আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কিছু অপ্রিয় সত্য কিছু প্রিয় মিথ্যা

একদিন তুমি ডাক দেবে, আমি প্রতীক্ষায় আছি [লেখাটির জন্য এই ভূমিকার প্রয়োজন হতো না, যদি না এটি একটি বাতিল লেখা বলে গন্য হতো। একটি মশহুর ইসলামী ম্যাগাজিনের সম্পাদক বললেন নিম্নোক্ত বিষয়ে কিছু লিখবার। আমি লিখলাম। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তিনি লেখাটি ছাপতে ভয় পেলেন। এই প্রথম ম্যাগাজিনটি থেকে আমার কোনো লেখা প্রকাশ করতে ভয় পাওয়া হলো।

আমি স্বভাবতই কিঞ্চিত ব্যথিত হলাম। কী আর করা, ব্লগেই প্রকাশ করলাম। কেমন হলো জানাবেন। ] দূরবর্তী ভূমিকা আমার শ্রদ্ধেয় এক বন্ধু আছেন, মশহুরব্যক্তি। নাম না বলে তাঁর উপাধি বললেও সবাই তাঁকে চিনবেন, তিনি জাগ্রত কবি।

তাঁর জাগ্রত হওয়ার নানাবিধ কারণ আছে, যা আমরা তাঁর গান-কবিতায় হর-হামেশা শুনতে পাই। ইসলামের জন্য, মাতৃভূমির জন্য তিনি সদাজাগ্রত একজন। তাঁর সেই জাগ্রত অগ্নিভ অভিব্যক্তি তিনি ভক্ত-শ্রোতাদের মধ্যে স্ফুলিঙ্গের মতো ছড়িয়ে দেন। তাদেরকেও ইসলামের জন্য, মাতৃভূমির জন্য আত্মদানে মাতোয়ারা করেন। তবে এর মধ্যে একটা সমস্যা থেকে যায়।

ভক্ত-শ্রোতারা যতোক্ষণ কবির মাহফিলে থাকেন ততোক্ষণই তাদের এই মাতোয়ারা-মাতম লক্ষ করা যায়, মাহফিল থেকে বেরিয়ে এলেই ইসলাম ও মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসা কর্পূরের মতো মিলিয়ে যেতে থাকে। এ নিয়ে কবি দুঃখিত হন। তিনি যে আবেগ আর দরদ নিয়ে মানুষকে গান শোনান তারা তার সে আবেগ আর দরদকে ক্ষণিকের ভালোলাগা মনে করে বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে দেয়। কবি আমাদের একান্ত জলসায় এ নিয়ে আক্ষেপ করেন। এই আক্ষেপ থেকে একবার তিনি এক নতুন চিন্তার উদ্ভব ঘটালেন।

কাছের সবাইকে বললেন, তিনি একটি সংগঠন করতে চান। যে সংগঠনের কাজ হবে সত্যপ্রত্যাশী মানুষের কাছে ইসলাম ও মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসা সবসময় জাগরুক রাখা। বেশ ভালো প্রস্তাব। তো সংগঠনের নাম কী হবে? তিনি খানিক চিন্তা-ভাবনা করে স্মিত হেসে বললেন, ‘যেহেতু মাতৃভূমি এবং ইসলামÑ দুটোই আমাদের ভালোবাসার আবাসস্থল, সুতরাং সংগঠনের নাম হতে পারেÑ ‘মাতৃভূমি ও ইসলাম রক্ষা কমিটি’; সংক্ষেপে ‘মাইর কমিটি’! কমিটি একটা গঠন হয়েছিলো বটে তবে সচেতন পাঠকমাত্রই বুঝতে পারছেন ‘মাইর কমিটি’ নামের সংগঠন নিয়ে আর যাই হোক বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশে ‘মাইর’-এর চেতনায় জনতাকে আহ্বান করা মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ নয়। ‘মাইর কমিটি’ এখনো আমাদের মাঝে স্বমহিমায় সমুজ্জ্বল আছে তবে তা নিয়ে ময়দানে নামার মতো দুঃসাহস জাগ্রত কবি কখনোই দেখাননি।

খলনায়ক যখন জাকির নায়েক সম্প্রতি বিশিষ্ট ইসলামপ্রচারক ডা. জাকির নায়েককে নিয়ে বাংলাদেশে বেশ লেখালেখি হচ্ছে। সারাবিশ্বেই হচ্ছে সম্ভবত। কোনোটা পক্ষে কোনোটা তাঁর বিপক্ষে। তাঁর কাজ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে সমালোচনাও হচ্ছে। এটা স্বাভাবিক।

যেকোনো কাজেরই আলোচনা সমালোচনা হওয়াটা কাজটির সাফল্যের জন্য একটি বড়ো নিয়ামক। তবে সেটি হতে হবে বস্তুনিষ্ঠ এবং যুক্তিপূর্ণ, সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে। তবেই কাজটির মধ্যে স্বচ্ছতা আরো বেগবান হয়, কাজের প্রতি দায়বদ্ধতা বেড়ে যায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের। আলোচনার গোড়াতেই বলে রাখা প্রয়োজন, এ নিবন্ধ জাকির নায়েকের পক্ষে সাফাই গাইবে না। নিবন্ধটি তাঁর পক্ষ নিচ্ছে না।

জাকির নায়েকের সাত খুন মাফের প্রবক্তা এ নিবন্ধ নয়Ñ এ বিষয়টিও সামনে রাখা একান্ত আবশ্যক। তবে নিবন্ধ কখনোই নিরপেক্ষ হয় না, হওয়া সম্ভব নয়। আবার এ কথাও সত্য যে, নিবন্ধটি তাদের পক্ষেও বলবে না যারা অকারণে সমালোচনার নামে জাকির নায়েকের ‘পিছু লেগেছেন’। নিবন্ধটি একটি আলাদা দৃষ্টিকোণ থেকে ঘটে যাওয়া ঘটমান বিসম্বাদকে পাঠকের দিব্যদৃষ্টির সামনে তুলে আনছে। খুব সম্প্রতি দু’-একটি ম্যাগাজিন এবং পুস্তিকায় জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে বেশ লম্বা কিছু ‘তুলোধুনাধর্মী’ গবেষণা-সমালোচনা পড়লাম।

তার লেকচার এবং লিখিত বইগুলোর বিভিন্ন অসঙ্গতি তুলে ধরে তাঁকে একপ্রকারের কাফির-মুশরিকদের দালাল আখ্যায়িত করা হয়েছে সেগুলোতে। খুব মজা পেয়েছি সে অসঙ্গতিগুলো পড়ে। এমন হাস্যকর এবং অহেতুক অসঙ্গতি সেখানে তুলে ধরা হয়েছে যে, পড়লে সচেতন পাঠকমাত্রই হাসির খোরাক পাবেন। আমি ডিগ্রিধারী ধর্মবেত্তা নই তাই সে ‘অসঙ্গতিগুলো’ তুলে ধরে পাঠকের হাসির পাত্র হতে চাই না। তবে ধর্মীয় ক্ষুদ্রজ্ঞানে আমি যতোটুকু বুঝেছি, তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অধিকাংশ অভিযোগই মাযহাবি।

যা আমাদের মুসলিম মানসে হজরত নবী [সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম]-এর তিরোধানের কিছুদিন পর থেকেই শুরু হয়েছে এবং তা সকল মুসলিমের কাছে সমাদরে গ্রহণযোগ্য। মাযহাবি বিষয় নিয়ে কিছু কথা আমরা এ নিবন্ধের শেষদিকে আলোচনা করবো বলে আশা রাখি। ভারতের মুম্বাইয়ে জন্মগ্রহণকারী ডা. জাকির নায়েক প্রাতিষ্ঠানিক এবং তত্ত্বগত পড়াশোনা শেষে ১৯৯১ সালে মুম্বাইয়ে ইসলমিক রিসার্চ ফাউন্ডেশন নামের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই প্রতিষ্ঠানটি ইসলামকে বিভিন্ন কুসংস্কার এবং ভ্রান্ত বিশ্বাস থেকে মুক্ত করার কাজে আত্মনিয়োগ করে। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি আই.আর.এফ. এডুকেশনাল ট্রাস্ট এবং ইসলামিক ডাইমেনশন নামে আরো দুটি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন।

বিশ্বব্যাপী ইসলামী দাওয়াত প্রচারের জন্য আন্তর্জাতিক স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল [পিস টিভি] এবং নিজস্ব কেবল টিভি নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করে তাঁর সম্পৃক্ত এসব প্রতিষ্ঠান। ফলে অল্পদিনেই ইসলামী দাওয়াতের কণ্ঠ নিয়ে তিনি বিশ্বব্যাপী ইসলামের একজন আইকনে পরিণত হন। উপমহাদেশে ডা. জাকির নায়েকের জনপ্রিয়তা প্রশ্নাতীত। তাঁর কয়েকটি লেকচারের ভিডিও দেখার ভাগ্য আমার হয়েছে। তাঁর উপস্থাপনা, প্রত্যুত্তপন্ন জবাব দেবার কৌশল, জ্ঞানের গভীরতা ভালো লেগেছে।

মানুষকে আকৃষ্ট করার এসব সহজাত গুণাগুণের অধিকারী হওয়ার কারণে সাধারণ থেকে নিয়ে শুরু করে অসাধারণ ব্যক্তিবর্গও তাঁর লেকচারের প্রেমে পড়ে যান। ইসলাম নিয়ে তাঁর যে যুক্তিপূর্ণ কথাবার্তা, অন্যান্য ধর্মের বিপরীতে ইসলামের যুগ-প্রয়োজনীয়তা যেভাবে তিনি বিশ্বমিডিয়ার সামনে তুলে ধরছেন, তা এককথায় প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। দাওয়াতের নতুন একটি ধারণাই তিনি তুলে ধরেছেন মানুষের সামনে। দর্শক-শ্রোতাদের কাছে তাঁর সবচে আকর্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, কুরআন-হাদীস এবং বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ থেকে তাঁর উদ্ধৃতি। আলোচ্যবিষয়ে মুহূর্তে কয়েকটি গ্রন্থ থেকে মূলসূত্রসহ উদ্ধৃতি পেশ করেন।

তখন দর্শকদের চমৎকৃত না হয়ে উপায় থাকে না। পশ্চিমাবিশ্বে ইসলাম ও মুসলিম নিয়ে যে অপপ্রচার চলমান সেসব অপপ্রচারের বিরুদ্ধে তিনি যুক্তির সূক্ষ্মতা দিয়ে কঠিন কঠিন জবাব দিয়েছেন। এতোকিছুর পরও জাকির নায়েকের বক্তব্যে অনেকেই ত্র“টি খুঁজে পেয়েছেন। অনেকে ম্যাগাজিনে জাকির নায়েকের শাপ-শাপান্ত করছেন, কেউবা মঞ্চ গরম করছেন, তাঁকে অভিযুক্ত করে নানাধর্মী পুস্তিকা বের করছেন। আবার তাদের লেখা ও বক্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে কেউ কেউ সেই অভিযোগের জবাব দিয়েছেন স্বপ্রণোদিত হয়ে।

অভিযোগকারীরা বেশ কিছু হাস্যকর ধরনের অভিযোগ করেছেন। তার মধ্যে একটি এমনÑ জাকির নায়েক যদি ইহুদি-খ্রিস্টানদের টাকায় না-ই চলতেন তবে তিনি এতো ব্যয়বহুল একটি টিভি চ্যানেল এবং বিশ্বব্যাপী প্রচারাভিযান চালান কীভাবে? কী আজব কথা! আমরা কি ধরেই নিয়েছি যে ইসলামদরদী সব লোক মারা গিয়েছে? ইসলামের জন্য অর্থব্যয় করার মতো কোনো লোক আর অবশিষ্ট নেই? এগুলো আমাদের খুবই সস্তা মানসিকতা। জাকির নায়েকের ব্যাপারে অন্যতম একটি অভিযোগ, তিনি কোট-প্যান্ট-টাই পরেন। এটি একটি অভিযোগ বটে এবং আমার মনে হয় জাকির নায়েকের ধর্মবিশ্লেষণের ব্যাপারে অভিযোগ করার এটিই সবচে শক্তিশালী অনুঘটক। আজ যদি জাকির নায়েক পাজামা-পাঞ্জাবী বা আরবীয় পোশাক পরে একই কথাগুলো বলতেন তবে তাঁকে কখনোই এসব অভিযোগের সম্মুখীন হতে হতো না।

কারণ কোট-প্যান্ট-টাইয়ের ব্যাপারে আমাদের ইসলামিস্টদের যথেষ্ট এলার্জি আছে। কোট-প্যান্ট-টাই পরা একজন লোক কেনো ধর্মের ব্যাপারে এতো কথা বলবেন? তিনি কেনো এতোকিছু জানবেন? বাংলাদেশে জাকির নায়েককে দালালকাষ্ঠে লটকানোর অন্যতম একটি কারণ হলো তিনি আহলে হাদীস মতাদর্শে বিশ্বাসী এবং বাংলাদেশে তাঁকে প্রচার করছে জামায়াতে ইসলামীর লোকজন। সুতরাং এখানেও দোষ জাকির নায়েকের নয় বরং জামায়াতে ইসলামীর দোষ তাঁর ঘাড়ে চাপানো হয়েছে। আমাদের মনে রাখতে হবে, জাকির নায়েক মাযহাবগত দিক থেকে একজন আহলে হাদীস। তিনি ধর্ম নিয়ে যে বিপুল জ্ঞান রপ্ত করেছেন তা-ও লব্ধ হয়েছে আহলে হাদীস কয়েকজন আলেমের তত্ত্বাবধানে।

তিনি তাঁর ধর্মীয় শিক্ষাজীবনের একটি বড়ো অংশ কাটিয়েছেন আরবের বড়ো বড়ো আলেমদের সান্নিধ্যে। এবং আমরা সবাই জানি, মাযহাবগত দিক দিয়ে অধিকাংশ আরব আহলে হাদীস। সুতরাং আহলে হাদীস সম্প্রদায়ভুক্ত হওয়া যেমন খ্রিস্টানদের দালালি করা নয় তেমনি আহলে হাদীসদের মাযহাবগত আকীদা প্রচার করাকেও কোনো আলেম ভ্রান্ত মতবাদ আখ্যা দিতে পারেন না। মাযহাবগত বিদ্বেষ আমাদের উপমহাদেশে এতোটাই বিশ্রীভাবে উপস্থাপিত হয় যে, আপনার কাছে মনে হবে অন্য মাযহাবে বিশ্বাসী মুসলমানগণ স্রেফ ভ্রান্ত। আমার কথাকে অনেকেই অতিকথন বলে অত্যুক্তি করতে পারেন তবে আমার নিজের অভিজ্ঞতাও কিন্তু এর চেয়ে ভিন্ন নয়।

ঢাকার ঐতিহ্যবাহী একটি ইসলামী বিদ্যাপীঠে আবু দাউদ শরীফের দরসে বসে মুহাদ্দিস সাহেবের জবান থেকে মাযহাবগত মাসআলায় এমন অনেক বক্তব্যই শুনতে হয়েছে। হাদীসের ভাষ্যে যখন মাযহাবগত মতপার্থক্যপূর্ণ মাসআলা আসতো তখন অন্যান্য মাযহাব প্রতিষ্ঠিত ইমামদেরকে তাচ্ছিল্য করে মুহাদ্দিস সাহেব হাস্যরসকণ্ঠে বলতেন, ‘বুড়ির পোলা কয় কী রে’? চট্টগ্রামের সর্ববৃহৎ মাদ্রাসার এক মুহাদ্দিসের ভাষ্য আরো সরেস। তিনি ভিন্নমতাবলম্বী ইমামদের দলিলের জবাব দিতে গিয়ে কপট গোস্বা দেখিয়ে বলতেন ‘অয়! অমুক ইমাম কী কয় হুনছইন্নি? লাঠি আন দেহি ...’। ইতিহাসশ্রেষ্ঠ ইমামদেরকে আমাদের শ্রদ্ধা জানানোর ভাষা কি এমন হওয়া উচিত? শুধুমাত্র সুন্নত কিংবা মুস্তাহাবের মাসআলায় মতপার্থক্যের কারণে ইমাম মালিক, ইমাম শাফেঈ, ইমাম আহমদ [রহমাতুল্লাহি আলায়হিম]-দের ব্যাপারে যারা এমন ভাষা ব্যবহার করতে পারেন তাঁরা কোট-প্যান্ট-টাই পরা জাকির নায়েককে এতো সহজেই ছেড়ে দেবেন- এমন ভাবাও ভুল। অথচ এই ইমামগণ একজন আরেকজনকে এতোটাই সম্মান করতেন যে, তাদের সে সম্মানের খণ্ডিত অংশ যদি বাংলাদেশের সকল আলেমকে ভাগ করে দেয়া হতো তবে বাংলাদেশে ইসলামী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হতো আজ থেকে অন্তত ২৭ বছর আগে।

আরেকটা মজার কথা বলি। ডা. জাকির নায়েকের বক্তব্য অনুষ্ঠানে হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত হন। তা দেখে সমালোচকরা বলেন, তিনি ভ্রান্ত বলেই তাঁর অনুষ্ঠানে এতো মানুষ হয়। আবার বিশ্ব ইজতেমায় অধিক মানুষের সমাগম দেখে তাঁরাই বলেন, আল্লাহ ইজতেমাকে কবুল করেছেন বলেই এতো মানুষ এখানে উপস্থিত হন। জাকির নায়েকের অনুষ্ঠানে মানুষ বেশি হলে সেটি হয়ে যাচ্ছে ভ্রান্ত আর বিশ্ব ইজতেমায় মানুষ বেশি হলে সেটি হয় আল্লাহর রহমত।

অথচ দু’ জায়গাতেই কিন্তু আল্লাহর পথে আহ্বান করা হচ্ছে মানুষদের। আল্লাহর রহমত খুঁজতে আমরা তাহলে এখন কোথায় যাবো? ধর্মের উৎস সন্ধান বা ধর্মবিচার আমাদের কাজ না। আমরা কেবল কোনটা ভালো, কে উত্তম সেই জিনিসটা পরখ করে দেখতে চাই। হেদায়েত তো আল্লাহর হাতে। অনাহুত গালি-গালাজ বা নিরেট তথ্য ছাড়া অহেতুক বিভ্রান্তি ছড়ানো কারো কাছেই ভালো লাগে না।

ইসলামও পছন্দ করে না। জাকির নায়েকের কয়েকটি বক্তব্য শুনে বা তাঁর অনূদিত বই পড়ে আপনি তাঁর ব্যাপারে ‘দালাল’ ফতোয়া দিতে পারেন না। তাঁর ব্যাপারে কিছু বলতে হলে তাঁর মূল ইংরেজি ভাষণ বা গ্রন্থ থেকেই চয়ন করা প্রয়োজন এবং আমরা মনে করি, কারও যদি সত্যিকারের গরজ হয়েই থাকে তাঁর সম্বন্ধে কিছু জানার তবে তাঁর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা যেতে পারে। নিদেনপক্ষে তাঁর প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিজেদের অভিযোগ পেশ করা যেতে পারে। যেসব বিষয় নিয়ে আপনার সন্দেহ আছে, শুনতে খটকা লাগে সেসব বিষয়ে তাদের কাছে জানতে চাওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

ইন্টারনেটযুগের এই সময়ে যোগাযোগ ব্যাপারটি মোটেও কঠিন কিছু নয় যদি সত্যিই আপনার সত্য উদ্ঘাটনের গরজ থাকে। আর যদি মনে করেন যোগাযোগের প্রয়োজন নেই তবে আয়েশা [রাদিয়াল্লহু আনহা]-কে অপবাদ দেয়ায় কুরআনে যে শাস্তির কথা বলা হয়েছে তা আপনার বেলায়ও ঘটবে। কেননা উভয়ের অপরাধ এক- সঠিক তথ্য না জেনে অপবাদ রটানো। তাঁর বক্তব্য নিয়ে সমালোচনা করতে হলে তাঁর নিজের ব্যক্তিগত মতামত জানাটা আবশ্যিক জরুরি। এ ব্যাপারে সবারই আরো চিন্তাশীল এবং সতর্ক পদক্ষেপ নেয়া উচিত বলেই আমরা মনে করি।

গল্প দিয়ে শেষ একটি গল্প দিয়ে শেষ করছি। বিখ্যাত সাধক ইমাম ইয়াফেঈ ইয়ামেনী [রহমাতুল্লাহি আলায়হি] বলেন, এক অনেক বড় আল্লাহওয়ালা দরবেশ ছিলেন। একদিন তিনি বাজারের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, এমন সময় এক সুন্দরী বাজারি পতিতা এসে তাঁকে আজ রাতের জন্য তার খদ্দের হওয়ার আমন্ত্রণ জানালো। দরবেশ কী ভাবলেন কে জানে, তিনি সানন্দে রাজি হয়ে গেলেন পতিতার আমন্ত্রণে। বললেন, আজ রাতে আমি তোমার ঘরে যাবো।

পতিতা বিস্ময়ানন্দে বিদায় নিলো। ঘরে এসে পরিপাটি করে সাজালো ঘরটি। নিজেও অনেকক্ষণ ধরে সাজাগোজ করলো। বারবার আয়নায় নিজেকে দেখে নিলো- সব ঠিকঠাক আছে কী-না। তার মনে খুশির অন্ত নেই, আজ যে তার খদ্দের এক দরবেশ! সে অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় রইলো।

নির্ধারিত সময়ে পতিতার দরজায় টোকা পড়লো। পতিতা দৌঁড়ে গিয়ে দরজা খুলে দিলো। দেখলো, নতুন সাজ-পোশাকে দরবেশ দাঁড়িয়ে আছেন। পতিতা ঠোঁটের আহ্বানে তাঁকে ভেতরে আসতে বললো। দরবেশ ভেতরে এলেন।

ঘরে ঢুকে পতিতাকে বললেন, তোমার ঘরে কোনো জায়নামাজ আছে? পতিতা অবাক চোখে তাকিয়ে সম্মতিসূচক মাথা নাড়লো। আলমারির ভেতর থেকে সযতনে রাখা একটি জায়নামাজ বের করে দিলো দরবেশকে। দরবেশ জায়নামাজ বিছিয়ে দু’ রাকাত নামাজ পড়লেন। নামাজ শেষে তিনি চলে যেতে উদ্যত হলেন। দরবেশকে চলে যেতে দেখে পতিতা তাঁর পথরোধ করে অভিমানী গলায় বললো, আপনি কি চলে যাচ্ছেন? দরবেশ গভীর দৃষ্টিতে তাকালেন পতিতার চোখের তারার দিকে।

অন্তর্ভেদী, মর্মভেদী সে দৃষ্টি। দরবেশের আধ্যাত্মিক দ্যুতি গিয়ে আছড়ে পড়লো পতিতার অন্তরে। তার ভেতরটা জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে গেলো। অন্তরে জমে থাকা পাপের প্রতিটি আস্তর খসে পড়লো নিমেষেই। সেখানে দাঁড়িয়েই সে তওবা করলোÑ আজ থেকে এ পথের এখানেই সমাপ্তি।

এ পথে অর্জিত আমার সমস্ত সম্পদের এখানেই কবর। আমাকে আপনার সঙ্গে নিয়ে চলুন। আজ থেকে আপনিই যে আমার রাহবার! দরবেশ তাকে নিয়ে এলেন নিজের দরগাহে। সে রাতেই তাঁর দরগাহে শিক্ষানবীশ এক শিষ্যের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দিলেন পতিতার। উপস্থিত শিষ্য-শাগরেদদের বললেন বর-কণের জন্য বৌভাতের আয়োজন করতে।

তবে শুধু রুটি বানানোর আদেশ দিলেন, তরকারি বা কোনো হালুয়া বানাতে হবে না। ওসবের ব্যবস্থা আল্লাহই করবেন। শহরের এক বিত্তশালী ব্যক্তি নিয়মিত খদ্দের ছিলো পতিতার। সে লোক মারফত পতিতার তওবা করার খবরটি শুনলো। এবং এ-ও শুনলো, আজ রাতেই তার বিয়ের বৌভাত অনুষ্ঠান।

সে অনুষ্ঠানের আয়োজন কেবল রুটি। ে এসব শুনে বিত্তবানলোকটি দরবেশকে অপমান করার জন্য এক চাকরের হাতে দু’ বোতল মদ দিয়ে বললো, দরবেশ বাবাকে বলবে, পতিতার বৌভাতে আমার পক্ষ থেকে এই সামান্য উপহার। তিনি যেনো গ্রহণ করে আমাকে প্রীত করেন। চাকরলোকটি দু’ বোতল মদ নিয়ে পৌঁছলো দরবেশের ইবাদতগাহে। তাকে দেখেই দরবেশ বললেন, তুমি তো বেশ দেরি করে ফেলেছো।

দাও, বোতল দুটি জলদি দাও। সবাই অপেক্ষা করে বসে আছে। চাকরটি তো বটেই দরবেশের শিষ্য-শাগরেদরাও মদের বোতলের প্রতি দরবেশের এমন আসক্তি দেখে আঁৎকে উঠলো। দরবেশ এক শাগরেদকে একটি বড়ো তশতরি আনতে বললেন। তশতরি আনতেই তিনি মদের বোতলের ছিপি খুলে সেটির মধ্যে বোতল দুটি উপুর করে ঢেলে দিলেন।

আর কি তাজ্জব ঘটনা! বোতল থেকে মদ নয় বেরুচ্ছে সুঘ্রাণযুক্ত ঘি। ঘিয়ের সে সুঘ্রাণ এতোটাই তীব্র যে, বিত্তবানের চাকরটিও আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না। সেও শরিক হলো পতিতা-দরবেশের এই অভূতপূর্ব বৌভাতে। লেখার শুরুর দূরবর্তী ভূমিকা আর শেষের এই গল্পিত উপসংহার কেনো এলো বলতে পারবো না। মূল নিবন্ধের সঙ্গে এর তো কোনো সম্পর্ক দেখছি না।

তবুও এলো, হয়তো এখন সম্পর্ক নেই পরে একসময় সম্পর্ক হয়ে যাবে। পৃথিবীর ৯৮ ভাগ সম্পর্কই পরিবর্তনশীল। তাই সূক্ষ্ম সম্পর্কও অনেক সময় মূল্যবান হয়ে উঠে। তবে শেষে একটি প্রশ্ন করা যেতে পারে, একজন পতিতাকে শুদ্ধ করার মতো বৃহৎহৃদয়ের কোনো আলেমের সঙ্গে কী আপনার পরিচয় আছে? ওই দরবেশের মতো বিশাল বড়ো যার অন্তর! অথবা ওই দরবেশশিষ্যের মতো একজন সাহসী বরের, যে একজন পতিতাকে বিয়ে করতে একবার প্রশ্ন পর্যন্ত করবে না? ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.