আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইচ্ছাপূরণ

তুমি রবে নীরবে...

অনেক দিন পর ব্লগ লিখতে বসলাম ( মানে আর সবাইকে বিরক্ত করতে বসলাম আর কি..), এর মধ্যে আমার জীবনে বেশ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছে, সেগুলোই আজ লিখতে বসলাম। কিছুদিন হলো আমার মনে হচ্ছে, মানুষের খুব বেশি ইচ্ছা অপূর্ণ থাকে না। মোটামুটি বেশির ভাগ আশাই পূরণ হয়। আমার খুব ইচ্ছা ছিলো একবার হাসপাতালে কিছুদিন থাকার। কারন, দেখতাম যদি কেউ হাসপাতালে থাকে, তখন সবাই দেখতে যায়, শুধু তাই না, অনেক খাবার ও নিয়ে যায়।

তো কিছুদিন আগে যখন জন্ডিস হওয়ার জন্য ডাক্তার আমাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে বলল, তখন বাসার বাকি সবাই চিন্তিত হলেও আমার খুব একটা খারাপ লাগছিল না, বরং একটু excited হয়ে ছিলাম। তার উপরে কিছুদিন আগে একটি হিন্দি ছবি দেখেছিলাম “কাল হো না হো” সেটা দেখে তো শাহরুখ খান হবার ইচ্ছে হল। হাসপাতালে এসে আমার খুশি দেখে কে। দৌড়ে গিয়ে বেডে শুয়ে পড়লাম, মা বাবা তো ভাবলো আমি না জানি কত অসুস্থ, তাড়াতাড়ি ডাক্তার নিয়ে এলো। যা হোক এ পর্যন্ত ভালই ছিলাম।

কিন্তু এর পরই শুরু হলো আসল সমস্যা, সারাজীবন আমি ইনজেকশন জিনিসটাকে ভয় পেয়ে এসেছি। হাসপাতালে আসার ১ ঘন্টার মধ্যেই ১টা ইনজেকশন, ১ বার ব্লাড সাম্পল, আর তারপরে ১টা স্যালাইন দিয়ে গেল ৮ ঘটার জন্য, আর বলল প্রতিদিনই ৮ঘন্টা করে স্যালাইন নিতে হবে। তখন আমার ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি” অবস্থা। এসবের জন্যই তো ডাক্তারি পড়ি নাই, সেগুলোই এখন সহ্য করত হবে। এর মধ্যে ডাক্তার এলো, আর রিপোর্ট দেখে যা যা বলল তাতে আমার শাহরুখ খান হবার ইচ্ছে পুরোই চলে গেলো, কারন লিভার এ ইনফেকশন হয়েছে, এবং খুব সাবধানে থাকতে হবে।

তখন তো মনে হচ্ছে সত্যিই কি মরে যেতে হবে নাকি? তাহলে তো হলো না, এখন ও প্রেম-ট্রেম কিছুই করলাম না। এত তাড়াতাড়ি মরলে তো হবে না। শুরু হল আমার কাঠ হয়ে শুয়ে থাকা। এর মধ্যে হাতে স্যালাইন এর সুঁই একেবারে লাগিয়ে দিয়েছে ডান হাতে, সেজন্য দান হাত নাড়ানো যায় না। সে এক অবস্থা।

এদিকে যা যা ভেবেছিলাম তার কিছুই হচ্ছে না। কেউ ই দেখতেও আসে না। তারপর আর কি করা, শেষে লাজ-লজ্জা ঝেড়ে নিজেই সবাইকে ফোন করে বললাম, ”আমি হাসপাতালে, আমাকে দেখতে আসো। ” কারন, হাসপাতালে ভর্তি হলাম, অথচ কেউ দেখতে আসবে না, এটা তো চরম অপমাজনক ব্যাপার। যা হোক ফোনে অনেক অনুনয় বিনয় করার পর কয়েকজনের দয়া হল।

দেখতেও এল। কিন্তু, আমি যেমন ভেবেছিলাম, তেমন না। কেউই কিছুই আনে নি। দীর্ঘশ্বাস ফেলে শুয়েই থাকলাম। ৬-৭ দিন যাবার পর আমার অবস্থা খারাপ, জন্ডিস ভালো হচ্ছে না।

ডাক্তার ও অনেক চিন্তিত। নায়ক হওয়ার চিন্তা তো মাথা থেকে কবেই চলে গেছে। বেশ কিছু মজাও হয়েছে, সেগুলা পরে লিখব। তবে যেদিন হাত থেকে সুঁই খুলে নিলো, আর হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দিলো, মনে হলো যেনো, জেল থেকে মুক্তি পেলাম। আর আমার ইচ্ছেও এত সুন্দর ভাবে পূরণ হলো যে আর জীবনেও হাসপাতালে যাওয়ার ইচ্ছে নাই...।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।