বিশ্বজুড়ে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। প্রতিদিন যোগ হচ্ছে নতুন ক্ষুধার্ত মুখ। তাই বিশ্বজুড়ে খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি এখন সর্বাধিক গুরুত্ব পাচ্ছে। জাতিসংঘের খাদ্য সংস্থার এক রিপোর্ট অনুসারে বিশ্বে এখন ১০০ কোটির বেশি ক্ষুধার্ত মুখ বাস করছে এবং অপুষ্টির কারণে বিশ্বে প্রতি ছয় সেকেন্ডে একটি করে শিশুর মৃত্যু হচ্ছে। তাই ‘সবার জন্য খাদ্য’ নিশ্চিত করতে কৃষি ব্যয় ও উৎপাদন বাড়ানোর উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ। এদেশের অর্থনীতি মূলত কৃষিখাতের ওপর নির্ভরশীল। দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬২ ভাগ লোক কৃষিখাতের সাথে সংশ্লিষ্ট। ফলে এ খাতের অগ্রগতির ওপর দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি নির্ভরশীল। কৃষি উৎপাদনের সাথে খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত।
দেশের বিপুল সংখ্যক লোকের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে কৃষি খাতের উন্নয়নের বিকল্প নেই। ফলে জনগণের মৌলিক অধিকার হিসেবে খাদ্য প্রাপ্তির নিশ্চয়তা বিধানে কৃষিখাতকে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে।
জলবায়ূ পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশে অনাবৃষ্টি, খরা, টর্নেডো, অতিবৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে একদিকে যেমন কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হয়ে হ্রাস পাচ্ছে, অপর দিকে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার কারণে আবাদী জমির পরিমাণ কমছে এবং খাদ্য চাহিদাও বেড়ে যাচ্ছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে দেশের প্রায় ১৫ কোটি মানুষের খাদ্য চাহিদা পূরণ করা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে।
এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হলে পরিবর্তিত প্রাকৃতিক পরিবেশ সহনশীল জাত উদ্ভাবন করে খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে। কৃষি গবেষণা খাতকে শক্তিশালী করে নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং তা কৃষকদের মাঝে জনপ্রিয় করে তুলতে হবে। একই সাথে দুর্যোগকালে কৃষকদের আগাম সতর্কবার্তা প্রদান এবং করনীয় সম্পর্কেও সচেতন করে তুলতে হবে। দেশের বিদ্যমান কৃষি জমিতে পরিকল্পিত চাষাবাদের মাধ্যমে নানা জাতীয় ফসল উৎপাদন করে অর্থকরী ফসল, ফলমূল ও শাকসবজি রপ্তানি করাও সম্ভব হবে। এ লক্ষ্য অর্জন করতে হরে কৃষি উৎপাদন ও গবেষণার সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে আরো বেশি আন্তরিক হতে হবে।
প্রাকৃতিক দূযোর্গ আমাদের দেশে প্রায় প্রতিবছরই ঘটছে এবং দেশের কোনো না কোনো অঞ্চলের ফসল বিনষ্ট হচ্ছে। এবার সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা, কিশোরগঞ্জসহ এতদ অঞ্চলে বোরো ফসল প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। এ অঞ্চলগুলো থেকে আড়াই থেকে তিন লক্ষ টন বোরো ধান পাওয়ার প্রত্যাশা ছিল কিন্তু তা এখন পানির নিচে। কৃষকের ঘরে ফসল হারানোর বেদনা ও ভবিষ্যৎ খাদ্য চিন্তায় হাহাকার চলছে। এটা খাদ্য নিরাপত্তার জন্য এক বিরাট হুমকি।
খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ পৃথিবীর কোনো দেশই দরিদ্র নেই। দরিদ্র থাকে না। তাই আগামী দু’বছরের মধ্যে সরকার কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা গড়ে তুলতে চায়। কিন্তু প্রাকৃতিক দূর্যোগ সরকারের প্রচেষ্টাকে মারাত্বকভাবে বারবার ব্যাহত করছে। প্রাকৃতিক দূর্যোগ মোকাবিলা করে সরকারের একার পক্ষে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা সম্ভব নয়।
বাঞ্জিত কৃষি বিকাশের জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিশেষ করে কৃষিবিদ ও কৃষি কর্মীদের কৃষি জ্ঞান ও দক্ষতা বাড়াতে হবে, কৃষি উন্নয়নকে গ্রহণ করতে হবে জীবনের ব্রত হিসেবে। কৃষি তথা জাতির বৃহত্তর স্বার্থে কৃষিবিদ, বিজ্ঞানী ও সংশ্লিষ্ট অন্য সবাই অত্যাধুনিক কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবনে, দক্ষতা বৃদ্ধিতে এবং অধিক ফসল ফলনে আত্মনিয়োগ করতে হবে। প্রাকৃতিক দূর্যোগ মোকাবিলা করে কৃষকরা কিভাবে তাদের ফসল ফলাবে ও তা রক্ষা করবে সেই প্রযুক্তি উদ্ভাবনের এখনই সময় হয়েছে। আর কোনো অবস্থায় কৃষকের কষ্টের ফসল যাতে প্রাকৃতিক দূর্যোগে বিনাশ না হয় তার ব্যবস্থা নিতে হবে। সবাইকে মনে রাখতে হবে কৃষক ও তার ফসলকে রক্ষা করতে না পারলে খাদ্য নিরাপত্তা গড়ে তোলা সম্ভব হবে না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।