লগ আউট
আল-আইন যাত্রা
১লা আগষ্ট শনিবার। ঘুম থেকে উঠে চলে গেলাম হোটেলের অভ্যন্তরের আমেরিকান রেষ্টুরেন্টে। নাস্তা ছিল ফ্রি। ফ্রি মানে হোটেল বুকিং মানির আন্ডারে। থরে থরে সাজানো রকমারী খাবার।
৩০/৩৫টি আইটেম। যা খুশি, যত খুশি খাবার সুবিধা। আবার খাবার খেতে হয় নিজ হাতে। সেলফ সার্ভিস। বুফে সিস্টেম।
কোনো ওয়েটার নেই। ঘুরে ঘুরে দেখলাম। স্বীকার করতে দ্বিধা নেই মেক্সিমাম আইটেমই চিনতে পারলাম না।
খোঁজে খোঁজে আমরা সাধারণ বাঙালির অতি পরিচিত ব্রেড ও ডিমের অমলেট খেলাম। সাথে দু’কাপ চা।
নাস্তা সেরে রেডি হয়ে বের হতে হতে সকাল ১০টা বেজে গেল। রিসিপশনের আনুষ্ঠানিকতা সেরে বের হতে হতে ১১টা। সোজা গিয়ে চেপে বসলাম আল-আইনগামী বাসে।
১১টা বিশ মিনিটে বাস চলতে শুরু করলো আল আইনের উদ্দেশ্যে।
শহুরে কোলাহল ছাড়িয়ে দ্রুত গতিতে বাস চলতে শুরু করলো মরুভূমির মধ্যদিয়ে।
চমৎকার রাস্তা। ডানে-বামে ধু ধু বালি। মাঝে-মধ্যে গাছ গাছালি। রোদ নেই আবার মেঘও নেই। মরুভূমি অধ্যুষিত দেশ হওয়ায় আমিরাতের আকাশে নীলের সৌন্দর্য্য নেই।
ধুলিউড়া আকাশ। নিঃপ্রাণ গাছগাছালি পানির অভাবে মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছে। পাতাগুলো কুকুড়ে আছে। এই প্রথম অনুভব করলাম সবুজে ঘেরা আমাদের বাংলাদেশ প্রকৃতির কতবেশি সু-নজরে রয়েছে।
দুপুর পৌনে একটায় আমরা গিয়ে পৌঁছলাম আল আইন বাস স্ট্যান্ডে।
স্ব-লজ্জ চোখে আবিষ্কার করলাম আমাদের রিসিভ করার জন্য শ্রদ্ধাভাজন মাওলানা আব্দুশ শহীদ সাহেব ও বন্ধুবর আব্দুল্লাহ ভাই অপেক্ষা করছেন। গাড়ী ড্রাইভ করছেন শহীদ ভাই নিজে। তারা আমাদের নিয়ে গেলেন আল আইন শহরের ‘জাখের’ এলাকায়। আমাদের নামিয়ে দিয়ে শহীদ ভাই চলে গেলেন উনার মসজিদে। আমাদের অবস্থান হল, আব্দুল্লাহ ভাই’র বাসায়।
জোহরের নামাজ পড়ে আব্দুল্লাহ ভাই এর বাসায় দুপুরের খাবার খেতে বসলাম। খাবারের মজলিসে একে একে এসে হাজির হলেন মসজিদ বিন উমায়রাহ এর ইমাম ও খতিব, সিলেটের জকিগঞ্জের মাওঃ মোঃ আব্দুশ শহীদ, আব্দুল জলিল, বিশ্বনাথের ইদ্রিস খান, চট্টগ্রামের আব্দুল আলিম চট্টগ্রামী এবং ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার মোঃ আব্দুল বাছির এবং সিলেট সিলামের হাফিজ মুখলিছুর রহমানসহ অনেকে।
আগেই বলেছি আমরা সেলিব্রেটি কেউ নই। তবুও তাঁরা এসেছেন আমাদের সাথে দেখা করতে। নিঃসন্দেহে এটা দেশের প্রতি ভালবাসার নিদর্শন।
তারা আমাদের সাথে সাক্ষাত করতে এসেছেন সম্ভবত এ জন্য যে, তাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের তাজা গন্ধ লেগে আছে আমাদের শরীরে।
সবাই একসাথে দুপুরের খাবারে অংশগ্রহণ করলাম। বিশাল আয়োজন। খাবারের আইটেমের বর্ণনা দিয়ে পাঠকের অ্যাটেনশন ডাইভার্ট করতে চাচ্ছি না। তবে খাওয়ার পরে থরে থরে সাজানো শাহী পানদান দেখে মনটা জুড়িয়ে গেল।
কিছু সময়ের জন্য ভুলে গেলাম আমরা বাংলাদেশের বাইরে আছি। খাওয়া-দাওয়ার পর সবাই যার যার ঠিকানায় চলে গেলেন। দুপুরের ঝাঁঝালো রোদের তীব্রতায় আমাদেরকে একটু বিশ্রামের সুযোগ করে দিয়ে তারা চলে গেলেন নিজ নিজ বাসায়।
কিছুক্ষণ বিছানায় গড়াগড়ি করলাম। আসরের নামাজের পর রোদের তেজ একটু কমে আসলো।
কমে আসলো মানে অনুমান ৩৮ ডিগ্রিতে নেমে আসলো। আবহাওয়া সম্বন্ধে খুববেশি ধারণা নেই, এমন পাঠকের জ্ঞাতার্থে বলছি। মধ্য জুলাইয়ে দু’তিন দিন আমাদের দেশে প্রচন্ড গরম ছিল। গরমের তীব্রতায় গা জ্বলে যাওয়ার মত অবস্থা হয়েছিল। তখন তাপমাত্রা ছিল ৩৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এর মানে আমাদের দেশের টেম্পারেচার বাড়তে বাড়তে যে জায়গায় যায়, সেদেশের টেম্পাচারের কমতে কমতে সেখানে আসে।
আমি আব্দুল্লাহ ভাইকে বললাম, এত গরম আপনারা সহ্য করেন কী করে। বুঝলাম আপনাদের সবাইকেই বাসায় বাধ্যতামূলক এসি ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু বাইরের এই গরম আপনারা কী করে সহ্য করেন?
তিনি আমাকে হেসে হেসে বললেন, “রশীদ ভাই, গরম তো কমে গেছে? মাসখানেক আগে এলে বুঝতেন গরম কাকে বলে। ” শুনেই আমার তালু গরম হলে গেল! আরো মাসখানেক আগে যাই নি বলে ভাগ্যকে ধন্যবাদ জানালাম।
বিকেলে ইদ্রিস ভাই চা’চক্রের আয়োজন করলেন। শহীদ ভাই গাড়ী করে এসে নিয়ে গেলেন আমাদেরকে। এই লোকটি আমাদের শিক্ষকের ক্যাটাগরিতেই পড়বেন। আমাদের মত অনেক ছাত্র তাঁর থাকার কথা। অথচ যখন তখন, যেখানে-সেখানে যাওয়ার জন্য নিজে গাড়ী নিয়ে এসে হাজির হতেন।
আমাদের নিজেদেরকে তখন খুব লজ্জিত মনে হত।
আসরের পর শহীদ ভাই’র গাড়ী করে আমরা রওয়ানা করলাম ইদ্রিছ ভাই’র ওখানে। গাড়ীতে করে ১০ মিনিটের রাস্তা। রাস্তায় দেখলাম বিশাল খেজুর বাগান। সারি সারি দাঁড়িয়ে আছে হাজার হাজার খেজুরের গাছ।
আধা পাঁকা, পাঁকা খেজুরের ঝুটা। জাল দিয়ে প্যাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। আল আইনের খেজুর গাছগুলো শিশু বয়সেই প্রজনন ক্ষমতা অর্জন করে ফেলে। কীভাবে করে কে জানে? গাছগুলো মাটি থেকে মুখ বের করার পরই খেজুরে খেজুরে ভরে উঠে। খেজুর পেঁকে মাটির সাথে লেগে থাকে।
হঠাৎ কারো চোখ পড়লে মনে হবে খেজুরগুলো সম্ভবত মাটি ফেড়ে বের হয়েছে।
আল আইনের এই বিশাল বিশাল খেজুর বাগান সহ গোটা আমিরাতেই ছড়িয়ে আছে খেজুরের গাছ। রাস্তার মধ্যখানের ডিভাইডারে, বাসার উঠানে, সাগরের পাড়ে, মসজিদের দেয়ালের পাশে, বাজারের মধ্যখানে, সবখানে। সেদেশের মাটির মধ্যে আল্লাহপাক খেজুরীয় ক্ষমতা একটু বেশিই দিয়ে রেখেছেন। আর কেন নয়? দেড় হাজার বছর আগে বিশ্বনবীর সাহাবীরা যে এই খেজুর খেয়েই দিন কাটাতেন।
আজকের দিনে অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্য হল, কোনো দিন এমনও কেটেছে যে, একটি মাত্র খেজুর কয়েকজন সাহাবী মিলে ভাগ করে খেয়েছেন।
আল আইন সহ গোটা আমিরাতের গাছগাছালী বলতে প্রধানত এই খেজুর গাছগুলোই। সেদেশে বছরে বৃষ্টি হয় একদিন কি দু’দিন। আর এই দু’এক দিনের কয়েক মিলিমিটার বৃষ্টির পানি গাছ-গাছালির বেঁচে থাকার জন্য মোটেও যথেষ্ট নয়। তাই কৃত্রিমভাবে প্রত্যেকটি গাছে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
প্রতিটি গাছের গোড়ায় পাইপ টেনে রাখা আছে। সকাল বিকাল নিয়ম করে কেন্দ্রীয়ভাবে পানি দেয়া হয়।
আমি এই দৃশ্য দেখে মনে মনে ধন্যবাদ জানালাম আল্লাহকে, বাংলাদেশের প্রতি বিশেষ রহম করার জন্য, বাংলাদেশে আমাকে জন্ম দেয়ার জন্য। আমাদের গরীব এই দেশটির দিকে তাঁর স্নেহের দৃষ্টি আমাকে আলোড়িত করে তুললো। আমাদের দেশেও যদি আরব বিশ্বের মত বছরে ১দিন বা ২দিন বৃষ্টি হত, তাহলে কী হত অবস্থা?
সুজলা-সুফলা বাংলাদেশের স্লোগান তো পরের কথা, সবুজে ঘেরা গাছগাছালির মনজুড়ানো দৃশ্য তো অনেক পরের কথা, আমাদের তো না খেয়েই মারা যেত হত।
ফসলী জমিগুলো শুকিয়ে খা খা করতো। কৃষকেরা বসে থাকতো মাথায় হাত দিয়ে। আর রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক অবস্থাও আমাদের এতটা সমৃদ্ধ না যে, কেন্দ্রীয়ভাবে পাইপ দিয়ে সারা দেশে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা যেত।
ধন্যবাদ হে আল্লাহ, ধন্যবাদ হে প্রভু, গরীব এই দেশটির প্রতি মেহেরবাণী করেছো বলে। তুমি ঠিকই বলেছো “ধারণ ক্ষমতা বা বহন করার ক্ষমতারচে' অতিরিক্ত দায়িত্ব বা বোঝা তুমি কোনো জাতির ঘাড়ে চাপিয়ে দেও না।
”
বাগানের ভেতরে ঢুকে আমরা লক্ষ্য করলাম লক্ষ লক্ষ খেজুর পেড়ে স্তুপ করে রাখা হয়েছে। খেজুরগুলোকে ঘিরে আছে ৩০/৪০ জন শ্রমিক। কেউ ঘষা-মাজার কাজ করছে, কেউ পানির হালকা প্রলেপ দিয়ে একটু চাকচিক্য বাড়াচ্ছে। অন্য কেউ বাক্সে ভরছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে রপ্তানী করার জন্য খেজুরগুলোকে তৈরি করা হচ্ছে।
এত খেজুরের ছড়াছড়ি দেখে কিছু সময়ের জন্য আমার মন খারাপ হয়ে গেল। ওখানের মাটিতে এত খেজুর উৎপন্ন হতে পারলে আমাদের দেশে কেন হবে না? মাটি তো আল্লাহর তৈরি। তাহলে আমাদের মাটিতে একটু খেজুর জন্মদেয়ার উর্বরতা দান করলে সমস্যা কী ছিল?
কিন্তু একটু পরেই আমার মন খারাপ ভাব চলে গেল। আমার মনে পড়লো, আমাদের মাটিতে আল্লাহ যা দিয়েছেন, আরবের মাটিতে তো সেটা দেননি। আমাদের মাটি সোনালী ধানে ভরে উঠে।
আমরা বাঙালিরা সারাজীবন খেজুর না খেয়েও বাঁচতে পারবো কিন্তু একবেলা ভাত না পেলে ...
দ্বিতীয়বারের মত মহান আল্লাহপাকের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলাম। নিজ হাতে গাছ থেকে কয়েকটি খেজুর পেড়ে খেলাম। তারপর বাগানে কিছুক্ষণ ঘুরাঘুরি করে আমরা গিয়ে উপস্থিত হলাম ইদ্রিস ভাই’র বাসায়। চা-এর দাওয়াত ছিল। গিয়ে লক্ষ্য করলাম তিনি একটু মিথ্যে বলেছেন।
শুধু চা না, নাস্তারও আয়োজন করেছেন। চা-নাস্তা সেরে ফিরে আসলাম আমাদের আপন আবাস আব্দুল্লাহ ভাই’র বাসায়। রাতের খাবারের আমন্ত্রণ রয়েছে শহীদ ভাই’র ওখানে।
সন্ধ্যার পরে আব্দুল্লাহ ভাইকে নিয়ে একটু ঘুরতে বেরুলাম। রাতের আল আইনের সাথেও একটু পরিচিত হওয়া দরকার।
প্রথমেই তিনি আমাদের নিয়ে গেলেন তার বাসার অদূরে একটি বাগানে। বাগানটি দর্শনে মুগ্ধ হলাম আমরা। কারণ এটি একটি অন্যরকম বাগান। এমন বাগানের সাথে আমাদের পূর্ব পরিচয় ছিল না। বাগানটি সম্পূর্ণ শিতাতপ নিয়ন্ত্রিত।
বিলাসবহুল এই বাগানটি সম্বন্ধে যথেষ্ট কৌতূহলী হলাম। আব্দুল্লাহ ভাই আমাকে জানালেন, ওখানে গরমের মৌসুমে শীতের সবজি উৎপাদন করা হয়। শীতের আবহাওয়া তৈরি করা হয় কৃত্রিমভাবে। হাই পাওয়ারের এয়ারকন্ডিশন ব্যবহার করে। আমি মনে মনে বললাম, পয়সা থাকলে কী-ই না করা যায়।
রাত ১০টায় আমরা গিয়ে উপস্থিত হলাম ‘মসজিদ বিন উমায়রাহ, জাখের, আল আইন’-এর মুহতারাম ইমাম ও খতিব এবং ‘সিলেট বিভাগ প্রবাসী সমবায় সমিতি, আল আইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত’র সভাপতি মাওঃ আব্দুশ শহীদ সাহেবের বাসায়। সেখানে এক মত-বিনিময় সভার আয়োজন করা হয়েছে। অনেক প্রবাসী বাঙালি এসে জড়ো হয়েছেন, আমাদের মুখে তাদের প্রিয় মাতৃভূমির তরতাজা খবর জানবেন বলে। আগন্তকদের মধ্যে ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ, কোষাধ্যক্ষ জালাল আহমদ, আব্দুল জলিল, ইদ্রিস খান, আব্দুল আলিম, আব্দুল বাছির সহ আরো কে কে জানি!!
বক্তব্য রাখা আমার ধাঁচে নেই। এই কাজটিতে আমি কখনো সাচ্ছন্দ অনুভব করি না।
কিছুক্ষণ তাদের সাথে গল্প গোজব মতন কথা বললাম। তাদের কথা শুনলাম। দেশের কথা তাদের সাথে শেয়ার করলাম। যদিও সেটার খুব একটা প্রয়োজন ছিল বলে আমার মনে হয় নি। স্যাটেলাইটের কল্যাণে বাংলাদেশী টিভি চ্যালেনগুলোর মাধ্যমে প্রতি মুহুর্তেই তারা দেশের সকল সংবাদ পাচ্ছেন।
সভা শেষে খাওয়া-দাওয়ার বিশাল আয়োজন। পরে ভুল পড়ে যেতে পারে তাই এখনই বলে রাখি, আমিরাতে যে ক’দিন ছিলাম, একবেলাও পকেটের টাকায় ভাত খাওয়া হয়নি। আবার শুধুমাত্র শারজাহ’র শ্রদ্ধেয় মাওলানা জামীল আহমদ সাহেবের বাসা ছাড়া কোথাও এক বাসায় দু'বেলা খাওয়া হয় নি। প্রবাসী বাংলাদেশী ভাইরা, অনাত্মীয় অথচ আত্মার আত্মীয় সেই মানুষগুলো আমাদেরকে একবেলা নিজের বাসায় খাওয়াবেন বলে অনেকটা কাড়াকাড়ি শুরু করে দিয়েছিলেন। আমাদের এই আথিতেয়তা, তাদের সেই আন্তরিকতার কথা প্রকাশের মত শব্দ নেই আমার কাছে।
রাত ১ টার দিকে আমরা ফিরে আসলাম আমাদের অস্থায়ী নিজের বাড়ী আব্দুল্লাহ ভাই’র বাসায়। সারাদিনের কর্মময় ব্যস্ততার ক্লান্তি গায়ে না মেখে রাতে আবার বসলো গল্প গোজবের আসর। বন্ধু আব্দুল্লাহ ভাই’র বাসায়। ভাবি কিছুক্ষণ পরপর কিছু না কিছু হালকা খাবারের আয়োজন অব্যাহত রাখলেন।
আমাদের আসরের মধ্যমনির ভূমিকায় অবতীর্ণ হল আব্দুল্লাহ ভাই’র দুই ছেলে ৩ বছরের খালেদ এবং ২ বছরের ওমর।
এই বাচ্চা দু’টো বাঙালি মা বাবার আরবী সন্তান। তাদের জন্ম ভূমি আরব দেশ। কিন্তু ছোট্ট এই বাচ্চারা কিভাবে কিভাবে জানি বুঝে ফেলেছে তাদের জন্মভূমির আরব দেশ হলেও এটা তাদের মূল ঠিকানা না? তাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশ। আর আমরা তাদের মাতৃভূমি থেকে এসেছি। কয়েকঘন্টার মধ্যেই আমাদের সাথে তাদের পরম বন্ধুত্ব ও সখ্যতা গড়ে উঠলো।
সারাক্ষণই ওরা ঘুরঘুর করতে লাগলো আমাদের আশে-পাশে।
আমিরাতের একটি ব্যাপারকে খুব বে-ইনসাফি মনে হল আমার কাছে। আমার ক্ষমতা থাকলে ব্যাপারটি আমি আমিরাতের সরকারের কাছে তুলে ধরতে চেষ্টা করতাম। বিষয়টি হল,
আমাদের বাঙালি মা-বাবার ঘরে সে দেশে যে সন্তানগুলো জন্ম নেয়, সেই সন্তানগুলোর জন্মভূমি তো সেদেশই। তাদেরকে তো সেদেশের সন্তান বলে গ্রহণ করা উচিৎ ছিল।
তারা যে ইউরোপ-আমেরিকাকে রোল মডেল মনে করে, সেই ইউরোপও তো সেদেশে জন্মানো ছেলে-মেয়েকে তাদের দেশের সিটিজেন বা নাগরিক হিসেবে গ্রহণ করে নেয়। দুবাই-আবুদাবি, আল আইন তথা আমিরাতঅলারা ইউরোপিয়ানদের অনেক বদখাসলতের উপর আমর করলেও বাঙালি বান্ধব এই অভ্যাসটি গ্রহণ করে নেয়নি।
আব্দুল্লাহ ভাই’র বাসায় রাতের এই আসর চললো ফজর পর্যন্ত। সামনে রকমারী ফলের ঝুড়ি, কেটে খাওয়ার জন্য চাকু, কিছুক্ষণ পরপর চা, পানদান তো রয়েছেই। এই দীর্ঘ সময়ে আল-আইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং আমিরাতের বাঙালির সুযোগ-সুবিধা ও সুখ-দু:খের অনেক কাহিনী জানলাম।
অনেক তথ্য বের করলাম সেদেশের কৃষ্টি কালচার সম্বন্ধে। সে আলোকেই আগামী কাল আবু দাবির অন্তর্গত আল আইন এলাকার কিছু খন্ডচিত্র তুলে ধরতে চেষ্টা করা হবে-
ক্রমশ--------------
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।