কেমন আছে মধ্যপ্রাচ্যের বাঙালি? মা-বাবা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তানকে একটু ভাল খাওয়াবে, ভাল পরাবে, অভাবের সংসারে ফিরে আসবে এক চিলতে স্বচ্ছলতা, দেশের অর্থনীতির দুর্বল মেরুদন্ডে কিছুটা হলেও ক্যালসিয়ামের যোগান দেয়া যাবে, আর এ জন্য একবুক আশা নিয়ে আমার যে ভাই অথবা বন্ধুটি পাড়ি জমিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশে, কেমন আছে ওরা? আমরা কি কখনো তাদের খোঁজ নিয়েছি? কখনো জানতে চেয়েছি কেমন কাটছে তাদের মা-বাবা, ভাই-বোনহীন একাকী জীবন?
আরব দেশগুলোর মুসলমানদের অবস্থাইবা কেমন? ওদের সভ্যতা ও সংস্কৃতি ঠিক আছে তো? কালচারাল দেউলিয়াপনার গভীর কোনো খাঁদে পড়ে ওরা হারিয়ে ফেলছে না তো চিরহরিৎ ইসলামের মজ্জাগত সৌন্দর্য্য? নাকি তারা তাদের নিজস্ব কৃষ্টি-কালচারকে গুডবাই জানিয়ে ভিখেরির মত হাত পেতে বসে আছে পশ্চিমের দিকে?
প্রশ্ন অনেক কিন্তু জবাব জানার আঙিনাটি নাগালের বাইরে। বিদেশ থেকে আমরা যখন টাকা পাই, বড় ভাল লাগে তখন। এক টাকার জায়গায় তিন টাকা খরচ করি। এটা আমরা করি কারণ, যে টাকাগুলো আমরা খরচ করছি, সেগুলো রোজগারের পরিশ্রম আমাদের করতে হয় নি।
বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছেন অসংখ্য বাঙালি।
এদের উল্লেখযোগ্য অংশ অবস্থান করছেন মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশে। মধ্যবিত্ত বাঙালি ঘরের ছেলেরা একবুক আশা নিয়ে অসব দেশগুলোতে যাবার পর অনেকেই চোখে সর্ষেফুল দেখছে। প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মাঝে কত বেশি ব্যবধান, স্বপ্ন ও বাস্তবতার মাঝে কত বিস্তুর ফারাক, সেটা হাড়ে হাড়ে ঠের পাচ্ছে তারা।
নিকট অতীতে মধ্যপ্রাচ্যের সংযুক্ত আরব আমিরাত ঘুরে আসার সুযোগ হয়েছে আমার। সফলের আয়ূ ছিল খুবই কম।
মাত্র ছয়দিন। এই স্বল্প সময়ে আমি যেটুকু পেরেছি, চেষ্টা করেছি চোখ-কান খোলা রেখে সেখানকার আরবী মুসলমানদের পর্যবেক্ষণ করতে। আমি চেষ্টা করেছি আমার প্রবাসী বাঙালি ভাইদের অবস্থা জানতে।
বাড়ী ফিরে আসার পর বন্ধু-বান্ধবরা ঘিরে ধরেছে। কোথায় কোথায় গেলি? সময় কীভাবে কাটালি? কী দেখলি? কেমন দেখলি? অনেকেই বিনামূল্যে একটি উপদেশও দিয়ে ফেললো, সফরনামা লিখে ফেল না?
আমি বলেছি, আচ্ছা দেখি।
আমার অত্যন্ত কাছের বন্ধু, ২১শে বাঙলা ফাউন্ডেশনের কর্ণধার, কবি ও ঔপন্যাসিক জুয়েল ভাই কথা বলে আদেশের সুরে। আমাকে বললো, ‘‘দেখাদেখির কিছু নেই। সাত দিনের মধ্যে পাণ্ডুলিপি কমপ্লিট করে আমার হাতে দেবে। ব্যস’’।
আমি রসিকতা করে বলেছি, জুয়েল ভাই, সময়টা আরেকটু বাড়ানো যায় না?
ভদ্রলোক ভুরু কুচকে এবং নির্লিপ্তভাবে জবাব দিয়েছে-‘না’।
এই জুয়েল ভাই'র নতুন পরিচয় হচ্ছে, সে প্রথম আলো ব্লগে অতি সম্প্রতি লিখছে। উপন্যাস, ছোট গল্প, কলাম, সবকিছুতেই সিদ্ধহস্ত হলেই আমি লক্ষ্য করেছি ছড়ার দিকেই ঝোক বেশি।
ডায়রীতে করে বিভিন্ন টুকিটাকি নিয়ে এসেছিলাম। ওগুলো সামনে রেখে এবং ওয়েবসাইট ঘাটাঘাটি করে আরো কিছু তত্ত্ব ও তথ্য বের করে বিসমিল্লাহ বলে লেখা শুরু করে দিলাম। লেখা শেষ করে নিজেই বুঝতে পারলাম না পনের দিন কষ্ট করে প্রবন্ধ, নিবন্ধ, কলাম, নিউজ, ছোটগল্প ও রোজনামচার মিশেলে জগাখিচুরী টাইপ যে বস্তুটি আমি তৈরি করেছি, অটার প্রাতিষ্ঠানিক নামটা কী হবে?
আমাকে এই অস্বস্থি থেকে উদ্ধার করলো জুয়েল ভাই।
বললো, ‘‘তোমার অত শত ভাবার দরকার নেই। তোমার কাজ লেখা। তুমি লিখেছো, ব্যস। ’’
আমিও ভাবলাম, তাইতো! আমার কাজতো শুধুই লেখা। কী লিখলাম আর কেমন লিখলাম, সেটা বিচার করার কাজটিতো পাঠকের।
পাণ্ডুলিপি তৈরি হয়ে যাবার পর কয়েক সপ্তাহের ছুটিতে দেশে এসে পৌঁছলেন সিলেট বিভাগ প্রবাসী সমবায় সমিতি আল-আইন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের সেক্রেটারী জেনারেল মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ। আমার সফর কেন্দ্রিক বই লেখা হয়েছে জেনে খুবই আগ্রহী হয়ে উঠলেন। বললেন, বইটি প্রকাশের দায়িত্ব আমরা নিতে চাই। এত আগ্রহ নিয়ে বললেন যে, আব্দুল্লাহ ভাই এর মুখের দিকে তাকিয়ে আমি আর না করতে পারলাম না। বলতে পারলাম না ২১শে বাঙলা প্রকাশনী বইটি প্রকাশের দায়িত্ব নিয়ে ফেলেছে।
জুয়েল ভাইকে স্যরি বললাম। বললাম প্রবাসী সমবায় সমিতির এই মানুষগুলো আমাকে যে পরিমাণ ভালবাসা দিয়েছে, তাতে করে তাদের এই ছোট্ট অনুরোধ না রাখাটা হবে চরম অকৃতজ্ঞতা। বাস্তবতা বিবেচনায় জুয়েল ভাই বললো, ‘‘আচ্ছা ঠিক আছে। সমস্যা নেই’’।
আমি হাফ ছেড়ে বাঁচলাম।
লেখাগুলো যদি কারো বিরক্তির কারণ না হয়, আগ্রহের অপমৃত্যু না ঘটায়, চাহিদার সামান্যতমও যদি পুরা করতে পারে, তাহলে সেটাই হবে আমার জন্য খুশির ব্যাপার।
তাহলে কথা আর বাড়িয়ে ল্যাব কি! চলুন, যাত্রা করি মূল আলোচনার দিকে।
---------চলবে ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।