আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইচ্ছাপূরণ

জীবন হচ্ছে সেই জলের মত, যে জলে আগুন জ্বলে! সন্ধ্যা ৭:৫০। শাহেদ বারের সামনে এসে উপস্থিত হল। না, বারে আমোদ-ফুর্তি করতে আসেনি ও। এটা ওর কর্মস্থল। দেশ থেকে হাজার মাইল দুরে এই আমেরিকায় ও নিজের এবং দেশে থাকা তার পরিবারের পেট চালায় এই বারে কাজ করে।

কাজটা ভাল লাগে না। কিন্তু কি আর করা, বেতনটা বেশ ভাল পায় যে! গ্রামের জমি বিক্রয় করে, ধার-দেনা করে অনেক কস্টে ৬ মাস এই দেশে এসেছে ও। এখনো ধারের সব টাকা শোধ করতে পারেনি। কবে যে পারবে.........!!! অনেক ছোটবেলায় বাবাকে হারায় শাহেদ। তখন ২ কি ৩ মাস বয়স ওর।

সম্পত্তির লোভে ওর ছোট চাচাই ওর বাবাকে খুন করে! এরপর থেকে অনেক কস্ট করে ওর মা ওদের ৩ ভাইকে মানুষ করেছে। ওর বড় দুই ভাই এখন ঢাকায় থাকে। একজন বেকার, রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়। কোন কাজেই নাকি তার মন বসে না! তার পেটও চালাতে হয় শাহেদকে। অন্য ভাইটি ছোট একটি চাকরি করে।

নিজের বউ-সন্তান নিয়ে সে নিজের মত করে থাকে। মায়ের খোজখবর নেয় না সে। তাদের মা বরিশালের একটি গ্রামে একা একা থাকেন। তার জন্য সবসময়ই খুব দুশ্চিন্তায় থাকে শাহেদ। দেশ থেকে এত দূরে পড়ে আছে সে শুধু তার মায়ের একটু সুখের জন্য, তার মা যেন একটু আরাম-আয়েশে থাকে।

একটু একটু করে টাকা জমাচ্ছে ও। মাকে ওর নিজের কাছে নিয়ে আসবে। দেশ ছেড়ে আসার সময়ই এই কথা ঠিক করে রেখেছিল ও। দেনাটা শোধ করেই মাকে নিয়ে আসবে—এসব সাতপাচ ভাবতে ভাবতে ও বারে প্রবেশ করে। শাহেদ বারের এসিস্টেন্ট ম্যানেজার।

ওর কিন্তু রাতের শিফটে আসার কথা না। শাহেদ যেহেতু নতুন, তাই সে রাতে ডিউটি করার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি এখনো। তবে আজ রাতের শিফটে যে এসিস্টেন্ট ম্যানেজার, সেই মাইকেল অসুস্থ, তাই ম্যানেজার ফোন করে তাকে আর্জেন্ট আসতে বলে। রাতের শিফটে কোনদিন বারে আসেনি ও। তবে শুনেছে রাতে অনেক জমজমাট থাকে বার।

অনেক মানুষকে সামলাতে হয়। বেতনও তাই বেশি। ইসসস, কবে যে রাতের শিফটে পার্মানেন্ট হব......!!! রাত ১২:৩০। দম ফেলার ফুসরত পাচ্ছে না শাহেদ। ক্যাশে বসেছে সে।

এত্ত মানুষ! দিনে এত মানুষ থাকে না। তাই ওর অভ্যাস নেই এত মানুষ সামলানোর। তবে উপভোগ করছে ও। ম্যানেজারকে দেখানোর চেষ্টা করছে যে ওকে রাতের শিফটে ট্রান্সফার করলে পারবে বার সামলাতে!! তখন দুটো পয়সা বেশি পাবে, মাকে তাড়াতাড়ি এখানে আনতে পারবে......!!! রাত ৩:৩০ টা। বার প্রায় ফাকা এখন।

আরো আধা ঘন্টা বার খোলা থাকবে। ক্যাশবক্সের দিকে তাকিয়ে আছে শাহেদ। এত্ত টাকা! ও সারা বছরেও যে টাকা ইনকাম করতে পারবে না তার চেয়েও বেশি টাকা পড়ে আছে ক্যাশে! যেমন দেশ তেমন তার মানুষ! বারে এসে কেউ এত টাকা উড়ায়?! হাসি পায় শাহেদের। রাত ৪ টা। বার পুরা ফাকা।

ওয়েটাররা তাদের ইউনিফর্ম চেঞ্জ করতে চলে গেছে পিছনের রুমে। বাউন্সাররাও কেউ নেই এখন। পুরো বারে শাহেদ এখন একা। টাকার হিসাব মেলাতে ব্যস্ত সে। খুব ঘুম পেয়েছে।

টাকাটা গুনে রেখেই চলে যাবে সে। হঠাৎ বারে ২ জন নিগ্রো প্রবেশ করে। ওদের দেখেই শাহেদ টাকাগুলো নামিয়ে রাখে। নিগ্রোদের ব্যপারে শুরুতেই ওদের সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। ওরা ঝামেলা পাকাতে ওস্তাদ! --হেই গাইজ, বার বন্ধ হয়ে গেছে।

শাহেদ বলে উঠে ওদের উদ্দেশ্যে। উদ্বেগ টুকু চাপা দিতে পারে না ও। --আমরা কিছু পান করতে আসিনি। এসেছি কিছু নিতে। একথা বলেই ২ জনই তাদের জ্যাকেটের ভিতর থেকে ধারালো ছুরি বের করে! শাহেদের মুখ হা হয়ে যায়! কি করবে ও! সাহায্যের আশায় এদিক-ওদিক তাকায়, কিন্তু কেউই তো নেই! --ক্যাশে যা আছে সব দিয়ে দাও, ম্যান।

তোমাকে কিচ্ছু বলব না। ভেবে পায় না শাহেদ কি করবে ও। সব টাকা দিয়ে দিলে কি চাকরি থাকবে ওর! এই দেশে আরেকটা চাকরি যোগাড় করা প্রায় অসম্ভব এখন! খাবে কি, মাকে কিভাবে আনবে ও.........!!! --হেই ম্যান, আমাদের কথা কানে যাচ্ছে না তোমার?? যা আছে সব দিয়ে দাও, নয়ত তোমাকে মেরে সব নিয়ে নেব আমরা!! টাকা দিয়ে দেয়ার সিন্ধান্ত নেয় ও। বারের অন্য সব লোকজন কই? টাকা বাচানোর দায়িত্ব কি ওর একার নাকি! চাকরি গেলে যাক। জানটা তো বাচাই!! ক্যাশে থাকা কয়েক হাজার ডলার তুলে দেয় ও ওদের হাতে।

শালারা, আমি সারা বছরেও যে টাকা ইনকাম করতে পারবে না তার চেয়েও বেশি টাকা তোরা ৫ মিনিটে কামিয়ে নিলি!!! রাগে গা জ্বলে ওঠে ওর! কিন্তু কি আর করা!!! টাকা নিয়ে দরজার কাছে চলে গিয়ে আবার দাড়িয়ে পরে ওরা। শাহেদ তখনও কাউন্টারেই বসে আছে। --হেই, ও তো আমাদের চেহারা দেখে ফেলেছে। পুলিশকে আবার বলে দেবে না তো?? দুইজনই ঘুরে তাকায় ওর দিকে। ওদের চাহনী দেখে শাহেদের শিরদাড়া বেয়ে ঠান্ডা বাতাস বয়ে যায়!!! --না না, কাউকে কিচ্ছু বলব না আমি!! প্লিজ আমাকে ছেড়ে দাও! তোমরা যা চেয়েছো সবই দিয়েছি! প্লিজ লেট মি গো!!!! ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংরেজীতে কথাগুলো বলে শাহেদ।

কিন্তু ওদেরকে সন্তুস্ট করা গেল না!! একজন এগিয়ে এসে চেপে ধরে ওকে। ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টা করে ও! মাটিতে পড়ে আছে শাহেদ, রক্তে মাখামাখি। প্রচুর ব্লিডিং হচ্ছে। গলা চিরে একটা চিৎকার দিয়ে মাকে ডাকতে ইচ্ছা করছে ওর। কিন্তু শুধু গোঙ্গাতে ছাড়া আর কিছুই আসছে না গলা দিয়ে!!! মা.........মাগো.........ওরা আমাকে বাচতে দিল না মা!!!!! গোংগানি থেমে যায়............ পরিশিস্ট : শাহেদের ইচ্ছা পূরণ হয় শেষ পর্যন্ত।

ওর মা আমেরিকা আসার সুযোগ পায়। শাহেদের লাশ আর সাথে আমেরিকা সরকারের দেয়া ক্ষতিপূরনের টাকা নিতে!!! জীবন গেলেও ওর ইচ্ছা তো পূরণ হয়েছে!!!!! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।