এ্যামিরেটস এয়ারলাইন্স এবং কিছু প্রশ্ন
আমিরাতের মূল গল্পে প্রবেশ করার আগে এই পর্যায়ে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাতে চাই এ্যামিরেটস এয়ারলাইন্স বাংলাদেশ’র কর্মকর্তা মিস প্রিয়াংকা জামানকে। ভদ্রমহিলার সাথে আমার কখনো এবং এখনো সরাসরি দেখা হয়নি। অথচ আমাকে ভিসা পাইয়ে দেয়া থেকে নিয়ে শুরু করে সার্বিক ব্যাপারে উনার আন্তরিক সহযোগিতায় আমি মুগ্ধ।
আমিরাতের ভিসা দেয়ার ক্ষেত্রে এ্যামিরেটস এয়ারলাইন্স’র হাত অনেক লম্বা। আমার কনসালটেন্ট সৈয়দ আব্দুল আহাদ আমার সর্বশেষ প্রকাশিত দু’টি বই এবং আরো কয়েকটি লেখার পেপার কার্টিং নিয়ে যখন ভদ্র মহিলার সাথে দেখা করে আমার হয়ে ভিসার জন্য আবেদন করলেন, তখন তিনি বলেছিলেন,
‘‘স্পন্সর কোথায়?’’
আহাদ ভাই জবাব দিয়েছিলেন, ‘‘ম্যাডাম, স্পন্সর তো নেই।
আমার ক্লায়েন্ট একজন লেখক। এছাড়া একজন মানবাধিকার কর্মী। ‘‘নাগরিক অধিকার আন্দোলন’’ নামক একটি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক। তিনি মূলত: ‘সিলেট বিভাগ প্রবাসী সমবায় সমিতি, আল আইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত’ নামের সংগঠনের আমন্ত্রণে খুবই সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য ওখানে যেতে চাচ্ছেন। আমন্ত্রণকারী সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে তারা স্পন্সরশীপের ব্যবস্থা করছেন।
প্রসেসিং এর জন্য দিন দশেক সময় লেগে যাবে। এদিকে ৬ আগষ্টের আগেই আমার ক্লায়েন্টকে আবার বেক করতে হবে। দেখুন না ম্যাডাম কিছু করা যায় কি না?’’
আহাদ ভাই এর জবানীতে শুনেছি, তার কথা শুনে ভদ্রমহিলা নাকি কিছুক্ষণ কী যেন ভাবলেন। আমার দু’টি বই হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করে বই দু’টি রেখে দিয়ে বললেন,
‘‘কাল আসুন, দেখি কী করা যায়। ’’
পরের দিন আহাদ ভাই উনার অফিসে যাওয়ার পর তিনি বললেন,
‘‘দেখুন মিষ্টার আহাদ, স্পন্সর অথবা হোটেল বুকিং ছাড়া তো ভিজিট ভিসা দেয়ার নিয়ম নেই।
তবে আপনার ক্লায়েন্টের এভিডেন্সের প্রতি সম্মান জানিয়ে আমি নিজেই উনার জন্য হোটেল বুকিং করে ভিসার ব্যবস্থা করেছি। আপনি হোটেল বুকিং মানি, ভিসা ফি দিন। টিকেটের ব্যবস্থা করুন। ’’
সম্পূর্ণ অপরিচিতা এই মহিলার সহযোগিতা দারুণভাবে অভিভূত করলো আমাকে। এমন আন্তরিক ও তড়িৎকর্মা কর্মকর্তা পাওয়া সত্যিই এ্যামিরেটস এর জন্য ভাগ্যের ব্যাপার।
আমি মনে মনে ঠিক করে ফেললাম, ভালো করে খোঁজ-খবর নিয়ে জানতে হবে অই মহিলার বিয়ে হয়ে গেছে কি না! না হয়ে থাকলে কবে হয় ? মোটামুটি ভদ্রগোছের একটি গিফট নিয়ে হাজির হতে হবে বিয়ের মজলিসে। বলতে হবে, ভাল থাকবেন ম্যাডাম, সুখে থাকবেন। আর আমার বিশ্বাস সুখ-কে আপনার খুঁজে বেড়াতে হবে না। সুখই আপনাকে খুঁজে বের করে নেবে।
ভিসা কনফার্ম হবার পর আহাদ ভাই আমার হয়ে ভিসা আনতে গেলেন।
ট্রাফিক জ্যামের কারণে রাস্তায় আটকা পড়েছেন। এ্যামিরেটস-এর অফিস টাইম পার হয়ে যাচ্ছে। এদিকে খুব বেশি অত্যাচারের ফলে আহাদ ভাই’র মোবাইলের চার্জ শেষ হয়ে অফ হয়ে আছে। দায়িত্বের দায়বদ্ধতায় প্রিয়াংকা ম্যাডাম ফোন করলেন আমার সেলফোনে। এ্যাপ্লিকেশন ফরমে আমার কন্টাক্ট নম্বার দেয়া ছিল।
রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কানে ভেসে এলো একটি রাগত ও অভিমানী কণ্ঠ। বললেন,
‘এক্সকিউজ মী, আপনি কি মিষ্টার রশীদ জামীল?’
আমি বললাল, ‘জ্বী। ’
তিনি বললেন, ‘আমি এ্যামিরেটস থেকে প্রিয়াংকা জামান বলছি’।
আহাদ ভাই’র মুখে আমি উনার নাম শুনেছিলাম। যে কারণে চিনতে কোনো সমস্যা হলো না।
বললাম, ‘ম্যাডাম স্লামালিকুম। ’
তিনি বললেন, ‘আপনার না তিনটার আগে আমার অফিসে এসে পৌছার কথা? ক’টা বাজে?’
আমি বললাম, ‘ম্যাডাম, কনসালটেন্ট সৈয়দ আব্দুল আহাদ সাহেব তো সেই কখন আপনার অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেছেন। সম্ভবত বৃষ্টি বা জ্যামে আটকা পড়েছেন। ’
ঈষৎ রাগান্বিত হয়ে তিনি বললেন, ‘আমি এত কষ্ট করে, এত কম সময়ে আপনার ভিসার ব্যবস্থা করলাম, আর আপনার দেখছি মাথা ব্যথাই নেই! আপনার তো ভিসা ক্যানসেল করে দেয়া দরকার। ’
আমি বললাম, ‘স্যরি ম্যাডাম, কিছুক্ষণের মধ্যেই আহাদ ভাই পৌছে যাবেন।
আপনার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ । আপনি আমার জন্য অনেক কষ্ট করেছেন। একবার কষ্ট করে ভিসার ব্যবস্থা করেছেন, আর এখন আবার ক্যানসেল করার জন্য দ্বিতীয়বার আপনাকে কষ্ট দিতে চাচ্ছি না।
আমার হালকা রসিকতায় উনার চেহারায় কোনো প্রভাব বিস্তার করলো কি-না, সেটা বুঝা গেল না। তবে লক্ষ্য করলাম, গলার স্বর আগের থেকে বেশ কিছুটা নরম হয়ে এসেছে।
তিনি বললেন,
‘তাড়াতাড়ি আসতে বলুন, অ,কে বাই। ’
ফোন রেখে দিলেন।
ভিসা হাতে পাবার পর ফোন করে অন্তর থেকে থ্যাংকস জানালাম আমি। এবারে সজ্জন ও সদালাপীই মনে হল তাঁকে। তিনি বললেন, ‘‘বেষ্ট অব লাক।
যান ঘুরে আসুন। আমার বিশ্বাস আপনি লেখার অনেক খোরাক সাথে নিয়ে আসতে পারবেন।
এ্যামিরেটস এয়ারলাইন্সের টিকেট করা হল। ৩০ জুলাই রাত ১০টা ৩০ মিনিটে ফ্লাইট। সিলেট থেকে রওয়ানা করলাম।
রাস্তার জ্যাম-টেম পেরিয়ে সন্ধ্যার দিকে গিয়ে পৌছলাম ঢাকায়। গাট্টি-বুচকা নিয়ে রাত ৯টায় গিয়ে হাজির হলাম (তখনকার) জিয়া আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে।
৩ ঘন্টা আগে এয়ারপোর্টে রিপোর্ট করার কথা। অনেক দেরি করে ফেলেছি। আমরা দু’জন, আমি ও মুছা।
বোর্ডিং কার্ড নিলাম। কোনো রকম ঝামেলা ছাড়াই ইমিগ্রেশন শেষ হল। জিয়া থেকে ঠিক ১০টা ৩০ মিনিটেই উড়াল দিল বিমান।
মোট ১৫২টি বিমান রয়েছে এ্যামিরেটস এর। বিমানগুলো অত্যাধুনিক।
বর্তমান বিশ্বের সেরা ২/৩ টি বিমানের মধ্যে একটি। ভেরি কমফোর্টেবল জার্নি। যারা এ্যামিরেটসে ভ্রমণ করেছেন, তারা আমার সাথে একমত না হয়ে পারবেন না।
ঢাকা থেকে দুবাই সাড়ে ৪ ঘন্টার জার্নি। বিশাল বিমানটি ৪/৫ টি জোনে ভাগ করা।
প্রত্যেক জোনে রয়েছে সেন্ট্রাল মনিটর। ইন্যারন্যাশনাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে স্কীনে বিভিন্ন তথ্য ভেসে উঠতে থাকে। বিমানটির চলার গতি, কত ফিট উপর দিয়ে চলছে, বাইরের টেম্পারেচার কত, আবহাওয়া কেমন, বর্তমানে বিমানটির অবস্থান কোথায়, নিচে কোন দেশ বা স্থান পড়েছে, সেখানকার লোকাল টাইম এখন কত, গন্তব্যে গিয়ে পৌছতে আর কতক্ষণ লাগবে........সবকিছু।
আবার প্রতিটি সিটের সামনে রয়েছে ইন্ডিভিজ্যুয়াল মনিটর। সাথে হেডফোন ও রিমোট।
মোটামুটি বিনোদনের সম্ভাব্য সকল আয়োজন। কম্পিউটার সম্বন্ধে আপনার ন্যূনতম ধারণা থাকলেই হল। প্রোগ্রামে ঢুকে পুরো দুবাই ঘুরে দেখতে পারেন আপনি। ৪ ঘন্টা বিমানে বসে আপনি দুবাই সম্বন্ধে একটি খসড়া ধারণা লাভ করে ফেরতে পারেন।
আমিরাত বিমানের যাত্রীসেবার মানও সন্তোষজনক।
প্রথমেই দেয়া হয় গরম ভেজা টাওয়েল। এসি’র হিমশীতল ঠান্ডায় মুখে চামড়ায় টান টান অবস্থার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা। এর একটু পরেই চা-নাস্তা। অথবা কফি নাস্তা। আরো কিছুক্ষণ পরে লাঞ্চ অথবা ডিনার।
প্রতিটি সিটের সামনে রয়েছে খাবারে ম্যানু। আপনি ম্যানু দেখে ওর্ডার দিতে পারেন। মাছ-মাংস সবই রয়েছে।
বিমানের খাবারের মান অবশ্যই উন্নত। তারপরও আপনি যদি বিমানের রেগুলার যাত্রী না হন, তাহলে আপনি তৃড্তি করে খেতে পারবেন না, কী যেন একটি পারফিউম মেশানো থাকে সেই খাবারে।
আপনি অভ্যস্থ না হলে খেতে পারবেন না। ঠিক যেমনটি ঘটে থাকে আমার ক্ষেত্রে।
কিছুক্ষণ পরপর এয়ারহোষ্টেস মেয়েরা এসে আপনার কাছে ক্ষমা চেয়ে (এক্সকিউজমি বলে) আপনার কিছু লাগবে কিনা-জিজ্ঞেস করবে। চা? কফি? ড্রিংকস? আপনি এ্যালকোহলিক হলে সেই ব্যবস্থাও রয়েছে। তবে আফসোস, পানের কোনো ব্যবস্থা নেই।
ক্রমশ-----
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।