খুব জানতে ইচ্ছে করে...তুমি কি সেই আগের মতনই আছো নাকি অনেকখানি বদলে গেছো... ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তুর্ন, সরকারকে আরো সর্তক হতে হবে
হাসান কামরুল
ষড়যন্ত্রের জালে আবদ্ধ সরকার। একটার পর একটা ষড়যন্ত্র সরকারকে মোকাবেলা করতে হচ্ছে। যতই নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে ততই ষড়যন্ত্র প্রখর হচ্ছে। ঘরের ভিতরে বাইরে উভয় জায়গা থেকেই সরকার প্রধান নানান ষড়যন্ত্রের শিকার। সর্বিশেষ হেফাজতের ভালো মানুষির ফাদে সরকার অনেকটা না বুঝেই পা দিয়েছে।
অবরোধের নামে সরকার পতনের যে নীল নকশা হেফাজতকে দিয়ে বাস্তবায়ন করার অপচেষ্টা করা হয়েছে তাতে যদি সরকার ভরকে যেতো কিংবা শৈতিল্য দেখাতো তাহলে ভয়াবহ বাস্তবতাকে মেনে নেয়া ছাড়া সরকারের কাছে বিকল্প থাকতোনা বলেই প্রতীয়মান। এমন পরিস্হিতির মুখোমুখিতে উৎকন্ঠিত নগর বাসির নির্ঘুম রাত কেটেছে । উৎকন্ঠা আর উদ্বেগে নিমজ্জিত ছিল গোটা জাতি। সাভারের ভয়াবহতাকে সঙ্গি করে দেশের মানুষের মনোযোগ যখন উদ্ধার তৎপরতা ও পুর্নবাসনে ব্যস্ত তখন হেফাজতের ঢাকা অবরোধের কর্মসূচিকে সাধারন মানুষ নিছক কর্মসূচি হিসেবে গ্রহণ করেছিল। যারা ঈমান ও সুন্না রক্ষার নামে অবরোধে এসে রক্তক্ষয়ি সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে পড়ে তখনই উদ্বেলিত হয়ে ওঠে সাধারন মানুষের চোখ।
তারওপর দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অবস্হানের ঘোষনা ও সেখানে প্রধান বিরোধীজোটের রাজনৈতিক সমর্থন ইত্যাদি কতক বিষয়ে পরিস্হিতি ক্রমশই ভিন্ন দিকে মোড় নিতে থাকে। ইসলাম রক্ষার নামে ওরা পক্ষান্তরে ইসলাম ও আল্লাহ’র রাসুল(সা কেও অপমান করতে দ্বিধা বোধ করেনি। তারা গাছে আগুন দিয়েছে, মুদি দোকানদারের টং দোকানগুলোতে আগুন দিয়েছে, বায়তুল মোকাররমের সামনে বইয়ের দোকানে আগুন দিয়েছে, কোরআন পুড়িয়েছে।
Click This Link
এই যে অপকর্মগুলো করেছে তা সম্পুর্নভাবে ইসলাম বেদায়েত। এবং আল্লাহর রাসুলের শানে অমর্যাদার সামিল।
যারা এ ছোট ছোট দোকানগুলোর ওপর নির্ভর করে নিত্যদিনের জীবনকে বেছে নিতো তাদের রিজিকের ওপর আঘাত হানা হয়েছে। এদের কি অপরাধ ছিল? ইসলাম কোনদিনও এসব অপকর্মকে সমর্থন করেনি। কারন ইসলাম মানে শান্তি। এখানে অশান্তির কোন স্হান নেই। যারা ইসলাম রক্ষার নামে অশান্তি কায়েমের চেষ্টা করে তারা আল্লাহ ও রাসুলের দুশমন।
ঘটনার দুইদিন আগে থেকেই সরকারের মনোযোগকে সুপরিকল্পিতভাবে ভিন্ন দিকে সরানোর রাজনৈতিক খেলা শুরু হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে বিরোধিদলের হরতাল প্রত্যাহার ও সংলাপের আহবান। বিরোধি দলের জনসমাবেশ ও ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম ও বিরোধিদলীয় নেত্রীর চা খাওয়ার আমন্ত্রনের পিছনে তলে তলে হেফাজতকে হৃষ্টপুষ্ট করা হয়েছে। তাদের প্রধান রাজনৈতিক টার্গেট ছিল হেফাজতের অবরোধের আড়ালে সরকার পতনের নীলনকশা বাস্তবায়ন। হেফাজতের আমিরের বগুড়া সমাবেশে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে মা বোনদের নেত্রীর মতো চাল চলন বেছে নেয়ার যে আহবান ছিল সেটাও ছিল একধরনের চতুরতা।
হেফাজতের আমির সমাবেশে প্রধানমন্ত্রীর গুনগান গেয়ে একপ্রকারে প্রধানমন্ত্রীর মনোযোগকেও ভিন্ন দিকে সরিয়ে দেয়ার অপকৌশল ছিল। সরকারের নমনীয় মনোভাব ও ঢাকার ভিতরে এতোবড় একটা অবরোধ কর্মসূচির অনুমতি প্রদান ছিল প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক অপরিপক্কতার শামিল। আশ্চার্যের ব্যাপার হলো গোয়েন্দা সংস্হাগুলোর হাতে হেফাজতের আড়ালে রাজনীতির ইউটার্ন নিয়ে তেমন কোন তথ্য ছিল বলে স্পষ্ট হয়নি। হেফাজতের ভিতরে জামাত শিবিরের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ক্যাডারদের অনুপ্রবেশ ও সহিংসতা নিয়ে সরকারের গোয়েন্দাদের কাছে অগ্রিম কোন তথ্য যদি থাকতো তাহলে সরকার এমন একটা ক্রান্তিকালে এতোবড় ঝুকি নিতে যেতোনা। সারাদেশের মানুষ সাভার ট্রাজেডি নিয়ে শোকের সাগরে ভাসছে।
তারওপর সরকার পতনের যে ধ্বংসাতœক রাজনৈতিক খেলা দেশবাসি প্রত্যক্ষ করেছে তাতে শিহরে উঠতে হয়। ত্রিশ লাখ মানুষের জীবনের বিনিময়ে অর্জিত মহান স্বাধিনতা কি তাহলে ভুলুন্ঠিত হবে? এদেশ কি তাহলে নিছক ক্ষমতায় যাওয়া আসাকে কেন্দ্র করে মোল্লাতান্ত্রিক হয়ে ওঠছে? যদি তাই হয় তাহলে কি বাংলাদেশ আফগানিস্তানের ভাগ্য বরণ করতে যাচ্ছে? ৬ তারিখের ঘটনায় হেফাজত অবরোধের নামে ঢাকায় যে পৈশাচিক ও নারকীয় ধ্বংসযঙ্ঘ চালিয়েছে তা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায়না। হেফাজত যতই বলুক তাদের সঙ্গে জামাতের সংশ্লিষ্টতা নেই তা এখন পাগলেও বিশ্বাস করেনা কারন হেফাজতের আমির বগুড়া উড়ে গেছে জামাত নেতা মীর কাসিমের হেলিকপ্টার দিয়ে। জামাতের টাকা ও হেফাজতের ভালোমানুষির চেহারার আড়ালেই রাজনৈতিক খেলা চলছে। আর গোটা প্রক্রিয়া মদদ জোগাচ্ছে বিএনপি।
বিএনপির গেল আমলে যেমন বাংলাভাইদের উখ্খান হয়েছিল ঠিকই বিএনপি একই প্রক্রিয়ায় আবার জঙ্গিগোষ্ঠির সঙ্গে মিশে রাজনৈতিক পরিস্হিতি ঘোলা করার খেলায় নিমজ্জিত। এবার বিএনপি ও জামাতের ভিন্নরুপটি হলো হেফাজতে ইসলাম।
সরকারকে আরো কঠিন পরিস্হিতির মধ্যে দিয়ে বাকি সময় পার করতে হবে। কারন যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় জামাত শিবির এহেন কোন কাজ নেই যা করবেনা। আর জামাত শিবিরের পৃষ্ঠপোষকতায় বরাবরের ন্যায় বিএনপি উদার নীতির প্রতিফলন রয়েছে।
যা অতীতেও দৃশ্যমান ছিল এখনো দৃশ্যমান রয়েছে। তাই সরকারকে প্রতিটি স্টেপ অত্যন্ত সর্তকতার সহিত ফেলতে হবে। ইসলাম মানার বিষয় ইসলাম জাহির করার বিষয় নয়। ইসলাম রক্ষার্থে লংমার্চ অবরোধের প্রয়োজন হয়না, প্রয়োজন মানসিক তাগিদ। তাই যারা ইসলাম রক্ষার নামে এসব করছে আসলে তারা অন্যের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে।
আর এ বাস্তবায়নে এরা কখনো প্রধানমন্ত্রীর গুনগান গাইবে কখনো আওয়ামীলীগের গুনগান গাইবে। এখন সরকার যদি গুনগানের বশবর্তী হয়ে এসব বরদাশ করে তাহলে সরকারের ক্ষতির চেয়েও বেশি ক্ষতি হবে বাংলাদেশ নামক দেশটির। কারন উদিয়মান এ দেশ নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের নানান খেলা চলমান। আন্তর্জাতিক বহু প্রতিষ্ঠান এসব অপকর্ম বাস্তবায়নে অর্থ জোগাচ্ছে। এখন সরকারকে খোজে বের করতে হবে হেফাজতের লংমার্চে অবরোধের অর্থের উৎস কি? কারা অর্থ দিয়ে এসব করাচ্ছে? তাদেরকে শুধু খোজে বের করলেই চলবেনা যথাযথ আইনানুগ প্রক্রিয়ায় এদেরকে দমন করতে হবে।
আর সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এগিয়ে নেয়ার দায়িত্বও সরকারের। আর এ দায়িত্ব পালনে বিরোধিদলকে সকল কুটবুদ্ধির উর্ধ্বে ওঠে সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে দেশের স্বার্থে জনমানুষের স্বার্থে।
হাসান কামরুল: কলামলেখক।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।