বাঙালির দেশপ্রেম , বাঙালির রাজনীতি
---------------------------------------------
একটি ছোট্ট ঘটনা দিয়ে লেখাটি শুরু করছি। নিউইয়র্কের রাস্তা দিয়ে হাঁটছি। হঠাৎ একজনের ডাকে থমকে দাঁড়ালাম। একটি আঞ্চলিক সংগঠনের নেতা তিনি। আমাকে পেয়ে যেন তিনি আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেলেন।
বললেন, তিনি আমাকে খুঁজছিলেন। বললাম, ফোন করলেই পারতেন। তিনি বললেন, না সরাসরি সাক্ষাতে আপনাকে সংবাদটি দিতে চাই। আমি মনে করলাম বিয়েশাদির কোনো দাওয়াত হবে বোধহয়। তিনি বলতে থাকলেন, 'আপনি শুনেছেন কিনা জানি না।
আমি তো একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেছি। ' শুনে কিছুটা থমকে গেলাম আমি। বাংলাদেশে হলে তো থমকে যেতাম না। এটা তো আমেরিকা। ডেমোক্রেটিক এবং রিপাবলিকান দুটি দলই নিয়ন্ত্রণ করছে এদেশের রাজনীতি।
নামসর্বস্ব দল আছে আরো দুটি। ওগুলোর নামও জানেন না সিংহভাগ মার্কিনিরা।
ভদ্রলোক আমার ভুল ভাঙালেন। বললেন, বাংলাদেশের রাজনীতির মৌলিক পরিবর্তন সাধনের জন্যই দলটি গঠন করেছি। দেশে চলে যাবো।
গিয়ে গণমানুষকে সুসংহত করে রাজনীতি করবো। আমার বিস্ময়তা মিনিটেই কেটে গেলো। বাংলাদেশ থেকে তিনি অভিবাসী হয়ে ভাগ্যান্বেষণে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন। এখন আবার রাজনীতি করার জন্য বাংলাদেশে চলে যাবেন। রাজনৈতিক দলও গঠন করে ফেলেছেন।
তা আর নতুন কি!২০০৬ সালের ঘটনা এটি।
প্রবাসের আরেকজন ব্যক্তিকে জানি। তিনি এক সময় বাংলাদেশের একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ২০০১ সালের নির্বাচনের আগে তিনি তার একটি ফর্মুলার কথা আমাকে বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, তিনিও বাংলাদেশে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করবেন।
তার আইডিয়া হচ্ছে, তিনি একশত জন প্রার্থীকে তার দল থেকে সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন দেবেন। এ জন্য তিনি প্রত্যেক প্রার্থীর কাছ থেকে নেবেন এক লাখ টাকা করে। সেই হিসেবে একশত জনের কাছ থেকে তার আয় হবে এক কোটি টাকা। তিনি বলেছিলেন, এর চেয়ে সহজ আয়ের পথ আর কী হতে পারে? তাই এই সহজ আয়টি আমি করবোই ভাবছি। সেই নেতা দেশে গিয়েছিলেন।
দলও গঠন করেছেন শুনেছি। তবে কতোজন প্রার্থীর কাছ থেকে এক লাখ টাকা করে নিয়েছেন সেই হিসাব আমি জানি না। জানার চেষ্টাও করিনি কখনো।
দুই.
সিলেটের এক রাজনৈতিক নেতা ছক্কা ছয়ফুর রহমানের কথা দেশবাসীর মনে আছে। তিনি প্রেসিডেন্ট প্রার্থী থেকে উপজেলার চেয়ারম্যান পর্যন্ত হয়েছিলেন।
তারও নিজস্ব একটি দল ছিল। এই বাংলাদেশে সবই সম্ভব এবং সবচেয়ে সহজ কাজটি হচ্ছে রাজনীতি করা। প্রবাদ আছে, দুজন আমেরিকান একত্রে মিলিত হলে বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা করে। দুজন ব্রিটিশ একত্র হলে শিক্ষা নিয়ে আলোচনা করে। দুজন চীনা একত্র হলে ব্যবসা নিয়ে মতবিনিময় করে আর দুজন বাঙালি একত্র হলে গঠন করে একটি রাজনৈতিক দল!
ইউরোপ এবং আমেরিকার বিভিন্ন দেশ ঘুরে এবং লব্ধ অভিজ্ঞতার আলোকে যে ধারণাটি আমার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তা হচ্ছে রাজনীতি হচ্ছে রাষ্ট্রের জনগণের কল্যাণে নিবেদিত করার একটি অন্যতম ধারা।
ইউরোপে কিংবা আমেরিকায় যারা রাজনীতি করেন কিংবা করতে চান তারা উঠে আসেন রাজনীতির তৃণমূল থেকে। খুব কাছে থেকে বছরের পর বছর তারা রাজনীতি সংশ্লিষ্ট কাজে আত্মনিয়োগ করেন। করেন রাজনীতি বিষয়ে প্রচুর পড়াশোনা। আর দলে যোগ দিলে অনেকগুলো প্রাইমারিতে নির্বাচিত হওয়ার পর, অনেকগুলো সিলেকশন বোর্ডের মুখোমুখি হওয়ার পরই কোনো পদে দলীয় প্রার্থী মনোনীত হতে পারেন। সুসভ্য রাজনৈতিক ধারায় এর কোনো ব্যতিক্রম ঘটে না।
ঘটার কোনো সম্ভাবনাও থাকে না। তীব্র প্রতিযোগিতাকে অতিক্রম করেই তারপর রাজনীতির পিঁড়িতে শুভ মহরত হয় একজন রাজনীতিকের।
নিউইয়র্কে আমার এলাকার কংগ্রেসওম্যান হচ্ছেন মিস ক্যারোলিন বি. মেলোনি। ক্যারোলিন মেলোনির একটি বিশেষ সুখ্যাতি আছে। তিনি বিভিন্ন অভিবাসী কমিউনিটির মানুষের ঘনিষ্ঠ বন্ধু, সহযোগী।
যেকোনো লিগ্যাল প্রয়োজনে মার্কিন কংগ্রেসওম্যান ক্যারোলিন মেলোনির অফিসের দ্বারস্খ হলে সাহায্য পাওয়া যাবে। এমন ভরসা খুব সহজে করা যায়।
একটি রাজনৈতিক সভায় ক্যারোলিন একটি কথা বলেছিলেন। কথাটি আজীবন মনে রাখার মতো। তিনি বলেছিলেন, 'সংবিধান দ্বারা রাষ্ট্র পরিচালিত হয়।
আর রাজনীতি পরিচালিত হয় গণবিধান দ্বারা। জনগণের আশা-আকাংখার প্রতিফলন ঘটিয়ে বিধান প্রণয়ন করার নামই গণবিধান। যে দল বা রাজনৈতিক শক্তি গণমানুষের প্রয়োজন-স্বপ্নকে ধারণ করে নীতি প্রণয়ন এবং প্রয়োগ করতে পারে তারাই সার্থক রাজনীতিবিদ। ' মিস মেলোনি প্রয়াত মার্কিন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের সেই অমর বাণী 'জনগণের দ্বারা সরকার, জনগণের জন্য সরকার এবং জনগণই সরকার' উচ্চারণ করেছিলেন সঙ্গে সঙ্গেই। বলেছিলেন, আমি শুধু মার্কিনি জনগণ নয় গোটা বিশ্বের মানবসমাজের আত্মার স্বপ্নের কথা অনুধাবন করতে পারি।
আর পারি বলেই 'ইমিগ্র্যান্টস আমেরিকান'দের পাশে এসে দাঁড়াই তাদের প্রাথমিক সাহায্যের জন্য।
মার্কিন কংগ্রেসওম্যান মিস মেলোনির ভাষায় এই যে 'গণবিধান' তা কি বাংলাদেশের ওই শতাধিক রাজনৈতিক দলের নেতারা জানেন কিংবা বুঝেন? যদি বুঝতেন তবে নিজেরা একেকটি দল গঠন করে সিল,প্যাড সর্বস্ব রাজনীতি করতেন না। দেশেরও এমন দুরবস্খা হতো না। বরং তারা বাংলাদেশের বাঙালি জাতি সত্তার স্বপক্ষের রাজনীতি করতেন। তারা এই সহজ-সরল জনগণের স্বপ্ন সম্ভারকে পকেটবন্দী করে বাজারে বিক্রি করার পাঁয়তারা করতেন না।
তারা জিম্মি করে রাখতে চাইতেন না দেশের রাজনীতি।
তিন.
রাজনীতিতে সংলাপ হতেই পারে। সেপ্টেম্বর ইলেভেনের পর যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকানরা কয়েক ঘন্টার মধ্যেই মিলিত হয়েছিলেন জাতীয় সংলাপে। বলা হয়েছিল, এই জাতীয় সংকটে আমরা ঐক্যবদ্ধ। যেকোনো পরিস্খিতি মোকাবিলায় প্রেসিডেন্টকে দেওয়া হয়েছিল বিশেষ দায়িত্ব।
বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে তেমনি আলোচনা করে জাতির কল্যাণে ব্রত হওয়া খুব জরুরি।
আমি খুব স্পষ্ট মনে করি একটি ''হাওয়া ভবন''
বাংলাদেশে জন্ম না নিলে আজ এমন পরিস্থিতি হতোনা।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া তো এক সময় বলেছিলেন 'শিশু' ও 'পাগল' ছাড়া কেউ নাকি নিরপেক্ষ হতে পারে না। আজ সেই তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতিই তো চালু হয়েছে বাংলাদেশে। তাহলে আজ জাতীয় প্রয়োজনে সংলাপে আপত্তি কোথায়?
চাঁদাবজি মামলা্য় শেখ হাসিনার প্রাথমিক ভাবে জয় হয়েছে বলা যায়।
কিন্তু সরকার যদি প্রভাব খাটাতে চায় ?
একটি কথা মনে রাখতে হবে, রাজনৈতিক দলগুলো এখনো
দেশে বড় ফ্যাক্টর। বর্তমান ক্ষমতাসীনরা যে প্রক্রিয়ায় এক্সিট
চাইছেন ,তা তাদের দেশপ্রেম কে বুমেরাং করে ফেলতে পারে।
########
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।