অভিলাসী মন চন্দ্রে না পাক, জোছনায় পাক সামান্য ঠাই সিন্ডিকেট ব্লগিং নিয়ে অনেক কথাই হয়েছে। তবুও অনেকের কাছে বিষয়টা পরিষ্কার না। তাই এ সম্পর্কে আমার নিজস্ব ছোট রচনা শেয়ার করলাম।
সিন্ডিকেট কি? :
কয়েকজন মানুষ তাদের চাহিদা ও পছন্দ অনুযায়ী কয়েকজনকে খুজে বের করে একটা নিয়মিত যোগাযোগ তৈরী করে, এই নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষাকারীদের সার্কেলটাকেই বলা হয় সিন্ডিকেট। বিভিন্ন পরিস্থিতি মোকাবেলা বা কোন লক্ষ্য অর্জনের জন্য একত্রে কাজ করাই সিন্ডিকেটের কাজ।
এটা ক্ষেত্রে বিশেষে নির্দোষ আবার পরিস্থিতি অনুযায়ী দোষী। বাংলায় একে বলা যায়, দলীয় ব্লগিং! বাংলাদেশের বিদ্যমান সিংহভাগ সমস্যার পেছনে মুল কারন সিন্ডিকেশন।
সিন্ডিকেট ব্লগিং কি ?
একদল ব্লগারের একটি ইনার সার্কেল।
সিন্ডিকেট ব্লগিং কি খারাপ? :
ব্লগ মানেই লেখালেখি এবং লেখার মান নির্ধারনী আলোচনার প্রয়াস।
কিন্তু সিন্ডিকেট ব্লগিং ও সিন্ডিকেটের ব্লগাররা নিরপেক্ষ আলোচনায় বাধা দেয়।
সিন্ডিকেট তার ভেতরের লোকজন মানে নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে এমন ব্লগারের যে কোন মানের লেখাই হোক না কেন সেটাকে সঠিক মুল্যায়ন করে না। নিজেদের সিন্ডিকেটের ভেতরের লোকজনের অখাদ্য লেখাকেও মন্তব্যে মন্তব্যে নোবেল পুরষ্কৃত করে। আবার প্রতিপক্ষ সিন্ডিকেটের ব্লগারের ভাল লেখাকেও বিরুপ মন্তব্যে মন্তব্যে কলংকিত করে। এছাড়াও দেখা যায় গালাগালি, কুৎসা রটনা, থ্রেট এসবের উৎসও এই সিন্ডিকেট।
সিন্ডিকেট ব্লগিংজনিত লংটার্ম ক্ষতি :
এর ফলে তুলনামুলক কম পাঠক ও মন্তব্য প্রাপ্ত সিন্ডিকেটের বাইরের নতুন ব্লগাররা ব্লগিং চালিয়ে যেতে উৎসাহ হারায়।
সিন্ডিকেট সিন্ডিকেটে ঝগড়া হয়ে পরিবেশ দুষিত হয়।
এক কথায় বলা যায়, সিন্ডিকেট হচ্ছে নিরপেক্ষতা ও তথ্য ম্যানিপুলেশন করার হাতিয়ার। বর্তমানের বাংলাদেশের যেইসব বিষয় নিয়ে হাহাকার ও ক্ষেদ প্রকাশ করি, সেই সবগুলোর প্রধান কারন সিন্ডিকেটিং। এছাড়াও ব্লগে সিন্ডিকেটিং করা সমর্থনযোগ্য নয় কারন এক পর্যায়ে সিন্ডিকেটগুলো ব্লগার নির্ভর পেশী শক্তি প্রয়োগ করে পুরো ব্লগের উপরই প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা চালায়।
এটা কি আগাগোড়াই খারাপ? :
না! শতভাগ ভাল যেমন নেই তেমন শতভাগ খারাপও নেই।
ব্লগারদের মাঝে ইন্টারএ্যাকশন থাকলে ভাল। মানববন্ধন, অসুস্থ মানুষদের প্রতি সাহায্যের আবেদনমুলক কাজে, এমন বেশ কিছু ক্ষেত্রে সিন্ডিকেশন ভাল ফল দেয় কিন্তু ব্যাক্তিগত পরিচয়ের উর্ধ্বে উঠে প্রয়োজনের সময় সিন্ডিকেটের অপর সদস্যের সমালোচনা করা যায় না। লেখা খারাপ হলেও সেটাকে ভাল বলতে হয়, ইত্যাদি বিষয়ে তালগোল পাকিয়ে এক পর্যায়ে সিন্ডিকেটগুলো তেল কারখানায় পরিনত হয়!
কি করবো?
নিজের পছন্দের ব্লগারের পোস্টে একটা না হাজারটা মন্তব্য করার ও প্রতি পোস্টেই লাইক বাটন টিপে দেবার অধিকার সবারই রয়েছে। তবে, যদি নিজের পছন্দের ব্লগারের ভাল চান তবে তার ব্যাক্তিত্ব মূল্যায়ন না করে তার লেখার মূল্যায়ন করে প্রয়োজনীয় সমালোচনা করুন। মনে রাখবেন, ফাইনালী ব্লগ একটা মেধাভিত্তিক ক্ষেত্র।
যেহেতু ফেসবুকে আটকে না থেকে এখানে এসেছেন তার মানে আপনি মেধাচর্চা করতে এসেছেন। তাই কারো মন রক্ষার উদ্দেশ্যে বা কাউকে খুশী করার জন্য নিজের ব্যাক্তিত্ব এবং শুভ বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার সাথে কম্প্রোমাইজ করবেন না।
শেষ কথা:
সামাজিকতা রক্ষা করা অন্যায় নয়। বরং উৎসাহ দেবার মত বিষয় , কিন্তু তার জন্য সঠিক এ্যাপ্লিকেশন্স ও চমৎকার সুবিধাসহ ফেসবুক রয়েছে। পাখির আকাশে উড়া এবং মাছের পানিতে ভাসা যেমন স্বাভাবিক নিয়ম, তেমনই ফেসবুকে সামাজিক সৌহার্দের চর্চা এবং ব্লগে মেধা চর্চা।
কারন ফেসবুকে মানুষে মানুষে যোগাযোগ করে সেটাকে বলা হয় সোশ্যালাইজিং আর ব্লগে লেখকে লেখকে মিলে গোষ্ঠি তৈরী করলে তাকে বলা হয় সিন্ডিকেটিং! ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।