রাশিফল
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
ডিসেম্বর মাস চলে এসেছে। ডিসেম্বরের প্রায় মাঝামাঝি সময় এখন। নতুন বছরের আর বেশী দিন বাকি নেই। কেমন যাবে নতুন বছরটা ? আগে থেকে জানা থাকলে সব কাজ সুন্দরভাবে করা যাবে, তাই না ? কিংবা কোন বাধা বিপত্তি আসলে তা মোকাবেলার জন্য তাবিজ-টাবিজ কিংবা কোন মূল্যবান পাথর সাথে রেখে সেই বাধা দূর করার ব্যবস্থা করা যেতে পারে, তাই না ? আর এজন্যই বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা রাশিফল বা রাশিচক্রের উপর স্পেশাল আর্টিকেল পাবলিশ করে আসছে। এখন তো বছরের শুরুতেই বিভিন্ন রাশি অনুযায়ী বই বিক্রি হয় আলাদা করে।
তাই ভবিষ্যৎ জানা যায় আরো সহজে । কোনই সমস্যা নেই।
সত্যিই কি কোন সমস্যা নেই ? আল্লাহ্তায়ালা তাঁর রহমতের কারণে আমাকে যে জ্ঞান বুদ্ধি দিয়েছেন, সেই জ্ঞান কিন্তু আমাকে বলে দেয়, এই রাশিচক্র বা রাশিফল দেখা ও বিশ্বাস করায় প্রচুর সমস্যা আছে। আমাদের আকিদার সমস্যা। এই কাজটিতে পুরোপুরি শিরকে লিপ্ত হয়ে যেতে হয়।
আর শিরক হচ্ছে এমন এক জঘন্য অপরাধ যা আল্লাহ্ কখনোই ক্ষমা করবেন না। সব গুনাহ এর ক্ষমা আছে। শুধু শিরকের গুনাহের ক্ষমা নাই। যদি কেউ তওবা করে তাহলে ক্ষমা হতে পারে । তারপরেও সন্দেহ থাকে যে তওবা কবুল হলো কিনা ।
‘নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না, যে লোক তাঁর সাথে শরীক করে। তিনি ক্ষমা করেন এর নিম্ন পর্যায়ের পাপ, যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন। আর যে লোক অংশীদার সাব্যস্ত করল আল্লাহর সাথে, সে যেন অপবাদ আরোপ করল’। (সূরা নিসাঃ ৪৮)
‘নিশ্চয় আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না, যে তাঁর সাথে কাউকে শরীক করে। এছাড়া যাকে ইচ্ছা, ক্ষমা করেন।
যে আল্লাহর সাথে শরীক করে সে সুদূর ভ্রান্তিতে পতিত হয়’ । (সূরা নিসাঃ ১১৬)
আমরা দৈনন্দিন জীবনে এমন অনেক শিরক যুক্ত কাজ জেনে অথবা না জেনে করে থাকি। তার মধ্যে রাশিফল দেখা এবং তা বিশ্বাস করা একটি। আমাদের চারপাশে এমন লোক খুব কম পাওয়া যাবে যে রাশিফল দেখে না। সকালে খবরের কাগজ হাতে নিলে যখন রাশিফলের পাতাটি আসে তখন বিশ্বাস করুক বা না করুক একবার রাশিফলের উপর চোখ বুলিয়ে নেন অনেকেই।
আর বন্ধু-বান্ধব বা আত্মীয়-স্বজনের সাথে মজা করার জন্য রাশি নিয়ে কত গবেষণা হয়। কিন্তু কেউ ঘুনাক্ষরেও চিন্তা করি না যে কত বড় শিরক এর কাজ করে বেড়াচ্ছি। অনেকে হয়তো বলবেন , ‘ আমি তো মজা করি, কিন্তু বিশ্বাস করি না’ ।
অথচ হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি গণকের কাছে গিয়ে কোন কিছু জিজ্ঞেস করল ,চল্লিশদিন পর্যন্ত তার সলাত কবুল হবেনা”। (মুসলিম) আজকালকার যুগে পেপার পত্রিকা খুললে কিম্বা ইন্টারনেটে গেলে ভাগ্য গননাকারী দেখা যায় বা রাশিফলের লিস্ট দেখা যায়।
আর তাতে চোখ বুলানো তো গনকের কাছে যাওয়ারই সামিল। ইন্টারনেটে প্রচুর ওয়েব সাইট আছে যেখানে প্রতিদিন আপনাকে আপনার নাম ধাম, জন্ম তারিখ, জন্ম সময় ইত্যাদি অনুযায়ী দিনের, সপ্তাহের, মাসের এমনকি বছরের রাশিফল ই-মেইলে পাঠিয়ে থাকে বিনা পয়সায়। ( আবার প্লিজ কেউ ভেবে বসবেন না যে নামায যখন কবুল হবেই না তাহলে নামায পড়ে আর লাভ কি । আসলে নামায আপনাকে পড়তেই হবে , না হলে ফরয পালন করা হবে না। তবে সেক্ষেত্রে কোন সোয়াব পাবেন না।
)
রাশিফল বিশ্বাস করার সাথে শিরকের সম্পর্ক কোথায় ? এ কথাটি বুঝতে হলে অবশ্যই আল্লাহ্ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে এবং তাঁকে মূল্যায়ন করতে হবে। কোরআনে সূরা যুমার এর ৬৫ থেকে ৬৭ আয়াতে বলা হয়েছে “আপনার প্রতি এবং আপনার পূর্ববর্তীদের প্রতি প্রত্যাদেশ হয়েছে, যদি আল্লাহর শরীক স্থির করেন, তবে আপনার কর্ম নিষ্ফল হবে এবং আপনি ক্ষতিগ্রস্তদের একজন হবেন। বরং আল্লাহরই এবাদত করুন এবং কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত থাকুন। তারা আল্লাহকে যথার্থরূপে বোঝেনি। কেয়ামতের দিন গোটা পৃথিবী থাকবে তাঁর হাতের মুঠোতে এবং আসমান সমূহ ভাঁজ করা অবস্থায় থাকবে তাঁর ডান হাতে।
তিনি পবিত্র। আর এরা যাকে শরীক করে, তা থেকে তিনি অনেক উর্ধ্বে”। এই আয়াতে বুঝা যাচ্ছে যে, কেউ শিরক করলে তার কোন আমল আল্লাহ্’র কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না, সে আমল যত বড় আর গুরুত্বপূর্ন হোক না কেনো এবং যারা শিরক করে তাদের এ শিরকের কারণ হচ্ছে তারা আল্লাহ্’র শক্তি, ক্ষমতা, মর্যাদার যথাযথ মুল্যায়ন করতে পারে না বা বুঝতে পারে না।
আল্লাহ্’র অনেক গুন ও বৈশিষ্টের মাঝে একটা গুন হলো “গায়েব” জানা। আল্লাহ্’ই একমাত্র গায়েব বা অদৃশ্য বিষয় সম্পর্কে জানেন, অন্য কেউ নয়।
এমনকি কোন নবী রাসুলও নয়। যদি মুসলিম হই তাহলে অবশ্যই আল্লাহ্’র এই গুন স্বীকার করতে হবে এবং তা মূল্যায়ন করতে হবে। তাহলে আমি কিভাবে একজন মানুষের ভবিষ্যৎবাণী বিশ্বাস করবো ? কারণ কোন মানুষ তো গায়েব জানে না। যদি বিশ্বাস করি তাহলে তো আমি একজন মানুষকে আল্লাহ্’র পর্যায় নিয়ে গেলাম। (নাউযুবিল্লাহ) আর যখনই আমি কাউকে বা কোন বুস্তুকে আল্লাহ্’র সমপর্যায়ে নিয়ে যাব তাহলে সেটা হয়ে যাবে শিরক।
কোরআনে আল্লাহ্ অনেকবার বলেছেন অদৃশ্য বা গায়েব সম্পর্কে শুধু তিনি জানেন, আর কেউ নয়। যেমন, সূরা বাকারার ৩৩ নং আয়াতে, সূরা মায়েদার ১০৯ ও ১১৬ নং আয়াতে, সূরা আল আনআম এর ৫৯ ও ৭৩ নং আয়াতে, সূরা তাওবার ৭৮ ও ১০৫ নং আয়াতে, সূরা ইউনুসের ২০ নং আয়াতে, সূরা হুদের ১২৩ নং আয়াতে, সূরা কাহফের ২৬ নং আয়াতে, সূরা ফাতের এর ৩৮ নং আয়াতে এবং সূরা হুযরাতের ১৮ নং আয়াতে। তাই কোন জ্যোতিষ বা গণক কোন ভবিষ্যৎ বলতে পারে না এবং কারো এটা বিশ্বাস করাও ঠিক হবে না।
পরিশেষে বলবো, এই শিরকের ধারে কাছে যেন আমরা না যাই এবং অন্যদেরকেও না যাওয়ার জন্য আহ্বান জানাই। আল্লাহ্ আমাদের সব গুনাহ ক্ষমা করুক এবং সবাইকে হেদায়েত করুক।
আমিন। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।