আমি এর আগে লিউকোমিয়া ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত একটা বাচ্চার জন্য সাহায্য চেয়ে একটা ব্লগ লিখেছিলাম। ক্লিক করুন তো গত ২৮শে অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। আমরা সেটাকে কেন্দ্র করে টাকা উঠাতে গিয়েছিলাম সেখানে। আমাদের কয়েকটা দল ছিলো। ভালোই টাকা উঠছিলো।
আমাদের সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্র ছিলো। এর আগে আমরা ক্যাম্পাস থেকে টাকা উঠানোর জন্য অনুমতি নিতে প্রক্টর স্যারের কাছে যাই, কিন্তু যাবার পর এক স্টাফ বলেন যে তিনি নাকি তখোনোও আসেননাই। পরে আমরা টাকা উঠাতে থাকি। আমার দল যখন আই ই আর এর সামনে অবস্থান করেছিলো ঠিক তখন প্রক্টরের গাড়ী এসে আমাদের সামনে দাঁরায়। তিনি গাড়ী এর ভিতরে বসে আমার সাথে কথা শুরু করে এবং রীতি মতো ধমকের সুরে, মনে হচ্ছিলো ব্যাপারটা তিনি আগে থেকেই জানেন।
প্রক্টর স্যারের সাথে আমার কথোপোকথন এর অংশটুকু আমি হুবুহু তুলে ধরলাম আপনাদের সামনেঃ
স্যারঃ তোমরা কারা? এখানে কেনো এসেছো?
আমিঃ স্যার, আমরা একটা ক্রিকেট ক্লাব, আমাদের এলাকায় একটা বাচ্চা লিউকোমিয়া ক্যন্সারে আক্রান্ত। তার চিকিতসার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন , যেটা তার বাবার একার পক্ষে যোগাড় করা সম্ভব না। আজকে তো ভর্তি পরীক্ষা চলছে তাএ আমরা ভেবেছি এখানে আসলে হয়তো কিছু সাহায্য পাওয়া যাবে।
স্যারঃ তোমরা আমার পারমিশন নিয়েছো?
আমিঃ স্যার আমাদের কাছে ডিসি এর পারমিশান আছে। তাছাড়া আমরা আপনার রুমে গিয়েছিলাম, স্টাফ বললো, আপনি নাই, তাই আমরা আপাতত কারোও পারমিশান নিই নাই।
তবে আপনি আপনার রুমে গেলে আমরা আমাদের এপ্লিকেশান আপনাকে দিবো ,আপনি কাইন্ডলি সাইন করে দিবেন স্যার, প্লীজ।
স্যারঃ (ধমক দিয়ে) আমি কি তোমাদের এপ্লিকেশান সাইন করার জন্য বসে আছি নাকি! আর ডিসি কে? মানে জানো? এটা আলাদা স্টেট, এখানে ডিসি এসে তোমার জন্য দাঁড়ায় থাকবে না। তোমরা এখনই ক্যাম্পাস লীভ করো, আমার কাছে অভি্যোগ এসেছে তোমরা ক্যাম্পাসের পরিবেশ নষ্ট করছো।
আমিঃ জ্বী স্যার, ডেপুটি কমিশনার। স্যার আমরা কারোও কাছে জোড় করে টাকা চাচ্ছিনা, যে যার খুশি মতো আমাদের দিচ্ছে।
আপনাকে কে অভিযোগ করলো স্যার?! তাছাড়া আরোও কয়েকটা সংস্থা টাকা উঠাচ্ছে। তাদের তো কেউ কিছু বলছেনা।
স্যারঃ এই ছেলে! তুমি তো একটা বেয়াদব! এক্ষুনি ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে যাও নইলে আমি পুলিশ ডাকতে বাধ্য করবো।
আমিঃ কিন্তু স্যার টাকা গুলো তো বাচ্চার অধিকার। আপনি তো ওকে এভাবে বঞ্চিত করতে পারেন না।
তাছাড়া কত ভিক্ষুক তো ঘোরা ঘুরি করছে, তাদের তো কিছু হচ্ছেনা!
স্যারঃ আমি কোন কথা শুনতে চাইনা। তোমরা বের হও, আমাকে পুলিশ ডাকাতে বাধ্য করোনা।
আমিঃ স্যার, আপনার পুলিশ ডাকতে হবেনা, আমরা বের হয়ে যাচ্ছি। কিন্তু একটা কথা স্যার, আজকে এই বাচ্চাটা আপনার আত্নীয় হতে পারতো।
(আমাকে থামিয়ে দিয়ে)
স্যারঃ সেটা আমার ব্যাপার, তোমরা যাও, বেয়াদবের দল।
ইতিমধ্যে আমার কাছে আমার অন্যান্য দলের সদস্যের কাছ থেকে ফোন আসতে লাগলো যে তাদের একই অবস্থা। আমি যখন আই ই আর এর রাস্তা ধরে টি এস সি এর দিকে যাচ্ছিলাম, আমাকে আরেকজন স্টাফ এসে বললো, ভাই প্রক্টর স্যার আপনাদের যেতে বলেছেন। আমি বললাম, ভাই যাচ্ছি আমরা এটা শুনেছি। তার মধ্যে আরেকজন স্টাফ এসে হাজির। সে বললো, কে বলসে আপনাদের ক্যাম্পাস থেকে যাইতে? তখন ১ম স্টাফ তাকে বললো, প্রক্টর স্যার বলসে।
তখন ২য় স্টাফ বললো, আরে কিয়ের স্টাফ! অইটা ভূয়া লোক, আপনারা টাকা উঠান। এর মধ্যে ২ স্টাফের বাকবিতণ্ডা শুরু হয়ে গেলো। আমি তাদের থামিয়ে দিয়ে বললাম, মামা, আপনাদের ঝগড়া করার দরকার নাই। আমরা চলে যাচ্ছি। উল্লেখ্য আমার সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যারা ছিলেন তারা ইতিমধ্যে ছাত্রলীগের কিছু সদস্য দের দিয়ে স্যার কে ফোন করায়।
তখন প্রক্টর স্যারের কাছ থেকে আমাদের কাছে ফোন আসে, যে আপনারা টাকা তুলতে পারেন কিন্তু ব্যানার লাগাতে পারবেন না। আমি স্যার কে উত্তর দিলাম, ধন্যবাদ স্যার, আমরা ক্রুনা বা ভিক্ষা চাইতে আসি নাই, ভালোবাসা চাইতে এসেছিলাম, এই বাচ্চাটার জন্য, কিন্তু পারলাম না। আপনি অনেক করেছেন আর দরকার নাই। এটা বলে আমি ফোন রেখে দিলাম। আমরা তখন শাহবাগ যাদুঘরের সামনে ব্যানার নিয়ে সাহায্য চাইছিলাম, এর মধ্যে একজন স্টাফ এসে বললো, মামা কিছু টাকা ছাড়লেই তো আমরা ব্যবস্থা করাইয়া দিতাম।
আমি এটা শুনে তাকে বললাম, তোর স্যার আর তুই মানুষ না। শিক্ষিত পশু, আরে ব্যাটা, ফকিরও এই বাচ্চার অসহায়ত্ব দেখে টাকা দিসে আর তোরা?! পরে অনেক ঝগড়া হয়, আমরা দ্রুত ঐ স্থান ত্যাগ করি।
এই ঘটনা ঘটার সময় আমি কিছু জিনিস লক্ষ্য করি তা হচ্ছেঃ
কিছু স্টাফ, অভিভাবক দের কাছ থেকে নানা রকম বাহানা দিয়ে টাকা উঠাচ্ছিলো, তারা নিজেরা না থাকলেও তাদের হয়ে অন্য কেউ করছিলো। আমরা থাকলে হয়তো ভাগে কম পড়বে তাই আমাদের বের করে দিতে তারা সচেষ্ট হয়। স্যার দের সাথে তাদের হাত করা আছে।
কিছু স্টাফ আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, যারা মামাদের সাথে এই লেনদেন সম্পন্ন করেন। কারন আমরা যখন শাহবাগে টাকা উঠাচ্ছিলাম, তখন ঢাকা কলেজের একজন ছাত্র এসে বলে, ভাই কত টাকা দিয়ে কন্ট্রাক্ট নিসেন? আমি তার প্রশ্ন শুনে প্রথমে বুঝে উঠতে পারিনি। পরে সে আমাকে বলে তারা ভিক্টিমের কাছ থেকে টাকা নিয়ে এই ধরনের কাজ করে থাকে। এর অর্থ হচ্ছে যা ভিক্টিম, সে যদি টাকা দেয় তাহলে তারা সাহায্যের আবেদন চেয়ে সবার কাছে যাবে, সেখানে টাকা পেলে কিছু কমিশন রেখে বাকী টাকা ভিন্টিমকে দিয়ে দেয়। যাই হোক আমি তাকে বলেছিলাম, ভাই আমরা মানুষ তো তাই মানবতার খাতিরে এই কাজ করছি, কোন কনট্রাকে করছে না।
এই হচ্ছে অবস্থা। আমরা আশানুরূপ সাহায্য পাই নাই। খুবই কম পেয়েছি। উল্লেখ্য এই ধরনের কাজ আমরা আগে কখোনও করিনাই। তবে একটা জিনিস আমি বুঝতে পারলাম, কিছু শিক্ষিত পশুর কারণে এই দেশের কোন উন্নতি হবেনা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।