আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইচ্ছাপূরণ (ছোটগল্প)

এত লেখালেখির কি আছে তাইতো বুঝলাম না!!

১. অনেক দিন থেকেই ভাবছি আত্মহত্যা করব। কোন কারণ নেই। জাস্ট হবি। মানুষেরতো কত রকম পাগলামি থাকে। এটাও সেরকম কিছু।

কিন্তু আত্মহত্যা করলেইতো আর হবেনা। তার আগে অনেক কাজ করতে হবে। ভালমত গোসল করতে হবে,চুল আঁচড়াতে হবে,ভালমত সাজতে হবে,মুখে ক্রিম দিতে হবে। মেয়ে হয়ে জন্মানোর অনেক মজা। ভাগ্যিস আমি মেয়ে,নয়তো এত সাজগোজ করতেই পারতাম না।

আচ্ছা সব মেয়ের হবিই কি সাজগোজ করা?আমি জানিনা। খুব ছোটবেলায় আমদের স্কুলে "মাই হবি"-তে আমি লিখেছিলাম,আমার হবি হচ্ছে সাজগোজ করা। বাকি সবাই লিখেছিল-গার্ডেনিং,বই পড়া,স্ট্যাম্প কালেক্ট করা,এইসব হাবজাব। ম্যাডাম আমার লেখা পড়ে খুব অবাক চোখে আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলেন। ভাবটা এমন যে এই মেয়ের কি মাথায় ছিট্‌ আছে নাকি!! হয়তোবা আছে....নইলে কি আমি আর আত্মহত্যা করতে যাচ্ছি?? ২. আমি এখন নীল একটা শাড়ি পরে আছি।

এটা পরে আত্মহত্যা করা যাবেনা। কারণ নীলের মধ্যে রক্তের লাল রঙের ইফেক্টটা ঠিক ভালমত আসবেনা। গাঢ় সবুজ রঙের একটা শাড়ি পরতে হবে। সবুজের উপর লালের কারুকাজ হেব্বি জোস্‌ আসবে। অনেকটা বাংলাদেশের পতাকা টাইপ হবে।

যে ক্যামেরাম্যান ছবি তুলতে আসবে সে বাইরে মন খারাপ একটা ভাব দেখালেও মনে মনে ভাববে,"আহা!কতদিন এরকম সুন্দর ইফেক্টের একটা ছবি তুলতে পারিনি,আজ আমার ছবি তোলার জীবন স্বার্থক। " আরেকটা ব্যাপারে ট্রাই দিতে হবে। তা হল মৃত্যুর পর মুখে একটা হাসি হাসি ভাব ফুটিয়ে রাখা। এতে ছবিতে একটা অপার্থিব ভাব চলে আসবে। তবে এই ব্যপারটি করতে পারব কিনা জানিনা।

হয়তোবা হাসি মুখেই মরার ট্রাই দিলাম,কিন্তু মৃত্যু বেদনায় সেই হাসি ঊঁধাও হয়ে গেল। ৩. আরেকটি গুরূত্বপূর্ণ কাজ করতে হবে। তা হল একটি চিরকুট লিখে যাওয়া। মা-বাবা, তোমরাতো তোমাদের মেয়েকে সেই ছোটবেলা হতেই চেনো। ছোটবেলা হতেই তোমরা আমার কোন ইচ্ছা অপূর্ণ রাখনি।

নিঃসন্দেহে তোমরা পৃথিবীর সেরা বাবা-মা। সেরা বাবা-মাদের নোবেল পুরষ্কার দেবার নিয়ম নেই। নইলে তোমরাই প্রতিবছর সেই পুরষ্কার পেতে। আজ আমি আমার একটা ইচ্ছা পূরণ করব। তোমরাতো জানই আমার কোন ইচ্ছা দীর্ঘস্থায়ী হয় না।

হয়তো এই ইচ্ছাটিও হবেনা। তবুও আমার ইচ্ছাতো পূরণ করতেই হবে। এটা যদি একটা গল্প হত তবে আমি এর নাম দিতাম "ইচ্ছাপূরণ"। Bদায় এভাবে Bদায় লিখে আমার অনেক মজা লাগল। ছোটবেলায় কোন এক উপন্যাসের পড়েছিলাম যে নায়িকা একটা সুইসাইড নোটে এভাবে Bদায় লিখে।

উপন্যাসের নামটি মনে নেই। তবে এই ব্যপারটি স্পষ্ট মনে আছে। যাই হোক,লেখাটি শেষ করে আমার ভিতর খুব ফুরফুরে ভাব চলে এল। আমি একটা কফির মগ হাতে ছাদের দিকে পা বাড়ালাম। ৪. ছাদে এসে মনটা অনেক ভাল হয়ে গেল।

আমি একলাফে ছাদের রেলিং এ উঠে গেলাম। নীচে তাকিয়ে আমার আরও অনেক মজা লাগল। হঠাৎ নিজেই কিছু বুঝে উঠার আগে আমি লাফ দিলাম। তখন একটা খুব মজার ব্যপার ঘটল। আমি নীচের দিকে না পরে ধীরে ধীরে উপরের দিকে উঠে গেলাম।

এরকমতো হওয়ার কথা না। অভিকর্ষ বলের কারণে পৃথিবীর উচিত আমাকে তার নিজের দিকে টেনে নেওয়া। কিন্তু কোন একটা অদ্ভুত কারণে হয়তো পৃথিবী আমাকে তার নিজের দিকে টেনে নিতে চাচ্ছে না। দেখতে দেখতে আমি অনেক উপরে উঠে যাচ্ছি। উপরে......অনেক উপরে........।

এত উপর হতে পৃথিবীকে দেখতে অনেক সুন্দর লাগছে। আশেপাশের সবকিছু অনেক সুন্দর লাগছে। আমার আর মরতে ইচ্ছে করছে না। আমি বাঁচব। আমি বাঁচতে চাই।

ঠিক তখনই আমি অনেক দ্রুত নীচের দিকে পরা শুরু করলাম। কিন্তু আমি মরতে চাইনা। আমি বাঁচতে চাই। বাঁচতে চাই। আমি জানি,এখন আমি যতই চিৎকার করে গলা ফাটাইনা কেন,কিছুই হবেনা।

আমি সামনে দেখতে পাচ্ছি অন্ধকার। নিকষ কাল অন্ধকার। আমি জানি পূরণ হতে যাচ্ছে আমার আরেকটি ইচ্ছা। এটাই হবে আমার সর্বশেষ ইচ্ছাপূরণ।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।