কান্নার মাধ্যমে একটি ভূমিষ্ঠ শিশু জানান দেয় তার আগমনী বার্তা। আবার কান্নার
মাধ্যমেই প্রকাশ পায় মৃত্যুর দুঃসংবাদ। আর জন্ম থেকে মৃত্যু এই মধ্যবর্তী জীবনে আবেগে-উচ্ছ্বাসে, সুখে-দুঃখে কান্না মানুষের নিত্যসঙ্গী। কিন্তু এ কান্নারও আছে বহু রাসায়নিক
গুণাগুণ। তা বিশেষজ্ঞরা ছাড়া সাধারণের পক্ষে জানা সম্ভব হয় না।
প্রখ্যাত মনোচিকিৎসক
ডা. মোহিত কামালের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে লিখেছেন_ শামছুল হক রাসেল
লাকরিমাল গ্ল্যান্ড থেকে অশ্রু তৈরি হয়। কান্নার সময় স্বাভাবিকের চেয়ে ৫০-১০০ গুণ বেশি অশ্রুপাত হয়। এই গ্ল্যান্ডটি চক্ষু কোঠরের ভেতর অবস্থিত। িকান্নার সময় দেহের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। হৃদকম্পন দ্রুত হয়।
শ্বাসযন্ত্রের পেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে, থপথপ করে তখন বুকের পেশি ওঠানামা করে। িআবেগপ্রবণ ছবি কিংবা নাটক দেখার সময় প্রায়ই বড় বড় শ্বাস নিতে হয়। নিঃশ্বাস ছাড়তে হয়। অশ্রু ঝরলেই সান্ত্বনা পাওয়া যায়। সত্তাটি গভীর করে এ সময় ঘটনা প্রবাহের সঙ্গে একাত্ম হয়ে যায়, ছুঁয়ে যায় আবেগের নানা অনুষঙ্গ।
কান্না আসতে থাকে ভেতর থেকে, পানি ঝরতে থাকে চোখ দিয়ে। সঙ্গে সঙ্গে প্রশান্তির মৃদু ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে মনে, শরীরজুড়ে। িঅনেক সময় অতি আনন্দে বা সুখে কান্না আসে চোখ উপচে।
অশ্রুর ধরন : অশ্রুধারা দুই ধরনের_
দেহগত অশ্রু (চযুংরপধষ ঃবধৎ) : দেহগত অশ্রু আসে এক ধরনের ইচ্ছানিরপেক্ষ ক্রিয়ার (ৎবভষবী ধপঃরড়হ) ফলে। এই অশ্রু চোখের কোমল অংশগুলোকে বাইরের অনুকণা থেকে রক্ষা করে, জীবাণুবিরোধী মিডিয়া হিসেবে কাজ করে।
আবেগীয় অশ্রু (বসড়ঃরড়হধষ ঃবধৎ) : এটি বায়োলজিক্যাল চাহিদা পূরণ করে।
মেয়েরা কেন বেশি কাঁদে : কারণ তাদের রক্তে প্রোলাকটিনের মাত্রা পুরুষের চেয়ে বেশি থাকে। এই হরমোনটি ব্রেস্ট-এর বৃদ্ধি উদ্দীপ্ত করে। এই উচ্চমাত্রার প্রোলাকটিনই কী অশ্রুপাত উসকে দেয়, নাকি মহিলাদের অশ্রুতে প্রোলাকটিনের মাত্রা বেশি এটি এখনো নিশ্চিত জানা যায়নি। কিন্তু প্রমাণিত সত্য যে, যতই মহিলারা মেনোপজের কাছাকাছি চলে আসেন, ততই প্রোলাকটিনের মাত্রা কমতে থাকে।
মনোপজের সময় হরমোনটির মাত্রা চলি্লশ শতাংশ কমে যায়। এ জন্য শেষ জীবনের মহিলাদের অশ্রুপাতের মাত্রা কমে যায়। তারা ডিপ্রেশন এবং প্যানিক অ্যাটাকে বেশি আক্রান্ত হন।
কান্নার অন্যান্য রসায়ন : অধিকাংশ মানুষই বিশেষ করে পুরুষরা জনসমক্ষে কান্না এলে বেশির ভাগ সময়েই দাঁত খিঁচে ধরেন অথবা চকিতে মাথাটি উপরের দিকে তুলে ধরেন। কারণ শিশু বয়স থেকে আমাদের মাঝে প্রোগ্রাম করা আছে 'কেঁদো না, কাঁদতে নেই' ইত্যাদি।
িফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্নার বিষয়টিকে সুস্বাস্থ্যকরই মনে করেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা। অনেকে কাঁদতে কাঁদতে যন্ত্রনাময় ঘটনার কথা প্রকাশ করে। এমতাবস্থায় ইমোশনাল রিলিজ ঘটে দ্রুত। সাইকোথেরাপির একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্ব হচ্ছে 'রিলিজ অব ইমোশন'। কেঁদেকেটে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঘটনার অনুপুক্সখ বর্ণনা করা গেলে কষ্ট থেকে উপশম পাওয়া সহজতর হয়।
যন্ত্রণাময় ঘটনার পর কেঁদেকেটে ঘুমাতে পারলেও স্বস্তি পাওয়ার পথ খুলে যায়। প্রাচীনকালে পেশাজীবী শোকগ্রস্তরা শোকসন্তপ্ত বিমূঢ় ও হতচেতন পরিবারের সদস্যদের বিহ্বলতা ভাঙাতেন কান্নার মাধ্যমে। িদুঃসংবাদ শোনার সঙ্গে সঙ্গে যিনি কান্নায় ভেঙে পড়তে পারেন, মূলত তিনি নিজস্ব তাৎক্ষণিক অনুভূতির গভীরে চলে যেতে পারেন। সুস্বাস্থ্যের জন্য এটিই এমনি অবস্থায় সবার প্রতিক্রিয়া হওয়া উচিত। িএকা কান্নাকাটি করে বালিশ ভেজানোর চেয়ে কারও সামনে কাঁদলে নিজেকে হালকা মনে হয়।
তবে ব্যাপারটি ঘটতে হবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে। এই সময় কষ্ট বা যন্ত্রণার অংশীদার পাওয়া যায়। ফলে কষ্ট লাঘব হয় সহজে। এমন কি উচ্চ রক্তচাপও কমে আসতে পারে সহমর্মিতার কারণে।
িমেজর ডিপ্রেশন থেকেও কান্নার ঢেউ ছুটে আসতে পারে।
এ অবস্থায় নিউরোট্রান্সমিটার সেরোটোনিনের মাত্রা কমে যায়। এটি একটি মানসিক রোগ। মানসিক চিকিৎসার মাধ্যমেই রোগীকে সব ধরনের উপসর্গ থেকে মুক্তি দেওয়া যায়। এছাড়াও সিজোফ্রেনিয়া রোগীদের মাঝেও অসঙ্গতিপূর্ণ কান্না দেখা যায়। রোগভোগ দীর্ঘায়িত না করে এ অবস্থার মানসিক চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করাই বুদ্ধিদীপ্ত কাজ।
তবে মনে রাখতে হবে, সুস্থ জীবনযাপনের জন্য কান্নার প্রয়োজন রয়েছে। যেসব নারী আপনজনের মৃত্যু বা কোনো দুঃসংবাদেও কাঁদতে পারে না; গবেষণায় দেখা গেছে, তাদের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।