তেরোর ব্লগ মানেই হাবিজাবি !! ত্রিনিত্রি আপুর পোস্ট দেখে আমারো অন্ধ মোলাকাতনামা নিয়ে কিছু কাহিনী মনে পড়লো। যেখানে আমি যথারীতি তিন নাম্বার ছাগল মাঝে মাঝে চার পাঁচ নাম্বার হিসেবেও ছিলাম। শুরু করা যাক তাহলে...
দিনটি ২০ শে ডিসেম্বর । আমার জন্মদিন। জন্মদিন উপলক্ষ্যে আমি আমার কতিপয় ক্লাস ফ্রেন্ডকে দাওয়াত দিয়েছিলাম।
অবশেষে ওরা এলো। তখন জানতে পারলাম যে এক ফ্রেন্ড এক ছেলের সাথে অন্ধ মোলাকাত করবে। যদিও অন্ধ না ঠিক। কারণ ছেলেকে বলে সে এর আগে একবার দেখেছিলাম। ছেলের বাসা আমাদের স্কুলের পাশে ছিলো।
কিন্তু সে ছেলের চেহাড়া ভুলে বসে আছে। যাই হোক। এমনে তার বাবা বাইর হতে দিবে না তাই সে আমার জন্মদিনের অজুহাতে বের হয়েছে। কিন্তু আমি বললাম,"দেখা করবি ঠিক কথা কিন্তু দুপুরের খাওয়া আমার বাসাতে। আব্বু যখন জিজ্ঞাসা করবে যে তুমি কই? আমি কি জবাব দিবো"।
ও মেনে নিলো ব্যাপারটা। আমরা আমাদের বাসায় ছাদে গিয়ে দাঁড়ালাম। ছেলের যেখানে আসার কথা তা আমাদের বাসার ছাদ থেকে দেখা যাবে। তাই দাঁড়ালাম। এর মাঝে আবার আমার অন্য ফ্রেন্ডরা কেমনে কেমনে পাশের ছাদের নীচে মার্কেটে দাঁড়ানো ছেলেদের সাথে হাই বিতরণ শুরু করে দিলো।
আমি বুঝি না যখন আমি একলা দাঁড়াতাম তখন এই ছেলেগুলোকে আমার চোখেই পড়তো না। আর ওরা কি করে খুঁজে বের করে ফেলে। যাই হোক আসল প্রসঙ্গে আসি। যে জায়গায় আসার কথা সে জায়গায় নানান ছেলে এসে দাঁড়াতে লাগলো। আমরা জিজ্ঞাসা করতে লাগলাম, "কিরে ও নাকি? নাকি ও?" প্রথমে ও স্বীকার না করলেও পরে মিন মিন করে স্বীকারক্তি দিলো যে সে ছেলের চেহাড়া ভুলে গেছে।
পরে বললো সমস্যা নাই আমি শারমীনকে নিয়ে নীচে নামি। খুজে পাবো। আমি বললাম খাওয়ার আগেই আসতে হবে কিন্তু। দেখলাম তারা ঐখানে গিয়ে দাঁড়ালো। হঠাত দেখি তারা মার্কেটের তিনতালায় রেস্টুরেন্টে উঠছে।
১০ মিনিটের কথা বলে যে ৩০ মিনিট পার করে বসে আছে। আব্বু এসে বার বার খোজ নিচ্ছে কি ব্যাপার ও কই? আমি কিছু বলতে পারছি না। পরে দল বল নিয়ে গেলাম রেস্টুরেন্টে। উকি মেরে দেখি পুরো রেস্টূরেন্ট খা খা করছে। শুধু দূর থেকে মৃদু হি হি শব্দ আর চুড়ির টুং টাং শব্দ।
খাচ্ছে যে মন দিয়ে। যদিও আমি অত্যন্ত শান্ত এক মেয়ে। দেখতে বেকুব বেকুব। ওয়েটার রা ভেবেছিলো যে আমরা তাদের সাথে জয়েন করতে এসেছি। কিন্তু না।
আমি ধুম ধাম করে গিয়ে চিল্লায় চিল্লায় বলতে লাগলাম," এইসবের মানে কি? তুই জানিস না আমার বাসায় খাবি। এইখানে কি? জানিস আমার বাপ নিচে দাঁড়ায় আছে ( মিথ্যা )। আমি কি জবাব দিমু। কত্ত বড় সাহস!!"
আমার ফ্রেন্ড বলে চলেছে, "প্লীজ তেরো এইখানে আর কিছু বলিস না। প্লীজ!!"কে শুনে কার কথা আমার সাথে আমার দল বল ও সুর মেলানো শুরু করলো।
বেচাড়া ছেলে তখন নিরুপায় হয়ে মোবাইল টিপছিলো। আর তো কিছুই করার ছিলো না। এরপর যেভাবে ঝড়ের মত এসেছিলাম এইভাবেই ঝড়ের মত ওকে নিয়ে বিদায় নিলাম।
এরপর বহুদিন পর একদিন বাসায় এক ফ্রেন্ডের আগমন। দেখেই বুঝলাম কিছু হয়েছে।
কারণ ছাড়া বাসাতে আগমন ঘটে নাই। কিন্তু আজ তো বৃষ্টি ও নাই রাস্তাতে গোলমাল ও নাই। তাইলে কি হতে পারে। তার উপর সে ব্যাপক সাজুগুজু দিয়ে এসেছে। বিশাল চুল ছেড়ে উড়িয়ে এসেছে।
বললাম ঘটনা কি? বলে শোন আমার সাথে যাওয়া লাগবে। আমি বলি কেনো? বলে একজনের সাথে দেখা করবো। আমার ফ্রেন্ড। ফোন ফ্রেন্ড। বললাম বাহ...তো আমি যামু কেন।
তুই যা। আমি গিয়া কি করুম? বলে না না আমি একলা যামু না। আচ্ছা ঠিক আছে চল বলে জামা কাপড় বদলাইয়া কিঞ্চিত ভদ্র হইলাম। ওর ও দেখা করার জায়গা আগের জনের টাতেই। মার্কেটে।
আমি বললাম," ড্রেস কি থাকবে? কেমন? হাবিজাবি... নইলে চিনবো কেমনে?" মার্কেটে গিয়ে দেখি বিশাল কাহিনী !! ঐদিন সবাই ই মোবাইলে কথা বলছে। আর আমি মনের আরশিতে ভেবে রেখেছিলাম যে হয়তো কোনো চেংড়া হবে। আমি তাই পুং পাং মারা গুলোর দিকেই ভ্রুকুঞ্চিত দৃষ্টিতে তাঁকাচ্ছিলাম। আবার ঐদিকে ছেলে বলে যাচ্ছে মোবাইলে যে সে আমাদের দেখছে। আমি আরো আগ্রহ নিয়ে খুজে বেড়াতে লাগলাম।
হঠাত আমাকে অবাক করে এক নির্ঘাত গোবেচাড়া টাইপের লোক টাইপের লোক এসে দাঁড়ালো। যে কিনা আমাদের অনেক বড়। আমি ভ্যাবাচ্যাকা হাসি দিয়ে তাঁকিয়ে রইলাম। আমার ফ্রেন্ড আমাদের পরিচয় করিয়ে দেয়ার পরই আমার জরূরী কাজ আছে বলে ভাগলাম নইলে হয়তো কিঞ্চিত খাওয়া দাওয়া পেলেও পেতে পারতাম কিন্তু কাবাবের হাড্ডি হয়ে আর কত বদ দোয়া নিবো।
আবার সেই জন্মদিনের ফ্রেন্ডের কাহিনী।
সেও একদিন আমার বাসায় এসে হাজির। আম্মু ঐদিন আমার মাথায় গ্যালন ভরা তেল ঢালতে সমর্থ হয়েছিলো। সেও কারণ ছাড়া এই বাসায় আসবে না। তাই আমিও কারণ কি হতে পারে তা ভাবতে লাগলাম। অবশেষে সত্য বের হলো।
"চল না আমার সাথে...একজনের সাথে দেখা করবো। " বললাম,"চিনিস?" "না না শুধু মোবাইলে কথা হয়েছিলো। " "অ..." "কিন্তু মাথায় তো তেল দিয়ে কলুর বলদ হয়ে আছি..." "আরে ব্যাপার না...তোকে এমনেই ভাল লাগছে...(সম্পূর্ণ চাপা)" বন্ধুমহলে একটা কথা প্রচলিত আছে, "তেরো কাউকে না করতে পারে না..." তাই তেরো আবার তিন নাম্বার ছাগল হইতে রাজি হয়ে গেলো। গিয়ে পৌছাইলাম। এইখানেও একই অবস্থা।
সবাই কালো শার্ট, টী-শার্ট... মোবাইলে কথা বলছে। কথা ছিলো ছেলে কালো টী-শার্ট পড়ে আসবে। ছেলেকে বার বার ফোন দেয়া হলো। ছেলে বললো যে, " আমরা এই দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে আছি!" আমার একটা বদঅভ্যাস আছে। আমি এক রাস্তা দিয়ে সারা জীবন হাটলেও সেই রাস্তার সব দোকান পাটের নাম মনে রাখতে পারি না।
তাই আমি চিনলাম না এই দোকান। যদিও এই দোকানের সামনে দিয়ে বার বার হাটা চলা করছি। মাথা তুলে আমরা কেউ ই দেখছি না। কিন্তু এইটা খেয়াল করলাম যে এক গুন্ডা টাইপের ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। ছেলে ড্রেস কোড ভালো ভাবে মেনে এসেছে।
কালো টী-শার্ট, কালো প্যান্ট... সে নিজেও কুচকুচে কালো ( অবশ্য এইভাবে কাউকে নিয়ে বলতে নাই। ) কিন্তু কথা হলো কালো তে প্রব নাই। কিন্তু সে যে গুন্ডা টাইপের ভাব নিয়ে দাঁড়ীয়ে আছে। আমি তো প্রথম বারেই রিজেক্টেড। অসম্ভব এই ছেলে হইতেও পারে না।
কিন্তু এই ছেলের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আমার ফ্রেন্ড কল দিলো আর হতাশার ব্যাপার ছেলে ফোন ধরলো। ছেলেও সাথে তিন নাম্বার ছাগল এনেছিলো। এরপর যা হলো তা এত দ্রুত হলো নিজেই বুঝলাম না। আমি আমার ফ্রেন্ডের দিকে একবার তাকালাম। এরপর এক দৌড়ে একটা রিকশা ডাকলাম।
এরপর হাওয়া হইলাম দুইজন। এরপর আমার ফ্রেন্ড কি জবাব দিবে বুঝছিলো না। আমি ওকে শিখালাম। ছেলেরে ঝাড়বি। ছেলে বলছে তোকে চিনে।
কই এতবার ঘুরলাম। ডাক দিলো না কেন। শালা ভুয়া...মিথ্যুক। আমি মিথ্যুক দের সাথে কথা বলি না। এইটা লেখার সময় এখন নিজেকে বিশেষ ভিলেন ভিলেন লাগছে।
এরপর ও আমি নানান টুকটাক ফ্রেন্ডের মোলাকাতে গিয়েছিলাম। যদিও আমি নিষেধ করি যে আমাকে নিতে না। কারণ আমিই আমার ফ্রেন্ডের আগে নিজেই তার হয়ে নানান জবাব দিয়ে দেই। অসম্ভব... ও এইটা করবে না...কিরে তাই না? উভয় পক্ষই তখন চুপ থাকে।
এখন যেটা বলবো এইটা মোটেও অন্ধ মোলাকাতনামা নহে।
কিন্তু লেখতে খুব ইচ্ছে করছে। যদি পরে ভুলে যাই।
এইচ.এস.সি পরীক্ষার প্র্যাকটিকাল এগজাম চলার মাঝে একদিন খাতা সাইন করাতে কলেজ গিয়েছিলাম। ফিরার পথে বৃষ্টি হচ্ছিলো হালকা। আমি আর আমার ফ্রেন্ড গল্প করতে করতে যাচ্ছি।
হঠাত শুনি রিকশা দিয়ে তিনটা ছেলে যাচ্ছে। যারা আমাদের নিতান্তই জুনিয়র। তারা আমাদের কি জানি বললো। আমার ফ্রেন্ড আস্তে আস্তে একটা ক্ষুদ্রু গালি দিলো। কিন্তু ছেলেরা তো শুনে নাই।
আমি চিল্লায় ফিল্লায় বলতে লাগলাম, " বেয়াদ্দপ ছেলেরা... মাইয়া দেখলে হুশ থাকে না তোদের। " হাবিজাবিততক্ষনে রিকশা দূরে চলে গেছে। এরপর আমা্র ফ্রেন্ড আমার হাতে গুতা দিলো। বলে দোস্ত থাম। তাকিয়ে দেখলাম আমি বাস স্ট্যান্ডের সামনে দাঁড়িয়ে আছি আর সবাই আমার দিকে চোখ খুলে তাকিয়ে আছে।
যাই হোক আমি ৩২ দন্ত বিকশিত হাসি দিয়ে হাটতে লাগলাম। নিজেকে গুন্ডি গুন্ডি লাগছিলো।
* ত্রিনিত্রি আপু কে আবার ধন্যবাদ। অনেক দিন হলো নস্টালজিক পোস্ট লেখা বাদ দিয়েছিলাম। তারপর ভাবলাম যে থাক আবার লিখি।
কিন্তু কি যে লেখবো। আপুর পোস্ট দেখে মাথায় গিজ গিজ করতে থাকলো ঘটনা গুলো। লিখে ফেললাম তাড়াতাড়ি। যদি সকাল হতে হতে ভুলে যাই। কোনো বিশ্বাস নাই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।