ইতিহাসের দিকে গেদুর ঝোঁকটা বরাবরই একটু বেশি। প্রায়ই আড্ডার ছলে পাড়ার ডাম্বেল'দার সঙ্গে সেসব নিয়ে আলোচনা করতো গেদু। সেবার ছিল বার্ষিক পরীক্ষা,তাই প্রস্তুতিও একেবারে তুঙ্গে। ইতিহাস পরীক্ষার দিন গেদু প্রশ্নপত্র হাতে পেয়ে দেখলো,বেশিরভাগই কমন। খসখস করে কয়েকটা টিক মেরে দিল,কোনটা আগে-পড়ে লিখবে।
ঠিক করলো,'পানিপথের প্রথম যুদ্ধ' সমন্ধে যে প্রশ্নটা এসেছে সেটা শেষের আধাঘন্টায় লিখবে। ডাম্বেলদার সঙ্গে বিস্তর আলোচনা হেতু ঘটনাটি গেদুর একেবারে ঠোটস্থ !
পয়তাল্লিশ মিনিট আগেই পানিপথ ছাড়া গেদুর সব প্রশ্নের উত্তর লেখা শেষ। হাতটা একটু ঝেড়ে লম্বা একটা দম নিয়ে গেদু শুরু করলো-'পানিপথের প্রথম যুদ্ধ ও মুঘল সাম্রাজ্যের উত্থান। '
'সে অনেক দিন আগের কথা। তখন দিল্লি দাপাচ্ছে সুলতান ইব্রাহিম লোদি।
ওদিকে বাবর বেশ সংসারী মানুষ,ছোটখাট রাজ্যপাট সামলায়। চেঙ্গিস ও তৈমুরের বংশধর বলে কথা। বাপ-দাদার কাছ থেকে তাই ভালই মালকড়ি পেয়েছিল। রাজ্যপাট সামলালেও মাটির প্রতি অসম্ভব টান ছিল বাবরের। তাই রাজপ্রসাদে কোনদিন প্রাতঃক্রিয়াকর্ম সারতেন না।
বলতেন-'ঘরের মধ্যে প্রাতঃক্রিয়াকর্ম সম্পাদন বীরপুরুষদের শোভা পায় না। ' তাই রাস্তার ধারে তিন একর মতো খোলামাঠে রোজ পানিভর্তি লোটা হাতে নিয়ে প্রাকৃতিক ক্রিয়া-কর্ম সারতেন করতেন বাবর। রোজকার মতো সেদিনও লোটা নিয়ে প্রাসাদ থেকে বেরিয়েছেন,এমন সময় ব্যালকনি থেকে আওয়াজ এল-'আব্বাহুজুর। '
বাবর ঘুরে দেখলেন-'হুমাই' চোখ কচলাচ্ছে। বড় সন্তান হওয়ায় হুমায়নকে আদর করে হুমাই ডাকতেন তিনি।
'আজ এত সক্কাল সক্কাল উঠলি যে,কলেজে প্রেজেন্টশন আছে নাকি '-বাবরের সম্মোধন।
'না, আব্বা হুজুর। তোমার মনে নেই,আকবর আজ প্রথম নার্সারি স্কুলে যাবে। ভর্তির চেকটা কি সই করে রেখেছ,তোমার তো ফিরতে দেরি হবে'-চোখ রগরাতে রগরাতে জবাব দিল হুমায়ুন।
'এইরে,একদম ভুলে গেছি।
আবার উঠবো। তুই এক কাজ কর,তোর আর আমার জয়েন্ট একাউন্ট আছে না,তার চেক তো সই করতে পারবি। '
হুমায়ুন তড়িঘরি জানাল-'এহলাবাদ ব্যাঙ্কের কথা বলছো। সেখানে তো বেশি টাকা নেই। চেক বাউন্স করবে তো !'
'পিডিসি(পোষ্ট ডেটেড চেক) দিয়ে দিস,আমি কালকে ওভারসিজ ব্যাংক থেকে টাকা তুলে ট্রান্সফার করে দিব'-ক্ষীণ আওয়াজ ভেসে এল।
রাজপ্রাসাদের সিংহ দরজা পেরিয়ে বাবর তখন দ্রুত ধাবমান।
ঘন্টাখানেক পর বেগ দমনের আতিশায্যে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে লোটার জল আকাশে উড়িয়ে প্রাসাদে ফিরছিলেন বাবর। এমন সময় হাঁপাতে হাঁপাতে তার সামনে হাজির হলো হুমাই-'আব্বা হুজুর,বিরাট কান্ড হয়েগেছে,ইব্রাহিম দলবল নিয়ে এদিকেই আসছে। '
শুনে বাবরের মনে তো আনন্দ ধরে না-'বলিস কি ! এদিকেই আসছে? তা,কোন শ্যুটিং আছে নাকি। বিপাশাও এসেছে ?'
হুমাই পারলে মাথার চুল ছেঁড়ে আরকি,গাউনে লেগে থাকা আগের রাত্রের সাকির চুল ঝাড়তে ঝাড়তে বলল-'আরে না আব্বাহুজুর।
এই ইব্রাহিম জন 'এব্রাহিম' নয় যে বিপাশাকে নিয়ে আসবে। এ হলো ইব্রাহিম লোদি !! মুম্বাই না দিল্রি থেকে আসছে,সঙ্গে শ্যুটিং টিমও আছে, কিন্তু তারা ক্যামেরার বদলে তলোয়ার নিয়ে কচুকাটা করতেই বেশি আগ্রহী। '
'খাইছে,সেটা আগে বলবি তো। ব্যাটার তো আবার লাখ লাখ সৈন্য। রণডঙ্কা বাজানোর বুড়োটা খবর দিয়েছিস'-মালকোঁচা দিয়ে রাজলূঙ্গি গোটাতে গোটাতে বললো বাবর।
হুমাইয়ের ঝটপট উত্তর-'হ্যাঁ আব্বা হুজুর,আফিমের নেশায় ডুবে থাকা বুড়োটাকে তুলেছি। কিন্তু সে বলছে,বহুদিন শিঙ্গায় ফু দেয়না,তাল নাও উঠতে পারে। '
যা হোক কোনমতে দামামা বাজিয়ে কিছু সৈন্য-সামন্তকে এক করলো বাবর। তাদের উৎসাহিত করতে ছোট্ট একটা পি,এফ.টি(প্রি ফাইটিং টক) দিল। যুদ্ধনীতিতে ডিপ্লোমা থাকায় এ ব্যাপারে বাবর ছিল মারাত্নক রকমের ভাল।
লোভাতুর ট্রিকস অবলম্বন করে গুটিকয়েক সৈন্যকে ঝালিয়ে তুললো সে। এও ঘোষনা দিল-যুদ্ধে জিতলে প্রতিটি সৈন্যকে ৪০% বেতন বাড়িয়ে দেয়া হবে।
সে এক বিরাট যুদ্ধ। তলোয়ারের ঝনঝনানির সঙ্গে ঘোড়ার খুরের টগবগ শব্দ। ইব্রাহিমের ছিল হাতির দল।
তারই পায়ের তলে চাপা পড়ে আঁদা-থ্যাতলা হলো প্রচুর সৈন্য। তারমধ্যে ইব্রাহিমের নিজের সৈন্য কম ছিল না। আত্নঘাতি গোলের মতো 'আত্নহাতি' কেস খেল ইব্রাহিম। ফলে সহজেই জয় পেল বাবর। পত্তন হলো মুঘল যুগের।
কিন্তু ফাঁকতালে চরম 'কেস' খেল আকবর। সেটা আমরা যোধা-আকবর দেখলেই বুঝতে পারি। '
গেদুর সৃষ্টিশীল লেখায় উত্তরপত্রের বারোটা বাজলেও স্যারদের কৌতুকের খোরাক জুটতো। পড়াশোনা মানেই তো বিকাশ। সেটা যে পথেই হোক,হলেই ভাল।
তাই স্যারেরা গেদুকে 'তেত্রিশ' দিতে কার্পন্য করতো না। এবারো দিয়েছে,কিন্তু গেদুর শেষ লাইনের অর্থ কিছুতেই বুঝতে পারছেন না ইতিহাসের স্যার। তবে,এটুকু বুঝেছেন,সময়ের অভাবে গেদু শেষ কথাটি ব্যাখা করতে পারেনি। পরে একদিন ক্লাসে স্যার জিজ্ঞেস করলেন-'হ্যাঁ রে গেদু,যোধা-আকবর আমিও দেখেছি। কিন্তু ঠিক কি দেখে তোর মনে হয়েছে,আকবর কেস খেয়েছিল,আর তার কারণ ছিল পানিপথের প্রথম যুদ্ধ ?'
চিরাচরিত ফোকলা হাসি হেসে গেদু জবাব দিল-
'স্যার যোধা-আকবর ছবিতে ঐশ্বরিয়া অর্থাৎ যোধা যখন ঋতিক ওরফে আকবরকে ইমপ্রেস করতে,আরবি শিখে একটা বড় চোথায় আরবিতে নাম লিখে এনে ল্যাদ খাওয়ারত অবস্থায় আকবরকে দেখিয়ে পড়তে বললা,তখন কি কেসটাই না খেল ! আকবর তো বুঝেছে,বউ লিখেছে,মানে তার নামই লিখেছে।
তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিতে পারতো,কিন্তু 'আকবর' লিখেছে না 'জালালউদ্দিণ' লিখেছে সেটা তোর আর বুঝতে পারছিল না। বাধ্য হয়েই বললো সে নাকি-'ক অক্ষর গোমাংস। ' এদিকে কেস খাওয়া আকবারকে দেখে ঐশ্বরিয়া বললো-'ব্যাপার না আমিই পড়ে দিচ্ছি। ' আকবরের এই মুর্খতার জন্য পানিপথের প্রথম যুদ্ধই তো দায়ী। সেদিনই তো আকবরের প্রথম নার্সারি স্কুলে যাওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু যুদ্ধ বেধে গেল। তারপর বাবর দিল্লিতে বসত গড়ে এত বড় রাজ্য পেয়ে আকবরের শিক্ষা-দীক্ষার কথা ভুলে গেল। তাই বেচারা নিরক্ষর রয়ে গেল। এদিকে বিয়ের সময় তো সেসব কিছুই বলেনি,কার্ডের ব্যাপার-স্যাপার থাকলে না হয়,তার ওপর ডিগ্রি-ফিগ্রি লেখা থাকতো। কিন্তু সেসবের চল ছিল না।
তাই যোধার কাছে আকবর কেস খেয়ে গেল !
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।