আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা চাই

চারদিকে এতো জীবিত মানুষ...মাঝে মাঝে লজ্জাই লাগে নিজেকে মৃত দেখলে.. ঘোষণা সমাজের নানাবিধ সমস্যা নিরসনে মানুষ যখন ঐক্যবদ্ধ হয় তখন সামাজিক আন্দোলনের সৃষ্টি হয়। বিগত ৪০ বছরে বাংলাদেশে অস্বাভাবিক মৃত্যু এক ভয়াবহ পরিণতির দিকে এগিয়ে চলেছে। প্রতিদিন বিভিন্ন দুর্ঘটনায় আমরা হারাচ্ছি প্রিয়জনদের। জঙ্গি/সন্ত্রাসীর বোমা আর গুলিতে, গণপিটুনিতে, ক্রসফায়ারে, সীমান্তে ভিনদেশী গুলিতে, দায়িত্বহীনতা ও অবহেলায়, আইন প্রয়োগকারীর নির্লিপ্ততায়, ফতোয়াবাজের প্ররোচনায়, সমাজের অবহেলা-লজ্জায় আত্মহননে, লঞ্চ ডুবি কিম্বা বাস/ট্রাক খাদে পড়ে, অদক্ষ ড্রাইভারের অসচেতনতায়, চাকায় পিষ্ট হয়ে, কাজ থেকে ফিরতে গুম হয়ে, আইন প্রয়োগকারীর হেফাজতে আমরা হারিয়ে যাচ্ছি। সাম্প্রতিক সময়ে আমরা হারিয়েছি চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ, সাংবাদিক মিশুক মুনীরসহ পাঁচ জনকে।

এর আগে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় ৪১ জন শিশুকে হারাই। শবেবরাতের রাতে আমিন বাজার কেবলার চরে গণপিটুনিতে আমরা হারাই ৬ জন ছাত্রকে, নোয়াখালীতে পুলিশ হেফাজতে গণপিটুনিতে মিলনকে হারাই। ক্রস ফায়ারে প্রতি নিয়ত হারাই স্বজন। সীমান্তে কাঁটাতারে ঝুলন্ত ফেলানি এখনো আমাদের তন্দ্রা হরণ করে। প্রতিদিন ঘটছে এধরনের বিভিন্ন ঘটনা আর অস্বাভাবিক মৃত্যুতে হারিয়ে যাচ্ছে অসংখ্য মানুষ।

আমরা মনে করি এগুলোর কোনটাই নিছক দুর্ঘটনা নয়। এগুলো একেকটি হত্যাকাণ্ড। যার জন্যে দায়ী দীর্ঘদিনের প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনা, নীতিনির্ধারকদের উদাসীনতা, সীমাহীন দুর্নীতি, প্রণোদনাহীন আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ, বিদ্যমান আইনের দুর্বলতা, গাড়ি চালকের প্রশিক্ষণের অভাব, অবৈধ পন্থায় গাড়ি চালনার লাইসেন্স প্রাপ্তি, ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচলের অনুমতি, ত্রুটিপূর্ণ ও অবৈজ্ঞানিক সড়ক নির্মাণ, সড়ক-বিভাজক না থাকা, সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে বিদ্যমান আইনের দুর্বলতা, গণপরিবহন ব্যবস্থা হিসেবে রেলকে প্রাধান্য না দেয়া, সর্বোপরি জনপ্রতিনিধি থেকে প্রশাসনের নিম্ন পর্যায় পর্যন্ত জবাবদিহিতার অভাব আজকের অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে চলা বাংলাদেশকে পৃথিবীর অন্যতম প্রধান দুর্ঘটনা কবলিত রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। প্রতিদিন নিরিহ মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। স্কুল পড়–য়া শিশু থেকে বিশ্ব বরেণ্য চলচ্চিত্রকার কেউ-ই এই হত্যাযজ্ঞ থেকে রেহাই পাচ্ছে না।

আমরা যে কেউ যে কোনো দিন নির্মম শিকার হতে পারি অস্বাভাবিক মৃত্যুর; কেবল নিহত নয়, হতে পারি পঙ্গু যেমন করে প্রতি বছর কয়েক হাজার মানুষকে স্থায়ীভাবে লিমনের মতো পঙ্গুত্বের জীবন বয়ে বেড়াতে হচ্ছে। যেকোনো সভ্য রাষ্ট্রের জন্য এটা লজ্জার। কোনো বিবেকবান মানুষই এ অবস্থা মেনে নিতে পারে না। বিবেকের সেই তাড়নায় গড়ে উঠেছে “ছাত্র-শিক্ষক-পেশাজীবী-জনতা”। সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক সামাজিক আন্দোলনের নাম “ছাত্র-শিক্ষক-পেশাজীবী-জনতা”।

এ আন্দোলন কোন দল, গোষ্ঠী বা পেশার বিরুদ্ধে নয়। আমরা স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা চাই। আর তার জন্যে চাই জনগণের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এই লক্ষ্য অর্জনে বিভিন্ন কর্মসূচী দেয়া হয়েছে। সারা দেশের অসংখ্য মানুষের সাড়া ছিল অভূতপূর্ব।

তাঁরা বিভিন্নভাবে আমাদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়েছেন। তাঁদের সমর্থন আমাদের কাজ ও দায়িত্বকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে; তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই এবং বাধা, বিঘ্ন, ধমক যাই আসুক না কেন সেই দায়িত্বের প্রতি অবিচল থেকে স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তার অধিকার আদায়ের এই আন্দোলনকে তার লক্ষ্য অর্জনে এগিয়ে নিয়ে যেতে আমরা দৃঢ় প্রত্যয়ী। দেশের বিভিন্ন ছাত্র, যুব, নারী, শ্রমিক, কৃষক, পেশাজীবী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দের পরামর্শে আমাদের দাবিগুলো আরও সুনির্দিষ্ট আকারে পুনর্বিন্যাস করা হয়েছেঃ 1. যোগাযোগ ও নৌ পরিবহন মন্ত্রীসহ সকল দুর্নীতিগ্রস্ত ও অযোগ্য মন্ত্রী এবং কর্মকর্তাদের চিহ্নিত ও পদচ্যুত করতে হবে। 2. রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের স্বাভাবিক মৃত্যু নিশ্চিত করতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনা, ক্রস ফায়ার, গুপ্তহত্যা, সীমান্ত হত্যা, গণপিটুনি, ভুল চিকিৎসা, অবহেলা জনিত মৃত্যু রোধকল্পে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

3. মন্ত্রীর সুপারিশে ২৪ হাজার লাইসেন্স দেওয়ার প্রক্রিয়া বাতিল করতে হবে। 4. ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান প্রক্রিয়ার আধুনিকায়ন করতে হবে। অবৈধ উপায়ে যারা লাইসেন্স পেয়েছেন তাঁদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে নুন্যতম মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হতে হবে। 5. সড়ক, নৌ ও রেল যোগাযোগ ক্ষেত্রে দুর্নীতি রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ ও গণপরিবহন ব্যবস্থায় দ্রুত শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে।

রেল ব্যবস্থাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে জনবান্ধব করতে হবে। 6. সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ধারাগুলি সংশোধন করে দ্রুত বিচারের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। 7. জনগণের কাছে সকল পর্যায়ে জনপ্রতিনিধি ও আমলাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। এ আন্দোলন সরকার, কোন রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তি বিশেষের বিরুদ্ধে নয়। আমরা দেশের সাধারণ নাগরিক।

স্বাভাবিক মৃত্যুর আকাঙ্ক্ষা আমাদের জন্মগত অধিকার। দায়িত্ব ও জবাবদিহিতার একটি কাঠামো তৈরি না হওয়া পর্যন্ত এই রাষ্ট্র স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তার অধিকার নিশ্চিত করতে কখনই পারবে না। ৪০ বছরে ক্ষমতায় আসীন কোন গণতান্ত্রিক বা অগণতান্ত্রিক সরকার জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার এই জায়গাটিতে কোন ভুমিকাই রাখেননি। সাধারণ মানুষের বাঁচার দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এই আন্দোলন চলবে। অধিকার কবে কে কাকে দিয়েছে? “অধিকার কেড়ে নিতে হয়, অধিকার লড়ে নিতে হয়”।

আর তাই আসুন একত্রিত পথে নামি সোচ্চারে, আওয়াজ তুলি “স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা চাই”। জনতার সম্মিলিত শক্তিকে কে কবে পেরেছে রুখতে? স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা চাই প্রতিবাদ সমাবেশ জাতীয় প্রেসক্লাবে স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা চাই ব্যানারে ছাত্র-শিক্ষক-পেশাজীবী জনতার সাথে একত্মতা ঘোষণা করলো জাতীয় স্বার্থে ব্লগার অনলাইন একটিভিস্ট ফোরাম। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.