ডিজিটাল আযান
এবারে আল আইন ও আবুদাবির মসজিদগুলো সম্বন্ধে কিছু তথ্য জানাতে চাই। আল আইন জুড়ে সুউচ্চ মিটার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ১৮শ মসজিদ। প্রত্যেক মসজিদেরই আলাদা মাইক রয়েছে কিন্তু মসজিদে মসজিদে আলাদাভাবে আযান হয় না। মসজিদের মিনারে লাগিয়ে রাখা হয়েছে এন্টেনা, নিচে আছে রিসিভার। প্রতি ওয়াক্ত নামাজের আযানের ৫/৭ মিনিট আগে মুয়াজ্জিন সাহেব রিসিভার অন করেন।
আল আইনের কেন্দ্রীয় মসজিদের মুয়াজ্জিন সাহেব উনার মসজিদ থেকে আযান দেন। উনার সেই আযান একই সঙ্গে ১৮শ মসজিদের মাইকে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়। এই আযানকে ডিজিটাল আযান বলা যেতে পারে। আবুদাবি ও আল আইনে রয়েছে এই নিয়ম। অবশ্য দুবাই ও শারজাতে এখনো এই এই নিয়ম চালু হয় নি।
এই ডিজিটাল আযান আমাকে ভাবতে বাধ্য করলো বেশ। আযান নিয়ে এই অহেতুক এক্সপেরিমেন্ট যদি সময়ের সাথে আরো এগিয়ে যায়, তাহলে আগামীতে কী হতে পারে? এক সময় হয়ত নিয়ম করা হবে, “কষ্ট করে আর ওয়াক্তে ওয়াক্তে আযান দেয়ার দরকার কি? এক আযান রেকর্ড করে ওয়াক্তের সময় সেই ক্যাসেট বাজিয়ে দিলেই তো হয়”
এভাবে চলতে চলতে আধুনিকতার স্ফুলিঙ্গের দিকে পতঙ্গের মত ছুটে চলা অই মুসলমানরা যদি এক সময় নিয়ম করে বসে, “আযানের-ই-বা আবার কী দরকার! প্রত্যেকের হাতেই তো ঘড়ি আছে। নামাযের সময়-সিডিউল জানা আছে। ঠিক টাইমে নামাজ শুরুর আগে সবাই নিজ নিজ ঈমানী দায়িত্বে মসজিদে চলে আসবে। যেহেতু নামাজ মুসলমানের দায়িত্ব।
তাহলে সেটা তো তার নিজ গরজেই পালন করার কথা। তাকে আবার ওয়াক্তে ওয়াক্তে মাইক লাগিয়ে স্মরণ করিয়ে দিতে হবে কেন?” এমন অদ্ভুত উদ্ভট কোনো নিয়ম তারা করে বসলেও অবাক হবার কোনো কারণ থাকবে না।
এ তো গেলো আযানের কথা। এক্বামতের বেলায় ওরা যথেষ্ট কৃচ্ছতা সাধন করে। এক্বামতে খুব বেশি সময় নষ্ট করার পক্ষে তারা নেই।
তারা সিঙ্গেল এক্বামত দেয়। আমরা এক্বামতের প্রতিটি বাক্য দু’বার করে উচ্চারণ করি। তারা করে একবার। অবশ্য আগেই বলেছি এই নিয়ম চলে শুধু আল-আইন ও রাজধানী শহর আবুদাবিতে। দুবাই ও শারজাহ সহ অন্যান্য রাজ্যে এখনো ডিজিটাল আযান পদ্ধতি চালু হয়নি।
তবে তাদের একটি নিয়ম আমাকে অভিভূত করেছে। ইমামদের ইমামতির জন্য রয়েছে নির্দিষ্ট ইউনিফর্ম। ইমামতির সময় অবশ্যই ইমাম সাহেবকে নির্ধারিত পোশাক পরতে হয়। ইমামদের জন্য রয়েছে তিন ধরণের পোশাক। যে কোনো একটি তিনি বাছাই করে নিতে পারেন।
পোশাকগুলো হচ্ছে-
১। আবা। আমাদের দেশের বড় বড় আলেমরা পাঞ্জাবীর উপরে বিয়ের নতুন জামাই’র মত ঝুলন্ত যে পোশাক পরে থাকেন।
২। মিশরী লং শেরওয়ানী যাকে সেখানে বলা হয় লেবাস আজহরী।
৩। জোব্বা আমামাহ।
প্রতি মাসে একদিন সকল ইমামদের ইজতেমা হয়। ইজতেমা মানে সম্মিলন। সাতটি রাজ্য শহর ছাড়াও আল-আইন, বানিয়াছ, দিব্বাসহ সকল গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে আলাদা আলাদা ইজতেমা হয়।
আওক্বাফের নেতৃবৃন্দ সেখানে ইমামদের উদ্দেশ্যে নীতি নির্ধারণী বক্তব্য রাখেন। তাদের জন্য সরকারের কোনো ম্যাসেজ থাকলে সেটা জানিয়ে দেন।
আমিরাতে যে সকল ধর্মীয় প্রোগ্রাম হয়, সেগুলো পরিচালনা করে আল-হাইয়াতুল আম্মা’হ। এছাড়া সামাজিক, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যুতেও সেমিনার-সিম্পোজিয়াম হয়ে থাকে সেখানে। তেমনি একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়ে গেল সেখানে গত ২৬ ও ২৭ মার্চ ২০০৯ইং ।
আবুদাবির শেখ জায়েদ ইউনিভার্সিটিতে অনুষ্ঠিত দুই দিন ব্যাপী সেই সিম্পোজিয়ামের হেডলাইনটি ছিল অত্যন্ত চমৎকার। “আন নযরিয়্যাতু ওয়াত তত্ববীক, কালিমাতুন সাওয়া”। ইংরেজীতে, Theory and Application of a common word. বাংলা কী হবে? সম্ভবত অনেকটা এভাবে দাঁড়াবে, ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিকে সঠিক প্রয়োগ পদ্ধতির মাধ্যমে একবিন্দুতে নিয়ে এসে একই স্লোগানের পেছনে এসে ঐক্যবদ্ধ হওয়া।
দক্ষিণ কারোলিনা ইউনিভার্সিটির সহায়তায় এবং আমেরিকা ও ইন্দোনেশিয়ার আরো তিনটি ভার্সিটির তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত সেই সিম্পোজিয়ামে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন শেখ জায়েদ ইউনিভার্সিটির চ্যান্সেলর এবং আমিরাতের শিক্ষামন্ত্রী শেখ নাহিয়ান বিন মোবারক। সেই সভায় বক্তব্য রাখেন সৌদি আরব, মিশর ও ইন্দোনেশিয়াসহ ইসলামী বিশ্বের প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদগণ।
সভায় বক্তারা ধর্ম-বর্ণ দেশ-জাতি নির্বিশেষে বিশ্বের সকল মানুষের মাঝে ভ্রাতৃত্ব ও পরমত সহিষ্ণুতার উপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, ধর্ম ও সামাজিক ইস্যুতে আমাদের মাঝে মত পার্থক্য থাকতে পারে, তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমাদেরকে একথাবদ্ধ হতে হবে। মানবতার কল্যাণে আমাদের অভিন্ন উচ্চারণ নিয়ে সামনে আগাতে হবে।
[তথ্যসূত্র : আবুদাবি থেকে প্রকাশিত মাসিক মিনার আল ইসলাম]
আমিরাতের আল হাইয়্যাতু আ’ম্মার আওতায় সেখানে রয়েছে একটি ডিজিটাল ফতওয়া বিভাগ। ৩৫ জনেরও বেশি গ্র্যান্ড মুফতি রয়েছেন সেই ফতওয়া বোর্ডে। তারা আরবী, উর্দু ও ইংরেজী ভাষায় সমান পারদর্শী।
ইন্টানেটের মাধ্যমে তারা যে কোনো সমস্যার শরয়ী সমাধান দিয়ে থাকেন। অবশ্য বলাই বাহুল্য, এই মুফতীগণকে বাইরে থেকে এনে বেশ স্বাস্থ্যবান বেতন-ভাতা দিয়েই কাজ করানো হচ্ছে। তারা নিজস্ব আলেম বা মুফতী পাবে কোথায়?
জেনারেল অথরিটি অব ইসলামিক এ্যাফেয়ার্স নামের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সমূহ পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার আওতায় কেন্দ্রীয় সরকারের সার্বিক তত্ত্বাবধানে প্রতি বছর সেদেশের কিছু ছেলেমেয়েকে রাষ্ট্রীয় খরচে পাঠানো হয় ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন দেশে, ইংরেজি শেখার জন্য। আধুনিক কালচার রপ্ত করার জন্য। যাদেরকে বাইরে পাঠানো হয়, সরকার শুধু তাদের পড়ালেখার খরচই যে যোগায়, তা না, বরং তাদের প্রত্যেক ফ্যামিলিকে ভাতা হিসেবে ৪০/৫০ হাজার দেরহাম করেও দিয়ে থাকে।
৫০ হাজার দেরহাম মানে প্রায় সাড়ে ৯ লক্ষ টাকা।
এত টাকা খরচ করে যাদেরকে ইংরেজী ও আধুনিকতার সবক শিক্ষা করার জন্য ইউরোপ ও আমেরিকার পাঠানো হচ্ছে, তারা যা শিখে ফিরছে, এক কথায় ভয়াবহ! ফ্রি সেক্স ও অশ্লীলতার যতগুলো পাঠ আছে, নষ্টামীর যতগুলো অধ্যায় আছে, বিনা খরচে বিনা পরিশ্রমে সেগুলো পশ্চিমারা পুতে দিচ্ছে আরবী নাড়িতে। খাল কেটে কুমির আনার ব্যাপারটিরও না হয় সত্য করা যায়। কিন্তু কুমিরের দেশে গিয়ে কুমিরের জীবাণু বহন করে নিয়ে এসে সেগুলোর বংশ বিস্তারের আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত ও হুজুগে পরিকল্পনাকে কী বলা যায়?
আর এরই অনিবার্য সাইট এ্যাফেক্টেই কি না জানি না, আমিরাতের শেখদের অনেকের অবস্থা আজ এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে, তারা তাদের বাসায় ফিলিপাইনের সুন্দরী মেয়েদের নিয়ে আসছে খুদামাহ বা কাজের মেয়ে হিসেবে। আর এই মেয়েদের সাথে তাদের কেমন হচ্ছে, পাঠক একটু আন্দাজ করলেই বুঝে নিতে পারবেন।
আগামীকাল আল-আইনের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে কিছু ধারণা দিতে চেষ্টা করার অয়াদা থাকলো।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।