ভালো লেখা লিখতে চাই। সমস্যা হল ভালোর সংজ্ঞা নিয়ে। দেখা যাক.........
- কী করিস?
- পড়ে আছি।
- কোথায়?
- বিছানায়।
- বিছানায়?
- ব্যাচেলর আবার শুয়ে থাকে নাকি?
- তুই একটা বাঁদর!
- এই কদিনেই মানুষ থেকে বাঁদর বানিয়ে দিলি? যাক, হাতে একটা সুযোগ এসে গেল?
- মানে?
- মানে, বাঁদরে নানা রকম দুষ্টুমি করবে।
ওটা তার স্বভাব। দোষ দেওয়া যাবে না কিন্তু?
- মেরে ঠাং ভেঙে হাতে ধরিয়ে দেব। খুব বাড় বেড়েছে, না?
- একটু মিষ্টি করে কথা বলতে পারিস না? এরকম সন্ত্রাসীর মত কথা বলিস কেন? যেন ঠোঁট কাটা রাবেয়া!
- বেশি কথা বললে গুলি করে দেব, শালা?
- সে কি আর বাকি আছে?
- মানে কী?
- সোজা এসে বুকের বাম পাশে লেগেছে। রক্ত ঝরছে। অবশ্য, দেখার সে মন তোর নেই।
এভাবেই চলছে দীপ্ত আর ইভার দুষ্টুমিমাখা বন্ধুত্ব। দুজনেই এখন ফার্স্ট ইয়ারে। দীপ্তর ঠিকানা কার্জন হল। ও ফিজিক্সে ভর্তি হয়েছে। ফিজিক্সের ছেলে-মেয়েরা নাকি একটু পাগল কিসিমের হয়।
ইভার চলাচল ইউনিভার্সিটির সবচেয়ে রোম্যান্টিক এলাকায়। মানে কলাভবন। ও পড়ছে ইংরেজিতে। সায়েন্স গ্রুপ থেকে এসেছে। ওদের প্রথম আলাপ কলেজ জীবনে, প্রদীপ স্যারের কোচিং-এ।
না, কোন প্রেম-ট্রেম নয়। অবশ্য সে গ্যারান্টি দেওয়ার আমি কে? এখানে কোন দাঁড়ি-কমা বসানো অর্থহীন। মেঘ থেকে বৃষ্টি পড়ে। নদীতে স্রোত বয়। সাগরের ঢেউ সৈকতে আছড়ে পড়ে।
এসব কি কেউ ঠেকাতে পারে? প্রেমের ঢেউ এসবের থেকেও বেপরোয়া!
দুজনেই খুব ছেলেমানুষ। দীপ্ত একটু বেশিই। মেয়েরা অতটা হতে পারে না। সমাজের চোখ রাঙানি আছে না? পাগলামি করে ক্যাম্পাসে ওদের সময়টা বেশ কেটে যায়। প্রতিদিনই পাগলামির নতুন নতুন আইটেম।
আজ মল চত্বরে বসেই দীপ্তর প্রথম সংলাপ-
- আমাকে একটা মহৎ কাজ করতে দিবি?
- তুই করবি মহৎ কাজ?
- কেন, আমি সে কাজের যোগ্য নই?
- আরে গাধা, কোন কাজটা বলবি তো!
- তোকে একটা চুমু খাব!
- লাথ্থি খাবি একটা।
- তুই কি কোন দিনই একটু রসিক হতে পারবি না?
- তোর বউকে গিয়ে খাস।
এরকম ইয়ার্কি ওদের রোজ চলে। তবু শেষ কথাটা বলেই ইভা একটু গম্ভীর হয়ে গেল। চান্স পেয়েই দীপ্ত বলে বসল, তোকে খুব জ্ঞানী জ্ঞানী দেখাচ্ছে এখন।
এবার সত্যিই ওকে লাথি মেরে বসল ইভা। সেটা রাগ করে নয়।
দীপ্ত হলে থাকে। ইভা থাকে ওর মা-বাবার সাথে। সন্ধ্যার দিকে তাই ওদের খুব একটা দেখা হয় না।
ফোনে কথা হয়। আর রাত্রে ফেইসবুক তো আছেই।
আজ মনটা খারাপ খারাপ লাগছে দীপ্তর। রাত্রে খাওয়ার পর ফেইসবুকে বসল। একটু জমিয়ে চ্যাট করলে সব ঠিক হয় যাবে।
ঢুকে দেখল, ইভা অফলাইনে। ক্ষুদেবার্তা পাঠাল। তারপর শুরু হল-
- এই শোন, একটা প্লান মাথায় এসেছে।
- কী রে?
- চল সমুদ্র দেখে আসি।
- আমরা দুজনে?- ইভা অবাক হল।
- নয় তো কি গুষ্টিসুদ্ধ?
- তোর তো হেব্বি সাহস?
- যাবি কি না বল।
- কোথায় থাকব?
- হোটেলে।
- তোর সাথে?
- হ্যাঁ!
- মানে কী?
- আরে, সারাজীবন তো বিছানায় পড়ে থেকেই কাটালাম। এবার একটু শুয়ে থাকার সুযোগ দিবি না? তোকে জড়িয়ে ধরে?
- এই পিচ্চি, তোর কয়দিনের জীবন রে?
- এই বুড়ি, তোর সমস্যা কী রে?
এরপর আরও কিছু গালাগাল চলেছে। আপনাদের সব শোনাতে পারলাম না।
শুধু বলে রাখি, ওদের ঝগড়া কুকুর বিড়ালে গিয়ে শেষ হয়।
আজ ইভা আগে থেকেই বসে আছে বটতলায়। দীপ্তকে দেখা মাত্রই মুখটা গম্ভীর করে ফেলল।
- একটা ঘটনা ঘটে গেছে।
- কী রে?
- বিয়ে!
- কার?
- আমার।
- পাত্র?
- আশে-পাশেই থাকে।
- এতকিছু ঘটে গেল, আমাকে বলিসনি তো?
- তুই কি কোনকিছুই সিরিয়াসলি নিস?
- তোর পছন্দ হয়েছে?
- আমি তো কবে থেকেই তার ফ্যান হয়ে ঝুলে আছি!
- তুই তো একটা স্বার্থপর! তলে তলে এতদূর?
- হিংসে হচ্ছে তোর? ছবি দেখবি?
চরম অনিচ্ছা সত্ত্বেও দীপ্ত বলল, দেখা। ইভা বলল, তাহলে তো একটা আয়না লাগবে। দীপ্ত তখনও খুব সিরিয়াসলি ভাবছে। ইভার দেখা এই প্রথম।
ইভা আর হাসি আটকে রাখতে পারল না। তারপর দীপ্তর তাড়া খেয়ে পুরো মল চত্বরে এক চক্কর। দুজনেই হঁাপিয়ে উঠেছে। দীপ্ত হঠাৎ বলে উঠল, দেখ ইভা, ঐ মেয়েটা......
ইভা খুব মনোযোগের সাথে দেখার চেষ্টা করছে। সেই ফঁাকে ওর গালে একটা চুমু খেয়ে দে ছুট।
রাত্রে দুজনেই যথারীতি ফেইসবুকে। আজ আর কোন চ্যাটিং নয়। দীপ্ত ইভার প্রোফাইলে। ছবিগুলো বারবার দেখছে। অনেক ছবিই ওর নিজ হাতে তোলা।
কোনটা মুখ ভেঙিয়ে, কোনটা একচোখ বুজে। কোনটা আবার আকাশের দিকে তাকিয়ে হারিয়ে যাওয়ার। পাগলী একটা- ভেবে হাসল দীপ্ত। শ্যামবর্ণের বুদ্ধিদীপ্ত মুখশ্রী। চুল কাঁধের একটু নিচ থেকে কাটা পড়েছে।
ঠোঁটের বাম দিকে একটা তিল। সব মিলিয়ে দারুণ! এমন দীপ্তিময় চেহারা আগে কখনও খেয়াল করেনি দীপ্ত।
ইভাও আজ চ্যাট করতে ভুলে গেছে। ক্যাম্পাসের অনেক স্মৃতি জমে আছে ফেইসবুকেও। অনেকগুলো ছবি পার হয়ে একটা ছবিতে আটকে রইল অনেকক্ষণ।
এটা ওরই তোলা। খুব ক্লোজ শট। খোঁচা খোঁচা দাড়ি, এলোমেলো চুল; একজোড়া মায়াবী চোখ। মা একবার ডেকে বললেন, কী করিস? ইভা উত্তর দিল, পাগলের ছবি দেখি। মাও কম যান না।
রতনে রতন চেনে, পাগলে পাগল!- বলেই দ্রুত বেরিয়ে গেলেন ঘর থেকে।
পরদিন দেখা হল না। ইভাই দেখা করল না। তাড়া আছে বলে, এক ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়ে বাসায় চলে গেল। দীপ্ত ভাবনায় পড়ে গেল।
ওভাবে চুমু খাওয়াতে ও কি মাইন্ড করল? ও কি দুষ্টুমি বোঝে না?
সময় সবকিছু উড়িয়ে নিয়ে যায়। ওদের জমে ওঠা গুমোট ভাবটাও কেটে গেল কয়েকদিনে। আজ দীপ্তকে একটু সিরিয়াস লাগছে। পরিবর্তনটা চোখে পড়ার মত। সেভ করে এসেছে দীপ্ত।
ইভা একটু হেসে নিল। হাসল বটে, ভেতর থেকে এল না। দীপ্তকে এভাবে অচেনা লাগছে। ভালো লাগছে না ওর। ও-ই চাইত, ছেলেটা একটু সিরিয়াস হয় না কেন।
আর আজ? বড় বিচিত্র মন মানুষের।
দীপ্তকে ইজি করতে একটা ঝাঁকি দিল ধরে। েকান কাজ হল না। এবার ওর হাতটা চেপে ধরল।
এসব কী হচ্ছে?
কিছুদিনের মধ্যেই তোর বিয়ে হয়ে যাবে, তাই না?
এসব কথা কেন উঠছে আজ?
আমাদের বন্ধুত্ব কি শেষ হয়ে যাবে?
তুই থামবি?
না, থামব না।
শেষ কথাটা বলেই দীপ্ত একটু পাগলামী করতে চাইল। আজ মানাচ্ছে না একেবারেই। ওরা কি প্রেমে পড়ে গেল? জানি না।
ছেলে-মেয়েতে নির্ভেজাল বন্ধুত্ব নাকি বেশিদিন চলে না। মন শূন্য আকাশে উড়তে উড়তে ক্লান্ত হয়ে আশ্রয় খঁোজে।
ভালোবাসা প্রকাশের মাধ্যম খোঁজে। আশ্রয় পেলে উড়তে ভুলে যায়। না পেলে সৃষ্টির পথে পা বাড়ায়।
বন্ধুত্ব থেকে প্রেমের উঁকি-ঝুঁকি, তারপর মাখামাখি। অবশেষে সংসার।
প্রেমের এই নগদ হিসেব আর কত? প্রেমটা হিসেব করার জিনিস নয়। জীবনটাও পাটীগণিত নয়।
এটা আমার কথা। ওরাও এসবে বিশ্বাস করে বলেই তো জানি। মন বলে কথা।
নিয়ম করে একই রাস্তায় চালান করা অসম্ভব।
একটা বছর কেটে গেল। আগের সেই দুষ্টুমিভরা দিনগুলো খুব মিস করে দুজনেই। এখন অবশ্য অনেক বেশি মিস করে দুজন দুজকে। গায়ে গা লাগলে আরাম লাগে।
কোথাও বসলেও আগের মত আরেকজন বসার জায়গা ফঁাকা থাকে না। কেউ তাকিয়ে থাকলেও কিছু আসে যায় না ওদের। কী কী কথা হল, কী কী করল- এসব আর এখন বড় কথা নয়। একসাথে সময় কাটানোই বড় কথা।
একদিন দীপ্তকে পুরনো রোগে পেয়ে বসল।
ফাট করে বলে ফেলল-
- বিয়ে করবি?
- কাকে?
- আমি ছাড়া আর কে তোকে বিয়ে করবে?
- দেখতে চাস?
- দেখাতে পারবি?
- পারবো না মানে? তোর কাছে মাথা বিক্রি করেছি নাকি?
কথাটা একদম বলতে চায়নি ইভা। মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে। দীপ্ত মাথা নিচু করে বসে আছে। একশ বার 'সরি' বলেও মান ভাঙাতে পারেনি। উঠে যাওয়ার আগে শুধু বলল, ফান করে বললেও মানুষ মনের কথাটাই বলে।
তোরটা ফানও নয়।
এরপর দীর্ঘায়িত কৃষ্ণপক্ষ! দেখা নেই, কথা নেই। ফেইসবুকের পাতায় ধূলো জমে গেছে।
কবে কোন গাছে তাল পেকেছিল, আর কাকেরও খেয়াল হয়েছিল সেখানেই বসতে। কাক বসা মাত্রই পাকা তাল মাটিতে এসে পড়ল।
সেই থেকে জন্ম হল কাকতালীয় শব্দের। এই পাজী শব্দটার এমনই দোষ, মানুষের সম্পর্কের মধ্যেই বেশি ঢুকে পড়ে।
ইভার জন্যে ছেলে দেখা হয়েছে। ছেলে সি.এ করেছে। লাখ টাকার মত বেতন।
বয়সে অবশ্য ইভার থেকে বার-তের বছরের বড়। ইভা কি রাজী হবে?
জরুরী ক্ষুদে বার্তায় চমকে উঠল দীপ্ত। দেখা করতেই হবে, খুব জরুরী। দীপ্ত ভাবল, আমাকে ইজি করার এটা ওর নতুন কৌশল। ঠিক আছে, এতদিন কি আর রাগ করে থাকা যায়?
- তোকে না আজ খুব জ্ঞানী জ্ঞানী দেখাচ্ছে।
- প্লিজ দীপ্ত, আজ আমার কথাগুলো একটু সিরিয়াসলি শোন!
- আচ্ছা বল। কোন সমস্যা, জান?
- তুই আমাকে ভালোবাসিস?
- সেটা আবার কী জিনিস? খায়, না পড়ে?
- ফর গডস্ সেক! আজ কোন ইয়ার্কি করিস না।
- হ্যাঁ, বাসি তো।
- আমাকে বিয়ে করতে পারবি?
- চল তোকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাই। মাথায় ভয়ানক গণ্ডগোল দেখা দিয়েছে।
ইভার মনে হল, টিএসসি অডিটোরিয়ামের ছাদ-দেয়াল যেন ভেঙে ওর মাথার উপর পড়ছে। মাথায় আগুন জ্বলছে। কষে একটা থাপ্পড় মেরে উঠে চলে গেল। দীপ্ত বোকার মত দাঁড়িয়ে আছে। এরপরও মনে প্রশ্ন, ও তাহলে সিরিয়াসলিই বলছিল?
ইভার আগের নাম্বারটা বন্ধ।
ফেইসবুকেও দেখা যায় না আর। ডিপার্টমেন্টে গিয়েও পায়নি। এখন নাকি রেগুলার ক্লাসেও আসে না। ইভার এক বান্ধবীর কাছ থেকে নতুন নাম্বার জোগার করল। বটতলায় এসে ফোন দিল।
ওপাশ থেকে বয়স্ক কণ্ঠ,
- হ্যালো...
- আন্টি, আমি দীপ্ত বলছি। ইভা নেই?
- কেমন আছ, বাবা? বিয়েতে আসলে না যে?
আমার নিজেরও খুব খারাপ লাগছে। চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে। আর লিখতে পারছি না। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।