আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঈমানের মেহনত

আল্লাহ ছাড়া মাবুদ নাই, মুহাম্মাদ(সঃ) আল্লাহর রসুল। মাখলুক কিছুই করতে পারে না আল্লাহ ছাড়া, আল্লাহ সব কিছু করতে পারেন মাখলুক ছাড়া। এই পৃথিবীতে যত নিয়ম বা তরিকা আছে, তার মদ্ধে একমাত্র হুজুর (সঃ) এর তরিকায় শান্তি ও সফলতা।

যদি কেউ আল্লাহ্ তায়ালার কাছে কবুল হইতে চায়, আল্লাহ্ তায়ালা তার পদ, ডিগ্রি, বংশ বা অন্য কোন যোগ্যতা দেখেন না। আল্লাহ্ তায়ালা দেখেন তার সিফাত বা গুন।

গুন গুলির মধ্যে সবচেয়ে বড় গুন হলো ঈমানের গুন। ঈমান ঈমান কি জিনিস ? রাসূলাল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর পূর্ণ আস্থা থাকার কারণে, আল্লাহ্ তায়ালার পক্ষ হতে তিনি যেসব গায়েবের খবর নিয়ে এসেছেন, সেগুলোকে বিনা দ্বিধায় মানিয়া লওয়ার নাম হলো ঈমান। সাহাবিদের রাসূলাল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর কি পরিমাণ আস্থা ছিল তা একটি ঘটনার মাধ্যমে বোঝা যায়। যেমন: একবার রাসূলাল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ইহুদির কাছ থেকে বাকীতে একটি ঘোড়া ক্রয় করেন এবং বলেন যে, এর মূল্য আমি বাড়ীতে গিয়ে পরিশোধ করব। ইহুদি ঘোড়া ওয়ালা এতে রাজি হয়ে গেল।

এরপর রাসূলাল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও ইহুদি ঘোড়া ওয়ালা রাসূলাল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাড়ির দিকে হাটতে শুরু করলেন। পথিমধ্যে রাসূলাল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোড়া ওয়ালার আগে চলে গেলেন এবং ইহুদি ঘোড়া ওয়ালা পিছনে ছিল। এরপর কিছু লোক ইহুদি ঘোড়া ওয়ালার কাছে ঘোড়া দেখে ঘোড়ার দাম জানতে চাইলো, হে ঘোড়া ওয়ালা তুমি কি এটা বিক্রি করবে। যেহেতু ইহুদি ঘোড়া ওয়ালার ঈমান নাই সেহেতু সে বেশী লাভের আশায় বললো হ্যাঁ অবশ্যই এটা তো বিক্রয়ের জন্যই আনা হয়েছে এবং রাসূলাল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর থেকে বেশী দাম বলে দর কষাকষি শুরু করলো। রাসূলাল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটা দেখতে পেয়ে ফিরে এসে ইহুদি ঘোড়া ওয়ালকে জিজ্ঞাসা করলেন হে ঘোড়া ওয়ালা আমি না তোমার কাছ থেকে ঘোড়া বাকিতে ক্রয় করেছি এবং বলেছি বাড়িতে গিয়ে ঘোড়ার মূল্য পরিশোধ করবো।

ইহুদি ঘোড়া ওয়ালা বললো কখন আপনি আমার কাছ থেকে ঘোড়া কিনলেন, যদি আপনি ঘোড়া কিনেই থাকেন তাহলে আপনার সাক্ষী কোথায় তখন রাসূলাল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছু না বলে চুপ করে রইলেন। তখন এক সাহাবী নাম খোজাইমা (রাযিঃ) দুর থেকে হাত ঈশারা করে বললেন ইয়া রাসূলাল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমি আপনার সাক্ষী, আমি সাক্ষী দিচ্ছি আপনি এ ইহুদি ঘোড়া ওয়ালার কাছ থেকে বাকীতে ঘোড়া ক্রয় করেছেন এবং বলছেন যে, এর মূল্য আপনি বাড়ীতে গিয়ে পরিশোধ করতে চেয়েছেন। এরপর রাসূলাল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোড়া পেয়ে গেলেন এবং সবাই চলে যাওয়ার পর খোজাইমা (রাযিঃ) কে জিজ্ঞাসা করলেন হে খোজাইমা তুমিতো আমার ঘোড়া ক্রয় করার সময় ছিলে না বা তুমি দেখও নাই তুমি কিভাবে সাক্ষী দিলে? তখন খোজাইমা (রাযিঃ) বললেন ইয়া রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনি আমাদেরকে আল্লাহ্র কথা বলেছেন আল্লাহ্কে দেখি নাই বিশ্বাস করেছি। জান্নাতের কথা বলেছেন জান্নাত কি জিনিস দেখি নাই বিশ্বাস করেছি, জাহান্নামের কথা বলেছেন জাহান্নাম কি জিনিস দেখি নাই বিশ্বাস করেছি, আজ আপনি সামান্য একটা ঘোড়ার কথা বলেছেন এটাওকি আমাকে দেখে সাক্ষী দিতে হবে? এরপর রাসূলাল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খোজাইমা (রাযিঃ) এর উপর খুশি হয়ে গেলেন এবং বললেন তুমি ঠিক বলেছো। এবং আরও বললেন হে খোজাইমা এখন থেকে তোমার একজনের সাক্ষী দুজনের সাক্ষীর সমতুল্য।

এরপর থেকে সাহাবী (রাযিঃ) গন বিয়ে করার সময় খোজাইমা (রাযিঃ) এর সাক্ষীর মাধ্যমে বিয়ে করতেন। ঈমানী কালেমা হচ্ছেঃ লা-ইলাহা-ইল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ। অর্থ: আল্লাহ্ ছাড়া কোন মাবুদ নাই। হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ্ তায়ালার রাসুল। ঈমানের উদ্দেশ্যঃ দিলের এক্বীন ছহীহ্ করাঃ দিল হতে মাখলুকের এক্বীন বের করে একমাত্র আল্লাহ্ পাকের এক্বীন দিলে বসাতে হবে।

অর্থাৎ মাখলুক কোন কিছুই করতে পারে না। যা কিছু হয় তা একমাত্র আল্লাহ্ তায়ালার পক্ষ থেকেই হয়। তরিকার এক্বীন ছহীহ্ করাঃ হুজুরে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর তরীকায় একশত ভাগের একশত ভাগ শান্তি ও কামিয়াবি। অন্য সকল তরীকায় একশত ভাগের একশত ভাগ নাকামিয়াবি ও ধ্বংস। অন্যসকল তরিকার এক্বীন দিল থেকে বের করে একমাত্র হুজুরে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর তরীকার এক্বীন দিলে বসানো।

জজবার এক্বীন সহীহ্ করাঃ দুনিয়া সুখেরও জায়গা না দুঃখেরও জায়গা না। চিরস্থায়ী সুখের জায়গা হচ্ছে জান্নাত আর চিরস্থায়ী দুঃখের জায়গা হচ্ছে জাহান্নাম। এ জন্য দুনিয়ামুখী জজবাকে আখেরাত মুখী করা এবং মালমুখী জজবাকে আমলমুখী করা। ঈমানের লাভঃ ১) যদি কেউ র্জারা পরিমাণ ঈমান নিয়ে এ দুনিয়া থেকে বিদায় হয়ে যায়, তবে সে দশ দুনিয়ার সমান জান্নাত পাবে। ২) যতদিন পর্যন্ত দুনিয়ার মধ্যে একজন ঈমান ওয়ালা লোক থাকবে ততদিন পর্যন্ত দুনিয়া ধ্বংস হবে না।

তিন লাইনে মেহনত করে ঈমান হাসিল করতে হবেঃ দাওয়াত, মশ্ক ও দোয়া। দাওয়াতঃ ঘরে এবং মসজিদে হালকা বানিয়ে চার লাইনের কথা বলে দাওয়াত দিতে হবে। আল্লাহ্ তায়ালার রুববিয়াত, কুদরত, আজমত, ওহাদানিয়াত এর দাওয়াত দিতে হবে। আল্লাহ্ তায়ালা রব, সমস্ত মাখলুকের পালনকর্তা। সমস্ত সৃষ্টি জগতের রিজিকের ব্যবস্থা করেন, এজন্য আল্লাহ্ তায়ালার রুববিয়াতের যত কথা আছে বেশি বেশি খুলে খুলে বলে দাওয়াত দিতে হবে।

তিন জায়গায় আল্লাহ্ তায়লার কুদরত রয়েছে। কুরআন শরীফে আল্লাহ্ তায়লার কুদরতের কথা আছে। সারা কায়নাতে আল্লাহ্ তায়ালার কুদরতের কথা আছে। কায়েনাতের মধ্যে আল্লাহ্ তায়ালার যেসব কুদরত আছে সে সব কুদরতের আলোচনা না করিলে মানুষ কায়েনাতের পূজারী হয়ে যাবে। মানুষের শরীরে আল্লাহ্ তায়ালার কুদরত আছে।

আল্লাহ্ তায়ালার বড়ত্বের কথা, চার জন বড় বড় ফেরেশতার কথা, এরকম আল্লাহ্ তায়ালার আজমতের যত কথা আছে বেশি বেশি খুলে খুলে বলে দাওয়াত দিতে হবে। আল্লাহ্ তায়ালা একক ভাবে সবকিছু চালান। এজন্য আল্লাহ্ তায়ালার ওহাদানিয়াতের যত কথা আছে বেশি বেশি খুলে খুলে বলে দাওয়াত দিতে হবে। দাওয়াত দিতে হবে নিজের জন্য। দ্বায়ী যে জিনিসের দাওয়াত দিবে আল্লাহ্ তায়ালা ঐ জিনিসের হাকীকত তার জিন্দেগীতে এনে দিবেন।

যেখানে মাখলুক থেকে হয় এই বিশ্বাস বা কথা হয় সেখানে গিয়ে আল্লাহ্ থেকে হয়, আল্লাহ্ই পালেন, করেন এই কথার দাওয়াত দিতে হবে। রাসূলাল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নতকে জিন্দা করার দাওয়াত দিতে হবে। যেই রাস্তা দিয়ে সুন্নত ছুটবে সেই রাস্তা দিয়ে বেদ’আত ঢুকবে। বিয়ে করা সুন্নত নয়, বরং সুন্নত তরীকায় বিয়ে করা সুন্নত। সুন্নতের উপর চললে, মুমিনদের দিলে মহব্বত পয়দা হয়, কাফিরদের দিলে ভয় পয়দা হয়, রুজিতে বরকত হয় ও দ্বীনের উপর টিকে থাকা সহজ হয়।

মশ্কঃ নির্জনে বসে একা একা চিন্তা করতে হবে। এতক্ষন যে জিনিস গুলোর দাওয়াত দেওয়া হলো সেগুলো হক কথা তা দিল সাক্ষ্য দেয়। দোয়াঃ আল্লাহ্ তায়ালা আমাকে কামেল ঈমান দান করেন এবং সাহাবী ওয়ালা ঈমান দান করেন। ঈমানের মুরতাদ হতে আমাকে হেফাজত করেন। ঈমানের এখলাছ হচ্ছেঃ ঈমান সকল হারাম হতে বাঁচিয়ে রাখবে।

ঈমানের হাকীকত তখনই বোঝা যাবে, যখন আমি কোন সমস্যার সম্মুখীন হই। আর আমার দিল প্রথমেই যদি বলে ইহা আল্লাহ্র তরফ থেকে হয়েছে। যেমন, পেট খারাপ হলে এই এক্বীন না হওয়া যে খানার দ্বারা পেটের সমস্যা হয়েছে বরং আল্লাহ্র তরফ থেকেই হয়েছে। লজ্জা যেমন মানুষ কে কাপড় পড়তে বাধ্য করে, তেমনি ঈমান মানুষকে আমল করতে বাধ্য করে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.