আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চারপাশে চারিদিক-২

Bismillahir Rahmanir Rahim Rabbish rahli sadri wa yas-sir li amri wahloul uqdatam mil-lisaani yafqahu qawli. O my Lord! expand me my breast; Ease my task for me; And remove the impediment from my speech, So they may understand what I say[20:25-28] কুফা আমার পরিচিত আনিতা। আনিতার স্বামী ব্যবসায়ী। আনিতার বিয়ের পর তার শ্বশুর বাড়ীর একজন বললো, এবার যদি তোমার স্বামীর নতুন ব্যবসাটা হয়ে যায় বুঝবো তুমি লক্ষী বউ। আর না হলে তুমি একটা কুফা। আনিতার মন খারাপ হয়ে যায়।

সে সারাক্ষণ ভয়ে থাকে, মন খারাপ করে থাকে। কিন্তু কাউকে বুঝতে দেয় না। যদি সত্যি ব্যবসাটা না হয়, তাহলে কি হবে ? যাই হোক , এক সময় জানা গেলো ব্যবসাটা হয়নি। আনিতার প্রচন্ড মন খারাপ হোল। কেউ আর কিছু বলেনি তাকে।

এরপর আরেকটা ব্যবসা, সেটাও হোল না। তারপরেরটাও হোল না। এর পরেরটাও হোল না। কেউ কিছু বলে না সরাসরি, কিন্তু আকার ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দেয় ‘তুমি কুফা’। এখন আনিতা নিজেও বিশ্বাস করা শুরু করে যে, সে আসলেই কুফা।

তার স্বামী যখন নতুন কোন ব্যবসার কথা বলে , সে তখন আর শুনতে চায় না। কি জানি, শুনলেই যদি আর ব্যবসাটা না হয় ! একটা সময় পরিবারের হাল ধরার জন্য আনিতা নিজেই উপার্জন শুরু করে। আর যখন তার আয় বাড়তে থাকলো, তখন সে চিন্তা করতে লাগলো যে, সে যদি সত্যি ‘কুফা’ হয় তাহলে তার ইনকামটা হয় কিভাবে ! এই কিছুদিন আগেও আমার পরিচিত একজন বললো, ‘ এই আশরাফুলটা একটা কুফা। দলে থাকলেই দল হারতে থাকে’। কিন্তু তার দুদিন পরই আশরাফুল টেস্ট ম্যাচে ১৯০ রান করে ফেললো।

আবার অনেক সময় আমরা বলি যে, এই জামাটা আমার জন্য কুফা। যেদিন জামাটা গায়ে দেই ,সেদিনই একটা বিপদ ঘটে। হয়তো কারো বাসায় ঢুকার সময় ইলেক্ট্রিসিটি চলে গেলো, আর অমনি বলা হলো ‘তুই একটা কুফা’। আবার বলি, ধুর, আজকের দিনটাই কুফা, কোন কাজ ঠিক মত হলো না। এমন হাজারোটা ঘটনা আমরা আমাদের চারপাশে দেখে থাকি।

আসলেই কি ‘কুফা’ বলে কিছু আছে? ইসলাম কি বলে এই ব্যাপারে ? সূরা ফাতির এর ২ নং আয়াতে আল্লাহ্‌ বলেন “ আল্লাহ্‌ মানব সম্প্রদায়কে কোন অনুগ্রহ দান করলে কেহ তা বন্ধ করতে পারে না। আবার যা তিনি বন্ধ করতে চান তিনি ব্যতীত কেহ তা প্রদান করতে পারে না । ক্ষমতায় তিনি পরাক্রমশালী , প্রজ্ঞায় পরিপূর্ণ”। সূরা ফাতির এর ১৬০ নং আয়াতে আল্লাহ্‌ বলেন, “ আল্লাহ্‌ যদি তোমাদের সাহায্য করেন, তবে কেহ-ই তোমাদের পরাস্ত করতে পারবে না। আর তিনি যদি তোমাদের পরিত্যাগ করেন এর পরে আর কে আছে যে তোমাদের সাহায্য করবে ? মুমিনগণ তাদের আনুগত্য আল্লাহ্‌র উপরে অর্পণ করুক”।

আবার সূরা তওবার ৫১ নং আয়াতে আল্লাহ্‌ বলেন, “ বল, "আল্লাহ্‌ আমাদের জন্য যা নির্দিষ্ট করেছেন তা ব্যতীত আমাদের অন্য কিছু হবে না। তিনি আমাদের রক্ষাকর্তা এবং বিশ্বাসীরা তার উপরেই তাদের আনুগত্য স্থাপন করুক। " আবার সূরা আন-আম এর ১৭ নং আয়াতে আল্লাহ্‌ বলেন “যদি আল্লাহ্‌ তোমাকে নিদারুণ যন্ত্রনা দিয়ে স্পর্শ করেন, তিনি ব্যতীত আর কেউ তা দূর করতে পারবে না। যদি তিনি তোমাকে সুখ দ্বারা স্পর্শ করেন, সকল বিষয়ের উপর তিনিই তো ক্ষমতাবান”। উপরের আয়াত গুলো পর্যালোচনা করলে বুঝা যায় যে আল্লাহ্‌ সকল জীবের সৃষ্টিকর্তা এবং পালনকর্তা।

তাঁর করুণা ও দয়া সকল সৃষ্টিকে আপ্লুত করে থাকে। পৃথিবীতে এমন কেউ বা এমন কিছু নাই যা তার করুণা ধারাকে বাধাগ্রস্থ করতে পারে বা বান্দার জন্য তাঁর অনুগ্রহে বাঁধা সৃষ্টি করতে পারে। আল্লাহ্‌র ইচ্ছা ও পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবেই। যদি তিনি কাউকে তাঁর অনুগ্রহ বঞ্চিত করতে চান, তবে পৃথিবীর কোনও শক্তির ক্ষমতা নাই তা পুণরুজ্জীবিত করা। একজন মুসলিম কে অবশ্যই বিশ্বাস করতে হবে যে সমস্ত কিছুই পুর্বনির্ধারিত।

তাহলে কোন ব্যক্তি বা বস্তু কোন ভাবেই নিজের বা অন্যের জন্য ‘কুফা’ বা ‘অশুভ’ অথবা ‘ব্যাড লাক’ হতে পারে না। পৃথিবীর সমস্ত কিছুই ঘটে আল্লাহ্‌র নির্দেশে। যদি কেউ কোন ব্যক্তি বা বস্তুকে এবং সময় কে অশুভ বা কুফা হিসাবে মেনে নেয়, তাহলে সে শিরক করে ফেললো। কিভাবে শিরক হবে ? কারণ আল্লাহ্‌ যেহেতু ভাল মন্দ সব নিজেই দিয়ে থাকেন, কোন ব্যক্তি বা বস্তু সেই ভাল মন্দ দিতে পারবে না। যদি কোন ব্যক্তি এটা বিশ্বাস করে ফেলে যে কোন ব্যক্তি বা বস্তু ভাল মন্দের কারণ হয় তখন সে ঐ ব্যক্তিকে বা বস্তুকে আল্লাহ্‌র সাথে তুলনা করে ফেললো বা আল্লাহ্‌র সমান করে ফেললো।

নাউজুবিল্লাহ । আর এভাবেই শিরক করা হয়ে গেলো। বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ, ইত্যাদি হাদীস শরীফ-এ বর্ণিত আছে যে, রাসুল (সাঃ) বলেন “কোনো বিষয়কে অশুভ কুলক্ষণে মনে করো না, তবে শুভ লক্ষণ আছে। তখন কিছু সাহাবা (রাঃ) বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! শুভ লক্ষণ কি? তখন তিনি বললেন, উত্তম কথা, যা তোমাদের মধ্য হতে কেউ শুনতে পায়। ” রাসুল (সাঃ) আরো বলেন, “যে কোনো বিষয়কেই অশুভ ও কুলক্ষণে মনে করা শিরকের অন্তর্ভুক্ত।

তিনি এ বাক্যটি তিনবার উল্লেখ করেন। ” যাই হোক, যে নামেই হোক, কুলক্ষন নেয়া শিরক। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, “কুলক্ষন ধরা শিরক, অশুভ লক্ষন ধরা শিরক, অশুভ লক্ষন ধরা শিরক। ” আবু দাউদ ৩৯১০, তিরমিযী ১৬১৪। এখন অবস্থা দেখুন আমাদের সমাজের।

আমরা কয়জন আছি যে এমন ধারণা পোষণ করি না ? নিজের অজান্তেই শিরকে লিপ্ত হচ্ছি। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.