প্রায় ১৫ হাজার ফুট উপর দিয়ে ছুটে চললাম আমরা। কলকাতা, আহমদাবাদ, হায়দারাবাদ, মাসকাট এর উপর দিয়ে। অনেকগুলো সংশয়যুক্ত প্রশ্ন ঘিরে ধরলো আমাকে। বিষয়গুলো নিয়ে ভাবতে লাগলাম আমি। ভাবনাগুলো আমাকে কাবু করে ফেললো।
অস্বস্থি এসে দানা বাঁধতে লাগালো আস্তে আস্তে। আমি হারিয়ে গেলাম অমীমাংসিত ভাবনার অকুল সমুদ্রে।
প্রথমেই আমার মনে হল বিমানগুলোতে শুধু মেয়েরাই থাকে কেন? যাত্রীদের খেদমতের জন্য ছেলেদেরও থাকলে সমস্যা কোথায়?
এরপর একই সাথে বেশ কিছু অস্বস্থিকর ভাবনা এসে ঘিরে ফেললো আমাকে। ভাবনাগুলোর কোনো মীমাংসা জানা ছিল না আমার। যেমন-
১. হাজার হাজার টন ওজনের ভারি বিমানগুলো বাতাসে উপর থাকছে কেমন করে?
২. আকাশে তো আর চিন-মৈত্রী বা জাপান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশীপ ধরণের যৌথ উদ্যোগে আলাদা আলাদা রোড তৈরি করে রাখা হয়নি।
তাহলে বিমানগুলো রাস্তা খোঁজে পায় কেমন করে? তাছাড়া বলা হয় দুবাই গিয়ে বিমানগুলো রোড ঠিক করে। এর মানেই বা কী?
৩. মহাকাশের আবহাওয়া হঠাৎ খারাপ হয়ে গেলে বা সামনে ঝড়ের তান্ডব থাকলে সেটা অভারকাম করার ব্যবস্থা কী?
৪. পরস্পর বিপরীত দিক থেকে সমান উচ্চতায় আসা দু’টি বিমানের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষও তো হতে পারে। এই ভয়াবহ সম্ভাবনাটি এড়ানোর পদ্ধতি কী?
প্রশ্নগুলো অমীমাংসিত রেখেই আমি মনোনিবেশ করলাম মনিটরে। ভয় তাড়ানোর জন্য কিছু একটা নিয়ে ব্যস্ত থাকা আর কি! প্রথমে ঘুরে ঘুরে দেখলাম দুবাই বিমান বন্দর। তারপর দুবাই এর পর্যটন এলাকা।
সী-বিচ। আরো অনেক কিছু।
( এই ফাঁকে জানিয়ে রাখি, দেশে ফিরে আমি আমার অজ্ঞতাপ্রসূত সংসয়গুলোর মীমাংসা খোঁজে পেয়েছি। সেটা আগামীকাল শেয়ার করা হবে। )
প্রায় আড়াই ঘন্টা জার্নি করার পর আমাদের বিমানের অবস্থান লক্ষ্য করলাম আরব সাগরের উপরে।
এতক্ষণ ছটফট করে কথা বলা মুছাকে লক্ষ্য করলাম হঠাৎ চুপ হয়ে গেল। পকেট থেকে তসবীহ বের করে টিপতে লাগালো। আমি বললাম, কী ব্যাপার মুছা? হঠাৎ চুপ হয়ে গেলে যে?
সে বললো, ‘‘আমরা এখন আরব সাগরের উপরে আছি। সাগরের উপর বিমান আসলে বরাবরই আমার খুব ভয় করে। ’’
এমনিতেই আমি নিয়মিত বিমানযাত্রী নই।
মুছার কথায় আমারও ভয় বেড়ে গেল। মনে মনে আল্লাহকে স্মরণ করতে লাগলাম। তখন একটি অলুক্ষণে কথা মনে আসলো আমার। কিন্তু পরিবেশ ও অবস্থানের কারণে সেটা আর মুখ ফুটে প্রকাশ করলাম না। অবশ্য বিমান থেকে নামার পর আমি মুছাকে বললাম,
আচ্ছা মুছা, সাগরের উপর বিমান থাকলে তোমার বাড়তি ভয় পাবার কী আছে? আল্লাহ না করুক, ১৫ হাজার ফিট উপর থেকে বিমান কখনো এক্সিডেন্ড করলে কোথায় পড়লো, কী আসে যায়? সাগরে পড়ুক আর পাহাড়ে অথবা মরুভুমিতে, ফলাফল তো সমানই।
আল্লাহর অলৌকিক সাহায্য না আসলে তো সবাইকেই মারা যেতে হবে। তাহলে---
মুছা আমাকে জবাব দিল, সাগরের উপরে বিমান থাকলে সাগর নাকি বিমানকে টানে। এজন্যই তার ভয় হয়। মুছা আমার থেকে বেশি ভ্রমণ করেছে বিমানে। তাই তার যুক্তি আমাকে মেনে নেয়া ছাড়া উপায় ছিল না।
এক সময় মনিটরে লক্ষ্য করলাম আমরা আরব সাগর ক্রস করে ফেলেছি। মনে সাহস ফিরে এলো। মুছার তসবীহও হাত থেকে চলে গেলো পকেটে। বিমান থেকে সবাইকে সিট বেল্ট বাঁধতে অনুরোধ জানানো হচ্ছে। মনিটরের দিকে তাকিয়ে দেখলাম Distance to Dubai 150 k.m. Time to Dubai 15 Minutes.. সিট বেল্ট বেধে টাইট হয়ে বসলাম।
লোকাল টাইম রাত ১২টায় (বাংলাদেশের ডিজিটাল টাইম রাত ৩টা) আমরা অবতরণ করলাম সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে।
আমার জীবনের প্রথম কোনো আরব দেশ ভ্রমণ। মনে অন্যরকম শিহরণ অনুভব করতে লাগলাম। বিমান থেকে নামার আগেই টিসু দিয়ে ঠুঁট-মুখ মুছে ফেললাম ভাল করে। বিমানে পান খাওয়ার ব্যাপারটি এ্যামিরেটস ক্রু’রা খুব ভাল চোখে দেখে, এটা ভাবার কোনো কারণ নেই।
খুব লুকিয়ে পান খেতে হয়েছে বিমানে। ভাস্যিস, বিমানে কম্বল সরবরাহ করা হয়। নিজেদেরকে পুরোটা কম্বলের ভেতরে ঢুকিয়ে ফেলে মোটামুটি নিরাপদেই পান খাওয়ার মহৎ কর্মটি করা গেছে।
কিন্তু দুবাই বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ নাকি পানের’চে খারাপ আর কোনো অখাদ্য আল্লাহর জমীনে আছে বলে মনে করে না। শুধু সাথে পান-সুপারী বহনের অপরাধেই অনেক বাঙালিকে এয়ারপোর্ট থেকে ফিরতি বিমানে উঠিয়ে দেয়ার নজিরও নাকি আছে।
আমার কনসালটেন্ট আহাদ ভাই আগেই আমাকে সতর্ক করে দিয়েছেন।
তবুও জীবনের ঝুঁকি (!) নিয়ে পান নিয়ে গেছি সাথে। বাঘের ভয়ে ছালগ পালন ছেড়ে দেয়ার তো কোনো মানে হয় না। তবে অবস্থা বিবেচনায় বিমান থেকে নামার আগে ঠুঁট-মুখ ভাল করে পরিস্কার করে নিলাম। আস্তে আস্তে প্রবেশ করলাম দুবাই আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে।
ক্রমশ--------
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।