আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ক্ষুধার্ত থেকো, বোকা থেকো

সাইফ শাহজাহান ২০০৫ সালের ১২ জুন স্টানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে দেয়া স্টিভ জবসের শুভেচ্ছা বক্তব্য বাংলাকরণ : রাসেল মাহ্মুদ বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে আসতে পেরে আজ আমি খুবই সম্মানিত বোধ করছি। আমি কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করিনি। সত্যি বলতে, আজই প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠান এত কাছ থেকে দেখছি। আজ আমি তোমাদের আমার জীবনের তিনটি গল্প বলব। বিরাট কিছু নয়।

তিনটা গল্প মাত্র। প্রথম গল্পটি ক্ষুদ্রকতক ঘটনার সন্নিবেশ রিড কলেজে ভর্তির ছয় মাসের মাথায় আমি পড়ালেখা ছেড়ে দিই। অবশ্য কলেজ পুরোপুরি ছেড়ে দেয়ার আগে প্রায় বছর দেড়েক বিভিন্ন কোর্স নিয়ে মেতে ছিলাম। তো, কেন আমি কলেজ ছাড়লাম? এ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল আমার জšে§রও আগে থেকে। আমার জš§দাত্রী মা ছিলেন একজন অবিবাহিতা কলেজ গ্রাজুয়েট তরুণী।

আমার জšে§র আগেই তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন আমাকে দত্তক দিয়ে দেবেন। তার খুব ইচ্ছা ছিল আমাকে কোন কলেজ গ্রাজুয়েটের কাছে দত্তক দেবেন। সুতরাং জšে§র পরপরই আমাকে দত্তক দেয়ার সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হল একজন আইনজীবী এবং তার স্ত্রীর কাছে। যখন আমি ভূমিষ্ঠ হলাম শেষবারের মতো তারা সিদ্ধান্ত নিলেন যে, তাদের একটি কন্যাসন্তান দরকার। সুতরাং অপেক্ষমাণ তালিকায় থাকা আমার সম্ভাব্য বাবা-মা গভীর রাতে একটি ফোনে প্রস্তাব পেলেন : ‘আমাদের একটি অনাকাক্সিক্ষত পুত্রসন্তান হয়েছে, আপনারা কি ওকে নিতে চান?’ তারা বললেন, ‘নিশ্চয়ই’।

আমার জš§দাত্রী মা পরে জানতে পারলেন আমার দত্তক মা কোন কলেজ গ্রাজুয়েট নন এবং বাবা হাইস্কুল পাস করেননি। তিনি দত্তকের চূড়ান্ত কাগজপত্র সই করতে রাজি হলেন না। কয়েক মাস পর তারা প্রতিজ্ঞা করলেন ডিগ্রি না থাকলেও আমাকে একদিন তারা কলেজে পড়াবেন, এতে মায়ের মন নরম হল এবং ১৭ বছর পর আমি সত্যি সত্যি কলেজে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমি বোকার মতো এমন এক কলেজ পছন্দ করলাম যেটার খরচ প্রায় স্টানফোর্ডের মতোই এবং আমার কর্মজীবী পিতা-মাতার সব জমানো টাকা আমার পড়ালেখার পেছনে চলে গেল। ছয় মাস পর মনে হল, এসবের কোন মূল্য নেই।

জীবনে কী করতে চাই সেটা বুঝতে পারছিলাম না আর এও বুঝতে পারছিলাম না কলেজ কীভাবে সেটা খুঁজতে সাহায্য করবে। অথচ বাবা-মার সারাজীবনের জমানো সব টাকা এখানে খরচ করছিলাম। তাই কলেজ ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং আস্থা রাখলাম যে, সব ঠিক হয়ে যাবে। ওই সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে এটা একটা ভয়াবহ সিদ্ধান্ত মনে হলেও পেছন ফিরে তাকালে মনে হয় ওটাই আমার জীবনের অন্যতম সেরা সিদ্ধান্ত ছিল। যে মুহূর্তে আমি কলেজ ছাড়লাম সেই মুহূূূর্ত থেকে অপছন্দের কোর্সগুলো করা বন্ধ করে দিতে পারলাম এবং পছন্দের কোর্সগুলো করার সুযোগ তৈরি হয়ে গেল।

ব্যাপারটি অবশ্য অতটা সুখকর ছিল না। ডরমেটরিতে আমার কোন রুম ছিল না, আমি বন্ধুদের রুমের ফ্লোরে ঘুমাতাম। ব্যবহƒত কোকের বোতল ফেরত দিয়ে বোতলপ্রতি পাঁচ সেন্ট করে পেতাম যা দিয়ে খাবার কিনতাম। প্রতি রোববার রাতে সাত মাইল হেঁটে শহরের অপর প্রান্তে হরে কৃষ্ণ মন্দিরে যেতাম শুধু সপ্তাহে একবেলা ভালো খাবার খাওয়ার জন্য। এটা আমার ভালো লাগত।

কৌতূহল এবং মনের তাগিদে জীবনে আমি যা কিছু করেছি পরে সেটা বিফলে যায়নি। একটা উদাহরণ দেই : তখনকার সময় রিড কলেজে সম্ভবত দেশের সেরা ক্যালিওগ্রাফি কোর্সগুলো করান হতো। ক্যাম্পাসজুড়ে প্রতিটি পোস্টার, প্রতিটি ড্রয়ারের লেবেল করা হতো হাতে করা ক্যালিওগ্রাফি দিয়ে। যেহেতু আমি কলেজের ছাত্র ছিলাম না, তাই নিয়মিত ক্লাসগুলো করতে পারতাম না। ভাবলাম কীভাবে ক্যালিওগ্রাফি ক্লাসগুলো করি।

সেরিফ এবং স্যান সেরিফ টাইপফেইস শিখলাম, বিভিন্ন অক্ষরের মধ্যে স্পেস কমান-বাড়ান শিখলাম যা সুন্দর টাইপোগ্রাফিকে করে আরও দৃষ্টিনন্দন। ব্যাপারটা ছিল খুবই সুন্দর, ঐতিহাসিক, সূক্ষ্ম শিল্পময়, সৌকর্যময়, যা বিজ্ঞানের আয়ত্ত বহির্ভূত এবং এতে আমি মুগ্ধ হয়ে গেলাম। বাস্তব জীবনে এসব কোন কাজে আসবে সেটা আশা করিনি। কিন্তু দশ বছর পর যখন আমরা প্রথম ম্যাকিনটোস কম্পিউটার ডিজাইন করি তখন ওগুলো আমাদের কাজে এসেছিল। আমি এর সবটা ম্যাক ডিজাইনে ঢেলে দিলাম।

ম্যাক দৃষ্টিনন্দন টাইপোগ্রাফি সমৃদ্ধ প্রথম কম্পিউটার। আমি যদি সেই কোর্সটা না করতাম তাহলে ম্যাক কম্পিউটারের বিচিত্র টাইপফেইস এবং আনুপাতিক দূরত্বের ফন্ট থাকত না। আর যেহেতু উইন্ডোজ ম্যাককে অনুকরণ করেছে, বলা যায় কোন পারসোনাল কম্পিউটারেই এ ধরনের ফন্ট থাকত না। আমি যদি কলেজ না ছাড়তাম তবে ক্যালিওগ্রাফিতেও ভর্তি হতাম না, কম্পিউটারেও হয়তো এত সুন্দর ফন্ট থাকত না। অবশ্য কলেজে থাকা অবস্থায় এসব বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে এক সুতায় বাঁধা মুশকিল ছিল, কিন্তু দশ বছর পেছনে তাকালে সবকিছু একেবারে পরিষ্কার হয়ে যায়।

তোমরা কখনই সামনের দিকে তাকিয়ে বিচ্ছিন্ন ঘটনাগুলোকে এক করতে পারবে না। শুধু পেছনের ঘটনাগুলো দিয়েই সম্ভব। অতএব তোমাদের আস্থা রাখতে হবে ছোট ঘটনাগুলোই ভবিষ্যতে শুভ পরিণতির দিকে যাবে। কোন একটার ওপর তোমাদের আস্থা রাখতেই হবেÑ তোমার সাহস, ভাগ্য, জীবন, কর্ম; কিছু একটার ওপর। এটা আমাকে কখনই ব্যর্থ হতে দেয়নি এবং এটা আমার জীবনকে করেছে ব্যতিক্রম।

আমার দ্বিতীয় গল্পটি ভালোবাসা আর হারানোর আমি সৌভাগ্যবান ছিলামÑ যা করতে ভালোবাসি সে কাজটি আমি খুব জলদিই পেয়ে যাই। ওজ আর আমি যখন আমার বাবা-মায়ের গ্যারেজে অ্যাপল শুরু করেছিলাম তখন আমার বয়স ২০ বছর। আমরা কঠোর পরিশ্রম করেছিলাম এবং ১০ বছরে গ্যারেজ আর দুই জনের কোম্পানি থেকে অ্যাপল চার হাজার কর্মচারী ও ২ বিলিয়ন ডলারের কোম্পানিতে পরিণত হয়। আমার বয়স যখন ৩০ তার এক বছর আগে আমরা আমাদের সবচেয়ে চমৎকার সৃষ্টিÑ ম্যাকিনটোস কম্পিউটার বাজারে ছাড়ি। ঠিক তখনি আমার চাকরি চলে যায়।

যে কোম্পানি আমি প্রতিষ্ঠা করলাম সেখান থেকে কীভাবে আমার চাকরি যায়? অ্যাপল যখন সমৃদ্ধ হতে লাগল তখন কোম্পানিটি চালাতে আমাকে সাহায্য করতে পারবে এমন একজন মেধাবী ব্যক্তিকে নিয়োগ দিলাম। প্রথম কয়েক বছর সবকিছু ভালোভাবেই চলছিল। কিন্তু পরে কোম্পানির ভবিষ্যৎ নিয়ে বিভাজন শুরু হয় এবং আমরা পেরে উঠছিলাম না। তখন পরিচালনা পর্ষদ তার পক্ষ নিল। অতএব ৩০ বছর বয়সে আমাকে কোম্পানি থেকে বের করে দেয়া হল এবং খুব ভালোভাবেই বের করে দেয়া হল।

যা আমার জীবনের সব স্বপ্নকে ধ্বংস করে দিল। পরের কয়েকটা মাস কী করব বুঝতে পারছিলাম না। মনে হচ্ছিল আমার ওপর যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সেটা পালন করতে না পেরে আমি আমার আগের প্রজšে§র উদ্যোক্তাদের মনোবল ভেঙে দিয়েছি। ডেভিড প্যাকার্ড এবং বব নয়েসের কাছে গিয়ে আন্তরিকভাবে ক্ষমা চাইলাম। এই পরাজয়ের কথা জানাজানি হয়ে গেলে ভাবলাম জায়গাটা থেকে পালিয়ে যাই।

কিন্তু ধীরে ধীরে আমি একটা ব্যাপার অনুভব করলামÑ যা করতাম সে কাজগুলোকে আমি এখনও ভালোবাসি! অ্যাপলের ঘটনাগুলো সেই ভালোবাসাকে এতটুকু বদলাতে পারেনি। আমাকে বাতিল করা হয়েছে, কিন্তু আমি এখনও কাজ করতে ভালোবাসি। তাই আবারও শুরু করার সিদ্ধান্ত নিলাম। প্রথমে ব্যাপারটা না বুঝলেও পরে বুঝলাম অ্যাপল থেকে চাকরিচ্যুতি আমার জন্য ভালো হয়েছে। সফল হওয়ার ভার হারিয়ে নতুন করে শুরুর শিথিলতা অনুভব করলাম যেখানে সবই অনিশ্চিত।

এই ভারমুক্তি আমাকে জীবনের সবচেয়ে সৃষ্টিশীল সময়ে প্রবেশ করাল। পরের পাঁচ বছরে আমি নেক্সট এবং পিক্সার নামে দুটো কোম্পানি শুরু করি আর এক অসাধারণ নারীর প্রেমে পড়ি যিনি আমার স্ত্রী। পিক্সার থেকে প্রকাশিত হয় বিশ্বের সর্বপ্রথম কম্পিউটার অ্যানিমেটেড ফিচার ফিল্ম ‘টয় স্টোরি’ এবং এটি বিশ্বের সবচেয়ে সফল অ্যানিমেশন স্টুডিও। উল্লেখযোগ্য এক ঘটনাচক্রে অ্যাপল নেক্সটকে কিনে নেয় এবং আমি অ্যাপলে ফিরে আসি। এবং ‘নেক্সটে’ আমরা যে প্রযুক্তি উন্নয়ন করতাম সেটা এখনকার অ্যাপলের পুনর্জাগরণের মূল জিনিস।

পাশাপাশি লরেন আর আমি গড়ে তুলি একটি সুখী পরিবার। আমি প্রায় নিশ্চিত, এগুলোর কিছুই ঘটত না যদি না আমি অ্যাপল থেকে চাকরিচ্যুত হতাম। এটা ছিল তেতো ওষুধের মতো, কিন্তু আমি জানি রোগীর এটা দরকার। জীবন কখনও কখনও তোমাদের মাথায় ইট দিয়ে বাড়ি দেবে। বিশ্বাস হারিও না।

আমি বুঝেছি আমাকে সামনে এগিয়ে নিয়েছে যে ব্যাপারটি সেটি হচ্ছেÑ আমি যে কাজ করতাম সেটিকে ভালোবাসতাম। করতে ভালোবাস যে কাজ তেমনটিই তোমাদের খুঁজে নিতে হবে। এটা তোমাদের ভালোবাসার মানুষটিকে খুঁজে পাওয়ার মতোই। তোমাদের সারাজীবনের একটি বিরাট অংশজুড়ে থাকবে তোমাদের কাজ, তাই জীবনে সত্যিকারের তুষ্টি লাভের একমাত্র উপায় হচ্ছে বিশ্বাস করতে হবে তোমার কাজটিই শ্রেষ্ঠ। আর কোন কাজ তখনি শ্রেষ্ঠ মনে হবে যখন তোমরা তোমাদের কাজকে ভালোবাসবে।

যদি এখনও মনের মতো কাজ খুঁজে না পাও তাহলে খুঁজতে থাক। অন্য কাজে আটকে যেও না। অন্য সব ব্যাপারের মতো তোমার মন তোমাকে জানিয়ে দেবে যখন তুমি তোমার মনের মতো কাজটি খুঁজে পাবে। যে কোন সম্পর্কের মতোই, যত সময় যেতে থাকবে কাজটি ততই ভালো লাগবে। সুতরাং খুঁজতে থাক যতক্ষণ খুঁজে পাও।

অন্য কাজে আটকে যেও না। শেষ গল্পটি মৃত্যুর আমার বয়স যখন ১৭, একটা উদ্ধৃতি পড়েছিলাম : ‘তুমি যদি প্রতিদিনই ভাবো যে আজই তোমার জীবনের শেষ দিন, তবে একদিন তুমি শুদ্ধ হবে। ’ লাইনটা আমার মনে দাগ কেটেছিল এবং সেই থেকে গত ৩৩ বছর আমি প্রত্যেক সকালে আয়নায় দাঁড়িয়ে নিজেকে জিজ্ঞেস করিÑ ‘আজ যদি আমার জীবনের শেষ দিন হতো তাহলে আমি আজ যা যা করতে যাচ্ছি তাই করতাম?’ পরপর বেশ কিছুদিন এই প্রশ্নের উত্তর যদি হতো ‘না’, আমি জানতাম আমাকে কিছু একটা পরিবর্তন করতে হবে। জীবনে বড় বড় সিদ্ধান্ত নিতে আমাকে সাহায্য করেছে যে চিন্তাটি সেটি হচ্ছে ‘একদিন আমি মরে যাব’। কারণ প্রায় সবকিছুÑ সব বাহ্যিক প্রত্যাশা, গর্ব, ব্যর্থতার ভয় বা লজ্জা মৃত্যুর মুখে এই সবকিছু হালকা হয়ে যায়, শুধু গুরুত্বপূর্ণ সত্যটুকুই টিকে থাকে।

তোমার হারানোর কিছু আছে এই চিন্তা দূর করার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে এটা মনে রাখ যে, একদিন তুমি মরে যাবে। তুমি নগ্ন হয়েই আছ। নিজের আÍাকে মেনে না নেয়ার কোন কারণ নেই। বছরখানেক আগে আমার ক্যান্সার ধরা পড়ে। সকাল সাড়ে ৭টায় আমার একটা স্ক্যান হয় এবং এতে পরিষ্কারভাবে আমার অগ্ন্যাশয়ে একটা টিউমার দেখা যায়।

আমি তখনও জানতাম না অগ্ন্যাশয় কী। ডাক্তাররা প্রায় নিশ্চিত করে বললেন এই ক্যান্সার দুরারোগ্য এবং আমি আর তিন থেকে ছয় মাস বাঁচব। ডাক্তার আমাকে বাড়ি ফিরে সবকিছু গোছাতে বললেন। সোজা কথা, মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি নিতে বলা। এর মানে আগামী দশ বছরে সন্তানদের যা যা বলবে বলে ঠিক করেছ তা কয়েক মাসে বলে শেষ কর।

এর মানে সবকিছু ঠিকঠাক কর যাতে পরিবারের সবার জন্য ব্যাপারটি যথাসম্ভব সহজ হয়। মানে সবাইকে গুডবাই বল। সেদিন সারাটা দিন ওভাবেই কাটল। সন্ধ্যায় আমার একটা বায়োপসি হল। তারা আমার গলার ভেতর দিয়ে একটা এন্ড্রোস্কোপ নামিয়ে দিল, এরপর আমার পেটের ভেতর দিয়ে গিয়ে আমার অন্ত্র থেকে সুই দিয়ে কিছু কোষ বের করে আনল।

আমি অজ্ঞান ছিলাম কিন্তু আমার স্ত্রী পরে আমাকে বলেছিল যে, ডাক্তাররা যখন এন্ড্রোস্কোপ থেকে পাওয়া কোষগুলো মাইক্রোস্কোপের নিচে রেখে পরীক্ষা করা শুরু করল তখন তারা কেঁদে ফেলেছিল। কারণ আমার যে ধরনের অগ্ন্যাশয় ক্যান্সার যে পরিস্থিতিতে ছিল সেটি আসলে সার্জারির মাধ্যমে চিকিৎসা সম্ভব। আমার সেই সার্জারিটি হয়েছিল এবং আমি এখন সুস্থ। মৃত্যুকে আমি কাছ থেকে দেখেছি এবং আশা করি কয়েক দশকের জন্য এটাই শেষ দেখা। মৃত্যুর খুব কাছাকাছি যাওয়ার বাস্তব অভিজ্ঞতার কারণে মৃত্যু সম্পর্কে বলতে পারি, যে এটা একটা খাঁটি বুদ্ধিদীপ্ত ধারণা।

মরতে কেউই চায় না। এমনকি যারা স্বর্গে যেতে চায়, তারাও সেখানে যাওয়ার জন্য তাড়াতাড়ি মরে যেতে চায় না। তারপরও মৃত্যুই আমাদের সবার গন্তব্য। কেউই এর থেকে পালাতে পারেনি এবং সেটাই হওয়া উচিত। কারণ মৃত্যুই সম্ভবত জীবনের একমাত্র মহৎ আবিষ্কার।

এটি জীবন পরিবর্তনের প্রতিনিধি। নতুনকে জায়গা করে দিতে মৃত্যু পুরনোকে ধুয়েমুছে দেয়। এই মুহূর্তে তোমরা নতুন, কিন্তু সেইদিন খুব বেশি দূরে নয় যেদিন তোমরাও পুরনো হয়ে মুছে যাবে। নাটকীয়তার জন্য দুঃখিত, কিন্তু এটাই বাস্তব। তোমাদের সময় সীমিত, সুতরাং অন্য কারও জীবনযাপন করে সময় নষ্ট কর না।

কোন মতবাদের ফাঁদে পড় না যা অন্য কারও চিন্তাভাবনার ফল। অন্যের চিন্তাভাবনার স্রোতে যেন তোমার ভেতরের কণ্ঠ হারিয়ে না যায়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে নিজের মন আর আÍজ্ঞানের পক্ষে থাকার সাহস রাখবে। ওরা ঠিকই জানে তুমি আসলে কি হতে চাও। বাকিসব গৌণ।

আমি যখন তরুণ ছিলাম তখন ঞযব ডযড়ষব ঊধৎঃয ঈধঃধষড়ম নামে একটা চমৎকার পত্রিকা বের হতো। যেটি ছিল আমার প্রজšে§র একটা বাইবেল। স্টুয়ার্ড ব্র্যান্ড নামে একজন এটা বের করতেন। তিনি মেনলো পার্কের কাছেই থাকতেন। কাব্যময়তার ছোঁয়ায় তিনি এটিকে জীবন্ত করে তুলেছিলেন।

পারসোনাল কম্পিউটার ও ডেস্কটপ কমপিউটার বের হওয়ার আগে, ১৯৬০-এর শেষ দিকের কথা। পত্রিকাটি তৈরি হতো টাইপরাইটার, কেঁচি এবং পোলারয়েড ক্যামেরা দিয়ে। পত্রিকাটিকে বলা যায় ৩৫ বছর আগের গুগলের পেপারব্যাক। এটি আইডিয়ালিস্টিক ও পরিচ্ছন্ন বিষয় আর মহৎ অভিমতে সমৃদ্ধ ছিল। স্টুয়ার্ট এবং তার দল ঞযব ডযড়ষব ঊধৎঃয ঈধঃধষড়ম পত্রিকাটির অনেকগুলো সংখ্যা বের করেছিলেন।

পত্রিকাটি স্বাভাবিক গতিতে বের হতে হতে এক সময় তাদের শেষ সংখ্যাটি বের করে। আমার বয়স তখন তোমাদের মতো, ১৯৭০-এর মাঝামাঝি সময়ে। শেষ সংখ্যার পেছনের মলাটে ভোরের গ্রামের পথের একটা ছবি ছিল। যদি অ্যাডভেঞ্চারাস হও তবে তোমরা এ ছবিতে একটা সংকেত পাবে। ছবিটির নিচে লেখা ছিল, ‘ক্ষুধার্ত থেকো, বোকা থেকো’।

এটি ছিল তাদের বিদায় বার্তা। ক্ষুধার্ত থেকো, বোকা থেকো এবং আমি নিজেও সবসময় এটা মেনে চলার চেষ্টা করেছি। গ্রাজুয়েট হিসেবে তোমরা আজ নতুন, তোমাদের জন্যও আমার একই শুভ কামনা। ক্ষুধার্ত থেকো, বোকা থোকা। ঢাকা, ০৮ অক্টোবর ২০১১ \ লেখক কবি, গল্পকার, কলামিস্ট, তথ্যপ্রযুক্তি রিপোর্টার, ছোটকাগজ সম্পাদক \ ই-মেইল : সধযসঁফ.বঃপ@মসধরষ.পড়স, ওয়েবপেজ: িি.িৎধংযবষসধযসঁফবৎঢ়ধঃধ.নষড়মংঢ়ড়ঃ.পড়স ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.