সিলেট বিভাগ প্রবাসী সমবায় সমিতি, আল আইন সংযুক্ত আরব আমিরাত নামের সংগঠনের পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল আমাদের। আমরা মানে, সিলেটের বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রাণপুরুষ, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, বড় ভাই রফীকুল ইসলাম মুশতাক, তারুণ্যের উদ্দমী প্রতিনিধি, নাগরিক অধিকার আন্দোলনে আমার বিশ্বস্থ সহযোদ্ধা সামিউর রহমান মুছা এবং আমি।
ব্যবসায়িক ব্যস্ত শিডিউলের ফাঁকে ফুরসত বের করতে না পেরে মুশতাক ভাই যেতে পারলেন না। এ পর্যন্ত একাধিকবার জাপান, দুবাই, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, চীন, ব্যাংকক, সিঙ্গাপুর, ভারত ও নেপাল সহ বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করা মুশতাক ভাই’র নেতৃত্বে চমৎকার একটি জার্নির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হলাম আমরা।
তিনি আমাদেরকে গাইড লাইন দিয়ে সকল ব্যবস্থা নিজেই করে দিলেন।
আমন্ত্রণকারী সংস্থার সেক্রেটারী আব্দুল্লাহ ভাইকে ফোনে বলে দিলেন, আমি আসছি না, আমার ছোট ভাইরা আসছে। সমস্যা নেই কোনো। প্রোগ্রাম যেগুলো যেমন সাজানো হয়েছে, তেমনি চলবে।
গতকালই জানিয়েছি সফরের সময় ছিলো কম। খুবই কম।
মাত্র ছয় দিন। যদিও ভিসা পেয়েছিলাম ৩০ দিনের। কিন্তু ৩০ দিন থাকার মতো সময় কোথায়? তাছাড়া ৩০ দিনের কাজ যদি ৬ দিনে করে ফেলা যায়, খামাখা টাইম অয়েষ্ট করার দরকার কি!!
এই স্বল্প সময়ে আমি আমার অনেক প্রশ্নের জবাব খোঁজে বের করতে চেষ্টা করেছি। আমার অজ্ঞতা ও মুর্খতার কারণে খুব কিছু হয়ত জানা হয়নি। তবে যেটুকু জেনেছি, তাতেই আমি আপাতত তৃপ্ত এবং একই সাথে ভীতও।
আমার ভেতরে জমাট বাধা বেশ কিছু প্রশ্নের জবাব আমি পেয়েছি ঠিক, তবে বাড়তি কিছু নতুন প্রশ্ন ঘিরে ফেলেছে আমাকে। রহস্যের সন্ধানে ছুটতে গিয়ে এক সময় আবিষ্কার করেছি নিজেই আমি জড়িয়ে যাচ্ছি অমীমাংসিত আরো কিছু রহস্যের জালে। লক্ষ্য করেছি যতই আমি প্যাঁচ খুলছি, ততই নতুন নতুন গিট্টু লেগে যাচ্ছে। ফস্কা গিরো না, যাকে বলে একেবারে বজ্র আঁটুনি।
আমার জানার কৌতূহল ছিল মাত্র দু’টি।
১. ওখানকার মুসলমানদের অবস্থা কী?
২. আমার প্রবাসী বাঙালি ভাইরা কেমন আছে?
জমি-জমার দলিল রেজিস্টারী করার সময় দলিলের নিচে হলফ নামায় যেভাবে বলতে হয়, এতদ্বর্থে আমি স্বচ্ছায়,সজ্ঞানে, সুস্থির বুদ্ধিতে থাকিয়া, দলিলের মর্ম সম্যক পড়িয়া সাক্ষীগণের সম্মুখে স্বাক্ষর করিলাম--------
প্রায় একইভাবে আজ আমি সজ্ঞানে এবং স্থির বুদ্ধিতেই বলছি, উভয় ক্ষেত্রেই নেগেটিভ ধারণা ঝুড়িতে ভরে ফিরতে হয়েছে আমাকে। ভালমন্দ মিলিয়েই মানুষ। তবে মন্দগুলো যদি হয় মৌলিক ব্যাপার কেন্দ্রিক, তাহলে প্রত্যাশার গলা পেচে ধরাই তো ভাল।
বাঙালিদের বেলায় বলা যায়, বেশির ভাগ বাঙালিই কষ্টে আছে। আমি তাদের অনেকের সাথে কথা বলতে যেয়ে অনুভব করতে চেষ্টা করেছি তাদের সুখ-দু:খ।
কাছে থেকে দেখতে চেষ্টা করেছি আরবের মুসলমানকে। কখনো ভাল লেগেছে, কখনো মন্দ লেগেছে। কিছু ব্যাপার আমাকে আন্দোলিত করেছে আবার কিছু কিছু ব্যাপার পীড়া দিয়েছে।
প্রায় ৭ লক্ষ বাংলাদেশি বাস করছে আমিরাতে। জীবিকার তাগিদে পেটের দায়ে সুখ-দু:খে পড়ে আছে তারা।
অনেকেই ভাল থাকলেও বেশিরভাগই ভাল নেই।
যাদের সাথে আমার দেখা হয়েছে, তাদের সাথেই কথা বলেছি আমি। অল্প কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া অধিকাংশ বাঙালির মাঝে আমি দেখতে পেয়েছি চাঁপা অসন্তষ। তাদের চেহারায় আমি খুঁজে পেয়েছি কষ্টের ছাপ। তাদের চোখের ভাষা পড়ে আমি জানতে পেরেছি তাদের সেই যন্ত্রণার কথা, যে যন্ত্রণা তাদেরকে খুবলে খুবলে খাচ্ছে।
আমিরাতের যেসব মুসলমানকে হাতের নাগালে পাবার ক্ষমতা ছিল আমার, তাদের সাথে কথা বলেছি। তাদের অনেক ভাল গুণের সাক্ষাৎ আমি পেলেও অভার অল তাদের মুসলমানিত্ব আমাকে সন্তুষ্ট করতে পারে নি। বরং তাদের কিছু আচরণে আমার মনে হয়েছে তারা নিজেদেরকে মুসলমান পরিচয় না দিলেই বোধ’য় ভাল করতো।
তাদের চাল-চলন দেখে বিশ্ব বিবেক যদি এটাকে মুসলমানদের চাল-চলন ভেবে ধোকা খায়, তাদের উগ্র চলাফেরাকেই যদি প্রকৃত মুসলমানি চলাফেরা ভেবে বসে, আর এ কারণে যদি ইসলামী তাহযীব-তামাদ্দুন সম্বন্ধে অমুসিলদের ধারণা ঘুরপাক খেতে থাকে ভ্রান্তি ও বিভ্রান্তির বেড়াজালে, তাহলে আমি একজন মুসলমান হিসেবে আরব বিশ্বের মুসলমানকে বিবেকের আদালতে জবাবদিহির কাঁঠগড়ায় দাঁড় করাতেই পারি। তাদের চোখে চোখ রেখে চিৎকার করে বলতেই পারি-
Islam imposes some limitations in the daily life of every Muslim .
ইচ্ছা করলেই সেই সীমানা অতিক্রম করা যায় না।
ইসলাম ব্যক্তি স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। অবাধ স্বাধীনতায় নয়। অবাধ স্বাধীনতা মানে স্বেচ্ছাচারিতা। আর ইসলাম স্বেচ্ছাচারিতাকে প্রশ্রয় দেয় না। তোমাদের যা খুশি, যেভাবে খুশি, তাই তোমরা করতে পারো না।
তোমরা যদি নিজেদেরকে মুসলমান হিসেবে দাবি করতে চাও, তাহলে এই লিমিটেশনের ভেতরেই তোমাদের থাকতে হবে।
ছয় দিন আমি ঘুরে বেড়িয়েছি সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই, আবুদাবি, শারজাহ ও ফুযায়রার বিভিন্ন এলাকায়। এই সংক্ষিপ্ত সফরে আমার যে অভিজ্ঞতা সঞ্চিত হয়েছে, এক কথায় অসাধারণ। কাছে থেকে দেখা আমার সেই অভিজ্ঞতাগুলো প্রিয় পাঠক আজ আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চলেছি।
--------------চলবে
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।