বিজ্ঞান হলো প্রকৃত সত্য উদঘাটনের চলমান প্রক্রিয়া, নিরেট সত্য নয়। কথা, কাজ ও আন্তরীক বিশ্বাসের সমন্বয়ে গঠিত হয় পূর্ণাঙ্গ ঈমান, ঈমানে রয়েছে মৌলিক ৭টি দিক। এগুলো সম্পর্কে তাই সুস্পষ্ট ধারণা ও পরিচ্ছন্ন জ্ঞান ও বিশ্বাস থাকা একান- অপরিহার্য। নতুবা পরিপূর্ণ ঈমানদার হওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।
আল্লাহর প্রতি ঈমানঃ আল্লাহর প্রতি ঈমানের মূল কথা হলো ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’।
এ ছোট বাক্যটি অত্যন্ত ব্যাপক তাৎপর্যবহনকারী এর অত্যাধিক। এর মর্ম সংক্ষেপে বলতে গেলে বলতে হবে যে, কোন সত্ত্বাই নেই যে ইলাহ হওয়ার যোগ্যতা রাখে। কেবল আল্লাহই সে যোগ্যতার একমাত্র অধিকারী। আর আল্লাহ যে একমাত্র ইলাহ হওযার যোগ্যতা রাখেন তার কারণ হলো একমাত্র তিনিই অপরের অমুখাপেক্ষী, অন্য নিরপেক্ষ আত্মনির্ভরশীল ও চিরঞ্জীব। তিনি চিরকাল আছেন চিরদিন থাকবেন।
তিনি একচ্ছত্র শাসক ও সর্বোচ্চ ক্ষাতবান, তাঁর জ্ঞান সর্ব পরিব্যাপ্ত তাঁর রহমত ও অনুগ্রহ সবার জন্য প্রসারিত তাঁর শক্তিমত্তার উপর বিজয়ী তাঁর হিকমত ও বুদ্ধিমত্তার কোন ত্রুটি বিচ্যুতি নেই; তাঁর আদল ও ইনসাফে জুলুমের চিহ্ন পর্যন্ত নেই। তিনি জীবনদাত্য ও জীবন ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণাদি সরবরাহকারী। তিনি ভাল-মন্দ এবং লাভ ও ক্ষতির যাবতীয় শক্তির অধিকারী যার অনুগ্রহ ও হেফাজতের সবাই মুখাপেক্ষী, তাঁর দিকেই সকল সৃষ্ট বস'র প্রত্যাবর্তনশীল, তিনি সবার হিসাব গ্রহণকারী; শাস্তি ও পুরস্কারদানের একমাত্র মালিক পরন' খোদায়ী সংক্রান- এ গুণাবলী বিভাজ্য ও খন্ডনীয় নয় যে, একই সময়ে একাধিক খোদা থাকবেন এবং তারা উল্লিখিত পুনরাজী কিংবা তার একটি অংশ দ্বারা গুণান্বিত হবেন। আবার এটা কোন কালগত সাময়ীক বা স্থানান্তর যোগ্য গুণাবলীও নয়।
ফেরেশতার প্রতি ঈমানঃ ফেরেশতার প্রতি বিশ্বাস বলতে বুঝায় ঐ প্রত্যয় মনে জাগ্রত করা যে, ফেরেশতা খোদার সৃষ্ট বান্দাহ ও গোলাম।
তাঁরা খোদার কোন কাজের অংশীদার নয়।
ফেরেশতা সম্পর্কে একটা মোটামুটি ধারণা সমস্ত জাতি ও ধর্মের মধ্যেই কোননা কোন রূপে বর্তমান আছে। সেই ধারণার উপরই বিভিন্ন রূপ প্রত্যয়ের ইমারত গড়ে উঠেছে। এজন্য কারও মতে, ফেরেশতা প্রকৃতির সন্তান ও বিশ্ব ব্যবস্থার পরিচালক, কারও ধারণায় তারা দেবতা এবং প্রকৃতি বিভিন্ন কর্মকান্ডের দায়ীত্বশীল, কারও মতে খোদার প্রতিনিধি ও সাহায্যকারী আবার কারও মতে তারা খোদার সন্তান। পবিত্র কুরআনের ঘোষণার তারা শুধুমাত্র আল্লাহর হুকুমের গোলাম ও তারা সৃষ্ট বান্দা এ বিশ্বাসই রাখতে হবে।
যেমন- কাফেররা বললঃ দয়াময় কাউকে পুত্র বানিয়েছেন, পবিত্র সেই সত্ত্বা, তারা (ফেরেশতারা) তো তার সম্মানিত বান্দাহ মাত্র। তাঁর সামনে এগিয়ে কথা পর্যন- বলতে পারেনা। তাঁরা শুধু কতটুকই করে যতটুকু তিনি নির্দেশ দেন। যারা কিছু তাদের সামনে এবং পিছনে রয়েছে খোদা তার সবই জানেন। তারা খোদার মনপুত জন ছাড়া আর কারও পক্ষে সুপারিশ করতে পারে না।
(আল আম্বিয়াঃ ২৬-২৮)
রাসূলগণের প্রতি বিশ্বাসঃ মানুষের মনের মধ্যেই আল্লাহ ভাল ও মন্দ বিচার-বুদ্ধি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। খোদায়ী নির্দেশের আলোকে উক্ত শক্তি তাকে ভাল কাজে উদ্বু্দ্ধ ও মন্দ কাজে নিরুৎসাহিত করে। কিন' যেহেতু এ শক্তি নির্দেশনা অস্পষ্ট তাই আল্লাহ তাআলা বাহ্যিক দিক থেকে এ অভাব পূরণ করেছেন। তা হলো- যুগে যুগে বিভিন্ন জাতির নিকট তাঁর মনোনীত বান্দাদের স্বীয় বার্তাবাহক নবী রাসূল করে পাঠাইয়াছেন। এ ধারাবাহিকতার সর্বশেষ নবী ও রাসূল হলেন মুহাম্মদ (সা)।
তাঁর আগমণের পরে সকল আমাদের যার - চেয়েছেন সেভাবে ভাগহ্য নির্ধারণ করে রেখেছেন এ বিশ্বাস রাখতে হবে।
পুনরুত্থানে বিশ্বাসঃ আমাদের ইহলৌকিক জীবনের যাবতীয় কর্মকান্ডের বিষয়ে একদিন আল্লাহর নিকট জজাব দিতে হবে। সেদিনের একমাত্র অধিপতি থাকবেন মহান প্রভু আল্লাহ তাআলা। সেদিন কারও কোন কর্তৃত্ব থাকবেনা বরং সবাই বিচারের কাঠগড়ায় থাকবে কার কি ফলাফল সে আমলের, সে অনুযায়ীই নির্ধারিত হবে জান্নাত কিংবা জাহান্নাম। আর সেখানে থাকতে চিরস্থায়ীভাবে এ দিবসের নাম পুনরুত্থান দিবস।
এ বিষয়ে দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে জীবনের সকল কর্মকান্ড পরিচালনা করতে হবে।
প্রভাবঃ
দৃষ্টির প্রশস্ততাঃ ঈমানের প্রভাবে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি প্রশস- হয়। স্বার্থান্ধ দৃষ্টিভঙ্গি মানুষকে সংকীর্ণ করে তুলে। ঈমানী শক্তি এ অবস'া থেকে মুক্তি দেয়। তার বন্ধুত্ব, শত্রুতা, প্রীতি বা ঘৃনা নিজের জন্য নয় বরং তা খোদার জন্যই নির্ধারিত হয়।
ঈমানদার ব্যক্তি লক্ষ্য করে যে, যে খোদাকে আমি মানি তিনি শুধু আমার, আমার বংশের কিংবা জাতির স্রষ্টা নন, বরং তিনি সমগ্র বিশ্বের স্রষ্টা ও পরিচালক।
আত্ম সম্ভ্রমঃ ঈমান মানুষকে হীনতা থেকে উদ্ধার করে আত্ম সম্মান ও আত্ম সম্ভ্রমের স-রে উন্নীত করে। বেঈমান অবস্থায় সে প্রতিটি সৃষ্ট বস্তুর নিকট সে মাথা নত করতো। তাদের সামনে হস- প্রসারিত করতো। এখন সে জানে যে, পৃথিবীর অন্যসব বস' ও তার মত সৃষ্ট।
সুতরাং তার কল্যাণ বা অকল্যাণ করার কারও কোন অধিকার নেই। নবী-রাসূলের নিয়মনীতি অকার্যকর হয়ে গেছে। তবে তাঁরা আল্লাহর পক্ষ থেকে সত্য বার্তাবাহক নবী ছিলেন এ বিশ্বাস রাখতে হবে। সাধারণ মানুষ তাদের মনগড়া রীতিনীতি দিয়ে সমাজ পরিচালনা করতে ইচ্ছা করবে কিন্তু তা সবই ভুল। বরং মহান স্রষ্টা আল্লাহ নির্দেশিত পন্থাই কেবল সঠিক এবং সে পথের একমাত্র প্রদর্শক নবী রাসূলগণ।
সুতরাং তাদেরকে পূর্ণাঙ্গ আনুগত্য করার মধ্যেই মূলত ঈমানের পূর্ণতা ও বাস-বতা নির্ভরশীল।
কিতাবের প্রতি ঈমানঃ নবুওয়াত ও কিতাব উভয়ই এক আল্লাহর তরফ থেকে আগত। খোদার জ্ঞান ও হিকমত তথা মানব-দানবের সৎপথ প্রদর্শনের নিমিত্তে প্রেরিত বার্তাবাহক হলেন নবী রাসূলগণ এবং সেই সকল বার্তা যে পাতায় লেখা তার নামই কিতাব। আল্লাহ নির্দেশিত এই প্রত্যাদেশ সম্বলিত কিতাবের প্রতি ঈমান আনতে হবে। এর অর্থ হল মানুষ আল্লাহর ওহী ছাড়া অন্য কিছুকেই নিজের পথের দিশা মনে করতে পারে না।
শুধুমাত্র অহী ছাড়া অন্য কিছুকেই নিজের পথের দিশা মনে করতে পারবে না। শুধুমাত্র অহীলব্ধ জ্ঞানই হবে তার সার্বিক জীবনে চলার পথের একমাত্র বাহন। এ ধারাবাহিকতার সর্বশেষ কিতাব হল আল কুরআন।
আখেরাতের প্রতি ঈমানঃ মানুষের ইহলৌকিক জীবন ক্ষণস্থায়ী। সকল কাজেরই যেমন- ফলাফল নির্ধারিত আছে।
তেমনই আমাদের এ সাময়িক দুনিয়াবী জীবনের ভাল ও মন্দ কাজের ফলাফল নিশ্চিতভাবে নির্ধারিত আছে। তা আমরা ভোগ করতে বাধ্য। সেটা এ জীবনের নয়, বরং তা মৃত্যুর পরবর্তী জীবনে। সেই বিশ্বাসের নামই আখেরাতে বিশ্বাস।
তাকদীরের ভাল মন্দের উপর বিশ্বাসঃ সৃষ্টিকর্তা মহান প্রভু আল্লাহ আমাদের ভাল মন্দের একচ্ছত্র মালিক।
বিনয় ও নম্রতাঃ ঈমানদার ব্যক্তির আত্মসম্মান তার শক্তি, সম্পদ কিংবা যোগ্যতা ও প্রতিভার বলে অর্জিত কোন মিথ্যা আত্ম সম্মান নয়। বরং এ হচ্ছে খোদার সঙ্গে নিজের এবং সমগ্র সৃষ্টি জগতের সম্পর্ককে যথাযথরূপে উপলব্ধি করার ফলশ্রুতি এ কারণেই ঈমানদার ব্যক্তিদের মধ্যে আত্মসম্মানের সঙ্গে বিনয় এবং আত্মসম্ভ্রমের সাথে নম্রতা ও কোমলতার অবিচ্ছিন্ন সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কেননা সে জানে যে খোদার শক্তি ক্ষমতার সামনে আমি সম্পূর্ণ অসহায়।
অলীক প্রত্যাশার বিলুপ্তিঃ ঈমানের আর এক স্বাভাবিক ফলশ্রুতি হল, এর দ্বারা অপরিচয়জনিত সকল অলীক প্রত্যাশা ও মিথ্যা ভরসার পরিসমাপ্তি ঘটে। সেই সঙ্গে মানুষ খুব উত্তমরূপেই বুঝে নেয় যে তার জন্য নির্ভুল বিশ্বাস ও সৎকার্য ছাড়া মুক্তি ও কল্যাণের আর কোন পথ নেই।
আশাবাদ ও মানসীক শান্তিঃ মুমিনের পক্ষে ঈমান এক হচ্ছে আশা আকাংখার এক অফুরন- ভান্ডার। যেখান থেকে সে আন-রীক শক্তি ও আত্মিক প্রশানি- চিরস'ায়ী ও অবিচ্ছিন্ন উপকরণ পেতে থাকে তাকে যদি দুনিয়ার সকল দরজা থেকেও বঞ্চিত করা হয় তবুও সে এক খোদার অবলম্বনকে সর্বদা নিজের শক্তি হিসেবে ব্যবহার করে। তাঁর উপর নির্ভর করে যে, সর্বদা আশা, আকাংখায় উদ্দীপিত থাকে।
ধৈর্য ও নির্ভরতাঃ ঈমান মানুষকে এমন ধৈর্যশীল ও আল্লাহ নির্ভর করে তুলে যে, সারা দুনিয়ার বিপদাপদ, শত্রুতা, দুঃখ-কষ্ট, ক্ষয়ক্ষতি ও বিরুদ্ধ শক্তির একত্র অবস্থান তাকে তার সন্তান থেকে টলাতে পারে না।
বীরত্বঃ ঈমান আনয়নের ফলে মানুষের মাঝে ----- বীর্যবত্তা শৌর্যশীলতা সৃষ্টি হয়।
মানুষের মাঝে দুটি জিনিস থাকলে কাপুরুষে পরিণত হয়ঃ-
এক. জীবন পরিবার পরিজন ও সম্পদের ভালবাসা এবং
দুই.সৃষ্ট বস্তুর ভয়ভীতি, ঈমানের ফলে মানুষ সবচেয়ে ভাল বাসতে শেখে আল্লাহকে তাই সে তাঁরই সান্নিধ্য পেতে উদগ্রীক থাকে এবং কোন সৃষ্ট বস্তুকেই ভয়ের পায় না। ফলে সে বীর পুরুষে পরিণত হয়।
অল্পে তুষ্টি ও আত্ম-তৃপ্তিঃ ঈমান মানুষের মন থেকে লোভ লালসা ও হিংসা দ্বেষের ঘৃন্য প্রবণতাকে দুর করে দেয়। যা তাকে স্বার্থ উদ্ধার করার জন্য হীন ও অবৈধ পন্থা অবলম্বন করতে উদ্বুদ্ধ করে। এবং মানব সমাজে বিপর্যয় থেকে আনে।
ঈমানের সংগে মানুষের ভিতর অল্পে তুষ্টি ও আত্মতৃপ্তির সৃষ্টি হয়। সে অন্যায় পথে প্রতিযোগীতার বদলে আপন প্রভুর অনুগ্রহ অন্বেষণ করে সম্মানজনক পন্থায়।
নৈতিকতার সংশোধন ও কর্মের শৃংখলাঃ ঈমানের প্রভাবে সবচাইতে বেশী উপকৃত হয় সমাজ জীবন। এর দ্বারা সমাজের লোকদের মধ্যে দায়ীত্ববোধ জাগ্রত হয় লোকদের আত্মায় পবিত্রতা ও কাজকর্মে পরহেজগারী সৃষ্টি হয়। পারস্পরিক লেনদেন সুস্ঠু ও পরিশুদ্ধ হয়।
আইননুগত্যের চেতনা জাগ্রত হয়। অজানুবর্তিতা ও সংযম শৃংখলার যোগ্যতা সৃষ্টি হয় এবং লোকেরা এক প্রচণ্ড অদৃশ্য শক্তি বলে ভিতরে ভিতরে শুক্ত যুদ্ধ হতে একটি সৎ ও সংহত সমাজ গঠনের উপযোগী হয়ে একটি সৎ ও সংহত সমাজ গঠনের উপযোগী হয়ে উঠে।
ঈমানের প্রভাবেই সুখী-সমৃদ্ধ ও সুন্দর সমাজ গঠিত হয় এটা ঈমানের এক অলৌকিক শক্তি মাত্র।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।