচনা করতে মিডিয়া ও পত্রিকার উপর নির্ভরশীল । তাই এখানে বিরোধী দলের চেয়ে যেহেতু স্বাধীন মিডিয়াই গুরুত্ব বহন করছে, তাই মিডিয়াই মূল সমালোচনাকারী ও সরকারের ভূলত্রুটি নির্ধারণকারী । তাই বহুদলের ভূমিকার চেয়ে তার ভূমিকাই মূখ্য ।
এখনও বিরোধী দলের কথা শুনে জনগণ সচেতন হয়না , হয় মিডিয়ার তথ্য দেখে । জনগণ বিরোধীদলের লেকচার শুনে মনে করে বলার কথা তাই বলছে ! সরকারের সমালোচনা করাই এদের কাজ তাই করছে ।
আরব বিশ্বের ঝড় কিন্তু বিরোধী দলের প্রভাবে হয়নি , হয়েছে গণ সচেতনার মাধ্যমে । তাই জনগণ মিডিয়া যদি স্বাধীন পায় হবে জনসচেতনা তৈরি হবেই, এতেকরে যেকোন রাস্ট্রপ্রধানের পতন হবেই সে যত কঠরই হোক । ঠিক তেমনি খিলাফাতের যুগে জনসচেতনতা ছিল, তাই বিরোধী দলের দরকার হয়নি, এখনও দরকার নেই ।
সকল জনগণই মিডিয়ারগুনে সচ্চার হতে পারে, তাতে দল ছাড়াও শ্বাসক সরাসরি মুখাপেক্ষি হতে পারে ।
এবার আরেকটি উদাহরণ দিলে বুঝাযাবে ইসলাম কতটা একতায় ও ঐক্যবদ্ধতায় বিশ্বাসী ! ড: জাকির নায়েকে এক অমুসলিম প্রশ্ন করেছিলেন "মুসলিমরা কেন ক্বাবা কে কেবলা মেনে সেজদা করে ? তারা যখন ক্বাবাকে সেজদা করে তখন কি ক্বাবাকে পূজা করা হয়না ?"
উত্তরে ড: জাকির নায়েক বলেছেন- "ক্বাবা হলো মুসলিমদের ঐক্যের প্রতিক । ওটা খোদা বা পূজার বিষয় নয় । আল্লাহ তা'লা বলেছেন মুখ/ কেবলা প্রার্থনাকালে ক্বাবার দিকে কর । এর কারন মুসলিমদের মধ্যে যাতে বিভেদ না আসে ।
একই মহল্লায় কেউ উত্তরমূখী, কেউ দক্ষিনমূখী আবার কেউ পশ্চিমমূখী হয়ে ইবাদত করবে, তাহলে সবাই নিজেদের সঠিক বলে শ্রেষ্ঠত্ব প্রমানে শক্তি প্রয়োগ করবে এবং সংঘাত হবে । আর ইসলাম যেহেতু ঐক্যে বিশ্বাসী তাই ক্বাকে কেবলা করে সবাই, যে যেপ্রান্তেই থাকনা কেন সবাই এক ইউনিটি, সবাই ক্বাবামূখী হয়ে প্রার্থনা করবে । এটা শুধুই একত্রতা রক্ষার্থে, কোন দল উপদল সৃস্টি যাতে না হয় । যেন মুসলিমরা সব সময় ঐক্যবদ্ধতায় থাকে । "
সুতুরাং দল বা আদর্শ ভিন্নতার স্থান ইসলামে নেই ।
আছে ঐক্য, বিভেদহীনতা । আমাদের রসূল (সা বিভেদ দুর করতেই সবারই মর্যাদা সমান করে দিয়েছেন । বলেছেন " আজ থেকে আরব অআরব সবাই সমান, কালোর উপর ফর্সা বা ফর্সার উপর কালোর শ্রেষ্টত্ব নেই "
এগুলোই হল একতা বদ্ধতার উদাহরণ । তাইতো কেই বলতে পারবেনা রাসূলের কোন সাহাবীর কোন দল বা পার্টি ছিল । হযরত আবুবক্কর , হযরত ওমর, আলী ওসমান তারা শ্বাসক ছিলেন কিন্তু ক্ষমায় যেতে কোন দল, সংগঠন সৃষ্টি করেননি , কোন পার্টি ছিলও না ।
>> ইসলাম ক্ষমতা গ্রহনের পথ দেখায়না : ইসলামে রাজনীতি আছে, আর সে রাজনীতি হলো শ্বাসন পদ্ধতির রাজনীতি । কেমন করে সৎভাবে দেশ ও মুসলীমদের ইসলামী পন্থায় পরিচালিত করা যাবে, কি করে রাজ্য বা দেশ শ্বাসন করা যাবে । দেশের আইন প্রয়োগ কিভাবে করা যাবে , সেটাই ইসলাম শেখায় । আর ইসলামী রাজনীতি বলতে এটাকেই বুঝিয়ে থাকে । ইসলাম কখনই কোন বিশেষ গোষ্ঠিকে ক্ষমতা গ্রহনের পথ দেখায় না ।
বরং কেউ ক্ষমায় অধিষ্ঠিত হলে তাকে শেখায় কিভাবে ও কোন পন্থায় দেশ রাজ্য শ্বাসন করা যাবে, কি করে মানুষের হক আদায় হবে , কি করে মানুষের আধিকার নিশ্চিত হবে, কি করে ইসলামের বিজয় হবে , কি করে ইসলামের পদ্ধতি অনুসরন করে দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা যাবে সেটাই ইসলাম শিখিয়ে থাকে ।
যেহেতু ইসলাম ক্ষমতা গ্রহনের কৌশল শেখায়না তাই ক্ষমতায় গেলে এটা ওটা করব , এটা ওটা প্রতিষ্ঠা করব বলে ইসলামীক দল সংগঠন করা ইসলামের দৃষ্টিতে কতটুকু যুক্তিযুক্ত ? সেটাও কি-না আবার গণতন্ত্রের রাজনীতি করে !!
আসুন, ধরি ক্ষমতাপ্রাপ্তি একটা স্টেপ । যেখান থেকে ইসলামী রাজনীতি শুরু , যা সামনে দেশ বা রাজ্য শ্বাসন পদ্ধতির বিস্তারিত একটি কোনসেপ্ট প্রদার করে থাকে । আর এর জন্য যাবতীয় আইনকানুন নীতিমালা ইসলামে আছে । কি ঐ স্টেপের পূর্বে অর্থাৎ ক্ষমতা গ্রহনের পূর্বে ইসলামের রাজনীতি নেই ।
তাই চুড়ান্তভাবেই বলাযায়, ইসলাম হচ্ছে এমন একটি পদ্ধতি যা ক্ষমতা গ্রহনের কোন কৌশনের বিরোধী , বরং দেশ পরিচালনার একটি সর্বশ্রেষ্ঠ নীতি বিশেষ ।
তাই যারা ক্ষমতা পাবার লোভে নিজেদের ইসলামিক দলের বলে চালনা করে বা প্রকাশ করে তারা আদৌ ইসলামীক নয় । তারা ভ্রান্ত ও ভন্ড !! তারা জগৎশ্রেষ্ঠ ক্ষমতালোভী ও ধর্ম ব্যবসায়ী !!!
>> পদমর্যদা চাওয়া ইসলামে হারাম: এক ঈমানদার কখনই কোন পদের লোভ করতে পারেন না । যিনি পদের জন্য লোভ করবেন তিনি ক্ষমতা লোভী । আর ইসলাম কোন লোভী ও পদপ্রার্থী ব্যক্তিকে ক্ষমতা প্রদান করেনা এবং তাকে সৎজন হিসেবে গণ্যও করেনা ।
'কানমূল উম্মাল' ৬ষ্ঠ খন্ডে হাদিস নং ৬৯এ বর্ণিত "আব্দুর রহমান ইবনে সামুরা (রা কে রাসূল (সা বলেন, আব্দুর রহমান ! সরকারী পদ দাবি করোনা ! কেননা চেষ্টা তদবীর করার পর যদি তা তোমাকে দেয়া হয় , তবে তোমাকে তার হাতে সঁপে দেয়া হবে, আর যদি চেষ্টা তদবীর ছাড়াই তা লাভ করো, তবে তার হক আদায় করার ব্যাপারে আল্লাহর পক্ষে থেকে তোমাকে সাহায্য করা হবে । "
আবার, উক্ত হাদিসের ২০৬ নং এ বলা হয়েছে " আমরা এখন কোন ব্যক্তিকে আমাদের সরকারি সর্মচারি হিসেবে গ্রহণ করিনা যে নিজে উক্ত পদের অভিলাষী । "
হাদিস আবু-দাউদ, কিতাবূল ইমারাত অধ্যায়-২ এ বর্ণিত " যে ব্যক্তি নিঝেই তার (পদ) সন্ধান করে, আমাদের নিকট সেই সবচেয়ে বেশি খেয়ানতকারী । "
আবার, কিতাবুল আহকাম (বুখারী শরীফ) অধ্যায়-৭, এবং সহীহ মুসলীম শরীফ অধ্যায়-৩ এর হাদিসে বর্ণিত - "নবী করিম (সা বলেন আল্লাহর শপথ, এমন কোন ব্যক্তিকে আমরা এ সরকারের পদমর্জদা দেইনা, যে তা চায় এবঙ তার জন্য লোভ করে । "
আর, পবিত্র কোরানে আল্লাহ তা'লা ইরশাদ করেন, "আখেরাতের ঘর আমি তাদেরকে দেবো যারা যমীনে নিজের মহত্ব খুজে বেড়ায় না , বিপর্যয় সৃষ্টি করতে চায়না ।
"- সূরা কাসাস-৮৩ নং আয়াতে ।
উপরোক্ত বর্ণিত কোরানের আয়াত ও হাদিস সমুহের থেকে বর্ণিত হয় যে কোন পদের আশায় আবেদন ও তদবীর করা হারাম । নিজেকে সরকারি পদের যোগ্য হিসেবে প্রমানের চেষ্ঠা ও তদবীর করা হারাম । কারণ পদ বা সেবাপ্রদানের সুযোগ আসবে সেই মনোনিত ব্যক্তির অজান্তেই । আর সেটা নির্বাচক মন্ডলী সামগ্রিক জরিপের মাধ্যমে সৎ , যোগ্য, ধর্মভীরু ব্যক্তিকে নির্বাচন করবে, সেটাই আল্লাহর তরফ থেকে আসে ।
আমাদের দেশে নির্বাচন পদ্ধতিতে সংসদ সদস্যকে পদের জন্য আবেদন করতে হয় , পোষ্টারে লিখতে হয় "সংসদ সদস্য পদপ্রাথী" । এবং জনগণের কাছে জানাতে হয় "আমাকে ভোট দিয়ে জনসেবা করার সুযোগ দিন" । এমনকি স্থানীয় সরকার চেয়ারম্যান, মেম্বার পদ পদের দাবি করে জণগনের কাছে , তাকে নির্বাচনে জয়ী করার জন্য আবেদন ও তদবীর করতে হয়, যা ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম । কোরান হাদিসে যা স্পষ্ট হারাম বলা হচ্ছে গণতন্ত্রের ভোটিং সিস্টেমে সেটাই সরাসরি করা হচ্ছে । তাই অনেক আলেম ও মফাস্সেরগণ তাদের লিখিত ও বর্ণিত বই সমূহে গণতন্ত্রের ভোটের পদ্ধতিকে হারাম বলেছেন, পদের দাবি নিয়ে দাঁড়ানো হারাম ও ভোট দাবিদারকে নির্বাচিত করাকেও হারাম বলেছেন ।
জামাতের প্রতিষ্ঠাতা আবু আ'লা মওদুদী তার বই "খেলাফাত ও রাজনীতি" তে লিখেছেন: পৃষ্ঠা নং-১৫৬=> "খোলাফায়ে রাশেদীন সকলেই এ বিধান অনুযায়ী ক্ষমতা গ্রহণ করেছেন । তাদের কেউই খেলাফত লাভের নামে নাম মাত্রও চেষ্টাও করেনি । "
>>নির্বাচন পদ্ধতি: আমাদের দেশে প্রচলিত পদ্ধতিতে নির্বাচন হল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় । এই ব্যবস্থা হল সরাসরি জনগণের রায়ের প্রতিফলন, এটা জনগণের স্বাধীন মত প্রকাশের পদ্ধতি । জনগণের ভাললাগা, পছন্দ অপছন্দ প্রভৃতি এখানে প্রতিফলিত হয় ।
কিন্তু এখানেও কিছু ফাঁক-ফোঁকর আছে, যা সূক্ষ দৃষ্টিপাত না দিলে বুঝবার ব্যপার নয় । আসলে এটি ইসলাম সম্মতও নয় । গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এই ব্যবস্থা ভাল নিশ্চই কিন্তু ইসলামিক পদ্ধতিতে আছে এর সাথে অনেক বিরোধ । অনেক ইসলামিক দলগুলো এই ভোট পদ্ধতিকে তরিকা-এ-ইসলাম বলে চালনা করে থাকে !! কারণ হিসেবে তারা ইসলামের প্রথম খলিফা নির্বাচনের সময় মদিনাবাসীকে একএ করে হযরত আবু-বক্কর (রা ও হযরত ওমর (রা দুটি ব্যক্তির যেকোন একটি ব্যক্তিকে নির্বাচিত করার জন্য হাত উঠিয়ে সংখ্যা পরিমাপ পদ্ধতিকে তুলে ধরে থাকেন ।
কিন্তু সেদিন সেই পদ্ধতি কাজে লাগেনি কারণ, হযরত ওমর (রাএর পক্ষের সমর্থন বেশি হলেও প্রথম খলিফা হযরত আবু-বক্কর (রা নির্বাচিত হয়েছিলেন, বিবেচনার ভিত্ত্বিতে ।
এর পক্ষে কারণ হল সমস্থ কোরানে শুধু রাসুলের একটা সাহাবায়ে কেরামের নাম আছে আর তিনি হলেন হযরত আবু বক্কর (রা, আল্লাহ তা'লা তাকে নিজে মযাদাবান করেছেন । আর সর্বশেষে রসূল (সা যদিও সরাসরি কারও নাম বলেননি যে তা ওফ্ফাতের পর কে ইসলামের স্বাসক হবেন, তবু হযরত মহাম্মদ (সা কিছুটা ঈঙ্গিত প্রদান করেই গেছেন, তা হল হযরত আবু বক্কর (রা রাসূল (সাএর জীবদ্দশায় মসজিদুন্ নববিতে ঈমামতি করেছিলেন আর নবী করিম (সা তার পেছনে নামাজ পড়েছেন । তিনি তার যোগ্য উত্তরসরি নির্বাচন করেইছিলেন , এটা রাসূলের একটা ঈঙ্গিত ছিল । তাই এটাই বিবেচিত হল আর তথাকথিত ভোট বা জনসমর্থন ভেস্তেগেল ।
গণতন্ত্রে সকল সময় সঠিক রায় প্রতিফলিত হয়না ।
টাকা পেশিশক্তি ও দাপটের কাছে সকল সাধুতা কুপোকাত হয়, প্রভাবিত হয় ।
আবার, ভোটের পদ্ধতিতে সবার ভোট মূল্যায়ণ হয়না । দুটি পার্থীর মধ্যে একজন পেল ২ লক্ষ, তার প্রতিদ্বন্দ্বী পেল ১ লাখ ৯০ হাজার, তবে প্রর্থীদ্বয়ের মধ্যে ভোটের সংখ্যাগত পার্থক্য হল ১০ হাজার মাত্র, অনেক সময় এর বেশিও হয় আবার অনেক কোমও হয় । তবে যিনি পরাজিত হলেন তিবিও বিশাল অংকের ম্যান্ডেট পেলেন । কিন্তু এতবড় জনসমর্থন পেয়েও তার ভোটারের কোন মূল্যায়ণ হল না ।
তাহলে ক।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।