আমি ব্যস্ত থাকি। ছাত্র মানুষ – মোটামুটি নিয়মিত পরিশ্রম না করলে পাশ করা যায় না এমন এক বিভাগে পড়ালেখা করি। তবু আজকে লিখতে বসতে হলো, কারন এত আলোচনা হচ্ছে আমার চারপাশে যে আমার এটা দায়িত্ব হয়ে উঠেছে লেখার।
আমি এখানে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলি নিয়ে কথা বলতে এসেছি। জানি না গুছিয়ে লিখতে পারবো কি না! আপনারা সবাই জানেন যে কিছুদিন আগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে একজনকে মারা হয়েছে এবং তা স্রেফ পিটিয়ে।
মোটামুটি মধ্যযুগীয় ব্যাপার হলেও জিনিসটা সবাই মেনে নিয়েছে কারন এর আগে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এরকম ব্যাপার অসংখ্য ঘটেছে। এখন প্রশ্ন আসতেই পারে যে এরা কারা? পুলিশ এই ঘটনায় তিনজনকে গ্রেফতার করলেও কিন্তু এদের পুরো বাহিনী আড়ালে চলে গেছে সবার। এরা নাকি ছাত্রলীগ না, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভা থেকে বলা হয়েছে। অথচ ছাত্রলীগের জন্মবার্ষিকী ঠিকই পালন করা হয় ! যাই হোক, এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে অনেক কথা হয়েছে মিডিয়ায়, আমরা একটু এদের নিয়ে অন্যভাবে বলি।
ঢাবি আর জাবির হলগুলোতে(এই দুইটা প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে অভিজ্ঞতা আছে বলেই বলছি) একশ্রেণীর আজব প্রাণী বাস করে।
তারা যদিও ছাত্র, সবাই তাদের সমীহ করে চলে। তাদের অনেক ক্ষেত্রে সালামও দেয়া লাগে। তারা ইচ্ছা করলেই যে কারো হাত-পা ভেঙ্গে দেয়, মিডিয়াতে হাত-পা ভাঙার ব্যাপারটা একটু কম আসে কিন্তু যার উপর দিয়ে যায়, তার জীবনের পুরাই বারোটা বেজে যায়। নতুন বর্ষের ছাত্রদের এরা খাটিয়ে মারে হলগুলোতে। জাহাঙ্গীরনগরে র্যাগিং এর নাম করে ব্যবহার করছে তারা ভর্তি হওয়া এই সব নতুন ছেলেদের।
নতুন ছেলেগুলোর ভবিষ্যৎ নষ্ট করে দিচ্ছে - যেটা একটা অত্যন্ত ভয়ঙ্কর ব্যাপার। এদের মাঝ থেকে বেছে নেয়া হয় কিছু ছেলেকে এবং উপযুক্ত করা হয় গুন্ডা হিসেবে। বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে প্রথমেই একটা নেতিবাচক অভিজ্ঞতা উপহার দিয়ে দেয় তারা। তারা আমাদের ডমিনেট করছে ছাত্ররাজনীতির নাম ভাঙিয়ে। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ক্যান্টিনে ফাও খাওয়া, ইভটিজিং – এমন কিছু নেই এরা করে না।
আমরা সবাই জানি এরা কারা। আমরা সাধারণ ছাত্র শুধু দেখেই যাচ্ছি কারন আমাদের জীবনের নিরাপত্তা থাকবে না এসব বললে। একটা পা ভেঙ্গে দিলে তো সেটা অপূরণীয় ক্ষতি ! অথচ এটা একটা স্বাধীন দেশ নাকি ! বিশ্ববিদ্যালয় হলো গবেষণার স্থান আর এখানে হচ্ছে আশ্চর্য নির্লিপ্ত গুন্ডামী- এরা কিভাবে মানুষ ?
ছাত্র রাজনীতি অনেক মহান হতে পারে, অনেক কথা বলা যায়। কিন্তু সত্যি বলতে কি আজকে যারা রাজনীতি করছে বিশেষত সংখ্যাগরিষ্ঠ দুইটি দলের হয়ে- তারা কোন লেভেলের ছাত্র আমরা জানি। ছাত্র রাজনীতি নিপাত যাক।
এটা শতকরা ৮০ ভাগ সাধারণ ছাত্রের কথা। আপনি বলবেন যে না জেনে বলছি আমরা... হ্যাঁ। কিন্তু বাস্তবতা হল যে যারা ছাত্র রাজনীতি করছে তাদের প্রতি আমাদের ঘৃণা তীব্রতর হচ্ছে। ভাল কিছু হচ্ছে না। আমি দুঃখিত এসব বলার জন্য।
কিন্তু আমি সাধারণ ছাত্রদের কথাই বললাম।
আমি ছাত্র রাজনিতি ঘেন্না করি- না বুঝেই। কারন এই রাজনীতি লাশও ফেলে। নবাগত ছাত্রদের জীবন নষ্ট করে। আপনি গ্যারান্টি দিন যে রাজনীতি করে আমার হাত-পা অক্ষত থাকবে, নোংরা আচরণ করতে হবে না।
ভাই, একটা স্বাভাবিক জীবন যদি আমরা পেতাম, আমরাও রাজনীতির কথা ভাবতাম। কিন্তু যারা ছাত্ররাজনীতি করেন- তাদের জীবন স্বাভাবিক না। তারা নেশায় আসক্ত, ব্যবহারও সাইকোরোগীদের মত। সবাই এদের তীব্র ঘৃণা করে। অনেকে মৃত্যুও কামনা করে এইসব মানসিকভাবে অসুস্থ ছাত্ররাজনীতিবিদদের।
আমার মনে হয় না কোন সুস্থ মানুষ এত নিচে নামতে পারে !
বামপন্থীসহ সব রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠন কিছু কথা বলে এমন – ৫২,৭১ এর ভূমিকা আর ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব এর কথা চিন্তা করে ছাত্ররজনীতি চালু থাকা উচিত। তাদের এই কথার জবাব হলো-
১। আপনারা ব্যর্থ। আপনাদের সবাই গুন্ডা ছাড়া অন্য কিছু মনে করে না। আপনার বেকুবও।
শিক্ষকদের খেলার গুটি হয়ে হাত-পা ভাঙ্গেন। আপনারা ভবিষ্যতে নেতৃত্ব দিলে কোন সুফল দূরের কথা, সব শেষ করে দিবেন সব দুর্নীতি আর লুটপাট করে।
২। আপনাদের বেশিরভাগই ছাত্র হিসেবে খুবই লো-ক্লাস। আপনাদের লজ্জা নেই বলেই আপনারা ছাত্র হয়েও আরেকজনকে ডমিনেট করতে যান।
তাই আপনারা যে-কোন সময় মার খেতে পারেন সাধারণ ছাত্রদের কাছে, কারন তারা কিন্তু ক্রমেই আপনাদের এইসব বাড়াবাড়িতে ফুঁসে উঠছে। তাই নেতৃত্ব দেবার বা আমাদের ছাত্রসমাজের প্রতিনিধিত্ব করার আপনাদের যোগ্যতা নেই।
৩। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকসুর বা জাকসু’র মত একমাত্র ছাত্রসংগঠন থাকবে যারা নেতৃত্ব দিবে ছাত্রদের। তারা ছাত্রদের অধিকার আদায়ে, মানুষের সেবায় থাকবে।
যেটা স্বাভাবিক এবং পুরো পৃথিবীতে স্বীকৃত। এছাড়া যেকোন রাজনৈতিক ইস্যুতে তারা ছাত্রসমাজের প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করবে। এখান থেকেই পরবর্তী নেতৃত্ব বের হবে। ছাত্রজীবন শেষ হবার পরই কেবলমাত্র সে রাজনীতি করতে পারবে।
কোন রাজনৈতিক গুন্ডার আশ্রয় আমাদের ক্যাম্পাস না।
আমরা সবাই জানি দেশের এই তরুণ মেধাদের নষ্ট করে যাচ্ছেন আমাদের সরকারি দলগুলোই। আজ ছাত্রদল\লীগ ওনাদের ডান বা বাম হাত।
ভাই, আমি খুবই তুচ্ছ মানুষ। আমি জানি না শিক্ষামন্ত্রী আমাদের নিয়ে কি ভাবেন। আমরা তাঁর ছেলের বয়সী।
আমরা আপনার কাছে সুস্থ আর স্বাভাবিকভাবে ক্যাম্পাসে থাকতে চাই, পড়াশুনা করতে চাই এবং হাত-পা অক্ষত থাকা অবস্থায় পাশ করে বের হতে চাই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।