আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইচ্ছাপূরণ

“বনে গেলেই কাঠ পাওয়া যাবে?”
“তুমি তাহলে কুড়ালটি নিয়ে যাও। সেখানে গেলে তুমি অনেক ছোট ছোট গাছ দেখতে পাবে। তার মধ্যে যেটা খুশি, কেটে নিয়ে এস। ওই কাঠ দিয়ে রান্না করব। খাবার-দাবার গরম করতে পারব।


অগত্যা বুড়ো ঘর থেকে তার কুড়ালটি নিয়ে বাড়ির কাছের বনের দিকে রওনা হল।
বনের ভেতর ঢুকে সে একটি ছোটখাটো ঝাঁকড়া বুনো আপেলগাছ দেখতে পেল। সে ঠিক করল, গাছটি কাটবে। বুড়ো তার কুড়াল উঁচিয়ে যেই না কোপ দিতে গেল, অমনি বুনো আপেলগাছটি একদম মানুষের মতো আর্তনাদ করে উঠল, “দয়া কর। আমাকে কেটো না, ভালো মানুষের ছেলে।

আমি অবশ্যই একদিন তোমার উপকার করব। ”
গাছটিকে মানুষের মতো কথা বলতে শুনে বুড়ো ভীষণ ভয় পেয়ে গেল। তার হাত থেকে কুড়ালটি গেল পড়ে। ভয়ে বুক কেঁপে উঠল। এক মুহূর্ত সেখানে দেরি না করে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে এল বুড়ো।


বাড়িতে ফিরে বুড়ো বনের ভেতর যা যা ঘটেছে, সবই বুড়িকে খুলে বলল। সব শুনে বুড়ি তো ভয়ানক রেগে গেল, “তোমার মতো আহাম্মক আমি জীবনেও দেখিনি। তুমি এখনই ওই আপেলগাছের কাছে যাও। গিয়ে বল, গাছটি যেন আমাদের একটি ঘোড়ার গাড়ি এবং একটি তেজী ঘোড়া দেয়। সারাজীবন কি পায়ে হেঁটে হেঁটে সমস্ত জায়গায় ঘুরব?”
“তোমার যেমন ইচ্ছা।


এই বলে মাথায় টুপি চাপিয়ে বুড়ো আপেলগাছের উদ্দেশে রওনা হল। কিছুক্ষণের মধ্যেই বুড়ো আপেলগাছের কাছে পৌঁছে গেল।
গাছের কাছে গিয়ে বুড়ো বলল, “ওহে আপেলগাছ, শুনতে পাচ্ছ আমার কথা?”
গাছটি জবাব দিল, “হ্যাঁ, শুনতে পাচ্ছি। আমাকে কি তুমি কিছু বলতে এসেছ?”
“আমার স্ত্রী তোমার কাছে একটি ঘোড়ায় টানা গাড়ি আর একটি তেজী ঘোড়া চেয়েছে। ”
“আচ্ছা ঠিক আছে।

তুমি বাড়ি যাও। বাড়ি গিয়ে দেখবে, তুমি যা চাইছ তাই পেয়ে গেছ। ”
বুড়ো তাড়াতাড়ি বাড়ির দিকে রওনা হল। বাড়ির সামনে গিয়ে দেখে, কী অবাক কাণ্ড! বাড়ির সামনে তেজী ঘোড়াসহ একটি গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। আর ঘরের দরজার একেবারে সামনে, মুখ গোমড়া করে বুড়ি দাঁড়িয়ে।


বুড়ো বলল, “কী হল? তুমি অমন করে দাঁড়িয়ে আছ কেন?”
“তুমি ভেবে দেখ। আমাদের অবস্থা আগের চেয়ে বেশ ভালো হয়েছে, তাই না? কিন্তু এখন আমার ভয় হচ্ছে, আমাদের এই নড়বড়ে বাড়িটা-ই না একসময় ভেঙে পড়ে। তুমি আবার আপেলগাছটির কাছে যাও। আর আমাদের জন্য একটা সুন্দর বাড়ি চাও। সে আমাদের একটি সুন্দর বাড়ি দিতেও পারে।


লোকটি তখন আবার আপেলগাছটির কাছে গেল। আর বুড়ির কথা মতো একটি নতুন বাড়ি চাইল।
আপেলগাছ সব শুনে বলল, “আচ্ছা ঠিক আছে। তাই হবে। তুমি বাড়ি যাও।


বুড়ো লোকটি যখন ফিরে এল, দেখে তাদের জরাজীর্ণ কুটিরের জায়গায় নয়নাভিরাম এক বাড়ি। সে তার নিজের চোখকেই যেন বিশ্বাস করতে পারছিল না!
সুন্দর বাড়িটি পেয়ে বুড়োবুড়ির আনন্দ আর ধরে না। দুজন খুশিতে বাচ্চাদের মতো কয়েক পাক নেচেও নিল। এত কিছু পেয়েও কিন্তু বুড়ি সন্তুষ্ট হল না।
বুড়ি এবার তার স্বামীকে বলল, “তুমি এখনই সেই আপেলগাছের কাছে যাও।

গাছটির কাছে গিয়ে আমাদের জন্য গরু, ছাগল, ভেড়া আর কিছু হাঁস-মুরগি চেয়ে আনো। তাহলে আমাদের আর কোনো কিছুরই অভাব থাকবে না। ”
বুড়ো স্ত্রীর আর্জি নিয়ে আবার আপেলগাছের কাছে গেল। সবকিছু শুনে এবারও আপেলগাছটি বলল, “খুব ভালো কথা। ঠিক আছে, তোমার বউয়ের ইচ্ছা পূরণ হবে।

তুমি এবার বাড়ি যাও। ”
লোকটি বাড়ি ফিরে দেখে, তাদের বাড়ির উঠোন ভরা গরু-ছাগল-ভেড়া। শুধু তাই নয়, তাদের উঠোনজুড়ে অনেক হাঁস-মুরগিও ঘুরে বেড়াচ্ছে। এসব দেখে বুড়োর মন খুশিতে ভরে উঠল।
সে বলল, “যথেষ্ট হয়েছে।

আর আমাদের কিচ্ছু দরকার নেই। ”
সঙ্গে সঙ্গে বুড়ি বলে উঠল, “না না, এসব মোটেই যথেষ্ট নয়। তুমি আপেলগাছের কাছে যাও। গিয়ে বল, আমাদের প্রচুর সোনাদানা চাই। প্রচুর টাকা-পয়সা চাই।


বুড়ো বউয়ের চাহিদার কথা জানানোর জন্য আবারও আপেলগাছের কাছে গেল। তারপর সসঙ্কোচে জানাল তার বউয়ের চাহিদার কথা।
আপেলগাছটি আগের মতোই বলল, “খুব ভালো কথা। বাড়ি যাও। তোমরা যা চাইছ, সবই পাবে।


বুড়ো বাড়ি এসে দেখে, বস্তা ভরা স্বর্ণমুদ্রা টেবিলের উপর রাখা। বুড়ি বস্তা থেকে স্বর্ণমুদ্রা বের করে করে গুনছে, আর বিভিন্ন পাত্রে রাখছে।
বুড়োকে দেখে বুড়ি বলল, “যাক বাবা, এবার আমরা যথেষ্ট ধনী হয়েছি। কী বল? কিন্তু শুধু ধনী হলে কি চলবে? লোকে যদি আমাদের ভয় না পায়, তাহলে ধনী হয়ে কী লাভ? তুমি এখনই আপেলগাছটির কাছে গিয়ে বল, এলাকার সব লোক যাতে আমাদের সমীহ করে চলে, সেই ব্যবস্থা করে দিতে। ”
বুড়ো লোকটি এবারও আপেলগাছের কাছে গিয়ে স্ত্রীর আর্জি জানাল।

আপেলগাছ সব শুনে আবারও তার ইচ্ছা পূরণ করল।
বাড়ি এসে লোকটি দেখল, তার বাড়ির চারপাশে অসংখ্য সৈন্য অস্ত্রসহ দাঁড়িয়ে আছে। রীতিমতো পাহারা দিচ্ছে তারা।
বুড়ো তার স্ত্রীকে বলল, “আশা করি এর চেয়ে বেশি আমাদের আর কিছুই চাইবার নেই। আমাদের এখন সবকিছুই হয়েছে।

কী বল?”
বুড়ি রাগে গজগজ করে উঠল। বলল, “না না, এখনও আমাদের সবকিছু হয়নি। তোমাকে আর একবার আপেলগাছের কাছে যেতেই হবে। ”
বুড়ো সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠল, “আমি আর আপেলগাছের কাছে গিয়ে কিছু চাইতে পারব না। এটা ঠিকও হবে না।


বুড়ি বুঝল, বেশি জোরাজুরি করা ঠিক হবে না। তার চেয়ে মিষ্টি কথায় তুষ্ট করে বুড়োকে আপেলগাছের কাছে পাঠাতে হবে।
বুড়ি তার স্বামীকে নানাভাবে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে আপেলগাছের কাছে যাওয়ার জন্য রাজি করাল। বুড়ি তার স্বামীকে বলল, “তুমি আপেলগাছের কাছে গিয়ে বল, সে যেন এই এলাকার সকল লোকদের আমার দাস-দাসি বানিয়ে দেয়। আমাদের যেহেতু সবকিছু আছে, তখন এ ছাড়া আমাদের আর কীই-বা চাওয়ার আছে বল?”
এ কথা শুনে বুড়ো মনে মনে বেশ চটে গেল।

কিন্তু সাহস করে বুড়িকে কিছুই বলতে পারল না। অনিচ্ছাসত্ত্বেও সে আপেলগাছটির কাছে আবার গেল। তারপর বউয়ের চাহিদার কথা গাছের কাছে জানাল।
বুড়োর কথা শুনে এই প্রথম আপেলগাছটি বেশ খানিকক্ষণ চুপ করে থাকল।
তারপর বলল, “তোমারও কি একই ইচ্ছা? তাড়াতাড়ি বল।


“না, এটা আমার ইচ্ছা না। এলাকার সব লোককে আমি আমার বউয়ের দাস-দাসি বানাতে চাই না। ”
“এ যাবৎ শুধু তোমার বউয়ের ইচ্ছার কথা আমার কাছে বলেছ। তা আমি পূরণ করেছি। এইবার তোমার একটা ইচ্ছার কথা বল।

আমি এবার সেটি পূরণ করতে চাই। ”
“তাহলে আমার ইচ্ছার কথা শোনো। আমি আমাদের আগের অবস্থায় ফিরে যেতে চাই। ”
“ঠিক আছে। তোমার এই ইচ্ছাটাও পূরণ হবে।

বাড়ি ফিরে যাও তুমি। তুমি খুব ভালো মানুষ। ”
বুড়ো তখন ধীরে ধীরে বাড়ি ফিরে এল।
বাড়ি ফিরে এসে দেখে, চারদিক সুনসান। ঘোড়ার গাড়ি, নতুন বাড়ি, উঠোনভরা গবাদি পশু, সৈন্য-সামন্ত-- সব বাতাসে মিলিয়ে গেছে।

শুধু আছে নিজেদের সেই জরাজীর্ণ কুটির। আর তার পাশে ছেঁড়া পোশাক পরা বুড়ি। গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে।
 
ইউক্রেনের লোককাহিনি

সোর্স: http://bangla.bdnews24.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।